গরিমন গ্োত্বামীৰ
শেঠ
দ্ধ - গল
খ্)
পরিমল গোম্বামী
সাহিত্য লিঃ
ভবন
-&
১০ নো, কলিকাতা
[বহ্যন্ব পাহত্য ভবন লঃ ২৫।২, মোহনবাগান 'রো, কালকান্চা-9 স্টু
হইতে প্রুশক্কিকুম্নার ভাছুড়ী কর্তৃক প্রকাশিত
প্রথম প্রকাশ মার্চ, ১৯৫৪
মূল্য : পাচ টাক
শনিবঞ্চন প্রেস, ৫* ইজ্ত্র বিশ্বাস রৌভ, কলিকাতা-৩৭
, হইতে আ্ীরজনকুমার দাস -কর্তৃক 'মুত্রিত
পরিমল (গোহামীর ব্যঙ্গ গল্ম
পরিমল গোস্বামীর ব্যঙ্গ গল্পের আমি একজন অনুরাগী পাঠক, অবশ্থা আরও
অনেকে আছেন। পরিমল বাবু ও আমি প্রায় একই সময়ে লিখিতে আরস্ত
করি, তারপরে আমাদের দুজনের রচনার ধার1 ছুই ভিন্ন দিকে শিয়াছে, কিন্ত
তাহার রচনার প্রতি আমার অন্ররাগ বাড়িয়াছে বই কমে নাই।
বর্তমানে হামির গল্প ও ব্যঙ্গ গল্পের লেখকের অভাব নাই। সকলের উপরে
আছেন পরশুরাম । আরও আছেন বনফ্কুল, বিভূতি মুখুজ্দে, শিবরাম চক্রব্র্তাঁ,
অ-কৃ-ব বা অছ্িতরুষ্ণ বস্থ। সম্প্রতি গৌরকিশোর ঘোষ বা রূপদর্শী প্রখ্যাত
হইয়া উঠিয়াছেন। ইহাদের সকলেরই রচনারীতি ভিন্ন। ইহাদের সকলের
গল্পেই কিছু কিঞ্চিৎ ব্যঙ্গের মিশাল আছে, কিন্ত পরিমলবাবুই বোধ হয় একমাত্র
লেখক ধিনি নিছক বাঙ্গ গল্প লিখিয়া খাকন।
পরিমল বাবুর ব্যঙ্গ গল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, সে ব্যঙ্গ ইম্পাতের
ছোবার নায় অত্যন্ত হম্বকীয়, তাই বলিয়া ধার কম নয়, এবং উজ্জলতাঁও
যথেষ্ট। ইম্পাতের ছোরাখানা লেখকের কোমববন্ধে কোথায় যে লুন্কায়িত
সব সময়ে দেখিতে পাওয়া যায় না, হঠাং প্রকাশিত হইয়া! আঘাত করে, আধার
বিছ্যতেৰ চমকের মত মেঘাস্তরালে মিলাইয় যায়। এই জন্যই তাহ! ব্যঙের
তলোয়াঁরব চেষে বেশি মারাত্মক। ঘে আঘাত পায় মেই বিভ্রাস্ত বাক্তি যখন
বিশ্ময়ে এদিক ওদিক সন্ধান করে, আর সকলে হাসিতে থাকে এব" সেই সঙ্গে
কিঞ্চিৎ সতর্কতাও অবলম্বন করে।
অত্যন্ত পরিচিত ও সাধারণ ঘটনাকে উল্টাইয়া লইয়া পরিমলবাবু ব্যজ
গল্পের কারবার করেন। মনে ককন এক লমায় লোকে বিলাত-ফেরংকে
“ণকঘরে' করিত, এখন কালের বদল হইয়াছে, বিলাতে এখন কে না ঘায়।
এক গ্রামেব লোকে সকলেই বিলাত ফেরৎ কবল একজন ছাড়া । সকলে
মিলিয়া তাহাকে 'একঘরে; করিল, বিলাত না ধাইবার অপরাধে । তখন সে
সকলের হাতে পায়ে ধরিয়া পুনরায় জাতে উঠিল এবং শীঘ্রই বিলাত যাইবে
স্বীকার করিল। এই ষে প্রচলিত রীতিকে উল্টাইয়। লইয়া ব্যবহার ইহাই
পরিমলবাবুর অধিকাংশ গল্পের সাধারণ কাঠামো। অঙ্গের বৈপরীত্যই বাজ ।
পরিমলবাবুর প্রায় প্রত্যেক গল্পকে উপ্টাইয়া লইলেই একটি “লিবিয়াস' গল্প
হইতে পারে। এ বিষয়ে তিনি বিখ্যাত লেখক ভিফেন লিককেগ শগ্ত্র।
পরিমলবাবুর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প সঙ্কলনের আবশ্যক ছিল | প্রকাশক সেই
কাজটি করিয়৷ রসিক সমাজের ধন্যবাদ ভাজন হইলেন। ণবাঞ্ধে আশা
করিতেছি যে, পাঠক সমাজ বইখানির আদর করিয়া নিজেদের গ্ষমবোধের
পরিচদ্ব দিবেন |
২৩, ২. ৫ ভ্ীপ্রমথনদাথ বিন
নিবেদল
অধিকাংশ গল্লেবই প্রেরণ! লমসাময়িক ঘটনা, সেজন্য গল্পের সঙ্গে তারিখ
উল্লেখযোগ্য । এই গ্রন্থে মক্কলিত ৩৭টি গল্পের পটভূমি গত কুড়ি বছরের
বিভিন্ত্র সময়ের মধ্যে ব্যাপ্ত । গল্পের ভাষায় ও ভঙ্গিতে যে পার্থকা তাতেও
লেখকের হয় তে৷ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ছাঁপ।
রচনাকালের ক্রম অনুযায়ী গল্পগুলি ছাপা হলে ভাল হত, কিন্ত নানা কাখণে
ত। সম্ভব হয়নি, সেই ত্রটি স্থচীপত্রে ংশোধন করা হল ।
মুত্রণপ্রমাদ সামান্য দু চীরটে আছে, এটি এদেশে অনিবার্ধ। যে দিন
নিভু মৃত্রণে বাংল! বই প্রকাশিত হবে সে দিন জাতীয় উৎসবের দিন।
বিহার সাহিত্য ভবনেব শ্রীশক্িকুমার ভাদুড়ী গ্রন্থ শির্বাচনে ব্যঙ্গ কৌতুকেৎ
দিকে ঝুঁকেছেন, সেজহ) এই গল্পগুলি বাছাইয়ের ব্যাপারে ব্যঙ্গের লেশমাত্র
গন্ধ পেলেও মেটিকে তিনি হাতছাড়া করেন নি। “শ্রেষ্ঠ” নামও তারই দেওয়া।
প্রচ্ছদ পরিকল্পনায় শ্রাকালীকিঙ্কর ঘোষ দপ্ডিদ্রার এবং আক্ষরিক অংশে
শ্ীশ্বা মহুলাল কুও্র সহযোগিতা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করছি।
কলিকাতা
স্বার্চ ১৯৫৪ পরিমল গোস্বামী
উপূর্ণেচ্দুকুমার চট্টোপাধ্যায়
শ্রীতভিভাজনেষ্
রল5701ঞ1হক সুী
প্র্যান ১৯৩৩ ক ২৯
মাফিন সিনেমা-সাহ ১৯৩৪ ৫ ২২৩
সাধু হীরালাল ১৯৩৫ রি ১
বৈবাহিক বৈচিত্র ১৯৩৭ নর ১৪
মৃত্যুভয় , রঃ ্
রূপান্তর ১৯৪৫ রা ১৬
একটি দেবনৈতিক গল্প রর রঃ ৬
স্বর্গীয় সমস্যা , রর ঠা
ধাহান্ন সালের পু্জ। সংখা টু ১৭৬
নর্বানন্দ পরিবারের কথা 0 রত
শারাণদার অনশন ১৯৪৬ রঃ রর
আধাভৌতিক র রর রর
নতুন পরিচয় রী টা
প্রতিষোগ , রঃ ক
ফেল প হু ১২৩
কমন পেন্স ্ হি রি
তিনি ১৯৪৭ কী নী
মুক্তির স্বাদ রি ১৪২
আলিবাব] ও ব্রত্নবিলাস ১৯৪৯ রঃ রী
একটি অর্থ নৈতিক গল্প রী রি
সেকাল ও একাল , ক তি
আগন্তকের ভায়ারি ২৩৮
সত্যই কি প্রয়োজন ১৯৫ ্ ৬ঃ
বাটখারা , রা ্
ডেলকি রঃ ও ৬২৪
বিবাহে চ ব্যতিক্রম: রর রা দা
আমাদের “জন্মন্থত্ব” রী রী ১৬৭
অমরত্বের পঁর়তালিশ বৎসএ ও ১৪২
বাত্বহারা রা রঃ ২১৩
প্রায়শ্চিত্ব ১৯৫১ ঃ রিং
প্রথম দৃশত রী হী
কাউকে বলো না ১৯৫২ ৪৫,
দান প্রতিদান ী রঃ রঃ
ক্যা হুয়া র্ ্
বহুরূপী , রি টি
বুমেরাং ১৯৫৩ নু &১
নতুন দাওয়াই ধর
নাধু হীরালাল
১
হীরালাল যখন স্কুলে পড়ে, তখন মে মনে করিম়্াছিল বড় হইয়া! উকিল
হইতে হইবে, কারণ,ভাহার পিতা উকিল ছিলেন। উক্ত হীরালাল যখন স্কুল
ছাড়িয়া! কলেঙ্গে ভর্তি হইল তখন তাহার মত বদলাইয্না গেল, কারণ মে তখন
বিজ্ঞান পড়িতেছে। তাহার মনে হইল, এম. এস-সি. পাঁস করিঘ্া বৈজ্ঞানিক
গবেষণা করিবে । কিন্তু আই. এপ-সি. পাস করিষ্া! তাহার মে মতও পরিবর্তন
হইয়া! গেল। কারণ এই সময়ে তাহার বিবাহ হইল।
হীরালাল বি. এস-নি. পড়িতে পড়িতে স্থির করিল, কোনো বকমে পাসটা
করিয়। ফেলিতে পারিলে মন দিয়া একবার সংসার করিয়৷ দেখিবে। শ্রীকে
ছাড়িযা বংসরের মধ্যে ছয় মান বিদেশে কাটানো তাহার পক্ষে ছুঃলাধা বোধ
হুইল | বিজ্ঞানের ছাত্র হইলেও হীর।লালের মনট1 ছিল অতান্ত নরম। এই
কাহিনীটা উপমা 'প্রধোগ করিয়া ইয়াঞ্রি কবিতে কবিতে বলিবার মতো! হইলে
বলা যাইত-_মনট] ছিল তাহার জমানো! শর্কবার একটি খণ্ড । তাহার এক প্রান্ত
তরল পদার্থে ডুবিয়া গলিয়া ঘাইতেছে, অপর প্রীন্তটি এখনও কিন আছে। কিন্ত
কাহিলীর গুরুত্ব উপম। প্রয়োগের উপযুক্ত নহে, সেজন্ত পাঠক ক্ষমা করিবেন।
হীরালাল যথাসময়ে বি. এস-সি. পাপ করিয়া একবার পশ্চাতে চাহিল।
ঘে উচ্চাকাক্ষ-চিহিত পথ নে পশ্চাতে ফেলিয়া আলিয়াছে তাহার দিকে
চাহিদ্না সে একটু হাসিল মাত্র। হাপিয়। সম্মুখে চাহিল। দেখিতে পাইল,
সম্মুখ ভাগে মাসে তিন শত টাকা উপার্জশকাপী পিত। বৈতরণী পার হইতেছেন।
হীরালাল মৃহূত্কাল চোখ নূজিরা অশ্র এবং পশ্চাঙ বিশেষ বিবেচন! করিয়া
দেখিল, এবং দ্েখিয়াই বুঝিতে পারিপ চাকুরপ্রি চেষ্টায় পথে পথে ঘুরিতে হইবে,
মন দিয়া সংসার কর! আর তাহার হইবে না। কিন্তু কথাটা হীরালালের শিছের
কাছেও কেমন হান্তকর বোধ হইল। কারণ দে অহরহ শুনিতেছে, ফেক্্যকি
দ্শট1-পাঁচটা অফিপে থাকে সে সংসারী, আর ঘে-ব্যক্তি বাড়িতে বপিক্প। খাকে
নে বিবাগী। হীরালাল যেটা সংসার মনে করিয়াছিল, সর্বজনীন ভাষায় সেটা
আশ্রম। আশ্রম !_কি নিষ্ঠুর পৃথিবী |
পবিমল গোশ্বামীর শ্রেঠ বাহ-গল্প
চং
যথাসময়ে পিতৃশ্রাদ্ধ লমাপন করিয়া হীরালাল চাকুরির চেষ্টায় দিন কাটাইতে
লাগিল। চাকুরি কিছুতেই মিলিল না। কাগঞ্জের 'অন্টেড'-কলম দেখিয়া
দরখান্ড দিলে চাকুরি মেলে ন| ইহা সে জানিত, তবু একবার পরীক্ষা করিয়!
দেখিল। অপরপক্ষে বাডিতেও তো আর বলিয়া থাকা যায় না। হীরালাল
তথাপি বাড়িতে বমিঘ্াই কিছু কিছু লেখা অভ্যাস করিতে লাগিল। মফঃসলের
সংবাদদাতা হইয়া মাস তিনেক “বিশ্বদূত' শীমক বাংল! সাপ্তাহিক কাগজ
বিনামূল্যে লাভ করিল, ভীহাল বেশি কিছু হইল ন]।
একটি কঙবা তাহার এখনও বাকি ছিল। এমন দেখ! ষায়, লোকে কোনো
একটা কিছু লাভ করিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছে কিন্ কিছুতেই তাহা
লাভ করিতে পারিতেছে না। তখন লোকে মবীঘা হইবা ওঠে । এবং দেখা
যাক মরীয়! হত'য়। উঠিলেই প্রাত বপ্ত লাভ কবিতে পারে। হীরালালের এই
কৌশলটি দ্রানা ছিল। সে এখন এই কৌশলটিই প্রয়োগ কবিল। সে
মধীয়া হইয়া শহরে চলিয়। আপিল এবং মবীঘা হইঘা “বিশ্বদৃূত'-সম্পাদকের
কাছে কাঁদিয়া পঙিল-যঘে কোনে। একটা কাজ দিতেই হইবে।
সম্পাদক মহাশয় সামান্য পচিশ টাকা বেতনে মংবাদ-অন্বাদের কাজে
হীপালালকে নিযুক্ত করিলেন। ইহা ছাড়া সপ্ত।হ একটি কবিয়া বৈজ্ঞানিক
গ্রবন্ধ বা সংবাদ ইংবেজী পত্রিকা লইতে সঙ্ধলনের ভারও মে পাইল।
ক্রমশং তাহীর কাজের উন্নতি হইল। বেতন বাড়িয়। ক্রমশঃ চলিশ হইল এবং
বিজ্ঞাপন বিভাগ তাহার হাতে আসিতে লাগিল।
কাঙ্গ ঘখন কোথাও জোটে না, তখন পচিশ টাকার কাঁজ দুর্লভ বলিয়।
বোধ হয়, পরে চাঁকবিতে অভ্যন্ত হইয়া! গেলে চ্জিশ টাকা তুচ্ছ হইয়৷ যায়।
তাহাদেরই কাগঞ্গে বিজ্ঞাপন দিয়া কত অশিক্ষিত লোক কত টাকা উপার্জন
করিতেছে, আর সে বি. এস-মি পাস কবিয়া সামান্য চল্লিশ টাকা উপার্জন
করে। এক মিনিটের চিন্তার ফলে চাকরিতে তাহার ধিক্কার আসিল।
এমন সময় মেই শহরে হিম সাধু নামক এক সাধুর আবির্ীব হওয়াতে
সমস্ত ওলট-পালট হইয়া গেল। সাধু হিমালয় হইতে আপিয়াছেন বলিয়া
তাহার নাম হিয় সাধু। হিম সাধু অলৌকিক ক্রিয্ান্থ সকলকে মুগ্ধ করিতে
লাগিলেন, তাহার সংবাদ প্রতি সপ্তাহে বড় বড় অক্ষরে ৎবিশ্বদৃতে ছাপা
হইতে লাগিল। হিম সাধু দশ হাত শৃন্যে স্ুলিয়া থাকিতে পারেন, ঘতদিন
সাধু হীরালাল ত
ইচ্ছা অনাহারে বীচিতে পাকেন। হিম সাধু কুকুরকে বিড়াল এবং বিড়ালকে
ইদুর বানাইতে পারেন। তিনি স্বয়ং মযূর হইয়া পেখম তুলিয়া নাচিয়া হাজার
হাজার লোককে মুগ্ধ করিতেছেন এরূপ সংবাদ 'বিশ্ববৃতে” ছাপা হইল। প্রুফ
দেখিতে দেখিতে হীরালালের হঠাৎ মনে হইল, হায়, মেও যদি মসুর হইমা
নাচিতে পারিত !
হীরালালের মন টলিতে লাগিল। একটিমাত্র নিদ্রাহীন রজনী ভোর
করিয়া! হীরালান হিম সাধুব সঙ্গে দেখা করিয়া আসিল। হিম লাধু এক মাস
শৃহবে ছিলেন, হীরালাল প্রতিদিন একবাব করিয়া দেখা করিল। সাধু খুশি
হইয়া বলিলেন, আগামী চৈত্র মাসের সংক্রাস্তিতে হিমালয়ে আমার সঙ্গে দেখ!
করিস, তোকে দীক্ষা দেব।-_বলিয়া তাহাকে তাহার ঠিকান! লিখিয়। দিলেন।
আগামী চৈত্র সংক্রান্তি। সে ষে পুরা এক বৎসর! কিন্ত এদিকে ঘে
হীরালালের মন উদ্ত্রাস্ত হইয়া উঠিয়াছে__টাকার কল্পনায় সে চঞ্চল-__ সে ষে
আর চাকরি করিতে পারিবে না। শর্করাথণ্ডেব যে দিকটা গলিবার উপক্রম
হইয়াছিল সেই দিকট! ক্রমশঃ কঠিন তইযা উঠিল । আব তো বাশীব আওষাঙ্গ
লয়, সে এবারে চৈত্র-পন্ন্যালীর শিডীর আওযাঁজ শুনিতে পাইধাছে ।
হীবালাল কিছুদিন হইতে অসাধা কিছু করিবাঁব কল্পনা করিতেছিল বটে,
কিন্তু কল্পন। এবপ স্পষ্ট রূপ লইয়া ইতিপূর্বে অর দেখা! দেয় নাই । যদি কার্ধে
পরিণত হয় তাহ হইলে তাহাব উচ্চাশা কিছু পূর্ণ হইতে পাবে। হীরালাল
সম্পাদকের সঙ্গে পীচ-ছযদিন ধরিয। নানান্বপ পবামর্শ করিল। সম্পাদক
অবশেষে বুঝিলেন হীবাপালেব প্র্যানে লাভ ছাঁডা লোকসান নাই এবং তাহাকে
সাহায্য করিবেন বলিয়! প্রতিহ্তি দিলেন ।
৯.
পর-সণ্তাহেই "বিশ্বদূতে' একটি অভিনব সংবাদ বাহির হইল £_-
“পুনবায় অলৌকিক সাধুর আবির্াব ! বিশ্বস্তস্তত্রে জানা গিয়াছে যে,
শহর হইতে ছুই মাইল দক্ষিণে যে জঙ্গল আছে সেখানে রঙ্গনী-বাবা নামক
বিখ্যাত সাধুর আবির্ভাব হইয়াছে! তিনি দিনে ষোল আনা অদৃশ্য হইয়া স্বান,
রাত্রে দেখা দেন। রাত্রে দেখা দেন বলিয়াই তাহার নাম রজনী-বাবা। রাত্রি
বারোটার পর জঙ্গলের কেন্ত্সস্থলে আগুন জলিবে। সেইখানে গেলে তাহার
দর্শন মিলিবে। এই সাধুর বিশেষত্ব এই ধে, ইহার কাছে যে যাহা প্রার্থনা
৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাল-গর
কদ্ধিবে ইনি তাহাকে তাহাই দিবেন। ইনি মন্্পূত একটি ভ্রব্য দান করেন।
এই ভ্ত্রব্য কবচে ধারণ কর্দিলে এক বদর পরে কামনা পূর্ণ হয়।
“ইনি স্বদীর্ঘ এক শত বংসর আমেরিকায় ছিলেন | সেখানে লক্ষ লক্ষ
লোক ইহারই কুপায় কোটপতি হইয়াছে। ইহার সংবাদ এতদিন প্রকাশ করা
নিষেধ ছিল, এখন আর সে নিষেধ নাই। এক শত বংসর আমেরিকাঁম বাস
করিলেও ইনি খাঁটি বাঙালী । বাংলা কথা সবই বুঝিতে পাবেন, কেবল বলিতে
পারেন না। মন্পৃত দ্রব্যের মূল্য বাবদ মাত্র চাপ্লি আন দিতে হয়।
“সাবধান । সাবধান ||
“সাবধান, কেহ রাত্রি বারোটার পূর্বে কিংবা রাত্রি তিনটার পরে জঙ্গলে
থাকিতে পারিবে নাঁ। থাকিলে তাহার কামনা ব্যর্থ হইবে। বজনী-বাবার
বন্ধন কেহ অন্ত্রমান কশিতে পারে না, কেহ বলে দু শত, কেহ বলে টিন শত
বপর। কেহ ইহা মপেক্ষাও বেশি মনে করে। সাবধান, দুই শতের কম
কেহ অন্রমান করিও না, ফরিলে কামনা বার্থ হইবে।”
“বিশ্বদূত' প্রতি শুক্রবারে বাহির হয়, স্থতরাং সম্পাদক অন্গমীন করিলেন,
শুক্রবার প্াত্রি হইতেই সাধুদর্শনের ভীড আরম্ভ হইবে । সেক্গন্য যথারীতি
বন্দোবস্ত কর| হইল। হীবাল।ল বুধবার প্াত্রি হইতেই জঙ্গলে গিয়া আগ্তন
জালাইতে লাগিল। সে বৈজ্ঞানিক রীতিতে মাটব নীচে লুকাইয়! থাকিবার
একটি গর্তও প্রপ্তত করিল। গতেপ উপণে খঙের চাল। উঠিল, গতটা সে
গোপনে শিজ হাতে খুঁড়িল। এই সব প্রাথমিক কাদে জন্য সম্পাদক তাহাকে
তিন দিনের ছুটি দিয়াছিলেন। কোনো হিংস্র দপ্ত আত্রমণ করিলে আত্মবক্ষা
করিতে হইবে, গতের উদ্দেশ হহাই।
বন্দোবস্ত পাক। বেজ্ঞশিক রীতিতে তওমীথ সম্পাদক নিশ্চিন্ত হইলেন।
হীরালাল ঘথাসীতি শুঞ্বার বাঁএ দশটার সময় জঙ্গলে গিষা বমিণ। সঙ্গে
ঘডি ছিপ। ঘডিতে এগারোট। বাজিল, হীবালাল মুখে দাঁড়ি এবং মাথায
চুল পরিল। ঘডিতে সওয়া এগারোটা বাজিল, হীরালাল নিজের কাপড জাম!
গঙ্ডে লুকাইয়া৷ রাখিযা কৌপীন পরিল। ঘডিতে মাডে এগাবোটা বাজিল,
হীরালাল গামে ভশ্ম মাখিয়া! সংগৃহীত কাঠের স্তপে আগুন জালাইয়! দিল।
বাৰোটা বাঞ্জিয়া পনেরো! মিনিট হইতে না হইতে প্রার্থীদের কোলাহলে জঙ্গল
মুখরিত হইয়া উঠিল।
সাধু হীরালাল €
পরদিন সকাল আটটার মধ্যেই সম্পীদকের সঙ্গে হীরালালের দেখা হইয়া
লভাংশ ভাগ হইয়া গেল। মোট আম্নের পরিমাণ ৫* টাকা। প্রাথমিক
খরচ বার্দ গেল ১০ টাকা। বিজার্ভ ফণ্ডে গেল ১০ টাকা। বাকী রহিল
৩০ টাকা । ৩০ টাকা ছুই ভাগে ভাগ করিয়া হীরালাল নিজে ১৫ টাকা
আর সম্পাদককে ১৫ টাক! দ্িল। সম্পাদক প্রথম দিনেই ১৫ টাকা পাইয়া
পরবর্তা দিনগুলির কথা ম্মরণ করিলেন। তাহার এত আনন্দ হইল যে,
হীরালালকে দৃঢ় আলিঙ্গনপাশে বদ্ধ করিয়া! তিনি তাহার শগ্ুস্থলে চুম্বন
করিলেন । এইরূপে “বিশ্বদরুতে'র প্রচারগুণে প্রত্যেকের প্রতি রাত্রে পঞ্চাখ-ঘাট
টাক। করিয়। লাভ হইতে লাগিল ।
কিন্ধু কাব বলিয়াছেন, মানথের চিরদিন শমান যান না। কবি একথা
কেন বলিয়াছেন, তাহার কারণ অন্ঞাত। মন হগ্ না বলিলেই ভাল
করিতেন। কিন্তু এখন আর উপায় নাই। বৈচিত্র্য এখন মানুষের “চরদিনে?
একবপ জোণ করিয়াই প্রবেশ করিতেছে ।
হীরালালের অবৃষ্টে এই শথও টিকিল না। লে ক্রমাগত অসাধু উপায়ে
সাধু সাজিম| নিজের উপর বিরক্ত হইয়! উঠিল। বিরক্তির প্রধান কারণ
লাভের অর্পেক অংশ অকারণ সম্পাদককে দিতে হয়। ব্যবসায়ের মূল নীতি
অন্রলাবে ইহা অন্যাঘু নহে, কিন্থু হুইজনের ব্যবসায়ে দুইজনেই ম্য।নেজিৎ এজেন্ট
ইহ তাহার ভাল লাগিল না। তছপরি রঙ্গনী-বাবা সম্পর্কে যানতীন্ম প্রবন্ধ
এবং চিঠিপত্র তাহাঁকেই লিখিতে হয়, সম্পাদক কিছুই লেখেন না। একজন
কর্মী একজন উপস্বহ্বভোগী ইহা তাহার অসহ বৌধ হইতে লাগিল। সে
ভূলিয়া গেল ঘে “বিশ্বদূত' কাগঞ্জ তাহার নিজের নহে, অথচ এই কাগজের
প্রচারের ফলেই তাহার এই ভাগ পরিবর্তন ।
হীবালাল কর্তব্য স্থির করিল। অর্থাৎ সে একদিন আর জঙ্গল হইতে
ফিরিল না। সে সেদিন পূর্বাজিত সমস্ত টাকা (সমস্তই নোটে রূপাস্তরিত )
এবং সেই রাত্রের উপাঞ্জিত প্রায় চারি শত পিকি লইয়! রাত্রি সাড়ে তিনটা
সময় নিরুদ্দেশ হইয়া গেল । নিকদ্দেশ হইবার দিন যাহ! ঘটিয়াছিল-তাহা। এই_:
বৃহস্পতিবার রাত্রে জঙ্গলে যাইবার পূর্বে হীরালাল লিখিল, “ভয়ানক
সংবাদ! রুজনী বাবা কোনো অজ্ঞাত কারণে অন্তর্ধান করিয়াছেন । আবার
কবে ফিগ্বিবেন তাহা কেহ বলিতে পারে না। দুই শত বৎসরের পূর্বে ফিরিবেন
ষ্ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ বাঙ্গ-গলপ
এন্্ুপ আশা নাই।” (ক্পৌজিটারগণ ইহা ছাপিতে গিয়া চঞ্চল হইয়া
উঠিয়াছিল, কিন্তু হীরালাল বলিয়াছিল, বজনী বাঁবার নিজস্ব সংবাদদাত!
সংবাদ দিয়াছেন, এবং ব্পিয়! দিয়াছেন কাগজে ছাপার আগে এ সংবাদ যেন
প্রকাশ না তয়। এ বথা শুনিয়া! তবে কম্পোজিটারগণ আশ্বস্ত হয়। )
হীনালাল লেখার শেষ প্রুফ দেখিয়া ছাপিবার অর্ডার দরিয়া তবে অফিস
হইতে বাহির হইল, এবং এ তাহার শেষ বাহির হওয়।।
হীরালাল সোজা! নিজের গ্রামে গিয়া উঠিল । পথে তাহার মনে হইয়াছিল
এইবার কিছুদিন শান্তিতে থাকা যাইবে, কিন্ত দুই দিন যাইতেই হীরালাল
বুঝিতে পারিল সংসার মরুভূমি এবং শীস্তি মরীচিকা।
টাকার পথে সে যে আলো! দেখিয়াছিল, গৃহের পথ সে আলো নাই। গৃহ
ছায়াময়, অর্থাৎ বিষাদশ্্ন । অর্থাৎ বিষময | তাহার শ্বাসবোধ হইবার উপক্রম
হইল। বন্ধনে তাহার মুক্তি মিলিল না। সে হিমালায়র সাধুর কথা চিন্তা
করিতে লাগিল। চিন্তা করিতে করিতে তাহার মন ক্ষিপু হইয়া উঠিল এবং
ক্ষিপৃতার উগ্রতা সে একদিন খমন্ত স্ত্রীকে ফেলিয়া চৈতন্যদেবের মতো গৃহত্যাগ
করিয়া গেল ।
গ্রামে প্রচার তইয়া গেল, হীরালাল শন্ন্যাপী হইয়া গিয়ান্ছ। কিন্ এক
মাস পরে হীরালাল নিজে ঠিকানাহীন একখানা চিঠি দিয় জানাইল, সে পাধু
ইইযাছে। চিঠিখান। অবশ্য চৈত্র সঞরান্তির পরে লেখা ।
৫
ছুদন পূর্বে শিলিগুডি অঞ্চলে অতিকাধ মাঁনষের পায়ের চিহ্ন আবিষ্কৃত
হইয়াছে । ইহাতে 'অমৃতবাজার পত্রিকা শঙ্ষিত হইযাছিলেশ, এবং
'আনন্দবাজাব পত্রিকা” বিদ্ধপ কবিষা বলিম়্াছিলেন, উহ! কিং-কংএর পদচিহ্ন।
কিন্ধ কিং-কংএর পদচিহ্ন যে নহে তাহার একটি কারণ কিং-বং বলিয়া! বাস্তব
জগভে কোনো অতিকায় প্রাণী নাই। সিন্মো-জগতে কিছুদিন আগে এক
কিং-কংএর আবির্ভাব ঘটিয়াছিল, কিন্তু মে কিং-কংএর পা ছিল না এবং পা ছিল
শা বলিয়। পদচিহও ছিল লা। সিলেমাম্ ধাহারা কিং-কং দেখিয়াছেন তাহার
লক্ষ্য করিয়াছেন কিন! জানি না_খন কিংকংএর বিরাট মৃতি দেখানো
হইতেছিল, তখন তাহার পায়ের দিকটা সম্পূর্ণ অদৃশ্থ ছিল । হাটু পর্যস্ত স্পষ্
ছিল তাহান্র নীচের অংশ ন্থচ্ছ হইয়া একেবারে অদৃষ্ত হইয়া গিয়াছিল।
সাধু হীরালাল
ৃ ঘিতীয়তঃ সিনেমার কিং-কং অতিকায় মাচুষ নহে? অতিকার হৃহ্ধমান | তৃতীয়তঃ
কিং-কং শব্দটির উৎপতি-স্থল চীন দেশ এবং চীন দেশের কোনো মানুষই
অতিকায় নহে, তাহারা বেটে । স্থতরাৎ শিলিগুড়ি অঞ্চপ্রের অতিকায় মানুবের
পরচিহ্ন সম্বন্ধে 'আনন্দবাজারে”র সন্দেহ অমূলক ।
আসল ব্যাপার কি তাহা বলিতেছি। হীরালীল যে দিন হিম সাধুর নিকট
হইতে দীক্ষা লক রূপান্তরী বিগ্যার কিয়দ্ংশ আয়ত্ত করিল, সেদিন সে ঠিক
করিল, এইবার তাহার দেশে ফিরিবাব সময় হইয়াছে । কারণ এইবার সে
তাহার অলৌকিক ক্রিয়্া-কলাপ প্রকাশ্যে দেখাইতে পাবিবে। এইবার সে দশনী
লাভ করিয়া কোটিপতি হইবে এবং অবশেষে একদিন সমগ্র পৃথিবীর সম্রাট
হইয়া মহান্ধথে কালম্বীপন করিবে । ইহা মে একপ্রকার স্থির করিঘ়া
ফেলিল।" কিন্তু দেশের একটি সংবাদ মে জানিতে পারিল না।
সে জানিতে পারিল না যে, যে-বিশ্বূত' একবার তাঁহাব উন্নতি
পথ পরিষ্কার কবিধা দিয়াছিল, তাহার পলাঘনের পব সেই 'বিশ্বদূত'
ধীরে ধীরে তাহার সব শঠতার কথা কৌশলে ব্যক্ত করিয়া দিয়াছে । সে
জানিল না যে, এতদিন সপ্তাহের পব সপ্তাহ “বিশ্বদূত' তাহার জ্যাঁচুবিৰ কথ।
প্রকাশ করিয়া গ্রাহক সংখ্যা চার-পাচগডণ বাভাইয| ফেলিয়ছে। কি করিয়াই
বা জানিবে? ভীরালাল সংবাদ-পত্রের জগত দুরের কথা, এতদিন লে মান্থষের
জগতেরই বাহিরে পড়িয়া ছিল। এতদিন মে ছিল কাঞ্চনজজ্ঘাব কয়েক হাঙ্জার
ফুট শিচে হিম সাধুর আশ্রমে ।
হীরালাল মানুষের পৃথিবীর সংবাদ কিছুই না জানিয়া, একদিন কাঞ্চন-
জজ্ঘার অজ্ঘা-প্রদেশ হইতে দেশের পথে যাব্র/ করিল। মাটির পথে নহে,
আকাশের-পথে । স্পেলিফিক গ্র্যাভিটির সুত্র অন্থসারে সে শিজেব দেহকে এতদূর
বাডাইয়! লইল যাহণীতে সেই বিশেষ ওজনের দেহটি আকাশপথে বিশা' আয়াসে
ঘণ্টায় এক শত মাইল উডিয়! আসিতে পারে । তাহার দুইখানি হাত ভানায়
পরিণত হইল। তারপর হীরালাল উড়িল। গভীর রাত্রে আকাশে কেহ
চাহিয়! দেখিল না, আর দেখিলেও হয়তো! মনে করিত বিমান উডিতেছে ।
শিলিগুড়ির কাছাকাছি আপিয়া হীরালালের বড় ইচ্ছা হইল একবার
দেশের মাটি স্পর্শ করে। বহুদিন লে মাটি স্পর্শ করিতে পারে নাই) এক
৮৮ পরিমল গোষ্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্-গলপ
জঙ্গলের ধারে নামিয়! হীরাপাল কিছুক্ষণ বিশ্রাম করিয়া লইল | মাটির স্পর্শ
তাহার কাছে বড মনোরম বোধ হইল । ( এই স্থানের মাটিতেই দে তাহার
অজ্ঞাতসারে পদচিহ্ন রাখিয়া গিয়াছিল এবং এই পদচিহ্ন লইয়াই সংবাদপত্রে
আলোচন] তইয়াছে । )
বশেদে হীরালাল দেশে পৌছিল। হীরালাল ছাত্রজীবনে একদিন গৃহের
প্রতি আকর্ষণ বশত প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল, মন দিয় সংসার করিবে, অর্থাৎ
একাগ্র মনে বাড়ি বসিয়া! থাকিবে । কিন্ত সংসার স্পর্শ পাইযাই বুঝিয়াছিল
সংসারের মায়া সম্পূর্ণ না কাটাইলে সংসার করা দুঃসাধ্য । কিন্তু আঙ্গ তাহার
অবস্থার পরিবর্ন হইয়াছে | আঙ্গ সে হীবালাল নহে, সাধু হীরালাল। আজ
সে অলৌকিক ক্ষমতার অবিকাবী সাধু ভীরালাল। আজ সে পৃথিবীর
সম্রাটের পদে আপ্রেটিস হীরালাল, এবং কয়েক বৎসরের মধ্যেই সআট
হীবাল[ল। স্থতরাং গৃহের প্রতি তাহার আকর্ষণও লাই, বিকর্ষণও লাই
আছে শুধু নবলব ক্ষমতা বাক করিবাব উগ্র আকাক্ষ্ষ। |
সেআজ শ্ুশু তাহার স্বীৰ উপর নহে, জগতের উপর প্রভৃত্ব কবিতে
আসিয়াছে । সে আজ লক্ষ লোকেব সম্মুখে মধর হইয়া নাচিবে, বিডাল হ্ইয়া
ক্লীর কোলে বলিবে।
কিন্ক গৃহে পৌছিয়া এ সব কিছুই করিবাণ দরকার হইল ন।। দেখা
হইবামাত্র তরী নির্বোধের মত চিষকান কবিয়া কাদিযা বলিল, “ওগে। তোমীকে
পুলিসে ধরবে গো” ইত্যাদি । গ্রীনস্ুদ্ধ লৌক কান্না গুনিযা জানিয়া গেল
সাধু হীরালাল ফিরিয়া আদিয়াছে। স্থতিরা" কথাটা পুলিসের কানে যাইতে
দেরি হইল নাঁ। পুলিস হীরাপালকে ধপ্িতে আপিল । হীরালীলের হাতে
আর সময় নাই । এক মিনিটে কর্তবা স্থির করিতে হইবে । একবার মনে
হইল পাখী হইয়া উড়িয়া যাইবে, একবার মনে হইল কীট হইয়। মাটিতে
লুকাইবে। কিন্তু তাহাতে কি লাভ হ্ইবেঃ পুলিল জানিবে হীরালাল
অলৌকিক ক্ষমতাবশতঃ: ফাকি দিল এব" বাটিয়াই রহিল-_-কোথাও
শান্তিতে থাকা যাইবে না। স্বতরাং পুলিসের আসা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করিল,
এবং পুলি ষখন পঁচিশ হাতের মধ্যে আসিয়া পড়িল তখন তাহাদের সন্ুখ
দিয়া হীরালাল ছুটিয়া পলাইতে লাগিল। পুলিস তাডা করিল, হীরালাল
ছুটি গিয়া নদীতে ডূবিয়া গেল, আর উঠিল না। পুলিস চেষ্টা কৰিমাও আর
তাছার সন্ধান পাইল না। সকলেই জানিল হীরালাল মবিয়াছে।
কিন্ত হীরাসাল কি সত্যই মরিল ? না, হীরালাল মরিল না, হীরালাল
সাধু হীরালাল ্
কুমীর্র হইয়া জলে দিন কাটাইতে লাগিল। তাহার ত্বী জলে সান করিতে
গেলে একদিন মাত্র সে তাহাকে দেখা দিয়াছিল। কিন্তু একথাও তাহার
স্ত্রী সকলকে বলিয়া ফেলিল। তখন আবার দেশময় হৈ-হৈ পড়িয়া! গেল।
কিছুদিন পূর্বে দিনাজপুর জেলায় এক নদীতে কুমীর দেখা গেল, লকলে বলিল
এ হীরালাল। একটা কুমীর মারা গেল, সকলে বলিল এ হীরালাল মারা গেল।
এ দুইটি সংবাদই পাঠক 'অমুতবাজার পত্রিকা" পড়িয়াছেন।
আমল ব্যাপার কি, তাহা কেহ জানে না। হীরালাল মরে নাই। সে
কুমীর অবস্থায় প্রায় মাত দিন জলে থাকিয়া চিস্তা করিতে লাগিল, কি করিয়া
পুলিপকে জব্ধ করা ঘায়! একবার তাহার মনে হইল সন্ত্রাসবাদী হইয়া ত্রমাগত
পুলিস ধরিয়া খাইবে। কিন্তু ইহা তাহার মনংপুত হইল না। একবার
ভাবিল কমুনিস্ট হইয়া কলওয়ালাদের ধরিয়া ধরিয়া খাইবে। ইহাতে পুলিস
প্রকৃত অপরাধী ধরিতে না পাইয়া অপদস্থ হইবে। কিন্তু তখনই তাহার মনে
হইল সে সাঁধু হইয়াছে, স্থতরাঁং যদি প্রতিশোধ লইতে হয়, মহৎ প্রতিশোধ
লওয়াই ভাল । তাহার মাথায় একট! বুদ্ধিও খেলিয়! গেল, এবং নিজের
বুদ্ধিতে খুশী হইয়! কুমীপ অবস্থাতেও হীরালাল খানিকটা হাসিয়। লইল। হা
এইবার ঠিক হইয়াছে! এইবার হীধালালকে ভাড়া করা দুরে থাক্, পুলিস
খাতির করিয়া অন্ত পাইবে না। শুধু পুলিস নহে, স্বয়ং ব্ড়লাট তাহাকে
খাতির করিবেন | ইহাকেই বলে প্রতিশোধ
ভীবালাল জল হইতে এক লাফে স্টাড বুল হইয়া! ডাডায় উঠিয়া আসিল ।
(১৯৩৫)
রূপান্তর
বিজ্ঞান এসে ব্যাখ্যা না করা পর্ধস্ত অনেক জিনিসই আমাদের সাধারণ
বুদ্ধিতে অলৌকিক ব'লে মনে হয়। এই বকম একটি অলৌকিক কাহনীর
ফথাই বলছি।
/বশি দিনের ঘটনা নয়।
রেছারেণ্ড কিং আমাদের পাড়ায় থাকেন। একেবারে খাটি ইংরেজ এবং
খাটি টান । সেবাধর্সে, অহঙ্কারহীনতায়, বিনয়ে, আদর্শ পুরুষ। তাকে ভাল
না বাসে এমন লোক আমাদের গড়িয়াহাটা অঞ্চলে নেই।
একটি দোতলা বাড়িতে তিনি থাকেন, কিন্ত নীচের তলাটি একটি গরিব
পরিবারকে অতি শস্তায় ভাড়া দিয়েছেন_তত শস্তান্ব কলকাতাদ্দ এ রকম
একতল। পাওয়া যায় না।
তিনি বিশেষ ক'রে গরিবদের রন্ধু। তীর চোখে ছোটবড় ধনীদরিদ্ডে
ভেদ নেই , ভারতনাপী বলে কাউকে তিনি দূরে সরিয়ে রাখেন না, সবাইকে
বুকে টেনে নেন। রোগীর সেনা করেন নিক্গহাতে | বস্তী অঞ্চলে সবাই তাঁকে
দেবত] ব'লে জানে ।
প্রথম প্রথম আমরা ক'জন বন্ধু তাকে সন্দেহ করেছি, সেবাধর্মের আবরণে
আসলে তিনি স্্ীষ্টানধর্ম গ্রচার করতে চান। কিন্তু ল্প দিনেব মধ্যেই সে ভুল
আমাদের ভেঙেছে।
তার সরল মনে কোনে। কু-অভিপ্রায় থাকতে পারে না, আমবাও তার
কাছে আমাদের মনের কথা খোলাখুলি তাবেই বলতাম। তিনি যে আসলে
সেবাপ্রাপ্ধ লোকেদের খ্রীষ্টান করতেই চান, আমাদের মনের এই সন্দেহের
কথাও একদিন তাঁকে বললাম ।-_
আপনি আমাদের এত উপকার করছেন, গরিব রোগীকে ওষুধ দিচ্ছেন,
সহাম়হীনকে আর্তকে নিজহাতে সেবা করছেন_-এ পর্বস্ত বেশ ভালই, এ জন্টে
আমরা আপনার কাছে বিশেষভাবে খণী, কিন্তু শেষে যদি দেখি আমাদেরই
কোনো বদ্ধুকে আপনি স্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত করেছেন, তা হ'লে আপনার উপর
আনাদের সবার শ্রন্ধ! নষ্ট হয়ে যাবে।
রেভাবেণ্ড কিং এ কথার উত্তরে হেসে বললেন, সে ভব আপনাদের নেই,
আমি খাইস্টে্স বাণী আমার কাজের ভিতর দিকে প্রচার করি--জনসেবার
বপাস্তন ১১
ভিতর দিয়ে আমি তাঁরই সেবা! করি, তান বেশি ঠেতা আমি কিছুই চাই না।
আমার ধর্মে দীক্ষিত ক'রে অকারণ শ্রীষ্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা আমি গৌরবের
মনে কবি না।
তিনি আরও বললেন, ধর্ম হচ্ছে সম্পূর্ণ অস্তরের জ্রিনিস, বাইরে একটা নাম
তাঁর থাকে বটে কিন্তু পৃথক ভাবে ভার কোনো দ্ধামই নেই । কোটি কোটি
খ্রীষ্টান আজ হিংলায় মত্ত, তারা৷ খ্রীষ্টান হয়ে পৃথিবীর কি লাভ হ'ল?
রেভাবেওড কিং-এর কাছে আমাদের মাথা নত হ'ল। এরকম কথা একজন
ীষ্টানের মূখে এই প্রথম শুনলাম। আমরা তার ভক্ত মাত্র ছিলাম, এবারে
তার অন্রগত হযে পড়লাম । আমাদেব মধ্যে প্রীতি এবং অন্তরঙ্গতা এত বেডে
গেল যে, শেষ পর্ণস্ত আমরা কয়েকক্জন বন্ধু তার সঙ্গে রীতিমতো সেবার কাজ
আরম করলাম ।
কিন্ত তাব সঙ্গে কাজ ক'রে আমর! পারুব কেন ?
তার শাদ| চুলের নিচে থে শুভ বুদ্ধি এবং শাদা দাড়ির নিচে ঘে সহদয়তা
ছিল, তা আমাদের প্রতিপদে লঞ্জ। দিতে লাগল । তাঁর ঘাট বর বয়সেও থে
উদ্যম এবং কর্মপট্ুতা ছিল তাও আমাদের মতো যুবকদেব মধ্যে কারো ছিল না।
তবু আমরা যতদূর সম্ভব তীাব সঙ্গে থেকে তার কাজে সাহাষ্য করতে
লাশলাম। আমাদেবই প্রতিবেশীরা কি রকম দুঃস্থ অবস্থায় দিন কাটায় তা
আমর! এতদিন দেখেও দেখি নি। অন্ুস্থ হ'লে তারা বিনা চিকিৎসায়,
বিনা পথ্যে মারা পডে--তা আমরা এতদিন এমন ক'রে প্রত্যক্ষ করার স্থষোগ
পাই নি।
আম্র| তার জনপেবার ন্ধূপ দেখে বিশ্মিত হয়ে তার কাছে কত কৃতজ্ঞতা
জানিয়েছি । বলেছি, আপনি এদের জীবন দান করেছেন ।
কিন্ত তার উত্তরে তিনি বলতেন, একজনকে ছু'জনকে বাচিয়ে আপনাদের
বিবাট ভারতবর্ষের দুংখ ঘোচাব কি ক'রে? আমি যে সেবা করছি, এ লেবার
মধ্যে আস্ত সম্পূর্ন গৌরব অন্থভব করতে পারি না।
কেন ?- আমরা প্রশ্ন করি।
এদের ঘেমন সেবা করছি, তেমনি সেই সঙ্গে আপনাদের সবাইকে যদ্ি
এদের প্রতি দৃষ্টি ফেরাতে পারতাম তা হ'লেই আমার সেবা সার্থব্হ'ত।
তারপর একটু থেমে আমাদের দিকে চেয়ে রইলেন। বোধ হয় বুঝতে
চেষ্টা করলেন__আমরা তাঁর কথাটির মর্ষ ঠিক মতো গ্রহণ কর. তপেরেছি
কিনা। আমাদের দিকে চেয্সে তিনি কি বুঝলেন জানি না, তবে তিনি বলতে
১২ পরিমল গোস্বামীৰ শ্রেষ্ঠ ব্ঙগ-গল্প
লাগলেন, আপনাদের দেশের ধলাককে আপনারা অম্পৃশ্ট ক'রে বেখেছেন, অথচ
এ দেশের লৌক ভার|। আপনাদের কাছে তার! কিছুই পায় না। আমরা
দুর দেশ থেকে এনে আপনাদের অপরিচিত আদিবাসীদের মধ্যে গিয়ে মিশি,
তাদের পেত! করি, তাদের সঙ্গে আধুনিক জগতের পরিচয় করিয়ে দেবার চেষ্টা
করি, তারপর যখন আপনার! দেখেন ওরা আমাদের ভালবাসতে শুরু করেছে,
তখন মাপনার! আমাদের বিরুদ্ধে লাগেন। কিন্ত বলুন তো আমাদের দোষ
কি? আপনারা কোনো দিন যাদের স্পর্শ করেন না, চেনেন না, তারা বে
আপনাদের দেশের লোক, একথা বলতে 'আপণাঁদের মতো শিক্ষিত লোকের
লজ্জা পাওয়া উচিত নয় কি?
লজ্জা ষে পাওয়। উচিত এ বিষিয়ে আমাদের মনে কোনে সন্দেহ থাকে না।
রেভাবেগ্ড কিং শুধু সেবকই শন, তিনি মানি হিলাবে সব দিক দিয়েই
মহং| তীর সঙ্গে কা ক'রে আমরা শিজেদের ধন্য মান করেছি। মানুষের
সেবা করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, এ কান্ট সহঙ্গ নয়। পদে পদে
অহ্থবিধ। আছে। শাদের দেবা করতে যাঁওয়। যায়, তাবা সন্দেহ কবে, তারাই
অনেক সময় বাধা দিতে চাম়। চাখিদিকে সপ্দীর্ণতা এবং স্বার্থপরতা স্পষ্ট হয়ে
ওঠে চোথের সামনে । উৎসাহ কমে যায়, মলে হয় কি দায় পড়েছে এ সব
করবার!
কিন্ধু যখনই উৎসাহ নিবে যায়, বেভাবেগ্ড কিং-এর কথা মনে পডে। তিনি
সকল সঙ্কীর্ণতার উপ্রে মাথাটি সর্বদা তুলে ধারে আছেন। শিশুর মতো সরল
হাপি তার মুখে লেগে আছে। সে হাসি তার অন্যবে পরম আনন্দের
প্রতিফলন। নেই ছবিটি মনে জাগে । তখন আমবা আবার উৎসাহ পাই।
একটি বিশেষ কেন্দ্রে আমর! জনসেবা আবস্ত কবেছিলাম, আমাদেরই
বালিগঞ্জ অঞ্চলের এক বস্তীতে, কিন্ত আমাদের কর্মক্ষেত্র অল্পদিনের মধ্যেই
বিস্তৃত হ'য়ে পড়ল।
তার কারণ জাপানী বোমা পড়তে শুরু করল কলকাতাবাশীদের মাথায়।
দলে দলে লোক পালাতে লাগল শহর ছেড়ে। মানুষ ভয়ে যে কি পরিমাণ
দিশাহারা হয়ে পড়ে, তার ব্যাপক ছবি দেখলাম এই প্রথম; ষার ষা কিছু
ছিল-_তাই নিয়ে ঘর ছেডে বেরিয়ে পড়েছে । কিন্ত ট্রেনে চাপার পর দেখছে,
সম্পত্তির বারে! আনাই নেই। ঘোডার গাড়ি, ট্যাক্সি, রিকশা! দবাই দশগুণ
বেশি ভাড়া দিয়েছে, তারপর টিকিট করার ব্যাপারে ধার ঘা! সাধ্য ঘৃস দিয়েছে )
রূপাস্থর ৯৩
ট্রেনে একটু জায়গা পাওয়ার জন্যেও প্রচুর টাক দিতে হয়েছে, উপর্স্ত কুলিবা
মালপত্র নিয়ে সরে পড়েছে । ট্রেনে ছেলেমেয়ে বাই মিলে পদদলিত এবং
নিপি্ট হয়ে দেশে গিয়ে যেটুকু অবশিষ্ট রুইল, তাও গেল সেখানে চোরের হাতে ।
রেভারেণ্ড কিং একবার মাত্র বলেছিলেন, অনহায় লোকদের দূর্ঘশার স্থযোগ
নিষ্বে এদেশের ভদ্র অভদ্র সবাই একসঙ্গে চোর হ'য়ে ওঠে_ পৃথিবীতে আর
কোনে দেশে এ রকম নেই।
তাঁকে এবারে অত্যন্ত বিচলিত দেখা গেল। আমাদের ক'জনের সাধো
যতদূর কুলোয় ঝগড়! মারামারি ক'রেও পলায়মীন যাত্রীদের ট্রেনে ওঠায় সাহাঘ্য
করতে লাগলাম ।
সেদিন বাত নটা আন্দাজ সময় আমবা হাওড়া থেকে ফিরছি । আমর!
ডালহৌসী ক্বম়্ারের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ সাইবেন বেছে উঠল।
তাড়াতাড়ি আমরা থে যেখানে পারলাম গতে আশ্রয় নিলাম। কিছুক্ষণের
মধ্যেই বোম। পড়তে শুরু হ'ল । মনে হ'তে লাগল বোমা লব আমদের কাছেই
পড়ছে-_মৃত্যু অশিবার্য। ভাবতে ভাবতেই আমাদের গর্তের খুব কাছেই
ভীষণ এক আওয়াজ
রেভারেগড কিং আশ্রঘে ঢোকার আগেই বিপদের কথা ভেবে চঞ্চল হ'য়ে
উঠেছিলেন । কত লোক হয়তো মরবে, অথচ মে সময় বেরিয়ে কিছু করবার
উপায় নেই ।
স্থণীর্ঘ তিন ঘন্টা পরে অল ক্লিয়ার বাঙ্জল। তখন বেরিয়েই নিজেদের
কে কোণায় আছে খোজ নিতে গিয়ে দেখি, র্বনাশ হয়েছে । রেডারেণ্ড কিং
অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। এআর-গীর তংপর্তায় তাকে হাসপাতালে নেওয়।
হ'ল, ডাক্তার বললেন, “শক” পেয়েছেন, অবস্থা অনিশ্চিত ।
উপায় ক? আমা ব্যস্তভাবে প্রশ্ন করলাম ।
ডাক্তার বললেন, দেখা] যাক। বলেই চিকিৎসা শুরু করলেন।
বেভবরেগ্ডের সম্পূর্ণ স্থস্থ হ'তে বেশ কিছুদিন লাগল। হ।সপাতাল থেকে
তাকে বাড়িতে এনে আমরা দীর্ঘদিন তার শু! ক'রে তাকে সবল কবে
তুললাম এবং তিনি সবল হওয়া সত্বেও আমরা তাকে আরও ছু'এক মাস বিশ্রাম
নিতে অন্থরোধ করলাম। তিনিও সহজেই রাজি হলেন এবং বলজ্লন, কিছুদিন
শুয়ে থাকতেই চাই, ঘরের খেয়ে বনের মৌষ তাড়াতে আর ইচ্ছে করছে না।
এ কথার অর্থ তখন বুঝতে পারি নি, কিন্ত পরে পেরেছি । ভথন
ভেবেছিলাম এত বড় একটা দৈহিক বিপর্ধদ্র কাটিয়ে উঠে তীর মনে অবসা
১৬৪ পরিমল গোন্বামীর শ্রেষ্ঠ বাহ-গল্প
এসেছে! তাই মনে হ'ল তাকে নিয়ে রোজ একটু একটু বেডানো৷। দরকার ।
তিনি এতে সহজেই বাজি হলেন।
রেভারেগড কিংকে সঙ্গে নিয়ে আমি সেদিন ট্রামে উঠলাম । একটা খালি
সীট পেয়ে আমর] দু'জনে একসঙ্গে তাতে বসলাম । বেভাবেণ্ড কিং বসলেন
জানালার ধারে, আমি তীর পাশে । ইতিপূর্বে ট্রামের মধ্যে কখনও তাকে বিশেব
বসতে দেখি নি, কেননা অন্য কেউ দ্রীডিয্বে থাকলে তিনি আমন ছেডে দিয়ে
নিঙ্গে দ্াড়িয় থাকেন। সে দিন উ্রীমে লোক বেশি ছিল না, শহরের লোক
প্রায় খালি হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ চলতেই হঠাৎ অন্ভভব করলাম, রেভারেওড কিং তার ছুটি হাটু
জাপানী পাখার মতো ছড়িয়ে আমাকে ঠেলে রাখলেন । তার পাশে আমার
আসন এযন সঙ্ীর্ণ হয়ে এলো যে, তৎক্ষণাৎ সতর্ক না হ'লে আসন থেকে নিচে
পড়ে ধেতাম।
আমাকে তিনি এমন ঠেলে রাখলেন যে, হঠাৎ আমার মনে কেমন যেন
একটা সন্দেহ ছ্গেগে উঠল । কেনন! এমন স্বার্থপর ব্যবহার ভীন্ন কাছ থেকে ষে
কখনও আশা করা যায় লা। তবে কি তার চণ্িত্রে কোনে গুরুতর পরিবর্তন
ঘটে গেল? আর এই কি সেই পরিবর্তনের প্রথম লক্ষণ?
আমি মনোযোগেপ সঙ্গে তান বাবহার এবং চালচলন লক্ষা ক'রে ঘেতে
লাগলাম। কদিনের মধ্যেই তান সম্পর্কে আমাদের সমন্ত মত বদলে গেল।
ভার বাবহারে ক্রমেই মর্মাহত হ'তে লাগলাম।
তিনি সেবাধর্সের নামও আর করেন না। টামে উঠলে তার মতো স্বার্থপর
আর দেখা যায না। ঠিডের মধ্যে শীট থেকে কেউ উঠে গেলে (দেই সীটেব
কাছের লোকেন্ন দাবী অগ্রান্থ ক'রে তাদেব ঠেলে বিদ্যুৎ গতিতে গিয়ে সেই
খালি আমন দখল করেন। শুধু তাই নয়, যার পাশে বসেছেন তাকে হাটু
দিয়ে ঠেলে রাখতে চেষ্টা করেন। তখন দু'জনে রীতিমতে। ঝগডা লেগে যাম্ন।
ক'দিন পরে আরও একটি খবর শুনে স্তত্িত হয়ে গেলাম। আমাদেরই
সেবকদলের একজন এসে বলল, বেভারেণ্ড কিং বন্তীতে গিয়ে, সেখানকার
প্লোকদের কাচ্ছে এতদিন থে ওষুধ এবং পথ্য দেওয়া হয়েছে, তার জন্তে নাকি
কিছু কিছু টাক আদায় করছেন। বস্তীর লোকের! প্রায় ক্ষেপে গেছে।
বলছে, আগে জাঁশগে তীরা ওষুধপত্র কিছুই নিত না!।
আমাদের এক বন্ধু একধিন এলে বললেন, এ সব কি শুনছি ?
কপাস্তর ১
কি?
রে্ভারেণ্ড কিং-এর নামে নানা রকম কুৎ্স। রটাচ্ছে সবাই।
তাঁম কি শুনেছ?
শুনেছি যা, তা! শুনলে কেউ বিশ্বাম করবে ন|।
এখন আর পৃথিবীতে অবিশ্বাস করবার কিছুই নেই, তুমি নির্ভয়ে বল।
বন্ধু বলতে লাগলেন, রেভারেণ্ড কিং-এর নিচের তলার ভাড়াটেদের সঙ্গে
তার ভয়ানক ঝগড়া চলছে। তিনি তাদের উঠে যাবার জন্যে নোটিস্
দিয়েছেন ।
কেন?
কেন বুঝলে না? পনেরো টাকা ভাড়া পাচ্ছিলেন, কিন্তু ও বাড়ির ভাড়া
এখন আশি টাক। সহজেই পাওয়! যাবে। যার! আছে তাদের কাছ থেকে তো
আর বেশি ভাড়া নিতে পাচ্ছেন না, চক্ষুলচ্মাতেও আটকায়। তাই ওদের তুলে
দিতে পারলে নতুন ভাড়াটে পাওয়] ঘাবে বেশি টাকায়।
যার! আছে তারা যদি না ওঠে?
উনি নিজের জন্যেই নিচের তলাটা চান, এইভাবে নোটিস্ দিয়েছেন ।
কিন্ত যারা আছে তারা নতুন বাড়ি না পেলে উঠে ঘেতে পারছে ন|।
রেভারেগ্ড কিং তাদের নানা ভাবে অন্থবিধায় ফেলেছেন সে জন্যে। উপর
থেকে জঞ্জাল ফেলছেন, সব উড়ে গিয়ে লাগছে তাদের গায়ে।
বলকি?
আমিও তো অবাক হচ্ছি এসব শুনে । আচ্ছা এর মানে কি বলতে পার ?
ভদ্রলোক হঠাৎ এমন ডিগবাজি খেলেন কেন?
কেন, সেই কথাই তো! ভাবছি ।
একথা শুনে আমি আব স্থির থাকতে পারলাম না। রেভাবেগেের কাছে
গিয়ে বললাম, এ সব কি শুনছি?
তিনি বললেন, এতদিন ভবিষ্তের কথ] ভাবি নি, এখন ভাবতে হৃচ্ছে।
ছোটলোকের! বিনা পয়সায় সব পেয়ে পেয়ে মাথায় চড়ে বসেছে | বেটারা
এতদ্বিন ওষুধ আর ভাল ভাল পথ্য খেয়েছে বিনা পয়সায়, এখন তার কিছু দাম
দিক। ভিখারীর জাত বেটারা, ওদের আর প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয় "
এর উত্তরে একটি কথাও আর বলতে প্রবৃত্তি হ'ল না। তার আশা
একেবারে ছেড়ে দিলাম । আমাদের সেবাসজ্বও ভেঙে গেল। কিম্ত মনে থে
আঘাত লাগল তা থেকে মুক্তি পেলাম না।
১৬ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাঙ্গ-গল্প
মাসখানেকের মধোই প্রেখি রেভারেগ্ড কিং চালের ব্যবস! শুক্ষ করেছেন
এবং চোর! বাক্জারের পথে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু টাকা ক'রে ফেলেছেন।
চোরা বাঙ্জারের ভাইরা র্ভোরেগড কিং-এর নামে চমকে ওঠে ; বলে, বাপ,!
এর মতো ঘুপু লোক আর দেখা যায় না। লোকটা এ ব্ছরে কোটিপাঁত হবে।
আমার মনে কেবলই প্রশ্ন জাগতে লাগল, এর মানে কি? রেভারেও
কি এতদিন ভণ্ডামি করেছেন? সেবাধর্জের ছলে নিপ্ধের ব্যবসার পথ পরিষ্কার
করেছেন এতর্দিন_ না, তার হঠাৎ মাথা খারাপ হয়েছে?
যদ্দি মাথ! খাবাপ হয়ে থাকে ত। হ'লে আমাদের নিশ্চি্ত থাকা চলে ন|।
মনোবিজ্ঞানের পণ্ডিতদের কাছে যাতায়াত করতে লাগলাম । কেউ
বললেন, কিছুই বোবা যাচ্ছে ন।, কেউ বললেন, বোমার 'শকৃ* পেয়ে ওর
ভিতর থেকে দ্বিতীয় আর একটি ব্যক্তিত্ব জেগে উঠেছে । এবং এ রকম হওয়া
ঘে অলস্তব নয়, তা তাপ! বু শঙ্ির দেখিয়ে বুঝিয্বে দিলেন । আমাৰ বন্ধুরা
এই কথা সহাঙ্গেই মেনে নিশ্চিন্ত হলেন । কিন্ত তবুও আমার মনে কিছু সন্দেহ
থেকেই গেল। এমন মহৎ লোকের “দ্বিতীয় ব্যক্তিহ এমন ছোটলোক হয
কি ক'রে_-এ প্রশ্নের উদ্ভর আমি পেলাম না। সবটাই একটা অলৌকিক ব্যাপাৰ
বলে বোধ হতে লাগল ।
এমন লময় শোনা গেল, বিলেত থেকে ক্র প্লান নামক এক প্রসিদ্ধ
পাথলকঙ্জিস্ট বিশেষ একটা কাজে বোক্বাইতে এসেছেন |
অবশেষে মানলিক অশান্ছি দূর করাঁর জন্যে আমাকে বোপ্াই পরস্তই দেতে
হ'ল। এতখাঁনি উত্পাহের জন্যে, এবং আমি 'ধিতীয় ব্াক্তিহ" থিরিটি (কেন
মানতে পারছি না, এ জন্তে বন্ধুণা বিদ্রপ করতে লাগল।
ঝৌম্বাইতে গিয়ে ডক্টর স্টানের সঙ্গে দেখা করলাম । ডক্টর গ্টান সদাশস
লোক, তার সঙ্গে আমার অনেকক্ষণ আলোচনা হ'ল। তিনি খুব মনোষে!গ
দিয়ে আমার কাহিনী শুনলেন। শুনতে শুনতে তিনি বহু প্রশ্ন আমাকে
জিজ্ঞাস। করতে লাগলেন । আমি প্রত্যেকটি খু'টিনাটি তাকে বলল্লাম। ভা
ছাড়া বাঙালীর চরিত্র সম্বন্ধে তিনি অনেক তথ্য আমার কাছ থেকে জেনে
নিলেন।
তিনি "্মাগাগোড় নব শুনে হেসে বললেন, এ রকম কেস আমার একেবারে
অজান। নয়। বিলেত্বেও এ রকম একটা ঘটন! আমি দেখেছি । 'শক”-
টিকিৎলার লময় যে সিরাঁম ইনজেবশন দেওয়া হয়েছিল, সেট! বাঙালীর রক্তের
পিরাম। সেই ইনজেকশনের পর থেকেই রেভারেণ্ড কিং-এর চরিত্রে বাঙালীর
বপাস্তর রশ
বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে । তান প্রথম লক্ষণ আপনি গ্বলছেন, উ্রাযে বসে পাশের
ষ্বাত্রীকে হাটু দিয়ে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা। তা নয়। এটা একটা প্রধান লক্ষণ
হ'লেও ওর আগেই লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে । প্রথম লক্ষণ ফুটেছে রেভারেত্ডের
কথায় । তিনি বলেছেন, "ঘরের খেয়ে আর বনের মোৌষ তাড়াতে ইচ্ছে
করে না।”
তেবে দেখলাম ভক্ঈর স্টানের কথাই ঠিক। এ ছাড়। একটা মহৎ লোকের
পরিবর্তন আর কিছুতৈ হওয়া সম্ভব নয়।
রেভারেখ্ডের উপর মনে মনে ষে ম্বণা জেগেছিল, তা সম্পূর্ণ দূর হয়ে গেল,
তাঁর জন্তে বড় দুখ হ'তে লাগল।
জিজ্ঞাস! করলাম, এর কি কোনো! প্রতিকার নেই ?
না, কোনো! প্রতিকাবরই নেই ।
সিরামের জাতিভেদে কি পবারই এই বকম হয়?
না। লাখে একজনের হয় কিনা সন্দেই। বিলেতেও মাত্র একটি কেসের
রেকর্ড আছে, এবং কালক্রমে কাহিনীটি কৌতৃকগঞ্পে পরিণত হয়েছে ।
ডক্টর বলতে লাগলেন, একবাব এক ইংরেজের দেহে বক্ত ইনজেক্ট করানু
দরকার হয়েছিল, সেক্জন্ বক্তদাতীকে তিনি উপধুক্ত ফী 'দতে রাজি ছিলেন।
কিন্ত তাঁর দেভে রক্ত প্রবেশ করানোর পণ তিনি ফী দিতে অস্বীকার করলেন,
দিলেন শুধু ধন্যবাদ । কাঁপণ বক্তদাত। ছিলেন রুপণতাপ প্রপিদ্ধ স্কটল্যাগুবাসী,
তাই ক্ুপণের রুক্ত ইংবরেজের দেহে গিয়ে ইরেজকে পণ ক'রে তৃপল, তার
কাছ থেকে আনু টাকা আদান কর। গেল ন|। বেভারেণ্ড কিংও এইভাবে
বাঙালীর চরিত্র লা৬ করেছেন ।
বিষণ্ন মনে বোম্বাই থেকে ফিরে এসে রেতারেগের সঙ্গে দেখা করতে
গেলাম। গিয়ে দেখি চালের বাজার পিয়ে কয়েকজন মক্কেলের সঙ্গে তিনি
গোপন আলাপ করছেন। আমাকে দেখেই চুপ ক'রে গেলেন, কোনো! কথাই
বললেন না ।
ফিরে এলাম । ভাবলাম, ভবিষ্যৎ শুবু রেভারেগ্ডেরই নেই, আমারও
আছে।
কিন্তু তই দিন যেতে লাগল ততই বুঝতে পারলাম, আমি অত্যপ্ত নির্বোধের
কাজ করেছি, অর্থাৎ আমার ভবিত্যৎ হারাতে বসেছি । রেভারেগ্ডের মতো
টাক! এবং প্রতিষ্ঠাওয়ালা লোকের সঙ্গে করছি বিবাদ! এতে আমার লাভ
কি? ছাত্রজীবনের একটা মূল্যহীন আদর্শ আমাকে কি দিতে প্রারে? আমি
্
১৮ পরিমল গোত্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্জ-গর
নিবুদ্ষিতাধশত তার মতো একজন সহায়ককে পরিত্যাগ কয়ে একা ঘরে ধসে
জলেপুড়ে মরছি !
পরম অন্নতগ্ত হ'য়ে বিনীতভাবে তার কাছে গিয়ে একদিন আমার নিবেদন
পেশ করলাম ।
রেভারেগড কিং আমার প্রস্তাব শুনে আনন্দে উচ্ছলিত হয়ে আমাকে প্রায়
জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, এ তো৷ উত্তম কথা, আপনাকে আমি অংশীদার
কারে নেব।
০ না কঃ
এর পর দু'বছর কেটে গেছে, আমি আজও তার অংশীদার হতে পারি নি।
তিনি এই ছু'বছর ধ'রে আমাকে প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন আর ঘোরাচ্ছেন।
বলছেন, এই র্যাশন পদ্ধতিটি উঠে গেলেই তিনি আমাকে নিয়ে নেবেন, কেননা
এখন নাকি কিছুই লাভ হচ্ছে না।
(১৯৪৪)
বৈবাহিক বৈচিত্র
বাগবাজারের কোনও এক রান্তায় এক বাড়ির বৈঠকখানায় বসিয়া ১৩৩৪ সালের
১ল! চেত্র বেল! দশটার সময় শশধর চক্রবত্তা সিউড়ি হইতে আগত নিম্নলিখিত
পত্রখানি পাঠ করিলেন।
সবিনয় নমস্কারপৃবক নিবেদন,
মহাশয়ের পত্র পাইয়া পরম প্রীত হইলাম। আপনার পুত্র শ্রীমান্
অলধর আমার কন্তার মাতৃলের সহযোগিতায় কলিকাতাতেই আমার
কন্যাকে দেখিয়া পছন্দ করিয়াছে ইহ! অপেক্ষা আনন্দের কথা আর নাই।
পত্রধোগে আপনাদের বিষয় আমি সমস্তই অবগত আছি। আপনাদের
বাবসায়ের কথ! এবং ব্যবসায়ে ততার কথা সর্বজনবিদিত । আমাদের এই
মফ£সল শহরেও আপনাদের খ্যাতির সংবাদ পৌছিয়াছে। স্বতরাং
আপনারা যে আমার কন্যাঁকে গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক হইয়াছেন ইহাতে আমি
আপনাদের প্রতি যে কি পরিমাণ কৃতজ্ঞ হইয়াছি তাহা! লিখিয়! প্রকাশ
করিতে অক্ষম। শ্রীমান জলধর এমএ পাস করিয়া ব্যবসায়ে নিযুক্ত
হইয়াছে ইহা তাহার উপযুক্তই হইয়াছে । কিন্ধু ব্যক্তিগত শিক্ষা, বা উন্নতি
ছাড়াও আমি পারিবারিক এবং বংশগত আচার-ব্যবহাত এবং সংস্কৃতির
উপরেই অধিক আস্থাবান। স্থখের বিষয় সেদিক দিয়াও আমি নিশ্চিন্ততা
অনুভব করিতেছি । স্থতরাং এইক্ষণে আমার কর্তব্য, মহাশয়ের সঙ্গে
সাক্ষাৎ এবং আলাপার্ি করিয়! চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভগ্রন করা। আমি স্থির
করিয়াছি আগামী ৫€ই চৈত্র রবিবার সকালে কলিকাতা পৌছিব এবং
মো! গিয়। আপনাদের আতিথ্য গ্রহণ করিব। ইতি
ভবদীয়
্রসাধুচরণ মুখোপাধ্যায়
শশধর চক্রবর্তী পত্রধানা| দুই বার পাঠ করিলেন এবং অস্তত চারি বার
গেৌঁফে তা দিলেন। তারপর আর একবার চিঠিখানি সম্মুখে ধরিয়া, যেখানে
লেখা ছিল “কিন্ত ব্যক্তিগত শিক্ষা! ব! উন্নতি ছাড়াও আমি পারিধারিক বং
বংশগত আচার-ব্যবহার এবং সংস্কৃতির উপরেই অধিক আস্থাবান”-_সেই
স্থানটির উপর কিছুকাল নিবন্ৃদৃষ্টি হইয়! বসিয়া রহিলেন। তারপর চিঠিখানি
ভাজ করিয়া! ফাইল-জাঁত করিলেন ।
চু পশবিষল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাঙ্গ-গল্প
£ই চৈত্র বেলা অন্তমনি দশটার সময় সিউড়ি হইতে কলিকাতা পৌছিয়া
লাধুচরণ মুখোপাধ্যায় নির্দিষ্ট গধিতে কোচম্যানের সাহায্যে বাড়ির নম্বর
মিলাইতে মিলাইতে চক্রবর্তা-গৃহে জানিয়! পৌছিলেন।
মুখুক্দে-মহাশয় প্রাচীন ডাক্তার, সকলের কাছে কামানের গোলা বলিয়!
পরিচিত । কিন্তু তাহ] তাহার কেশবিরল গোলাকুতি মস্তকের জন্যই নহে।
শহর হইতে একটু দূরে ছোট্র পাহাড়ের মতো স্টচু জায়গায় তাহার
বাড়ি। তাহারই এক দিকে একটি গাছ জন্মাবধি সুমির সম্ান্তরীল ভাবে
হেলিয়া! গিয়া সেই ভাবেই বধিত হৃইয়ছিল, শাখাপ্রশাখা অবশ্বু আকাশমুখী
ছিল। কিন্তু অনেক দিন হইল গাছটি উপবার্ধ কাটিয়া ফেলা হইয়াছে, এখন
শুধু কাণ্ডটি কামানের মতে ডাহাব বাড়ির এক পাশ হইতে শহরের দিকে
মুখ বাডাইয়। আছে। এই কারণে তাহার বাড়ির নাম হইয়াছে কামানওয়ালা
বাড়ি এবং তাহার নাম হইয়াছে কামানের গোলা । তাহার কগম্ববের সঙ্গে
কামানের আওয়াজ্বের ক্ছু সাদ্ুশ্য আছে । কথা বলিবান্ সময় তিশি মালে
মাঝে এমন অতফিতে গর্জন করিঘা ওঠেন যাঁভাতে সাধারণ বোগীর সবাঙ্গ এবং
য্যালেবিয়াগ্রপ্তের প্রীহা চমকিত হয়।
বছ আশায় বক বাপ্রিয়া এই কামানের গোল! সেদিন কব গৃহে আপিঘ।
ফাটিয়া পড়িলেন। এরূপ চঞ্চল প্রতি অল্পবয়ন হইলে মানাইত, কিন্ত
মুখুজ্জে-মহাশয় আটচল্লিশ বসর ময়সেও ষেন শিশুটিই বহিয়। গিষাঙছেন | এই
শিশুর সারলা শু হাত পায়ের চাঞ্চল্য নয়, খাওয়'দা ওয়! বিষম়ে ৪ তিনি শিশুর
মতোই লোভী । কিন্ত বিশেষ ছৃরবস্থার মধ্যে বধিত হইলে শিশুও যেমন
সংসার্বিষয়ে অনেকখানি অভিজ্ঞ হইয়া ওঠে, তেমনি এই প্রো শিশুটি
কণ্ধাঙ্গা গ্রস্ত হইয়া চঞবর্তাঁ-গৃহে এমন সব বিষয়ীজনৌচিত বাধহাব করিলেন
ঘাহা তাহার পক্ষে সহজও নহে, কারণ তাহা প্রায় পরিপক লোকের বাবহার।
চক্তবর্তী-গৃহে পৌছিয়া তাভান প্রথমে জলধরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল ।
মুখুজ্ছে-মহাশয়কে অন্যর্থন। করিবার জন্য চক্রবত্তী-মহাশয়ই এএই ব্যবস্থা
কৰিয়াছিলেন। মুখুজ্জে-মহাশয়কে প্রণাম করিয়া জলধর নিজের পণ্চিয় দিল।
মুখুজ্জে-মহীশয় তাহার সৌম্য আকৃতি এবং সপ্রতিভ ব্যবহারে আনন্দে গদগদ্
হুইম্ব ভাহদকে আশীর্বাদ করিলেন এবং অন্য কোনো আলাপ না করিয়াই
েঠকখানা-ঘরের চারিদিক ঘুরিয়া, ভিতরের দিকের দরদ্জায় কি মাবিয়া, গর্জন
করিয়া বলিয়। উঠিলেন, “চমৎকার বাড়ি তো”
সে গর্জনে জলধরেল্প আপাদমস্তক কাপিছ। গেল। নে এজন প্রদ্তত ছিল না,
বৈবাহিক বৈচিত্র্য ২১
কিন্ত মুহূর্তের মধ্যে আত্মস্থ হইয়া ন্রিতহান্তে বলিল, "আলো-হাওয়াটা একটু
পাওয়া যাম্ব।”
মুখুজ্দে-মহাশন্প যেন ত্ুহ্ধ হইয়া বলিলেন “একটু কেমন? বলি, হোয়াট ডু
ইউ মীন্ ?--এ ষে একেবারে ঝড়ের মতো হাওয়া 1
একটু আবেগেই মুখুজ্জে-মহাশয়ের ভাষা ইংরেক্সী-মিশিত হইয়া পড়ে ।'
তাই তিনি বলিতে লাগিলেন, “আর এ না হলে কি আমাদের মনে ধরে ?--
আমরা খোল] জায়গায় থাকি_-ফর নাখিং খানিকটা আলো আর হাওয়া
আমাদেব চাই-ই), তবে আলোটা শীতকালে এ” হাওয়াটা শীক্মকীলে ।” বলিয়া
তিনি এইবার গা হইতে চাদর এবং জাম| খুলিয়া ফেলিলেন। তারপর
বলিলেন, “কিন্ক তোমার বাবার কথা তো! এন্তক্ষণ জিজ্ঞাপাই করিনি, তিনি
বাড়িতে আছেন তো ?”
ভৃত্য উপস্থিত ছিল । সে চাদর ও পাঞ্ধাবী যথাস্থানে রাখিম্া দিয়! বলিল,
“বাবু পূজো করছেন, পূজো! শেষ হ'লেই চলে আমবেন, তিনি সব শুনেছেন ।”
জলধর কিঞ্চিং বিম্ময়ে ভৃত্যের দিকে চাহিয়! বলিল, “যা, তাড়াতাড়ি চায়ের
কথা বলে আম ।”
মুখুজ্জে-মহাশয় পূজোর কথা শুনিগা কিছু ঘাবড়াইয়া গেলেন। তাহার
সর কুপ্চিত হইল এবং কপালের উপর তিনটি ভাজের উপরে আরও চাবিটি দেখা
দিল। কিন্ধ মুহুর্তের মধ্যে আত্মচেতন হইয়! বলিলেন, “ত। চলবে শা ন্নানের
আগে তো কিছু খাওয়া চলবে না। বলিতে বলিতে অস্থিরভীবে উঠিয়া ঘরের
মধো অবস্থিত বইয়ের আলমারির কাছে গিয়া একে একে বই টানিয়া বাহির
করিতে লাগিলেন ।
জলধর সঙ্কৃচিত ভাবে বলিল, "তা! হ'লে ততক্ষণ স্নানের বন্দৌবস্ত”__কিন্তু
মে কথা তাহার কানে প্রবেশ করিল না। তিনি বই দেখিতে দেখিতে হঠাৎ
আনন্দে গর্জন করিয়া বলিয়। উঠিলেন, “স্েগ্ধ ! এ ঘষে দেখছি আমারই সব
খোরাক 1--মাম়্ বঙ্কিমচন্দ্র পর্যস্ত 1” তারপর হো! হো করিম! হাসিতে হালিতে
বলিলেন, “এই একমাত্র খাদ্য যা স্লানের আগে খাওয়া চলে” বলিয়া এক খণ্ড
বঙ্কিমচন্দ্র হাতে লইয়! আসনে আসিয়া বসিলেন।
জলধর পুনরায় শ্মরণ করাইয়া দিল, “ত] হ'লে ন্নানটাই দেবে নিলে হ'ত-_
চ৷ পর্যস্ত খেলেন না।-
মুখুজ্জে-মহাশয় এলোমেলো ভাবে বলিলেন, “তাড়াতাড়ি কিসের? চা
অবশ্থ খাওয়! দরকার" _কিস্ত কি জান রাঁবা, সংস্কারটা তো আর ছাড়! বাস
২ পরিমল গোম্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যদ-গল্প
না-ক্রিন্ধ ভিতরের তাগিদও কম নয়! আচ্ছা বরঞ আনেন আগে এক প্লান
জল-_াদা জল আমাকে দাও, হাত মুখ ট্রেনেই ধুয্েছি, আহ্িকটাও বর্ধমান
স্টেশনে সেরে নিয়েছি।” কথাগুলি যে একটু অদংবদ্ধ হইল তাহা তিনি
নিজে বুঝিতে পারিলেন।
জলধর বলিল, *শুধু জল খাবেন ?”
নৃথুক্জে-মহাশয় গ্ভীরভাবে বলিলেন, “গলাটা শুকিয়ে গেছে বলেই জল
খাচ্ছি, নইলে ওটাও তো ঠিক চলে না, খাওয়া! তো বটে!” এইবারের কথাটা
দুঢ়তাব্যগ্তক।
ডৃত্য জল মানিয়া দিল। মুখুক্দে-মহাশয় জল লইতে গিয়া হঠাৎ হত
সটাি়া বলিলেন, “& দেখ, সাংঘাতিক ভূল হয়ে গিয়েছিল_-জুতো পায়েই
গেলাস ধরতে গিয়েছিলাম!” বলিয়া! তাড়াতাড়ি জুতা খুলিয়া এক গ্লাস জল
উদরস্থ করিলেন। তারপর বই ছাড়িয়া দেওয়ালে-টাঙানো ছবিগুলি ঘুরিয়া
খুরিয়া দেখিতে লাগিলেন। একখানা রাজারাণীর ছবি, একখানা চক্রুবর্তা
অহাশয়ের এক ইংরেন্স বন্ধুর ছবি, আর সব বিলিতি নিসর্গ দৃশ্ঠ। ছবিগুলি
খুব মনৌযোগের সহিত দেখিয়া মুখুজ্জে-মহাশয় বলিলেন, “চমত্কার সব ছবি,
কিন্ত এর মধ্যে কোথাও বাবা, একখান! দেবদেবীর ছবি ঝুলিয়ে দাও ন| |
মনে বেশ একট! পবিত্র ভাব জাগবে ।”
জলধব কি বলিতে যাইতেছিল, কিন্তু তাহা শুশিবার পূর্বেই মুখুর্দে- মহাশয়
বলিয়া! উঠিলেন, “না ন1 না, ওটা আমারই ভূল-_বৈঠকখানা-ঘরে দেব-দেবতার
ছবি রাখা ঠিক নয়, এখানে ওই সব ছবিই ভাল।” বলিয়াই ইলেকটিক
ল্যাম্পের বিচিত্র শেডের দিকে চাহিয়া তাহার রূপ বর্ণনায় পঞ্চমুখ হইয়া
উঠিলেন। জলধর কোনোমতেই কোনে দিক দিয়া মুখুজ্জে-মহাশয়কে আয়ত্ত
করিতে না পারিয়া বড় অন্বস্তি বোধ করিতে লাগিলেন।
পারিবারিক আবহাওয়ার পরিচয় লইতে আসিয়া মৃখুজ্জে-মহাশয় প্রথমেই
চক্রবর্তাঁ-মহাশয়ের ধর্মবিষয়ে নিষ্ঠার পরিচয় পাইলেন । স্থতরাং তিনি নিজেকে
চক্রকর্তাঁ মহাশয়ের আদর্শের উপযুক্ত কবিয়া লইতে প্রাণপণ চেষ্ঠা করিতে
লাগিলেন ।
চক্রবর্তী-মহাশয়ও মুখুজ্জে মহাশয়ের পত্রে বুঝিতে পারিয়াছিলেন তিনি
পারিবারিক আচারু-বাবহারের পরিচয় লইতে আসিয়াছেন, ক্ষতরাং তিনি
পুত্রের পিডা হই 'কন্তার পিতার চোখে কোনক্রমেই যাহাতে ছোট না হন
এই চিন্তা অন্তরে পোষণ করিতেছিলেন ; ক্কাজেই কোথাও কোনও ক্রটি ধরা
বৈবাহিক বৈচিত্র্য ২৩
না! পড়ে সেদিকে তিনিও যথাসম্ভব সাবধানতা| অবলম্বন করিয়াছিলেন । সুতরাং
চক্রবর্তী এবং মুখুজ্দে মহাশয়ের মিলনে চক্রবর্তী-গৃহে ঘেন একটা নূতন
পরিমগ্ডল স্থষ্টি হইল ।
চক্রবর্তী মহাশয় কিছুক্ষণের মধ্যেই বৈঠকথানাঁঘরে আসিয়া প্রবেশ
কৰিলেন। তীহার পায়ে খড়ম এবং পরনে গরদ। প্রথম সাক্ষাতে উভয় পক্ষ
হইতেই আনন্দের যে উদ্গ্ান বহিল তাহার অর্থ বিশেষ কিছু ছিল না, কিন্ত
তাহার শব্দ বাড়ি কীপাইয়া তুলিল। নে শব্দে আকুষ্ট হইয়া পাড়ার ছোট
ছোট ছেলের! চারি ধারের জানীলায় কি মারি! একট! বিশেষ রকম নৃতনত্ত্র
স্বাদ গ্রহণ করিতে নিযুক্ত হইল।
ট্রেন-ত্রমণের কথা দিল! মুখুজ্জে মহাশয় আলাপ জমাইয়! তুলিলেন। প্রায়
আধ ঘণ্টা পর ট্রেন-প্রসঙ্গের পরিণতিম্বরূপ খাছ্যের অনাচার-প্রলঙ্গ আমিয়।
পড়িল এবং আত ভ্রতগতিতে আলোচন! প্রাচীন ভারতে গিয়া পৌছিল।
এ সঙ্গে চক্রবর্তী-মহাশয় গড়গড়। এবং মুখুজ্জে- মহাশয় চুরুট টানিতে লাগিলেন,
এবং উভয়ের শাস্্রীলাপে এবং তামীকের ধেখয়ায় চক্রবর্তী-মহাশয়ের বৈঠকখানা-
গৃহে একটা অভিনব কল্প-জগৎ রচিত হইল ।
মুখুজ্জে-মহাশয় চুরুটের ধোয়া ছাড়িতে ছাডিতে আরম্ভ করিলেন, “ধরুন,
চ্যবন মুনি যে”__বলিয়া পুনরায় চুরুটে মুখ গুঁজিলেন।
চক্রব্্তী-মহাশগ্ন বলিলেন, “জাতিভেদের কথা বলছেন তো! ?”
মুখুজ্জে-মহাশয় উৎসাহিত হইয়া বলিলেন, "হ্যা, জাতিভেদ স্য্ি করেছিলেন,
তার অর্থ এ কালের লোকে ভূলেছে বলেই না_1%
চক্রবর্তী-মহাশয় আনন্দে প্রায় দিশাহারা হইয়া বলিলেন, “ধরুন না কেম,
শঙ্করাচী্ যে”__বলিয়া ঘন ঘন গড়গড়। টানিতে লাগিলেন।
মুখুজ্জে-মহাঁশয় বলিলেন, "আপনি বোধ হয় স্বপাক আহারের কথা বলছেন ?”
চক্রবর্তী-ম্হাশয় বলিলেন, "হ্যা, সেই কথাই তো! বলছি । শঙ্করাচার্য স্বপাক
আহারকেই প্রশন্ত বলে গেছেন, কিন্তু দেখুন তো৷ আমর! তা ক'জন মানি?
আমরা ঘা করছি এটা কি ম্রেচ্ছাচার নয়?”
জলধর আর পারিল না, পে বাহিরে গিয়া কিছু হাসিয়া মনটাকে সহজ
করিয়া লইল।
মুখুজ্দে-মহাশকের মতবাদ ক্রমে উচ্চ হইতে উচ্চতর ধ্বনিতে ঘর কাপাইতে
লাগিল। জলধর পুনঃ প্রবেশ করিয়া স্মরণ করাইয়া দিল, ্লানের সময়
হইয়াছে । চক্রবর্তী-মহাশয় ঘেন আকাশ হইতে পড়িলেন। “কি আশ্চর্য!
২৪ পরিমল গোস্বামীর শ্লেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
অভিবির সাপাহার ভূলে শুধু করা বলে ন্নাছ্ছি। ছি ছি ছি_ভারি 'অগ্গার
হযে গেছে_-সার লয়, জার নয়, এবারে উঠুন” বলিল্বা নিজে উঠিলেন।
মুখুজ্দে-মহাশয়ের উঠিবার কোন লক্ষণই দেখা গেল না। তিনি বলিলেন,
“নট আযাট অপ্-_কিছুষাত্র অন্যায় হয় নি, আপনি আমার জন্তে ব্যন্ত হবেন না।”
চক্রবর্ভী-মহাশয় বলিলেন, “মপরাধ নেবেন না, কিন্তু এসব বিষয়েরই
দোষ -আরস্ত করলে পুরনে! কথা নব মনে পড়ে”__- বলিতে বলিতে তাহার
চোথ ছলছল কন্িয়া উঠিল।
মুখুজে-মহাশয় তাহা দেবিয়া অস্থির ভাবে বলিলেন, “না না, ম্নানাহার বরঞ্চ
এখন থাক, কিন্ত এ সব কথা বিস্তারিত আলোচন। হওয়া প্রয়োজন , আর্ত
কৰা গেছে, শেষ করতেই হবে ।”
কিন্তু শেষ করিবার পূর্বেই একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়া গেল। মুখুজ্ে-মহাশয়্
ধখন বলিতেছিলেন, আলোচনা শেষ করতেই হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে তাহাদের
কানের পাশে এক ঝাঁক মুরগী সমস্বরে কৌ কৌ করিয়া উঠিল। চত্রবর্তী-
মহাশয় এক লাফে উঠিয়। পর়িলেন। দেখা গেল একটা লোক বাকে করিয়।
ছুই খাঁচা মুরগী আনিয়া ভ্রানলার পাশে দীডাইয়াছে। চক্রবর্তী-মহাশয়
উন্মাদ প্রায় চীৎকার করিয়! উঠিলেন, "মুরগী । মুরগী আনতে কে বলেছে »
আরে হাস__হীস- হাসের স্বপ খেতে বলেছে ভাঞ্ষীর, বেট! মুরগী এনে
হাজির-_ধেন আমার চোদ্দ পুকষ উদ্ধার করতে এসেছে । পাল পালা, এখুনি
পালা_-ছি ছি ছি--।”
মুরগীওয়াল! কি বলিতে যাইতেছিল, কিন্তু চক্রব্তী-মহাশয় তাহাকে কিছু
বলিতে না দিয়া লোঙ্গ! ভাহাকে রান্ত। পযন্ত তাড়া করিয়া লইয়' গিয়া আৰও
অনেক্গুলি কথা শুনাইয়। দিয়া আসিলেন।
মুখুজ্জ-মহাশয় এই সব দেখিয়া শঞ্চিত ইয়া উঠিলেন। কারণ চক্রনতী-
মছাশছ্ের এই আচরণে সাম্প্রদায়িক দীঙ্গ! বাধিবার আশঙ্কা ভিল। কিন্ু
যনোভাব গোপন করিয়া তিলিও চক্রবতী-মহাশয়ের স্থরে স্থর মিলাইয়, বলিতে
পাগিলেন, “লোকটার তো স্পর্ধা কম নয়। বাড়ির উপর মুরগী নিম্নে আসে !”
চক্রবর্তী-মহাপম্ব মহা বিরক্তির স্থরে বলিলেন, “দেখুন তো কাণ্ড! আরে ষে
কাড়ির কর্তা মাছ পর্স্ত স্পর্শ করে না সেই বাড়িতে মুরগী 1-_ছি ছি ছি--।২
মুধুজ্দে-মহাশয়ের উৎসাহ এইবার স্বসীমা পার হইয়া গেল। তিনি চক্রবর্তী
সকাশয়কে আননে প্রায় জালিঙ্গন করিয়া বলিলেন, “ত] হ'লে আমার নঙ্গে বহু
দিলে গেছেন--আমিও মিরামিব, আপনিও! হরে কয়েনসিভেক্সা 1”
বৈবাহিক বৈচিত্র্য ২৫
চক্রবর্তী-মহ্থাশন্ন বিশ্মিতভাবে বলিলেন, “কি আশ্চর্য! আরে হতেই হবে,
হতেই হবে। নিরামিষ মা হ'লে সম্রম রাখাই দাম্ব। যেখানেই বান, লিরামিষকে
লোকে এখনও একটু মানে। মাছ থেলেন কি তার সঙ্গে পেয়াজ খেতে হবে,
এবং মাংসের সঙ্গে বন্বন |”
মুখুঙ্জে-ম্হাশয় বলিলেন, “অত্যন্ত সত্য কথা । নিরামিষ একেবারে নিরাপদ,
যেখানেই ধান সম্মান রাখবার পক্ষে ও একেবারে ক্রন্ধাপ্্। তবে অনেকে আবাব
নিরামিষ ব'লে একেবারে বিধবার খাদ্য দিয়ে বসে 1”
চত্র বর্তা-মহাশয় হো হো করিয়া হাসিমা বলিলেন, “সে কথা মিথ্যা নয়__
তবে এ-বাড়িতে সে ভয় নেই |”
মুখুজ্জে-মহাশয় এ-কথায় গর্জন করিয়া হাসিলেন।
এই সময় জলধর আসিয়া আানেব জন্য জোর তাগাদ। দেওয়ায় আলোচনা
এথানেই থামিঘ্া গেল। তখন তেল মাখিতে মাখিতে মুখুজ্জে-মহাশয়
আলোচনাট! রাষ্্-বিষঘের দিকে টানিষ' আনিলেন এবং স্বরাজ সম্বন্ধে তিন-চারি
মিনিট ঘোর আলোচনা চলিল। তাহা ছাঁডা আহারের সময় আব যেষে
প্রপঙ্ধ বাকি ছিল সে সমস্তই উত্থাপিত তইল এবং ঠিক হইল রাত্রিকাঁলে তাহা
বিস্তারিতভাবে আলোচিত হইবে ।
কলতঃ উভয়েই উভয়েব প্রতি মতের গণ্ভীর এক্যহেতু এপ আকৃষ্ট হইযা
পড়িলেন যে দ্বুই জনেৰ মধ্যে অল্পক্ষণের মধ্যেই হাস্যপরিহান আরস্ত হইয়া! গেল।
চক্রবতী-মহাশয় বলিলেন, “বুঝলেন মুখুজ্জেমশাই, আমাব ধারণ] ছিল মেয়ের
বাপ সাধারণত ঘুখু-চরিত্রের হয, কিন্কু আপনাকে দেখে আমার ধারণ বদলে
গেতে |”
মুখুজ্ছে মহাশয় বলিলেন, “আব ছেলের বাপ যে কসাই হয় সেই ধারণ! ছিল
আমাব, কিন্ধ ব্যতিক্রম তে| চোখের সামনেই দেখছি ।”
শেষ পর্যস্ত মুখুজ্জে-মহাশয়ের কন্যা চক্রবর্তী-গুহে আমিলে যে পরম সখের
হইবে এব"-চক্রবর্তী-গৃহে মুখুজ্জে মহাশয়ের কন্তাকে পাঠাইয়া যে মুখুজ্জে-মভাশয়
নিশ্চিত্ত হইবেন উভয়েই এ কথা স্বীকার করিলেন ।
আহারাস্তে নিদ্রার পর বিবাহ সম্বন্ধ একরূপ পাকা হইয়া গেল।
বেলা তখন পাঁচটা | মুখুজ্জে-মহাশয় বলিলেন, “চক্রবর্তী-মশীই, আমি
একটু বেরুতে চাই-_বনকাল পরে কলকাত! এসেছি, দু-একজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা
ন! ক'রে যাওয়াটা ভাল দেখায় লা ।”
চক্রবর্তা-মহাশয় বলিলেন, "হ্যা, হ্যা হবচ্ছন্দে_আপনি স্বচ্ছন্দে দেখা ক'রে
৬ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্াস-নয়
আহ্ন। আন দেখুন, ঈ সঙ্জে আমিও একটু ঘুরে আনি না? চলুন আমাদের
গাড়িতে এবসজেই বেরুনো যাক, চৌরঙ্গীতে আমার একটু কাজও আছে ।”
"না না, তা হ'লে আর একগঙ্গে গিয়ে কাজ নেই-__আপনার অসুবিধা হবে,
আমি ররঞ্চ ট্রামেই ঘাচ্ছি।”__মুখুক্ষে-মহাশয় ব্যন্তভাবে কথাগুলি উচ্চারণ
কবিলেন।
কিন্তু চক্রবর্তা-মহাশয় ছাডিলেন না, উভয়ে একসঙ্গেই বাহির হইলেন।
মুখুজ্জে-মহাশয়ের নির্দেশে গাড়ি ভবানীপুর অভিমূখে চলিল। ভাবনীপুরের
একটা রান্তায় কিছুক্ষণ ঘুনিয়া একটা! বাড়ির সম্মুখে গাড়ি থামাইতে বলিয়া
মুখুচ্দে-মহাশয় সেখানে নামিলেন এবং বলিলেন, “আমি ঘণ্টা ছুই পরেই ফিরছি 1”
চক্রবর্তী মহাশয় বলিলেন, “দেখবেন, দেরি করবেন না যেন, আমাদের
আলোচনা ঢের বাকী আছে ।”
গাড়ি চলিয়া গেল। মুখুজ্জে-মহাশয় ছুটন্ত গাডির দিকে কিছুক্ষণ চাহিয়া
রহিলেন, এব" গাড়ি অদৃশ্য হইবামাত্র ক্রুত পদচীলনা করিয়া রসা রোডে আপিয়া
উপস্থিত হইলেন । থে বাড়ির সম্মুখে গাড়ি থামিয়াছিল সে-বাডির সঙ্গে তাহার
যে কোনো সম্পর্ক ছিল সেন্প বোধ হইল না।
সেদিন সন্ধ্য। ছয়টায় চৌরঙ্গীর একটা রেন্তোরণয় পাশাপাশি দুইটি পর্দ -ঢাঁকা
কুঠরিতে বলিয়া ছুইজন ভদ্রলোক মনের আনন্দে রোস্ট-চিকেন এবং অন্ান্থ
নানারূপ মাংসের বান্না উপভোগ করিতেছিলেন এবং মাঝে মাঝে “বয়? “বয়?
বালয়! হাকিতেছিলেন। কুঠরি দুইটির একটিপ নম্বর তিন, অপবটির চার।
মাঝখানে মাুয-সমান উচু পার্টিশল।
এই দুই ভদ্রলোক অত্যন্ত মাংসপ্রিয়, এবং গৃহে প্রায় প্রত্যহ মাংস খাইয়।
থাকেন। শুধু তাহাই নহে, পথেঘাটে যখন যেখানে স্থঘোগ পান সেইখানেই
লোভে পড়িয়া মাংপের স্বাদ গ্রহণ করেন। গৃহের বাঙলার একঘেয়ে স্বাদ হইতে
দৃঝে থাকিয়া মাঝে মাঝে ইহার। এইভাবে বলনাকে তৃপ্ত করেন।
তিন নশ্বর প্রথম উৎসাহে যতটা পারেন দ্রুত উদরস্থ করিয়া ধীবে ধীরে
একথগ্ু অস্থি চর্ধণ কহিতেছিলেন, এমন লময় চার নম্বরের কণ্ঠন্বরে তাহার মন
সঢকিত হইয়া উঠিল। মনে হইজ এ কঠম্বর যেন পরিচিত, কিন্তু কোথায়, কৰে
শুনিয়াছেন তাহা মলে পড়িল না। তিনি কৌতুহলবশবর্তা হইয়া মনে করিলেন
শদ্রলোককে একবার দেখা প্রয়োজন । তিনি হঠাৎ এখানেই আহার সমাপ্ত
কহিয়্! “বিল' দিষার জ্বন্ত বয়কে ভাকিলেন।
বৈবাহিক বৈচিত্র্য ২৭
এই কঠন্বর এইবার চার লম্ববের ভদ্রলোকের কানে প্রবেশ করিম্লা তাহাকে
বউতল! কবিম্ন] তুলিল। তিনি সহসা আহার বদ্ধ করিলেন। কার কঠম্বর?
অতিপরিচিত অথচ কিছুতেই মনে পড়ে না।
যুগল ভদ্রলোকের যুগপৎ কৌতৃহল, অথচ কৌতুহল মিটাইবার উপায় মাত্র
একটি। পার্টিশনের উপর দিয়! লুকাইয়! দেখা ছাড়া উপায় নাই। দরজা! দিয়া
ঢোকা! অসঙ্গত, অনুমান ষদ্দি ভূল হয়। স্থতরাং চেয়ারে ঈাড়াইয়। একটু দেখিঙ্সা
লইলেই সন্দেহের অবসান ঘটিবে।
তিন নম্বর চেক্নারে দীড়াইয়া অতি সন্তর্পণে পার্টিশনের উপর মাঁথা বাহির
করিলেন। ঠিক সেই সময় চার নম্বরও চেয়ারে দীড়াইয়া ধীরে ধীরে
পার্টিশনের উপর দিয়া মাথা বাহির করিলেন। ছুই মাথা নাকে-নাকে ঠেকিয়া
গেল। চার নম্বর ভীতিজনক শব করিয়া উন্টীইয়! পড়িলেন। তিন নম্বর
কীপিতে কাপিতে বপিয়া পডিলেন।
ম্যানেজার অকারণ ভয় পাইয়া উভয় ঘরেই তাড়াতাডি বিল পাঠাইগ্ন
দিলেন। বিলের পাওনা টাকা মিটাইয় মুখুঙ্জে -মহাঁশস্ন ও চক্রব্ত-মহাশয় ছুই
কুঠরি হইতে নিক্ষান্ত হইয়া নীরবে পথে আপিয়! ঈড়াইলেন। চক্রবর্তা-
মহাশয়ের গাড়ি একটু দূরে হিল, তিনি সেই দিকে অগ্রপর হইতে লাগিলেন।
মুখুজ্জে-মহাশয় মন্ত্রমুদ্ধবং তাহাকে অন্রসরণ করিলেন এবং গাড়ির ভিতরে
নীরবে তাহার পাশে গিয়া বসিলেন | উভয্মেরই হাতে এবং মুখে তখনও মাংসের
ঝোল লাগিয়া রহিয়াছে ।
গাঁড়ি চিত্তরগ্রন এভিনিউ দখা ছুটিয়া চলিল। প্রায় তিন মিপিট
নির্বাকভাবে চলিবার পর মৃখুজ্জে-মহাশয় শুনিতে পাইলেন চক্রবর্তা-মহাশয়
আপন মনেই খিক খিক করিয়া! হাদিতেছেন। তাহা শুনিয়া তাহার মন হইতে
এক গুরু ভাঁর নামিয়। গেল, তিনিও খিক খিক করিয়া হাসিতে লাগিলেন।
চক্রবর্তী-মহাশয় পুনরায় গম্ভীর হইয়৷ গেলেন। মুখুঙ্জে-মহাশয়ের মনে পুনরায়
আশঙ্ক! জীগিল | তিনিও গম্ভীর হইয়া গেলেশ। প্রায় দুই মিনিট নীরবে চলিবার
পর চক্রবর্তী-মহাশয় চাদরে মুখ ঢাঁকিয়া' হো হো! করিয়া হাসিতে লাগিলেন ।
মুখুজ্জে-মহাশয়ও হুঙ্কার দিয়া হাপিয়া উঠিলেন। ছুই জনের মিলিত হাসিতে
ড্রাইভার চঞ্চল হইয়া গাড়ি থামাইপ্বা ফেলিল এবং পথে নামিয়! হাসিতে লীগিল।
চক্রবর্তী-মহাশয় হাদিতে হাপিতে মৃখুজ্ষে মহাশয়ের ভুড়ি চাপড়াইতে
লাগিলেন। মুখুজ্জে মহাশক্স হাপিতে হাসিতে চক্রবর্তী মহাশয়কে জড়াইয়া
ধর্িলেন |
হ৮ পরিমল গোন্বামীয শ্রেষ্ঠ বাহ-গল্প
শ্লিমিট দুই এই ভাবে কীটিবার পর চক্রবর্তা মহাশর গাড়ি ঘুরাইস়া গঙ্গার
ধায়ে যাইতে আদেশ করিলেন | গাড়ি প্রায় গ্রে স্ীটের কাছে আলিম়াছিল,
সেখান হইতে খুরিয়া পুনরায় চৌরঙ্গরীর দিকে আসিতে লাগিল ।
গাড়ি একেবারে ফোর্টেব কানে গঙ্গার ধারে আসিয়া পৌছিল। গঙ্গার
ধারে বধিয়া উভয়ে উভয়ের কাছে জদযন উদ্ুক করিলেন।
মুখুজ্জে মহাশঘ় বলিলেন, তা! হ'লে মুক্লগীওয়ালার ব্যাপারটাও-_
চক্রবর্তা মহাশদ্ন বলিলেন, “সব ধ্ীকি, এ লোকটাই প্রতিদিন আমাকে
মুরগী সাপ্লাই করে ।আর আপনার স্নান না ক'রে খাওয়। ?”
মুখজ্জে মহাশয় বলিলেন, “আপনার পৃক্ষো৷ করার কথা শুনে ঘাবডে শিয়ে-
ছিলাম, পাছে কোনো অপরাধ নেন । খাওয়া তো ব্ধমানেই সেরে নিয়েছিলাম ।”
চক্রবত্ণা যহাশয় বলিলেন, “পজো-ফুজ্জো সব মিথযা,--তবে ঝৌকের মাথায়
নিরামিষ খাই বলাটা একটু বাডাবাডি হয়ে]ুগিয়েছিল। কিন্ধ আপনি ভবানীপুর
থেকে বেস্তোরায় এলেন কি ক'রে ?”
মুখুজ্জে মহাশয় হাঁসিগ| বসান, “5বাশীপুরের বাপারটাই একটা ব্রাফ__
শ্রেফ ফাকি । নিরামিষ খাওয়! মোটে সহ্য হয় না তাই আপনাৰ হাত থেকে
ছাঁড1 পাবার কৌশল আবিষ্কার করতে হয়েছিল ।৮
দুই জনের প্রাণখোলা আলাপে এব, হাশ্তে গঙ্গার ঘট আন্দোলিত হইয়
উঠিল। কত কথাই হঈল। আমি ও সিরামিম খাছেব তুলনা মূলক
আলোচনা হইল; আধুনিক সমাজ্জেব কথ? গাধুনিক সভ্যতার কথা, আধুনিক
বিজ্ঞানের কথা বিশ্মমবিত আলোচিত হইল এবং অবশেন্ষ আণুনিক যাবতীম্প
কিছুর নিন্দা করিতে করিতে উভয়ে উঠ্িয়! পডিলেশ , বল বাহুণা, আহারের
'অনাচীর সম্বন্ধে ঈহাদের পূর্বে ঘে মত জানা গিয়াছিল, এক ঘণ্টা আলাপের পর
ছুই জনে তাহাতে আরও দৃঢবিশ্বীসী হইলেন |
ঘাড়ি ফিবিয়া রাহে ছুই জনে নিবামিষই খাইলেন। চক্রবর্তী মহাশয়ের
পরামর্শ মতো! এ যাত্রার অভিজ্নটা অডিনয়ই রৃহিম্না! গেল।
পরদিন বিদ্বায় গ্রহণ। সকালেই ফিরিবার ট্রেন। যাইবার সময় চক্রবর্তা
মৃহাশ্র বলিলেন, “উভয় পরিবারের চালচলনে যখন এতখানি মিল, তখন এ
বিয়ে ধে ভগবানের অভিপ্রেত সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই ।”
যুধুচ্ছে-মহাশয় কামানের গোলার মতই বিদীর্ণ হইয়া তাহার শেষ কথাটি
উদ্চাবণ করিলেন, "কোমও সন্দেহ নেই--নট্ দি লীস্ট 1%
( ১৩৪৪)
প্ল্যান
নিবিবাদে মাস্টারি করিতেছিলাম, কিন্তু ক্রমে উহা! অসহা হইয়৷ উঠিতে লাগিল।
বালা-জীবনের অন্তহীন উচ্চাশাকে খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিয়া তাহীরই কোনো
একট বিকলাঙ্গ খণ্ড গলায় ঝুলাইযা দিনের পর দিন্ স্কুলে হাজিরা দেওয়া_
ইহার চেয়ে বিড়ম্বনা আর কি আছে?
অনেক রকম চিন্তা করিলাম। পৈতৃক টাক] কিছু ব্যান্কে মাছে-_-বেশি
নহে, মাত্র পাঁচ হাজার। আমার চল্লিশ টাকা আয় হওয়া সত্বেও এ পীচ
হাজারে হন্তক্ষেপ করি নই, তাহার কারণ আছে । নিজম্ব বাড়ি থাকার দরুন
বাড়িভাডা লাগে না, এল” সংসাবে আমি ছাড়া উদ্বত্ত লোকের মধ্যে আমার
একটি সী আছেন । একটি ঝি আছে বটে, কিন্তু তাহাকে মাহিল! দিতি হয় না
মে শিশুকাল হইতে আমাদের বাড়িতে থাকিয়া বৃদ্ধা হইয়াছে । ই ছাড়া
ওই পাচ হাজারের কিঞ্িৎ হৃদ পাওয়া যায়।
কিন্ধ আর তো অল্পে স্তরথী হওয়া! চলে না, ওই পীচ হাজার টাকায় যে-কোনো
একটা ব্যবসা আরন্ত করিয়! দ্রিতে হইবে, অধ্াবসাঁয় থাকিলে উন্নতি অনিবাষ
ইহা আমি বিশ্বাস করি |
সন্ধায় আমাদেণ একটা আড্ডা জমিত, একদিন সেখানেই কথ।টি উত্থাপশ
করিলাম । সপঞ্ষোচে বলিলাম আমি একটা ব্যবসা! করতে চাই।
আড্ডায় আকাশ-পাতাল কত কি আলোচনা হইতেছিল--আমার কথ!
শুনিবামাত্র সকলেই সমন্বরে প্রশ্ন করিল, কিসের বাবমা ?
সেট! এখনো ঠিক করি নি।
দীনবন্ধুবাবু বলিলেন, ব্যবস! দি করতে চান ঘিয়ের ব্যবসা! করুন, পাঁচশ
টাকা ফেলতে পারলে লাল হয়ে যাবেন দ্চাৰ মাসের মধ্যে |
ভবতারণবাবু বাধা দিয়া বলিল, না হে, অত লোজা নয়।
সোজা নয় কেন?- দীনবন্ধু জিজ্ঞাসা করিলেন ।
কারণ ঘিয়ের ব্যবসায় জোচ্চ,রি ন| করলে কিছু হয্ঘ না, কিন্ত জোচ্চরি
করতে হ'লে অজ্ঞতা দরকার । মান্টার মশাই জোচ্চ,রির কি জানেন?
দীনবন্ধুবাবু উত্তেদ্রিত হইয়া বলিল, কথ্খনে। নয়, জোচ্চ,রি করবার দরকার
নেই। মফ'দলে খিম্ের সের এক টাকা, কলকাতায় ছুটাকা, খরচা বাদে নেবে
আট আলা, মণ.পিছু বিশ টাকা । (সাজা হিসাব।
০ পরিষল গোস্বামীর তরে ব্ঙ্গ-গন্প
তর্কারণবাবু বিদ্পের শ্বরে বলিলেন, সোজা হিসাথ হলে আর কেউ
তিরিশ পাকার দশ ঘণ্টা কলম ঠেলত না।
ভবতারণবাবু বলিলেন, ব্যবসা! করাও যেমন শক্ত, সে সম্বদ্ধে কিছু
বলাও ডেখনি কঠিন। মাসীর মশাই, আমার একটি পরামর্শ শুচুন, আপনি
ঘি ভুলে ঘান, ব্যবমা! ঘি করুতে হয়, মাছের ব্যবসা করুন। ভোরে উঠে
শিল্পালদ, ব্যস্| €ভারে উঠলেই টাকা। গোয়ালন্দের "মাছ, কষ্ট করেছে
জেলেরা, কট করেছে কুলিরা, কষ্ট পেয়েছে মাছ, আপনার কোনো কষ্ট নেই,
এ বিষয়ে আমার একটি প্রান আছে ।
নরেনবাবু বিড়িতে একটা টান মারিয়া ড্যাম-ইওর-মাছ বলিয়া কাছে
আয! বসিলেন।
ভবতারণবাবু নবরেনবাবুর দিকে চাহিয়! বলিলেন, কেন, মাছ ড্যাম কেন?
মশাই মাছের কি জানেন?
দাতে বিড়ি চাপিয়া বিরুতন্বরে নরেনবাবু জবাব দিলেন, মাছের আমি কি
জানি? কিন্ত মশায়ের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশি জানি সেটা মনে রাখবেন।
আপনি মাছের যেটুকু চেনেন আমি তার চেয়ে বেশি চিনি মাছের খদ্দেরকে ।
মাছ এ যুগে অচল। ব্যবসা যদি করতে হয় সিনেমাই হচ্ছে সব চেয়ে সেবা।
ঘশ হাজার টাকা ছাড়ুন, লাখ টাকা উঠে আসবে এক মাসের মধ্যে। একটা
লোক তার পরিবারের জন্যে মাসে ক টাকার মাছ কেনে? বড জোর দশ
টাকা । কিন্ত একটা পরিবার ম(সে সিনেমা দেখে-_-কি বল হে আশুতোয__
কত টাকার?
আশুতোঘ ভয়ানক সিনেমা-ভক্ত, মে ভাবিয়া বলিল, মাছের চেয়ে
বেশ্রি বটে।
ভূপতিবাবু কথা আরম্ভ করিলে কেহ কথা বলিবার ফুরহ্থৎ পায় না কিন্তু
তিনি এতক্ষণ চুপ করিয়া ছিলেন, এইবার আর তাহার চুপ করিয়া থাকা
পোষাইল নাঁ_
আমার একটা অদ্ভুত প্ল্যান আছে_-মাছ লিনেমা ওসব বাজে এবেবারে
বাজে।
আড্ডা প্রায় পনের জন লোক উপস্থিত ছিল, এইবার তাহারা সকলে এক
সঙ্দে কথা কছিয়! উঠিল, বোঝা গেল সকলেরই একটি করিয়া সর্কবোৎক্ট প্যান
আছে। আমাকে ধিরিয়া লইয়া সকলে সমস্বরে নিজের নিজের প্ল্যান সম্বন্ধে
বিস্তারিত ভাবে বলিয়া ধাইতে লাগিল। ইতিমধ্যে ছুই দ্বিক হইতে ছুইজন
প্ল্যান ৬১
আমার হাত চাপিয়া ধরিয়া কানের কাছে মুখ লইয়া টেচাইতে শুরু করিয়াছে,
অন্তান্ত মকলে হাত নাড়িয়া সম্মুখে পশ্চাতে গন্ভীর ভাবে আলোচনা জুড়িয়া!
দিয়াছে, আমি স্প্ করিয়া কিছুই শুনিতে পাইতেছি না, সকল কথা মিলিয়া
মিশিয়া ঘেটুকু মনে আছে ভাহা এই-__
মাছ হচ্চে লিজার্ডক্ষিন দশ হাজার ফুট তুলে চার হাজার পোল্টি, ট্যানিং
শিখতে আলু পটোল চিৎপুর বাজারে লত্তি,তে ভীষণ চায়ের দোকান এই দেখ
ন1 ইনশিওর্যান্স ইওগ্রির চেয়ে শিযূল তুলে! মার দিয়া কোন্ড ষ্টোরেজ ফ্রুট
সিরাপ মাত্রেই ছাপাখানার ব্যাপারে ফুটবল ম্যম্ফ্যাকচার অপটুডেট চিনির
কলে কেমিষ্ট জোগাড় করতে মাইকামাইন বিশেষ মনোহারি দোকালে মুক্সগীর
চাষে কলের লাউল জুড়ে মাসিক পত্র চালানে! মেন্ট পারসেন্ট তামাক পাতার
খাবারের দোকাঁনে এ ত মৃস্কিল-_
মিলিত চীতৎকারে কান ঝালাপালা হইয়া গেল, আমিও এ সঙ্গে চীৎকার
শুরু করিলাম, বাবস। করব না, করব না, আপনারা থামুন-_
কিন্তু কিছুতেই কোনো ফল হয় না, অগত্যা আমি জোড় হাতে সকলকে
নমস্কার করিয়া সেখান হইতে বিদায় লইলাম। কিন্তু তথাপি নিত্তার নাই,
চারজন আমার সঙ্গে ক্রমাগত বকিতে বকিতে চলিল, আমি দৌড়াইতে আরস্ত
করিলাম, তাহারাও দৌড়াইতে লাগিল। অবশেষে শ্রাস্ত হইয়া তিনজন
মধ্যপথ হইতে রণে ভঙ্গ দিল, মাত্র একজন থাকাঁতে অনেকট] সাহস পাইয়।
দৌড়ান বন্ধ কবিলাম। তখন সে হাফাইতে হাফাইতে বলিতে লাগিল, আমার
প্র্যানটা_
তোমার মাথাটা__আমি ব্যবসা করব না।
মে কি হয়, ব্যবসার চেয়ে-_
কি হে বিপিন!
চমকিঘা চাহিয়া! দেখি আমার এক বন্ধু গাড়ি হইতে ডাকিতেছেন। গাড়
কাছে আল্সিল; বন্ধু আমার ভয়ার্ত মুখ দেখিয়া ভয় পাইয়া গেলেন। আমি
বুঝিতে পারিয়া বলিলাম, আমাকে দেখে যতটা] মনে করছ ততটা না হ'লেও
থানিকট] বিপদে পড়েছি, কিন্তু মনে হচ্ছে বাচা গেল। চল তোমার সঙ্গে
যেদিকে হোক খানিকটা যাওয়া যাক।
আমার সঙ্গে বিনি প্র্যান আলোচনা করিতে আসিদ্লাছিলেন তিনি ক্ষুক
হুইয়! ফিরিয়া! গেপেন। গাড়িতে উঠিয়া বন্ধুকে পংক্ষেপে বিপদের কথ!
ধলিলাম। তিনি শুনিয়া বলিলেন) আমার সঙ্গে দেখ! হয়ে সত্যি বেঁচেছিদ
|]
৩২ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ বাজ-গল্প
বে-সব'বাবসার কথা শুনলাম ওতে তোর সর্বনাশ হ'ত, ব্যবসা সম্বন্ধে আমার
একটা অদ্ভুত প্লান আমি ঠিক ক'রে রেখেছি, বদি লাগে তোর কাছেই
লাঞক।
আঁমি তৎক্ষণাৎ বলিলাম, কতদূর এসেছি?
হাওড়া স্টেশনের কাছে।
1] হলে থামাও আমার একট] গুরুতর কাঁজ মাছে, এক্ষুনি নামতে হবে,
প্যান অন্য দিন শুনব। গাড়ি থামিবামাত্র নামিয় গেলাম । গাঁভি অদৃশ্য
হইল, আমিও ট্রাষে উঠিয়া! বাড়ি ফিরিয়। আসিলাম |
বান্রে ঘুমটা ভালই হইয়াছিপ, কিন্ত গোলমালে ভোরের বেলাই ঘুম ভাঙিয়া
গেল। তাডাঁভাডি উঠিষ। ফটক খুলিতেই দেখি পূর্ব দিনের কষেকজ্জন এবং
আরও নূতন ঝয়েক্ন লোন নি্গেদের মধ্যে কোন্ ব্যবসা শ্রেঠ ইহা লইয়া
তুমুল তর্ক আরম্ভ করি দিয়াছে | আমাকে দেখিবামাত্র দিই তিন জন খপ.
করিয়া আমাকে ধরিয়া! ফেলিল।
একজন বলিল, আমি গ্যাপান্টি দিচ্ছি আমার কখাধদি | আর একছন
বাধ দিয়া বলিল, তোপ গ্যারাট্টিণ মুল্য কি?
ইহার পরু আর ইহাদের তর্ক অন্তসরণ করিতে পারি শা, কেন না পব
দিনের মতো দশ-বাবো জন সমস্বরে চীৎকার করিঘাছে।
আমি তর্কের মধ্যে ফল্ কিয়া উহাদের হাত ছাডাইযা তিতাবে টকিক্নাই
দরজ| বন্ধ করিয়! দিলাম, আমার হিতৈধিগণ চীৎকাণ করিত করিতে চলিয়া
গেল ।
অগ্তাগ্য দিন সাধারণত বেল! নয়টায় গঙ্গা-ন্নান করি। সে দিন ভয়ে ওয়ে
আষইটায় পান করিতে গিয়াছি । জল নামিয়া একটিমাব্র ডুব দিয়াছি, আমার
পাশে কে স্নান করিতেছিল পুর্বে খেয়াল করি পাই , ডুব পিয়া উঠিতেই সেই
অপরিচিত লোকটি হঠাৎ বলিল, ও আপনি ! ভাল কথা, আপনি নাকি ব্যবসা
করষেন? আমাকে আপনি চেনেন না, কিন্তু আমি আপনাকে চিনি__সে য।
হোক, আপি যদি টাকা নষ্ট করতে না চান তবে ইন্শিওক্যান্স__
আমি ভাল লতার জানিতাম। ইন্শিওর্যান্সের কথা শেষ হইবার আগেই
ভগবান বাটাও” বলিগ্না ডুবিয়া গেলাম । প্রান্থ এক মিনিট জলের ভিতর
চঙগিয়! মাথা তুলিতেই দেখি আমার নিকট হইতে তিন হাত দূরে সেই লোকটিও
মাঁথা তুপিল। গ্রাপ্ধ এক মিনিট দম বদ্ধ করিবার পর তৎক্ষণাৎ আবার ডুব
ফেওয়া সম্ভব লহে, কাজেই নির্বোধের মত তাহার দিকে চাহিঙ্া বৃহিলাম।
প্যান ৩৩
সে একটু কাছে আনিয়া বলিতে লাগিল, আমাদের কম্পীনির নাম ইনফ্যাপ্ট
বেঙ্গল লাইফ, পলিসি কগ্ডিশানগুলে৷ ফ্দি_
কিন্তু তই কষ্ট হউক, ইহাবু পর আমি আর মাথা তুলিয়। থাকিতে পারিলাম
না, আবার ডূবিয়া সেখান হইতে সনিয়া যাইতে লাগিলাম।; তারপর যেমনি
মাথ! তুলিয়াছি দেখি ইন্ফ্যান্ট বেঙ্গলও আমার সঙ্গে সঙ্ষে আপিয়াছে।
আমাকে দেখিবামাত্র সে বলিতে আরম্ভ করিল, আমাদের নল. ্. 855900--
ও 5988” 78617)5 01- রিজার্ভের সঙ্গে লাইফ ফাণ্ডের অন্থুপাত-_
আমি হতাশ ভাবে বলিলাম, বুঝতে চাই না।
ভদ্রলোক বাধা দ্রিয়া বলিলেন, না বুঝে কোনো কিছুতেই হাত দ্বেওযা উচিত
নয়, আপনাকে বুঝতেই হবে ।
"হে মধুস্থদন” বলিয়া আবাপ ডূবিলাম। কিন্তু দশ সেকে্ডের মধ্যে এক
ভীষণ কাণ্ড ঘটিল। জলের ভিতর দ্য! ডুখিয়া ডূবিয়া চলিতে মাথায় কিসের
লঙ্গে ভয়ানক গুতা লাগিয়া গেল। শ্রশুক মনে করিয়া ভয়ে তাভাতাড়ি মাথ!
তুলিতেই দেখি, শুশুক নহে, ইন্ফান্ট বেলের মাথা । মাখাটি যেন থা
বলিতে বলিতেই উঠিল,-_-শেষ পর্যস্ত ইনশিওর্যান্সে আপনাকে নামতেই হবে,
এর থেকে পরিত্রাণ নেই ।
কথাট! আমার অনেকটা বিশ্বাল হউল। বণিলাম, আপনার মতে। অধ্যবণায়
তে। আমার নেই ।
বলেন কি, আপনার অধ্যবপার় যা দেখছি আমি তে। তার কাছে শিশু ।
অল্প মূলধনে যদি ব্যবসা করতে হয়__
ব্যবনার কথা শুনিবামাত্র চমকিয়া উঠিলাম। পরিভ্রীণ পাইবার জন্ত শেষ
চেষ্টা করিতে হইবে | আবার ডুূবিলীম। এবারে সমন্ত শক্তি প্রয়োগ করিয়া
অপর পারের দিকে ছুটিতে লাগিলাম, পূরা এক মিনিট তীর বেগে ছুটিবার পরু
যখন উঠিলাম তখন দেখি আহিরীটোল1-ঘাটের অত্যন্ত কাছে আসিয়া
পড়িয়ছি 1" ইন্ফ্যাণ্ট বেঙ্গল আমার গতি অন্থমান করিতে না পারিয়া! উল্টা
দিকে চলিয়া গিয়াছে, না! হইলে নিশ্চয় লাইফ ফাণ্ড কিংব! এক্স. পেন্স রেশিও
সম্বন্ধে কথা তৃলিত।
ভীষণ পরিশ্রাস্ত হইয়! পড়িয়াছি। পুনরায় সাতার দিক্বা অপর পারে
হাওয়া সম্ভব নহে। তীরে উঠিয়া! ভিজা কাপড়ে জেটির দিকে চলিতে
লাগিলাম। অবসন্ন দেহ, ধীরে ধীরে পা ফেপিতেছি, এমন সময় কে থপ, করিয়া
আমাক হাত ধরিয়া বলিল, কি বিপিনুদা, একেবারে দেখতেই যে পাচ্ছেন ন! !
৮১০
৩৪ পরিষল গোশ্বাদীর শ্রেষ্ঠ বাছ-গল্
ইনি আমার শ্টালক।
আমি খুঈী হইবার চেষ্টা করিয়াও পারিলাম না, গম্ভীর ভাবে বলিলাম, ভাই,
ছাটর্জে বড় কষ্ট হচ্চে-_ওপার থেকে সণতার কেটে এসেছি, তোমার গায়ে একটু
ভর দিয়ে চলি
কোথায়?
গ্রীমারের জ্বেটিতে | সঙ্গে পয়ম! নেই, একট। টিকিট কিনে দাও ।
আমিও যে আপনার বাড়িতেই যাচ্ছি।
কি মনে করে?
আদ এইমাত্র শুনলাম, আপনি চাকরি ছেড়ে ব্যব্ন। করতে ঘাচ্ছেন।
যা-তা ব্যবসায় পয়স| নষ্ট না ক'রে চাকরি করাই কি ভাল লগ্ন?
এইবার যথার্থ খুশী হইয়া বলিলাম, ব্যবসা আমি করব না, চাকরি
বেচে থাক্।
যদি করতেন, তা হ'লে কিসের করতেন বলুন তো?
কিছু মনে করবার সময় পাইনি ভাই, মনে করব ব'লে মনে করছিলাম ।
যদি নেহাৎই ব্যবসা করতে হৃয় তা হ'লে আমি একাট ভাল প্ল্যান__
তুমিও প্র্যান? দেখ, আমার প্র্যান-ট্যান কিছু দরকার নেই ।
বলেন কি। ব্যবসার গোডার কথাই হচ্ছে প্র্যান, যে ব্যবসা করবেন__
আমি বিনা প্র্যানে ব্যবস| করব।
ত৷ হয় না, আপনি একটা অন্স্তব কথা বললে আমি শুনব কেন? কিসের
ব্যবস! করবেন, কত টাকা ফেলবেন, কিনে বেচা ন। ম্যান্্ফ্যাকচার, কমিশন
এজেন্সি না আমদাশি রপ্তানি, কত টাকা খাটবে, কত ব্যাঞ্ধে খাকবে,-_ধরুন
বনি দশহাজার টাকা এহ্রিমেট ক'রে থাকেন তা হ'লে প্রথমেই অন্তত পাঁচ হাজার
টাকা ব্যাঙ্কে মজুত রাখা চাই, আরো বেশি রাখতে পারলে আরো! ভাল হয়।
আমি হতাশ ভাবে বলিলাম, ভগবান!
শ্কালক তৎক্ষণাৎ বলিল, ভগবান প্রথম অবস্থায় কিছুই করেন না ডাকতে
হয় শেষ কালে ডাকবেন।
স্টালকের মুখে বক্তৃতার খই ফুটিতে লাগিল, আমি নিরুপায়, দ্বিমার হইতে
লাফাইবার শক্তি নাই, চুপ করিয়া! রহিলাম |
চুপ কনিম্না থাকিতে থাকিতে ক্লান্তিবশত চোখ বুজিয্বা আসিয়াছে.
আধ-জাগ্রত অবস্থায় এক বিভীষিকা দেখিলাম । সমত্ম শারিখার লো
বাধাঘারট আমাকে ছ্ীমার হইতে নামাইয়! লইবার জন্য আসিঙ্া! ভি করি
ক্যান ৩৫
দাড়াইয়াছে। আম ঘাটে পৌছিবামাত্র হাজার গাজার লোক "আমার প্র্যান,
আমার প্ল্যান” বলিয়া চীৎকার করিয়া চারিদিক কীপাইয়া তুলিল। তাহার
মধ্যে আমার স্ত্রীকেও দেখ! যাইতেছে, সেও তাহার এক প্ল্যান লইয়া! আমিয়াছে ;
আমাদের বৃদ্ধা ঝি তাহার পশ্চাতে “পেলান পেলান' করিয়া চীৎকার শর
করিয়াছে! তাহার দাত নাই এবং সেই জন্তই তাহার স্বর কোনে! বাঁধা না
পাইয়া! সকলের দ্ব্নকে ছাড়াইয়া উঠিয়াছে। আমি ভয়ে আর্তনাদ করিয়া
উঠিলাম। এইটুকু পর্ধস্ত বেশ মনে আছে, ইহার পরের ঘটনা আর কিছু মলে
পড়ে না। যখন জান হইল তখন দেখি, আমি হানপাতালে শুইয্লা এবং পাঁশে
আমার স্ত্রী এবং শ্টালক বলিগ্না। স্ত্রী ফুপাইয়! ফু'পাইয়া কীদিতেছে এবং
স্টালক তাহাকে নানা রকন সান্বনা দিতেছে ।
হঠাৎ একটি শব্দ আমার কানে প্রবেশ করিয়া! আমাকে অস্থির করিয়া
তুলিল। পাশের বিছান! ঘিরিয়া যাহারা বগিয়া আছে, তাহাদের মধ্যে কি
আলোচনা হইতেছিল এতক্ষণ লক্ষ্য করি নাই, কিন্ত কথার ভাবে স্পষ্ট বোঝ!
গেল তাহাদের সমস্ত! ফাইভ ইদ্রার প্ল্যানে আসিয়া ঠেকিয়াছে।
মস্তি অবপাদগ্রন্ত হইয়া পড়িয়াছিল-_-কোনো কথার অর্থগ্রহণ করিবার
মতো মনের অবস্থা ছিল না। প্র্যান কথাটি শুনিবামাত্র আবার উন্মাদ হইয়া
উঠিলাম। উঠিয্লা বসিলাম।
আমাকে জাগ্রত দেখিয়া শ্ালক হঠাৎ তাহার যাবতীয় দাত বাহির কবিম়।
বলিল, বিপিন দা, আমাব প্র্যানটা তাহ'লে এবারে বলি ?
আর থাকিতে পারিলাম না, বিছান৷ হইতে আচনম্বিতে লাফ দিয়া উঠিয়া
ছুটিয়া বাহিরে চলিয়া আমিলাম।
আজ লাত দিন হইল মামা-বাড়িতে লুকাইয়া আছি এবং আরো কিছুদিন
থাকিব বলিয়! মনে করিতেছি । চাঁকরিটি থাকিবে না! এ বিষয়ে সন্দেহ নাই।
ব্যবন! করিঘাই খাইতে হইবে কিন্তু সে ব্যবসা অন্ত কাহারে! প্র্যানে নহে।
সেক্বপ অবস্থা হইলে মৃত্যুর প্ল্যান চিন্তা করিতে হইবে।
(১৯৩৩)
আলবাব! ও ব্রজাবলাস
৯
আলিবাবা দহ্যাদের বত্ত-গৃহ আবিষ্কারের পর থেকে যা-য! করোছল তা লকলেরই
জানা, স্ৃতরাং ভার পুনন্ষক্তি নিশ্রয়োজন। কিন্তু তৎকালীন বাদশার আদেশে
আলিবাবা-আখ্যানের একটি বড অংশের প্রচার বন্ধ থাকাতে সেই অংশটি
অদ্যাবধি কেউ জানেন শ|। বাদশার হুকুম ছিল কড়া, কেউ সে কাহিনী
প্রকাশ করলে ভার প্রাণদ্ড হম্ত, অনেকেই প্রাণ দ্রিযেছে এ জন্তে। তার পর
থেকে ধারে ধীরে লোকের মন থেকেও তা লুপ্ত হয়ে গেছে এবং তার বদলে
প্রচারিত হয়েছে এক অসম্ভব কাহিনী যা আবব্যর্ধনী গ্রন্থে সবাই পড়েন ।
মাত্র একটি লোক, অলকরিম তীন নাম, তিনি বাগদাদ থেকে পালিয়ে
তুরস্কে যান এবং সেখানে গিয়ে সেই কাহিনীটি গোপনে লিখতে শুক করেন।
তার ইচ্ছা ছিল, লেখা শেষে একটি লৌহ্ পেটিকায় বন্ধ করে তাৰ বংশধরদের
ভবিষ্যৎ সম্পন্তি হিসাবে সেটি লুকিয়ে বাঁথবেন এনং কয়েক পুরুষ পরে তারা
তা বিক্রি কবে লাভবান হবে। কিন্তু দর্ভাগাঞক্মে অলকরিমেৰ একমাজ
সস্তানের আর কোনো সন্তান না! থাকাতে উক্ত লৌহ পেটিকাটি ব"শান্ুক্রমিক
ভাবে হন্তান্তরিত হওয়া আগ অভ্ভব হয়নি, এবং অলকনি'মণ প্রত্র অপ-
কলিমের মুত্যুর সঙ্গে অঙ্গে পেটিকার অন্তিত্বও লুপ হয়ে যায়। কিন্ধ গত
জানুয়ারি মাসে তুরস্কে ভূমিকম্পের ফলে যে বুহৎ ফাটলটি দেখা দেঘ, সেই
ফাটল থেকে এত কাল পরে সেই লৌহ্-পেটিকা এবং তৎসহ সেই সবত্ব-রক্ষিত
কাহিনীটি প্রকাশ হয়ে পড়েছে । কাহিনীটি পৃথিবীর সকল ভাষাতেই প্রচারিত
হবে, কিন্তু আমি প্রাচীন আবব্য ভাষীমব পণ্ডিত, এবং বাংল] দেশের মঙ্গে
কাহিশীটির সম্পর্ক আছে, সে জন্যে আমিই প্রথম প্রচারের ভার পেয়েছি ।
কাহিনীটি এই-_
আলিবাবা মাত্র ভিনটি গাধার সাহায্যে দন্য্দের গুপ্ত গুহা থেকে ধনরত্ব
বয়ে আনছে । তার ঘর ভরে উঠছে বহুমূল্য হীনা-জহরতে। ওজন
করে করে মাটিতে পুতছে ফতিমা। এক দিন যায়, ছু'পিন যায়, কিন্তু
তৃতীয় দিনে বাধা উপস্থিত হল। সে এক অভাবিত কাণ্ড । তিনটি গাধা
বেঁকে দাড়াল, তারা বোঝা পিঠে নিয়ে আর নড়ে না, আলিবাবা তার সমস্ত
শক্তি প্রয়োগ করেও তাদের এক পা সরাতে পারল না। তার সোনার স্বপ্ন
আলিবাবা! ও ত্রজ্ববিলাস ৩৭
যে ভেঙে যায়! কি সর্বনাশ। চার দিকে মণি-মুক্কীর পাহাড়, লাল নীল
সবুজ আলোর বিছা খেলে যাচ্ছে চাবি দিকে, চোখ ঝলসে যায় তার ছ্যাতিতে,
কিন্ত সেই দিন দেই আলো! আলিবাবার চোখে নিশ্রভ হয়ে এলো, তাঁর মাথা
ঘুরে উঠল, মে হতাশ ভাবে সেই মণি-গুহার মাঝথানে পড়ে শিশুর মতো!
কাদতে লাগল। আর সমন নেই, একটু পরেই দন্থারা ফিরে আসবে, এসে
যদি দেখতে পায়, তাঁদের ভাগারে সি কেটে আর এক দন্থ্য প্রবেশ করেছে,
তাহলে আর রক্ষা নেই । আলিবাবা উন্মার্দের মতো! দাড়িয়ে উঠে আবার
ঠেলতে লাগল গাধাদের, কিন্তু আগের মতোই এবারেও কোনো ফল হল না।
আলিবাবা করুণ চোখে চেয়ে রইল তাদের দিকে । এমন সময় আলিবাবাকে
স্তত্বিত করে একটি গাধ| মানুষের ভাষায় বলে উঠল, বোঝা! বইব, যদি বোঝার
অর্ধেক আমাদের দাও ।
আলিবাবা! নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিল ন!, তার মনে হচ্ছিল
সে যেন আরব্য উপন্যামের এক নায়ক, সে যেন এই বূপকথার মায়ারাজ্যের
কোনো মাঁচুষ, আর গাধাগুলে! সব রূপকথার গাধা । একি ভৌতিক কা ।
একি কঠিন সমস্া !
গাধাটি আপার বলে উঠল, অর্ধেক ভাগ ন! দিলে শুধু ঘে আমরাই বইব ন।
তা নয়, বাইরের কোনে গাধাকেও বইতে দেব না; ভূলে যেয়ো শন, আমাদের
বোঝা ব্ওয়ার উপরেই তোমার ভাগ্য নির্ভর করছে।
কিন্তু এ প্রন্তাবে আলিবাবা রাজি হয় কি করে? তার লোভ দুর্দাম হয়ে
উঠছে। তিনটি মাত্র গাধাতেই তার ছু:খের সীমা ছিল না, হাজার গাধা
দরকার ছিল, কিন্তু লোকে সন্দেহ করবে ভয়ে সংপ্া বাড়াতে পাবে নি। এর
উপর আবার অর্ধেক ভাগ দিতে হবে? আলিবাবা উত্তেক্গিত ভাবে ব'লে
উঠল-_না! না না বলে ঝড়ের মতে ৷ বেগে বেরিয়ে গেল গুহ থেকে
গাঁধারাও বোঝ! ফেলে তাকে অনুসরণ করল ।
আলিবাবার মনে ভয় জেগেছে, সন্দেহ জেগেছে-__এ কার মন্ত্রপূত গাধা_
কোন্ অপদেবতার খেলা না এ ডাকাত দলের কোনো ফাদ! সে বুঝতে
পারলে, আর যাই হোক, তার ভাগ্যপথে এইখানেই কাটা পড়ল,।...কিস্ত সে
ঘা! পেয়েছে তাও ঘি ভূতের খেল] হয় ?'".
তার হঠাৎ মনে পড়ল অলকেমির কথা । অলকেমি বৈজ্ঞানিক, তার
কাছে গেলে হয়তো এর একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। হয়তো রহস্য ভেদ
একমাত্র তার হাতেই হতে পারবে।
বে পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাজ-গল্প
কিন্তু আলিবাবাকে নিরাশ হতে হৃ'ল। দে গিয়ে দেখতে পেল, অল-
ফেগ্রি শিসেকে লোলা বানাবার ছু:সাধ্য চেষ্টায় উন্মাদ । এই উন্মাদ দি টের
পান যে, আলিবাব! বিন পরিশ্রমে সোনা বানাবার কৌশল আবিষ্কার করেছে,
তা হ'লে হয়তো তিনিই আলিবাবার অংশীদার হতে চাইবেন।
মরুভূমির পথে চলা কি দুঃসাধ্য কাজ! যখন সে অলকেমির কাছে
ছুটে এসেছিল, তখন তার মনে ছিল উৎসাহের আগুন, তাই পথের দুঃখকে
সে দ্বুখ মনে করেনি, কিন্ধ এখন? এখন সে ফিরে চলেছে হতাশ হয়ে,
তার মনের আগুন নিবে গেছে, তাই এখন সে আগুন অন্ভব করছে পায়ের
শিচে। দিগন্ত-বিভ্তুত মরু-বালুকা পাহাডের মতো তরঙ্গীয়িত হয়ে একের পর
এক মাথ]| তুলে আছে, চলতে চলতে পথ আর শেষ হয় না। এমন সময় সে
দেখতে পেল, তারই মতো আর এক হতভাগ্য চলেছে মেই তণ্ত পথে একা
পায়ে ছ্েটে। মুখ তার আকাশে তোলা, দৃষ্টি উপবমুখী, আকাশের প্রচণ্ড
অগ্নিগোলক তার চোখে-মুখে অগ্নিবর্ণ করছে, কিন্া মেদিকে তার
জক্ষেপ নেই।
আলিবাবা আরও এগিয়ে দেখতে পেল, মুখে তার এক তামাকের পাইপ।
এ রকম অদ্ভুত মান্ষষ দেখে তার কৌতুহল দ্বধিবার হয়ে উঠল , িজ্ঞাসা করল,
'আপনি কে?
-আমি? আমি এক জন্ বাঙালী বৈজ্ঞানিক, নাম ব্রজবিল।স |
_বৈজ্ঞীনিক ? আপনি কি অলকেমির শিষ্য?
-না। আমি ডক্টর থর্নভাইকের শিা। আগে অবশ্ট আমার গুক ছিলেন
শীরকি হোম্স, কিন্ত থনডাইকের বিশুদ্ধ ল্যাবরেটরি মেথড আমার খুব পছন্দ ।
"তিনি কে?
_-ভিনি ভিটেকটিভ, আমার গুরু ।
_-ডিটেকটিভ কাকে বলে?
-খীটি বৈজানিক পদ্ধতিতে যিনি রহস্তাডেদের কাজ করেন, তাকে
*ডিটেফটিভ বলে।
আলিবাব! যেন হ্থাতে ব্বর্গ পেল এই কথা শুনে । বলল, আমি একটি মহা
বৃহন্যে পড়ে মারা যেতে বসেছি, ষদি একবার মেহেরবানি করেন আমার প্রতি ।
এখন আমার জময় নেই, দেখছ না, আমি অন্য একটি রহস্তভেষ্ধে নিযুক্ত
আছি? আপাতত আঁহি উদষেকিস্তানের ধুলো লংগ্রহ কানে ফিরছি।
- ধুলো কেন?
আলিবাবা ও শ্রজবিলাস ৬১
-মাইক্রোক্ষোপে দেখব বলে । কয়েক জন অপরাধী তেহ্রোনের জেল
ভেঙে পালিয়েছে। সেখানে তাদের ফেলে-যাওয়া জামা ঝেডে ঘে ধৃলে!
পেয়েছি, তার মধ্যে এক জাতীয় সিক্কের আশ পাওয়া গেছে, এই সিক্ক এক
মান্র উজবেকিস্তানে পাওয়া যায় । তাই মিলিয়ে দেখব এ লোকগুলো! উজবেক
কিনা। অথচ জেলে তারা পরিচয় দিষেছিল ফিলিস্টাইন বলে ।
তা হ'লে উজবেকিস্তানের সিল্ক না এনে ধূলো আনলেন কেন?
আগেই বলেছি ল্যাববেটরি মেথড আমার পছন্দ। "ইন্ভাকশন বাই
মিম্পল এনিউমারেশন* রীতিকে আমি অবৈজ্ঞানিক মনে করি। স্থল চোখে
দেখা জিনিমে আমি ভরসা করি না। আমার পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং
খাটি বৈজ্ঞানিক ।
আলিবাবা এ-সব শুনে বিস্ময়ে বিমুঢ হয়ে গেল। ব্রজবিলাসেব প্রতি
তার শ্রদ্ধা জেগে উঠল। সে কাতরভাবে বলল, দোহাই আপনার, আপনি
আমার রহস্যটি আগে ভেদ করুন, আমি আপনাকে প্রচুর হীরে-জহরৎ দেব।
হীবে-জ্বহবতের কথায় ব্রজবিলাস চমকিত হয়ে বলল, কি রহস্য তোমার ?
আমার তিনটি গাধা হঠাৎ আমার কাজ করতে অন্বীকার করছে, আর
সব চেয়ে মজার কথা এই যে, তারা মানুষের ভাষায় কথ! বলছে, তারা বলছে,
মজুরি না বাড়ালে তারা কাজ করবে ন।
ব্রজবিলাদ লাফিয়ে উঠল এই অদ্ভুত কথা শুনে। বলল, সত্যি বলছ ?_-
তা হ'লে বাজি আছি তোমার রহস্তভেদ কবতে।
হু
বাগদাদের কাছেই ত্রজবিলান তার ঘাঁটি স্থাপন করেছিল । ঠিক হ'ল,
সে খাটিতে গিয়ে তার সহকারী শত্তৃকে কয়েকটা জকুবী নির্দেশ দিয়ে
আলিবাবাকে অহ্থসরণ করবে।
তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে । টাইগ্রিস নদীর ধার দিয়ে, খেজর-বীথির
মাঝখান দিয়ে চলেছিল ছু'জন, এমন সময় এক অদ্থত ঘটনা ঘটে গেল।
অতকিতে অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি অতি ধারালে! ফলাকাযুক্ত তীর বিদ্যুৎ
বেগে ছুটে এসে ব্রজ্ববিলাসের পিঠে লাগল এবং বুকের ঠিক মাঁধখানট? ডেদ
করে বেরিয়ে সম্দুখস্থ একটি খেজুর গাছে গিয়ে বিধল। আলিবাবা ভয়ে
লাফিয়ে উঠল। ব্রজ্ববিলাস হেসে বলল, ভয় পেয়ে না, শক্রুপক্ষ অছসপ্নণ করছে।
তাক মানে আমাকে তারা ভয় করছে।
৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যদ-গল্প
আলিবাবা কিছুতেই তেবে পেল না, ব্রজ্জবিলাস এত বড় আঘাতেও
চঞ্চল হচ্ছি নাকেন। তার মুখে আর কথা নেই, ছুঙ্গনেই চলছে চুপচাপ ।
এমন সয় হঠাৎ তিন চার জন ভীষণ আকৃতির লোক তাদের দিকে ছুটে এসে
ব্রজবিলাসের গলার্টি তরবারির আঘাতে একেবারে কেটে ফেলল এবং মুহূর্তে
অনৃশ্ঠ হয়ে গেল। ব্রজ্জবিলাসের মুণ্ডটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে
পড়ে গেল ।
স্তম্ভিত আলিবাব| ভদ্বে চীৎকার ক'রে উঠল। এতখানি আশার পর
হঠাৎ এই নৈরাশ্তে তার হাত-প। অসাড় হয়ে এলো, মনে হ'ল সে-ও মাটিতে
পড়ে ধাবে।
এমন সময় ব্রঙ্জবিলাসের ভুনুষ্ঠিত ছিন্নমুগ্ড মৃদু হেসে ব'লে উঠল, এ ভালই
হ'ল, ভেবে দেখলাম এতে আমার কাজের সুবিধাই হবে।
আলিবাবার সমস্ত দেহ ওয়ে কণ্টকিত হয়ে উঠল। এ কি তবে সবই
ভৌতিক খেল? গাধা, ব্রঙ্গবিল।প, আলিবাবা-_িছুই সত্য নয়__সব মায়া,
সব ভোজবাজী ? কোন্ যাদুকবের হাতে পড়ল লে?
ব্রজ্জবিলাপের মুণ্ড বলল, ভয় পেয়ে। না, তোমার কাক্গ আমি ঠিক ক'রে দেবা
আলিবাবা কম্পিত কণ্ঠে বলল, কিন্ত আপনি তো মারা গেছেন।
মুণ্ড বলল, আদৌ না। বিশ্বহ্যষ্টিগ বিধানে প্রাণিজগতে একমাত্র আমিব!
ও ডিটেকটিভ এই বিশেষ স্থ্বিধাটি ভোগ করে থাকে।
আলিবাবা কিছুই বুঝতে পারল না। লে বিন্ময়-বিস্কীরিত চোখে চেয়ে
দেখল, ত্রক্জবিলামের একথানা হাত আপন মৃণ্ডটি মাটি থেকে কুড়িয়ে নিষে যথাস্থানে
লাগিয়ে দিল। তার পর হাতে হাসতে বলল, এখন সব বুঝিয়ে নলাব সময
নেই, শুধু এইটকু জেনে বাথ যে, ভিটেকটভ সম্প্রদায় কোনো আততাম্ীর হাতে
মরে না, এটা আমাদের স্পেশাল প্রিভিলেজ। হয়তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়
হিসাবেই এটি আমর! বিধাতার কাছ থেকে পেয়ে থাকব ।
কথাটা আলিবাবার বৌধ হয বিশ্বাপ হল, কিন্তু সম্পূর্ণ নম্ন, কেননা এ
ঝ্বকম অদ্ভূত ঘটন! তার কল্পনারও অতীত ছিল। সে সদক্কোচে জিজ্ঞাা করল,
জুগটি মাটিতে পড়ে গেলে আপনি বলেছিলেন, ওতে আপনার সুবিধা হল, তার
্মানে কি?
ব্রজবিলাম বলল, মানে এই যে, বেখানে শুধু দৈহিক শ্রম, বুদ্ধির দরকার
নেই, মেখানে অকারণ যাথাটিকে বহন করি, আবার যেখানে শুধু চিন্তা দরকার
সেখানে অকারণ মাথাটির সঙ্গে হাত-পাগডলোকে আটকে রাখি । এই বিষম্
আলিবাবা ও ব্রজবিলাস ৪১
অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে গেলাম । এখন থেকে আঁমি খন তেচিস্তায়__অর্থাৎ
রহন্সভেদ-চিস্তায় ডুবে থকেব, তখন আমার দেহটিকে পাঠাব নানা তথ্য-
সংগ্রহের কাজে ।
-চিস্তা ও কাজ একসঙ্গে দরকার হলে ?
"_মাথাটি সঙ্গে নিয়ে যাব।
তু
ত্রঙ্ববিলাস আলিবাবার রহশ্যভেদের কাজ শুরু করেছে। অর্থাৎ সে
গাধাগুলোর যথাবীতি মীপ নিয়ে তাদের খুর থেকে পাম্পেব সাহাঁষ্যে সামান্য
কিছু ধূলে। সংগ্রহ ক'রে মাইক্রোক্ষোপের নিচে ফেলেছে পরীক্ষার জন্য |
গীধাগুলোর মাপ-জোক ণিয়ে এবং গায়ে ছু-একটা গুতো মেবে যেটুকু
বোঝ] গেছে ত| এই যে ওরা অত্যন্ত শান্তর তাতে প্রমাণ হম, ওরা মনিবের
হাতে ভাল ব্যবহার পায়। কিন্ত একটু বেশি শান্ত ব'লে, সনোহ হয়, গাঁধাগুলো
মৃতলবাজ, এবং গাধাঁব ঘতটা! বুদ্ধি থাকা দ্ররককরি তাঁর চেয়ে ওদের বুদ্ধি কিছু
বেশি আছে । আরব, সীরিম্বা এবং ঈজিপ্ট, এই তিন দেশের গাধাই ভদ্র,
কিন্ত আলিবাবার গাধা অতিভদ্্র ।_-কিন্ত কেন ?-" এই প্রশ্নের জবাব পেলেই
লব রহহ্য ভেদ হবে |
ব্রজবিলাপ চিন্তা করে চলেছে । ইতিমধ্যে শস্তু জাইডগুলো শন্বৰ ক'রে
মাইক্রোস্কোপের নীচে পাজিয়ে বেখেছে_ ব্রজবিলাস সেইথানেই এনে বলল।
কিন্তু এক বেল] ধরে পুথা ছৃপুঙ্খ পরীক্ষা করে সে যা পেল তাতে রূহশ্ তার কাছে
আরও ঘনীভূত হয়ে উঠল। গাধার খুরের ধূলে| বিশ্লেষণ ক'রে পাওয়া যাচ্ছে
চালের গ্রে), সিক্কেব আাশ এবং গীঞজ-পাতার ট্রকরো। এ তিনটি জিনিসই
বাংল! দেশে পাঁওয়। যায় এবং উজবেকিস্তানেও পাওর়| যায়। তবেকি এগুলো
বাংলা দেখের গাধা?
ব্রজবিলাস আবার পরীক্ষা শুরু করল, এনং পরীক্ষার পর পরীক্ষা! করতে
করতে অবশেষে তার মুখে হাসি ফুঠল, কারণ এখন যে সিক্বের আশ দেখা যাচ্ছে
তা নি:সন্দেহে উজবেকিস্তানের |
কিন্ত এ হাসি বিজয় লাভের হাসি নয় ।”..কারণ লক্ষ্য এখনও অনেক দৃরে।
'*প্উজবেকিস্তানের পলাতক আসামী 1 উজবেকিস্তানের গাধা 1--.তবে কি
এর মধ্যে কার্ধ-কারণ সম্বন্ধ আছে? তবে কি আসামীরা এই গাধায় চড়ে
২ পরিমল গোস্থাধীর শ্রে্ হা-গল্প
তেহেরানে এসেছিল 1..-হয্র তো তাই। ত্রঙ্গবিলাস ভাবতে লাগল। ক্ষিন্ত
কিছু পরেই বুঝতে পারল এ ঘটনা সত্য হলেও আসামীদের সন্ধান-্থত্র এর
মধ্যে নেই। কিন্তু তবু নিশ্চিত হওয়া! দরকার । সে আলিবাবাকে জিজ্ঞাসা
করল তার গধাগুলো কত দিনের, এবং জানতে পারল, সেগুলো তার বাচ্ছা
ফাল থেকে পালিত গাধা।
তুমি হলফ করে বলতে পার এ কথা ?
আলিবাবা হলফ ক'রে বলার আগে গাধা তিনটিকে ভাল ক'রে পরীক্ষা
করতে লাগলে।। ব্রঙ্গবিলাপের প্রশ্নে তার মনে সন্দেহ জেগে থাকবে, কিংবা
সত্যই সে দেখতে পেল ঘেন এ গাধাগুলে। তার পরিচিত গাধাগুলোর চেয়ে
কিছু অন্ত রকম । কিহ্ুপার্থকাট। যে কোথায় তা সে ঠিক বুঝতে পারল না।
ব্রন্গববিলাস খুশী হয়ে বলল, বাস্, ওতেই হবে।
কিছুক্ষণ পরে ত্রঙ্মবিলাস আলিবাবাকে বলল, আমার শুধু মুণ্ডটা আর
একবার গাধার কাছে নিয়ে যাও, আমি আর একটু দেখব। দেখার বিশেষ
কিছুই ছিল না, কেননা যন্ত্রের দেখা ভিন্ন তার কাছে অন্য দেখাব কোনো
অর্থ নেই। তবু সে গাধাদের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে কি যেন
ভাবতে লাগল । এমন সময় সে হঠাৎ লক্ষ্য করল, তিনটি গার্ধাব ছয়টি চোখ
যেন হালছে। সেহাসি সাধারণ হাসি নয়, বিদ্ধরপের হাসি । ত্রঙ্গবিলীপ মনে
মনে বলল, এই চ্যালেছের উত্তরে মে দেবে।
৪
ব্রঙ্গঘবিলাম তিন দিন ধন্পে কেবল ভাবছে । মুখে পাইপ, কিন্তু তাপ ধোঁয়া
মুখের ভিতরে দিয়ে গিষ্বে কপথে বেরিয়ে যাচ্ছে, কাঁবণ চিন্তা করছে শুধু
ভাষ মাথাটি। দেহটিকে সে আজ ক'দিন হল পাঠিয়েছে তেহরানে কতকগুলো
তথা সংগ্রহের কাজে । চিন্তা করছে সে অবিরাম, কারণ কোনো" বাধা নেই,
খাবার চিস্তা নেই, খাচ্ছে তেহরানে বসে তার দেছটি__তরল খাগ্ঠ গলার নালি
দিয়ে পেটে নেমে যাচ্ছে। তারই আনীত খবরে জানা গেল, পলাতক
অপার্সীরা পূর্বে গাধার ব্যবসা করত।
উধ্ব-ত্রজবিলাস নিম্স-ত্রজ্রবিলাসকে ব্লল-__তুমি পাশের ঘনে গিয়ে শুয়ে
খাক, দরকার হলে ভাকব, তবে দিন পীচেকের আগে বোধ হয আর দনকার
ইবে না তোমাকে ।
আলিবাবা ও ত্রজবিলাপ ৪৩
ত্রজ্জবিলাসের বিচ্ছিন্ন শির নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চিন্তা! কৰে ছিন্ন চিন্তাসুত্রগুলিকে
একত্র মেলাবার চেষ্টা করে চলছে । (১) উ্বেকিস্তানের গাধা! (২) উজবেকি-
গানের পলাতক আসামীর গাধার ব্যবসা! (৩) আলিবাবার গাধার মুখে
মানবীয় ভাষা! ! (৪) মানবীয় বিদ্রপের হাসি !
সব যেন মিলতে মিলতে মিলছে না, কোথায় যেন খেই হারিয়ে যাচ্ছে।
কিন্ত মেলাতেই হবে, কারণ, তাহ'লে ছুই পৃথক রহস্য একই খরচে ভেদ হয়ে
যাবে। যত চিন্তা করে, ততই তার মনে হয়, ঘোর অন্ধকারে একই পথে
সে চলছে দু'টি দরজা পাব হয়ে।
সাত দিন কেটে গেল, কিন্ত কোথায় দরজা? অবশেষে অষ্টম দিনও ঘখন
প্রায্স কাটে, তখন তার চোখে পড়ল এক জোড়া মৌজা । বু দিন আগে
পা থেকে মৌজা-জোড়া খুলে রেখেছিল, সেই অবস্থাতেই পড়ে আছে । একটি
সত্য তার মনে জেগে উঠল। মোজা জোড়া খোলার সময় উদ্টে গিয়েছিল,
ধ্ব ভাবেই পড়ে আছে। তার মনে হল, সে-ও বৌধ হয়, সব উল্টো ক'রে
ভাবছে, সোজ! ক'রে ভিতরের দ্বিকট! বাইরে টেনে আনলেই হয়তো সব সমস্যার
সমাধান হয়ে যাবে।
কিন্ত কি আশ্ষধ কাণ্ড । সত্য সত্যই তাই ঘটে গেল? হঠাৎ সব
রহমত জলের মতো পরিষ্ষাব হয়ে গেল, যেন একটি বিছ্যত আঘাতে,
হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন বিছ্যতের আঘাতে যেমন জল হয়! ব্র্ববিলাসের
ছিন্ন শির থেকে চিন্তার গুরুভার নেমে যাওয়াতে অত্যন্ত লপু ভাবে মুণ্ডটি
টেবিলের উপর আনন্দে লাফাতে লাগল।
শু শর
শু ছুটে এলো ঝড়ের মতো, দেহটিও ছুটে এসে মুণ্ডটি হাতে তুলে নিল।
ব্রজবিলাস চঞ্চল ভাবে শভুকে বলল, অবিলম্বে একখানা ছবি চাই, ছুরি নিয়ে
এখুনি চল আমার সঙ্গে আলিবাবার বাড়ি। আমি নিজেই গাধা, তাই এত
দিন উন্টো পথে চলেছিলাম-_হাঁয় রে, এতগুলো দিন আমার বৃথা নষ্ট হয়েছে !
আলিবাবার বাড়িতে পৌঁছে ত্রজবিলাস চীৎকার ক'রে বলল, কোথা্ন
গাধা?
গিয়ে দেখল, গাঁধাগুলো৷ তারই পূর্ব-নির্দেশ অন্বযায়ী খুব শক্ত ক'বে বীধা
আছে । সে সেখান থেকে আর সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ছুরি বের করল এবং
ছুরি দিয়ে উন্মাদের মতো! পর পর তিনটি গাধার পেট-_গলা থেকে পিছনের
পা পর্যন্ত চিরে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে ভিতর থেকে তিনটি লোক বেরিয়ে এলো-_-
৪৪ পরিমল গোন্বামীর শেষ্ঠ বাহ-গল্প
তিনটি নাম-করা! কমিউনিস্ট । এরাই তেহেরানের ভ্রেল ভেঙে পালিয়েছিল ।
হাতে ভাদের এক গাদ! করে ইন্তাহার।
বিশস্দ্ধ লোক অবাক হয়ে গেল ব্র্জবিলাসের আশ্চর্য ক্ষমতায়। দুনিয়ার
কৌতুহল নিবৃত্তির জন্তে তাকে একটি বিবৃতি দিতে হল, কিন্তু বুদ্ধি করে খুব
সংক্ষিপ্ত আকারে দিল। বলল, সমাধান অত্যন্ত হজ! গাধা মজুরি বৃদ্ধির
দাবীতে স্রাইক করেছিল, এখানেই আমার সন্দেহ জাগে । ওরা নিজেদের
ক্বভাব গোপন রাখতে পারে না ছ'দিনের বেশি ।
র্জবিলামের কৃতিত্ব-কথা ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র, শুধু আলিবাবার কোন্ বিশেষ
কাজটি করতে গাধার| অস্বীকার কবেছিল সেটি ব্রজ্রবিলাসও জানে না, পৃথিবীর
লোকেও জানতে পাল না।
(১৯৪৭৯)
কাউকে বলো ন'
কিছুদিন পূর্বে একখান! কাগজে একটি গল্প লিখেছিলাম । তাতে একটি মন্তব্য
করেছিলাম এই যে, ভূত গল্প লিখতে পাবে না। সেই গল্প পডে এক মহিল।
তার প্রতিবাদে জানিয়েছিলেন, _-ওটি আপনাব ভূল, কারণ ভূত সবই পাবে।
কথাটা তখন অবশ্য হেসে উভিযে দিয়েছিলাম , কন্ত আজ আমাকেই তার
প্রামশ্চিত্ত করতে হচ্ছে । কারণ আমি এখন আর জীবিত নেই । তবে ভয়
নেই, ভূত কি ক'রে গল্প লেখে তা প্রমাণ করতে যাচ্ছি না, কি কবে ভূত হয়েছি
দেটাই আমার ব্লবার বিষয় ।
স্বাস্থ্য আশার বাল্যকাল থেকেই খারাপ । বহুকাল ম্যালেরিয়ায় ভূ্গেছি-_
বনুকাল মানে প্রায় ত্রিশ বন ধবে। কত ওষুধ যে খেয়েছি! আগেকার
দিনে কুইনিন যে ম্যালেরিয়র ওষুধ তা জানা সত্বেও কুইনিন কতদিন কি
পরিমাণ খেতে হবে, কোনো ডাক্তাবেব কাছে তাৰ ঠিকমতো নিদেশ পাওয়া
যায় নি। সেজন্য বাপ বার জবে ভুগেছি এবং ক্রমে তাপ আন্রমঙ্গিক নেক
রকম উপসর্গ এসে জুটেছে। বিচিব পকম ওষুধ আমি খেষেছি--পেটেন্ট ওষুধ,
কবিরা্দগী ওষুধ, হোমিওপ্যাথি । তারপধ অনেকদিন কলকীতা-বাসের ধলেই
হোক বা বহুদিনের ওধুধের যৌগফলেই হোক, ম্যালেরিয়াতে আব ভুগি শি,
কিন্ধ পাকস্থলীটি স্থাধীভাবে খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তদুপরি ঠাণ্ডা লাগা
নামক ব্যাধিটি আমাকে এমন কঠিন ভাবে চেপে ধবল ষে, এটাই আমার পক্ষে
সবচেয়ে মারাত্মক বলে বোধ হ'ল। লুচি মাংস ঘি পোলাও প্রভাতর পরিবর্তে
বালি বা সাঁদাসিদে ভাত মাছেব ঝোল খেষে বাচা যায় কিন্ক মীসে একবান
ক'রে সর্দি-জরের আঞ্মণ হ'লে সম্পূর্ণ অকর্মণ্য হয়ে পডতে হয়। হয়েছিলামও
তাই। চাকরি ক'রে খেতাম, তাই অসুখ বহন ক'রেই কাজ করতে হত।
শেষে এযন হল যে কোনে দ্িকই আর রক্ষা করতে পারি শা। ফলে যা অনেক
আগে করা উচিত ছিল তাই শেষ অবস্থায় করলাম । অর্থাৎ দীর্ঘ দিনের জন্য
বিন! বেতনে ছুটি নিয়ে হাওয়া পরিবর্তনে গেলাম ।
গেলাম ভাল জায়গাতেই । এবং এটাই ষে বাচবার একমাত্র উপায় এ
ববয়েও সন্দেহ ছিল না। বহুদিন এক জায়গায় থাকলে কতকগুলো অন্ুখ স্থায়ী
হয়ে াবার উপক্রম হয়। কোনো! ওষুধের সাধ্য নেই যে সে সব অস্থখ সারাম্ব।
সর্দি তার মধ্যে একটি। যে-কোনো তুচ্ছ উপলক্ষে সর্দির আক্রমণ চলতে থাকে।
৪৬ পরিষগ গোস্বামীর শ্রে্ঠ বাদ-গল্প
স্বানত্যাগ না করলে ডাল হার কোনে! আশা থাকে না এবং করলে ডাল হবার
নিশ্চিত আশা থাকে ।
ঘেজাক়পায় গেলাম তার নামটি নান! কারণে গোপন বাখতে হল। এবং
সেধানে ধাদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হল, তাদেরও নাম গোপন নেখে এই কাহিনী
বলছি। কারণ তারা এখনও জীবিত আছেন। আমি চাই না থে তাদের
কোনো অনিষ্ট হোক। তার! প্রত্যেকে ভাল মানুষ, তাদের বিরুদ্ধে আমার
কোনে! হিংসাও নেই, তাদের ঘাড় মটকাঁবারও আমার কোনো মতলব নেই ।
বাঙালী-অধ্যধিত পশ্চিমদেশের ছোট শহর, স্বাস্থ্যের পক্ষে মনোরম স্থান।
সেখানে আমি নবাগত । সেইজন্য প্রাথমিক একাকিত্ব কষ্রদামক হ'লেও
তিনচার দিনের মধ্যেই অন্রভব কবতে পারলাম যে আমার স্বাস্থ্য উদ্াতির পথে
নিশ্চিত যাত্রা করেছে। স্বাস্থ্য আপাতদৃষ্টিতে অবশ্ত একই আছে, কিন্তু তবু
ভিতরে ভিতরে অভিনব সজীবতার হাওয়া বইতে শুরু করল। কিন্ত সেষে কি
তা বুঝিয়ে বলা ঘায় না।
তিনচার দিন পরে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হ'ল। তিনি কাছাকাছি
থাকেন, বেশ সদাশয় লোক, প্রবীণ এবং বিজ্ঞ। ভার সঙ্গে কয়েকদিন ধরে কত
আলাপ হ'ল। আমার অন্ুখের সমস্ত ইতিহাস তাকে শোনালাম। তিনি
বললেন, “খুব ভাল করেছেন এখানে এসে । অতি চমৎকাব জায়গা এটি।
তিনমালে আপনি নতুন মানুষ হয়ে ফিরে যেতে পারবেন। তবে একটি উপদেশ
আপনাকে দিচ্ছি*__-বলেই খুব গভীর আস্তরিকতার সঙ্গে প্রায় কানে কাছে
মুখ এনে একটি সাবধান-বাণী উচ্চারণ করলেন।
আমি তো শুনে অবাক । এটি কি ক'রে সম্ভব-_ভাবতে লাগলাম। কিন্ত
তাঁকে তখন কিছু বলতে পারল্লাম লা।
মহেন্দ্রবাবু তীর নাম, তিনি চলে গেলে, তীর কথাট। বিবেচনা করে দেখতে
লাগলাম। তিনি বলেছেন, "আপনার অন্থথের কথা আমি যা শুনলাম তাতে
আপনার ক্ষতি হবে না, কিন্ত আর কাউকে বলবেন না।”
এ কথার অর্থকি? তবে কি আমার অন্ুখের ইতিহাস শুনে তিনি বিরক্ত
হয়েছেন? তিনি কি ভেবেছেন আমি শুধু নিজের কথাই বলতে ভালবাসি?
অর্থাৎ আমি আত্মসর্বস্ব ? আত্মকেন্দ্রিক ? আত্মপ্রেমিক ?
কিন্ত ভা তো নয়। আমি এখানে নবাগত, অন্ুস্থ অবস্থাম্ম এসেছি, খিনিই
আসযেন আলাপ করতে তিনি নিজেই হয়তো আমার অন্থখের কথা তুলবেন।
ডা ভিন্ন আবাপ চলাই বা আর কি নিয়ে? আমার্ ব্যাধির ইতিহ্াপ ভদ্বানক
কাউকে কলে না ৪
ইন্টারেস্টিং, অপরের পক্ষে শিক্ষাপ্রদ্দও বটে । তা ছান়্া এখানে আমার জমিঙ্জারি
নেই যে জমি সংক্রান্ত আলাপ করব । স্বাস্থ্ালাভের জন্য এসেছি, আলাপটাও
স্বাস্থা সংক্রান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক । অতএব বৃথ! হল মহেন্দ্রবাবুর উপদেশ ।
কিন্ত হায়, ঘি ভবিম্যৎ-দৃষ্টি এতটুকু থাকত!
এর পর ধীর সঙ্গে আলাপ হ'ল তিশি রামবাবু। তিনি আমার সব কথা
আগাগোড়া মনোঘোগ দিম্বে শুনে বললেন, “কুইনাইনের ক্রিয়।। সমস্ত ব্যার্থ
আপনার এ কুইনাইন আটকে রেখেছে । জানেন না কি সাংঘাতিক চীজ
এ কুইনাইন |”
“বলেন কি !”
গা) ঠিকই বলছি।”
আমি অস্থথে ভুগে ভূগে অস্থথ এবং ওষুধ অম্পর্কে মোটামুটি একজন
বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলাম | আমাৰ অন্তরঙ্গ বন্ধুরা মেজন্য আমীকে কগী না বলে
হাফ ভাক্তার বলে ডাকত। স্তরাং কুইনিন আমার সকল ব্যাধির মুলে__-এ
কথাটায় শুধু ভত্রতার খাতিরেই সাম দিয়ে গেলাম, মন থেকে নয়।
রামবাবু বললেন, “ভয় নেই |” বলে চলে গেলেন ।
পরদিন সকালেই দেখি তিনি এক ঝাঁক গাছগাছডা এনে হাজির।
বললেন, "উন্থন কোথায়?” তারপর চাকরের সাহায্যে ঘণ্টাছুই পরিশ্রমের পর
তিনি আমাকে এক বাটি 'ম্ুধা” খাইয়ে দিলেন । বললেন, “এ এক অদ্ভূত পাঁচন,
এর এমন জোরালো! শক্তি যে চব্বিশ ঘণ্টার আগে দ্বিতীয় মাত্রা খাওয়া নিষেধ ।
এর মধ্যে ঘি বুকে কান পাতেন, তা হ'লে শুনতে পাধেন আপনার দেহের বিশ
বছরের জম! কুইনাইন বাঁপ, বাপ. ক'রে চীৎকার করছে । আমি আবার কালই
আসব ।”--
অভিভাবকের ভঙ্গিতে কথাগুলো বলেই তিনি বিদায় নিলেন | বিষাত্রম্বাদে
ভবে রইল আমার মুখ |
অত:পর আলাপ হ'ল শ্টামবাবুর সঙ্গে। তিনি এসে অস্থখের কথা সব
শুনলেন এবং বললেন, “মানুষের হুঃখ ভোগ কপালে লেখা থাকে । ভোগবস্ত
ঘটে ঠিক সময়টি এলে। তার আগে কেউ কিছু করতে পারে না। দেখুন না
কেন, আপনি ছে এতকাল ভূগলেন, কারে! সাধ্য ছিল আপনাকে সারানো?
ছিল না। এই যে আপনি এতকাল পরে হঠাৎ এখানে এলেন এর কোনো কারণ
৪৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ, বা-গয
আপনি আছমান করতে পারেন? পায়েন না। এর কারণ হচ্ছে আপনার
ভোগান্তেন্ন ঠিক লয়টি এসে গেছে। দৈব ঘোগাযোগ | হেয়ালি মনে হচ্ছে?
হবেই তো। বুদ্ধি বিয়ে ধুঝাতে চাইবেন না। পারবেন না। আজ সন্ধ্যায়
বুঝিয়ে দেঁব।”
নেইদিন সন্ধ্যায় তিনি এসেই ইষ্টনাম জপ করতে করতে আমার কোমরে
এক মাছুলি বেধে দিলেন। বললেন, “মাত্র এক মাস । বাস্। ইচ্ছে করলে
দিন পনেরো পরেও বাড়ি ফিরে যেতে পারেন । রেঙপগাডি ফেলে পায়ে ছেঁটে
যেতে ইচ্ছে হবে। লাঞ্ষাতে ইচ্ছে হবে। দৌড়ঝাঁপ করতে ইচ্ছে হবে।
কুলকুগুলিনী ক্ষেপে উঠবে। বেশি কিছু বলতে চাঁই না। এক মাস পরে
এসে আপনাকে মুক্ত ক'রে দেব। ভবে সাবধান, মাছুলি বেশিক্ষণ জলে ডুবিয়ে
নাখবেন ন| |”
শ্রানবাবু বিদাষয লিলেন।
আমার তৃতীয় বন্ধু হর্রিবাবু | সান্ধ্যব্রমণর সময় পথে তাঁর সঙ্গে আলাপ ।
তিনি খপ ক'রে আমার হাত ধ'রে নাড়ী পবীক্ষা ক'রে বললেন, “কফ প্রবল ।
আপনি ভুল চিকিৎলায় এভদিন কঈ পেয়েছেন । প্রতিকার অতি পৃবনো, কিন্তু
প্রয়োগ নতুন । অর্থাৎ গরম জলে প| ডুবিয়ে রাখতে হবে দৈনিক বাবে। ঘণ্টা |
আপ কিছুই করুতে হবে না। ভাবছেন এ তো লাধারণ ব্যাপার, সবাই জনে।
আমি গোডাতেই সে কথা বলেছি । কিন্য বাবো ঘণ্টা! দৈনিক পা ডুবিয়েছেন
কখনে। ? এটি আমার আবিষ্ষার |”
আমি বললাম, “আমার কিঞ্চিৎ অন্থবিধা আছে ঘে।” বলার সঙ্গে সঙ্গে
হরিব্ববু বললেন, "মে কথা কি আর আমি ভাবি নি? একা থাকেন চাকরের
আয়ে । ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে।”
তিনি নিজের চাকর পাঠিয়ে বাবস্থা ক'রে দিলেন পরদিনই । চীকরটি
বিশালকায়। কথ! কম বলে। সে নিজে চারটি মাটির হ্বাডি এনে নিজ হাতে
আমার চিকিৎসার ভার গ্রহণ করল ।
চতুর্থ বদ্ধু যহুবাবু। তিনি বাডিতে এসে আলাপ করলেন। আমার কথ৷
ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়তে আরস্ভ করেছে ছোট্ট শহরটিতে। স্বত: প্রবৃত্ত হয়ে
এনা আসছেন।
যছুবাবু বললেন, “জলই শ্রেষ্ঠ, কিন্তু ঠিক ওভাবে নয় ।” হাঁড়িতে নিমজ্জিত
আদার তুখানা পায়ের দিকে চেয়ে তিনি কথাটি বললেন।
কাউকে বলো না ৪৯
আমি জিজ্ঞান্থ দৃষ্টিতে চাইলাম তত্র দ্দিকে।
যদ্ুবাবু বললেন, “পেটটি ঠাণ্ডাজলে ডুবিয়ে রাখতে হবে প্রত্যহ একযেল!।”
বললাম, "এঁর! যে এই সব ব্যবস্থা আগেই করেছেন !”
যদুবাবু বললেন, “ক্ষতি হবে ন|। আমি টব পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
ব্যবস্থা হ'ল, আমি টবে কোমর ও পেট ডুবিয়ে বসে থাকব, পা থাকবে গরম
জলে। এই অবস্থায় রামধাবু এসে পাচন খাওয়াবেন। মাছুলি নিয়ে মুশকিল
হ'ল। বেশিক্ষণ জলে রাখা নিষেধ | ওটীকে মাথায় বেঁধে নিলাম।
তিনদিন এইভাবে কাটাবার পর আমার প্রথম সন্দেহ হ'ল কাঁজট। গ্রিক
করছি কি? সন্দেহ ক্রমে প্রবল হ'তে গ্রবলতর হ'তে লাগল। বাম, শ্টাম,
যদ, হরি হয়েছে, এর পর মধু আসবেন,_-তার পর......না, আব ভাবা যাঁয় না।
শেষ রাত্রে ঘুম ভেডেছিল, দুশ্চিন্তায় আর ঘুম হ'ল না। ভাবলাম সমক্তট। দিন
পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালে হয়তো এদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে।
মহেন্দ্রবাবু বাইরে গেছেন, নইলে তার কাছে গিয়েও সহৃপদেশ নেওয়া যেত।
তার মাব্ধান-বাণীর মর্ম এইবারে আমার নর্ধে গ্রবেশ করল।
আমি সত্যিই সেদিন সকালে চা খেয়ে বেরিয়ে গেলাম, এবং টৈহিক কষ্ট
অগ্রাহ্য করেও বেশ একটু দুরে ছোট্র পাহাড়ের কোলে একটা গাছের নিচে
গিয়ে সটান শুয়ে পড়লাম। হেঁটে যতটা ক্লান্তি হয়েছিল, মৃদু শীতল বাতাসে
তা মুহতে দূর হয়ে গেল। ভাবলাম, ঘণ্টাছুই এইখানে পড়ে থেকে উঠে
যাৰ এবং স্থযোগ পেলেই আবার চলে আসব। শুয়ে শুয়ে যনে হচ্ছিল,
এইভাবে যদি শহরের প্রতোকটি লোক আমার চিকিৎসা শুরু করে, তা হ'লে
আমি ঘে উদ্দেশে এসেছিলাম তা আর সিদ্ধ হবে লা। অসুখের কথা অন্যকে
বললেই সে তৎক্ষণাৎ অব্যর্থ ওষুধের কথা বলে বটে, কিন্তু তা যে এমন হাতে-
কলমে কেউ করবে তা কল্পনা করাও অসম্ভব ছিল।
ভাবতে ভাবতে ক্লান্তিবশত একটু ঘৃমিম্বে পড়েছিলাম, জেগে উঠে দেখলাম,
ঘণ্টাথানেকু পার হয়ে গেছে। কিন্ধ সামনে চেয়ে দেখি দূরে মন্তস্যমৃতি।
চিনতে দেরি হ'ল না, বিশালকায় সেই চাকরট1। একটু সরে ঝোপের মধ্ো
গা ঢাকা দ্িলাম। ভিতর থেকে আমি মবই দেখতে পাক্ছিলাম। দেখলাম,
সেএদিক ওদিক চেয়ে অন্য পথ ধ'রে চলে গেল। তখন আমি ধীরেশ্ধীরে
বেরিয়ে নিশ্চিন্ত মনে বাঁড়ির দিকে রওনা হলাম। বেশ কৌতুক বোধ করছিলাম
এই রকম লুকোচুরি খেলে । কিন্ত হঠাৎ, পিছনে চেয়ে দেখি বহু লোক আমাকে
অনুসরণ করছে। দুরে থাকায় সবাইকে চিনতে পারলাম না, কিপ্ত অনুমান
৪
পরিমল গোশ্বামীর শ্রেষ্ঠ বাঙ্গ-গলপ
করলাম ই দলে রাম শ্ঠার্মযহু হরি ইত্যাদি তে! আছেনই, তা! ছাড়া আরে!
অলেকে আছেন।
কোথা থেকে পায়ে জোর ফিরে এলো, আমি ছুটতে লাগলাম, ছুটতে ছুটতে
পিছনে চেয়ে দেখি তারাও ছুটছেন।
আমি তখন মরীয়া। একবার বাড়ি পৌঁছতে পারলে দরজাদ্ব খিল আটব,
তাতে যত অভদ্রত। হয় হোক ।
দ্বমাইল পথ ছুটে আলা সুস্থ মানুষের পক্ষেও কষ্টকর, কিন্ত আমি তখন
আসর বিপদে কাশুজ্ঞানহীন। তাই বাড়ির সীমানায় পৌছেই প্রায় চেতনাহীন
অবস্থায় ভূমিতে লুটিয়ে পড়লাম, ওঠবার ক্ষমতাও ছিল না, প্রবৃতিও ছিল না।
হঠাৎ চারদিক অন্ধকার হয়ে এলো যেন। একটু একটু অন্ভভব করছিলাম,
আমাকে কে ধ'রে জলের টবের মধ্যে বপিয়ে দিচ্ছে, পা ছুখানা গরম জলের
ইণড়ির মধ্যে ডুবিয়ে দিচ্ছে, এবং মুখের মধ্যে পাঁচন ঢালছে।
সেই আচ্ছন্ন অবস্থাতেও মনে হ'ল যেন ক্ষীণ কণ্ে কে কানের কাছে মুখ
নিয়ে চুপে চুপে] জিজ্ঞাসা করছেন, “আপশি কি অন্থথের কথা সবাইকে
বলেছিলেন ?”
স্বপ্ঘোরেই বুঝতে পারছিলাম, ইনি মহেন্ত্রবাবু, বৌধ হয় বাইরে থেকে
ফিরে এসেছেন। আমি ঠোঁট নেড়ে মহা অপরাধীর মতো বলতে চেষ্টা করলাম,
বলে ছি--লা--ম।
এর পরেই আমি লম্পূর্ণ চেতনাজীন। এবং কিছুক্ষণ পরেই সম্পূর্ণ মূত্র ।
আমি উক্ত টবের মধ্যেই দেহ রেখেছি।
এই কাহিনী লিখছি এর কদিন পরেই।
(১৯৫২)
বুমেরাৎ
১
একটু খু'তখুঁতে স্বভাবের- ছোটবেল! থেকেই ।
আমার নিজের কথাই বলছি।
মেয়ের]! যাকে শুচিবাই বলে, আমীর মধ্যে সেই একই বাই বা বাতিক বা
বায়ু ক্রিন্ধা করছে কি না বলতে পারি না। তবে পথে-ঘাটে পা ফেলতে ভব
হয়, মন যে তাতে অশুচি হযে ওঠে এতে আর লন্দেহ নেই । শহরটাও হয়েছে
ঠিক তেমনি নোংরা ।
সরকারী বড় কাজ করতাম ইংরেজের আমলে । সাহেবি পালিশ এবং
পরিচ্ছন্নতাবোধ সেজন্য আরও বেডে থাকবে।
পথে-ঘাটে দম আটকানে। দুর্শন্ধা আর নোংরা জগ্ডাল। গাঁডিতে বন্ধ
হয়ে চলা ভিন্ন উপাঘ ছিল না! । নাগরিকতাবোধের অভাবে শহরে লোকদের
ছু'চোক্ষে দেখতে পারতাম না। শহুরে শিক্ষা নেই অথচ শহরে থাকবে।
বোধও নেই, লঙ্জাও নেই। সমস্ত লক্জা! যেন আমার ।
এই মব লোকদের (নোংরা পরিবেশ স্থপ্টি একেবারে স্বভাবসিদ্ধ, যেন
সহজাত সংস্কীর। ঘর বার তাদের একাকার। দূর্গন্ধ পচা জঞ্জাল পথে পথে,
ওরই মধ্যে অগুণতি নোংরা! উলঙ্গ ছেলে খেলা করে, ঘেয়ো রুণ্ন কুকুরদের
সমশ্রেণী হয়ে।
মাঝে মাঝে ভেবেছি পাডাগীয়ে গিয়ে থাকব, সে অনেক ভাল। প্রক্কাতির
আপন ধূলোমাটি অনেক স্বাস্থ্যকর ।
এক এক দিন দুর্গন্ধের জাল| সয়ে ঘরে ফিরে মনে হয়েছে রিটায়ার ক'বে
ইউরোপে গিয়ে থাকব । মাঝে মাঝে গোপনে এমন ইচ্ছ।ও হয়েছে ইংরেজরা
আবার আহক, এসে দলে দলে সকল পাড়ায় বাপ করুক, শহর ছেয়ে ফেলুক।
কিন্তু এসব শুন্য কল্পনা, যাকে ওরা বলে মুনশাইন। বাস্তব ক্ষেত্রে একখানা
মাঝারি গাড়ি পালন করি কোনোমতে, অবস্থা ঠিক প্রিন্সের মতো নয়।
অন্থবিধ] হচ্ছে এখানে । বাস্তবে সাব-ডেপুটি, কল্পনায় আগা খা।
সাহেব পাড়াতেই এলাম শেষটীয়। দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে, আমিও
নিটায়ার করেছি। কাজেই দেখার অবপর থাকলেও সাহেব বড় কম দেখি।
কদাচিৎ দু'একটা! সাহেব মেম, যেন লেকেগুহ্যাণ্ড দোকানের পুডিং মারা পালিশ
4৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বান্গ-গর
ফিরছিলাম ঘণ্টাখানেক পরে। বন্ধুর অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় নি।
স্ীর্ঘ মেয়াদী অন্থখ, অনিশ্চিত গতি, কতদিন চলবে কে জানে।
ফেরান সময ভিধারীর কথাটা ভূলে গিয়েছিলাম । তাছাডা ভেবেছিলাম
এতক্ষণ মে নিশ্চয় ওখানে নেই । কিন্তু আমার অন্থষান সতা নয়। সে ওখানে
একই ভাবে বসে তার কান্স করছে । এখনে! মেইভাবেই খাবারের একটি কণার
সন্ধানে জঞ্জাল উল্টে পাণ্টে দেখছে । তার অস্তিত্ব আমাকে আচমকা! আঘাত
করল।
এবারে কর্তব্য স্থির ক'রে ফেললাম । তার কাছে যেতে আর কোন বাধা
ছিল না। কাছে গিয়ে পকেট থেকে ছুটি টাকা বের ক'রে সামনে ছুড়ে দিলাম ।
আমার হিসাব মতো! দিনপলেরে! খরচ ক'রে খেতে পারবে মে এই টাকায়। তার
পক্ষে দৈনিক ছু'আনা--তার স্বপ্পেরও অগোচর।
টাকা ছুটি তার কাছে প'ডে ঝনঝন ক'রে উঠল। অপ্রত্যাশিত শবে সে
সেদিকে চেয়ে আমার দিকে টোখ ফেরাল।-_সে চোখে রুতজ্ঞতার কোন চিহ্ৃই
দেখা গেল না।
কয়েক সেকেণ্ড আমার আত্মতৃপ্ত মুখের দিকে চেয়ে ছু'টি টাকা হাতে তুলে
নিল এবং পর মুহুর্তেই তা আমার দিকেই ছুড়ে ফেলে দিল_ঠিক আমি যেমন
তার দিকে ছুড়ে ফেলেহিলাম। তাঞপর মে পিজের কাজে মন দিল, যেন
কিছুই হয়নি।
ইতিমধ্যে চারদিক থেকে কতকগুলো নোংরা উলঙ্গ ছেলে কোথা থেকে ছুটে
এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল সেই টাকার উপর, তারপর কোথান্ন নিশ্চিহ ভয়ে মিলিয়ে
গেল তা, তা ভাববার সময় বা মন ছিল না আমার।
আমি নির্বোধ নই, লোৌকচরিত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতাও কিঞ্িৎ আছে বলে মনে
করেছিজ্জাম, কিন্তু আধুনিক কালকে আমি বুঝি না। অনেক ব্যাপারে এই
আধুনিক কালের হাতে ধাক্কা খেয়েছি, আধুনিক ভিথারীর কাছে এই প্রথম ।
মাথাটা নিচু হয়ে গেল আপনা থেকেই, কিন্ত চুপচাপ পবাজয় স্বীকার ক'রে
নেওয়। বড় কঠিন, সত্যিই কঠিন,_বিশেষ করে একপাল হ।-করা লোকের
সামনেএ
মনে হিংনা জাগল কিছু । তেজের সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে তাকে বললাম__"এর
মানে কি? তোমাকে দয়া করতে গেলাম, আব তুমি এত বড় নবাব যে সে দয়।
নিলে না।”
করুণভাবে আমার দ্বিকে চেয্বে সে বলল, “ভিক্ষে তো আমি চাইনি বাবু ।”
বুমেরাং €€
“চাঁওনি। হ্যা, ঠিক কথা, চাওনি। কিন্ত দিলাম যখন, তখন না নেওমার
কি মানে থাকতে পারে? আত্মমম্মীন বুঝি ?”
ব্যাপার দেখে ভিড় আরও বাড়ল। হা-করা লোকগুলোর হাআরও
বিস্তৃত হ'ল, তারাও আমার পক্ষ নিয়ে নিজ নিজ কুচি অনুযায়ী রসিকতা করতে
লাগল। আমি আজ এই ইতরদের সগোত্র একথ] ভেবে মন খুশি হুল না।
ভিথারী খুব দুর্বল কণ্ঠেই কথার উত্তর দিল-_-বলল, “আত্মসম্মান নয় বাবু,
ধর্ম। ছুটে টাক! দিনে আমার ধর্মে হাত দেন কোন্ বিবেচনায়? আপনি
আমার লোকসান ঘটাবেন কেন__-আপনি যান-_নিজের কাজে যান ।”
ভিখারী নিশ্চিস্ত মনে পুনরায় তার কাজে মন দিল।
মাথা নিচু ক'রে গাড়িতে এদে উঠলাম, সমস্ত দেহ থর থর করে কীপছিল,
ভয় হল-_ূর্ঘটনা না ঘটাই। নোংরা হাতের খোচা, শিজেকে ধিক্কার দেওয়া
ভিন্ন উপায় কি? কি দরকার ছিল ?__-আমি ঘা দিলাম, তাই দিয়েই আমাকে
মারল 7. ডত
২
বন্ধুর বাড়িতে যাবার পথট1 বদলে ফেলেছি, অনেকট। ঘোর! পথে যাচ্ছি
এখন। হরলাল যমের দুয়ার পর্ধন্ত গিয়েছিল, এখন ফিরছে, কিন্তু ভয় সম্পূর্ণ
কাটেনি, সুস্থ হাতে অনেক দ্িন লাগবে । এখন আর প্রতিদিন যাই না সেখানে,
মাঝে মাঝে ষাই এবং বাড়ি থেকেই প্রতিদিন খেক-খবর নিই ।
ভিখারীর খোঁচার ঘা অনেকটা শুকিয়ে এসেছে, মনটাও প্রসন্ন আছে।
এর দিন পনেরো পরের ঘটনা । বন্ধকে উতৎ্সাহজনক সাহচর্য দান কৰে
লেদ্িন দোতল1 থেকে নিচে নেমে ফটকের কাছে এপেছি, এমন সময় দেখি সেই
ভিখারীটা ধীর পদে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রায় আমার সামনে দিয়েই । এমন
ছুর্বল যে মন হয় এখুনি পড়ে যাব। হঠাৎ স্থুবুদ্ধির উদ্দয় হল, চকিতে মনে হল,
ওর কি দোষ। ওর কি অভিমান থাকতে নেই। অভিমান শুধু আমারই
থাকবে যেহেতু আমি ভদ্রলোক, আমি ভিক্ষা করি না?
আসলে মনের মধ্যে একটা পরাজয়ের গ্লানি তখনও বহন করছি, নিজের
কাছে স্বীকার করি আর নাই করি। যেখানে ঝগড়া ক'রে জেতা ঘাম্ব ন।,
সেখানে ভাল লোক মেজেও জয়লাভ করতে ইচ্ছা হয়, নইলে হ্থথ পাওয়া
ষায় না। মন থেকেই এটা চান্ব, এটা মনেরই ধর্ম।
8 পরিমল গোম্বামীর শে বাছ-গল্প
তাই তখনই মন ভার ভোল বদলে ফেলল, একটা ডিখারীকে প্রতিতবন্বী
খাড়া ক'রে আজীবন ছোট হয়ে থেকে লাভ কি। বিছ্যৎগতিতে এই চিস্তাগুলো
মনের ভিডর খেলে গেল, আমি ভিখারীটাকে ডাকলাম ।
আশ্চর্য হলাম, ডাকে সাড়া দিল নে, ধীষে ধীবে এগিয়ে এলো! গেটের
ভিতর ।---বললাম, "বস ।”
অবিলম্বে বলে পড়ল, এত ছুর্বল, না বসে উপায়ও ছিল না।
বসেও হাপাতে লাগল। বুঝলাম এবারে মে পরাজয় স্বীকার করতেই
এসেছে।
বললাম, “কিছু খেতে দিই, কেমন ? নইলে চলতে পারবে না।”
“না বাব, এক গেলাস জল দিন, আর কিছু না”
এখনও তেঙ্গ' আবার সেই ধর্মের ব্যাপারই নাকি? ভিথানীর ধর্ম !
বুঝলাম কিছু সময় লাগবে । প্রথমে মচকাবে, তার পর ভাঙবে।
কিছু আর বললাম নী, ভিতরে গিয়ে বন্ধুর ভত্যকে জল এবং তার সঙ্গে
তার পথা থেকে কিছু প্রকোপ মিশিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়ে ফিরে এলাম।
আমাকে যে ও চিনতে পারোন এইটে ভেবে আবাম বোধ করছিলাম ।
এমন সমদ্র সেই প্রচার ভান কাছাকাছি একটা জাম্গগ! থেকে চিৎকার
ক'রে উঠল--"পচা, বাসী খাবার খাবেন না”__ইতাদি। যেন চৌকিদার
অসত গৃহস্থকে তুম থেকে জাগিয়ে বেডাচ্ছে ।
ভিথারী ক্ষীণ কণ্ঠে আমাকে বলল-_"ওরা সব পাগল, ওদের কথা শুনলেই
হাসি পানর আমার।”
ভিখারীর হানি পাদ বৈজ্ঞানিক রীতির শ্বাস্থাতব শুনে। পাবেই তো,
কিন্তু নে কথাটি বলতে ও আটকাল না? লোকটি দান্তিক, বেশ একটু বেশি
যাত্রাক্সই দাত্তিক। কিন্তু কেন?
বিরক্তভাহেই বললাম, “এই অজ্ঞ অশিক্ষিত দেশে এর দরকার আছে বৈ
কি। বাসী পচা খাবার খাওয়। যে কত অন্তায় তা ক্জন জানে. এদেশে ?
যেটুকু খান্ন তাও বৈজ্ঞানিক রীতিতে বাছাই ক'রে ব্যালাম্মভ, ভায়েট--মানে-_
মোজ কথায় কি বলি ?-_মানে দেহ পুষ্টির জন্য যা ষা দরকাব তা হিসেব করে
খায় মা।”
দুর্গন্ধ জামাপর1] নোংরা একটা ভিখারীকে আমি এসব বলছি নিতাস্ত
অমায়িকভাবে--কেননা ওকে পরাজিত করা দরকার ঘেমনভাবেই হোক।
কিন্তু ওর দুর্বলতম জায়গাটা খুঁঙ্গে পাচ্ছিনা এখনও, তীর লক্ষ্য ভরষ্ট হচ্ছে বারবার |
বুমেরাং ৫
এমন সময় ভূত্য জল নিয়ে এলো। ভিখারী ঢক টক ক'রে খেয়ে
ফেলল এক গেলাস শ্নঃকৌসের জল । তারপরেই বিনা ধন্যবাদে বলল, “এবারে
উঠি।৮ বলতে বলতে অকৃতজ্ঞ ভিখাঁরীটা উঠেই পড়ল। আমি অত্যন্ত
বিরক্ত বোধ করলাম |
কিম্ত গর উঠে পড়েও হাওয়া হ'ল না। হঠাৎ এ দুর্বল শরীবে উঠে মাথা
ঘুরে গেছে । মনের ওদ্ধতা কি দেহ সব সময়ে মেনে নিতে পারে? আমার
কিন্তু বেশ একটু উত্সাহ জাগল আবার। এমব লক্ষণ ওব পরাজয়েরই কি
ইত নয় ?
ও বসে পডল এক পা এগোতেই। আমি ভৃতাকে ইলীরা করলাম এ
জল আর৪ আনতে । আরও দিলাম তাকে গ্কোসের জল। থেল আরও।
এবারে আর উঠতে চাইল না। আমি বললাম, “ভীল করে ন| জিৰিষে
উঠে! না।”
"ভুল করেছিলাম, বাবু। হা, একট্র বমতেই হবে, মিনিট দশেক নসলেই
ঠিক হয়ে যাবে। গ,কোস দিয়ে ভালই করেছেন, জোব ঠিক পাব।”
এবারে আমার মাথ|। ঘোবার পালা । মাগ! সত্যিই "খানে উল আমার ।
চার দিকে সন বন্বন্ ক'রে ঘুরাতে লাগল চোখেব সামনে । স্ততিতভাবে,
অর্থহীনভাবে, চেয়ে বইলাম ভিথারীর পিকে । গ্রকোসের লাম ও জানল
কি কারে?
ভিখারী তার ছদ্মারেশ যেন একটানে খুলে ফেলল আমাব সামনে । সে
আমাকে নলল, “আপনাব অবাক হবারুই কথা। কিন্ধ মে কথা যাক।
কোনে কিছুক্ষণ জোব পাব ঠিকই, কিন্তু আপনি থে ন্যালান্দড ডায়েটের
কথ| বলছিলেন, ধাতে কার্বো-হাইডেট, প্রোটান, ফ্যাট, ভাইটামিন সব ঠিক
ঠিক মাত্রায় আছে, নে ভাঁয়েট পাব কোথাষ ?”
আমি বিহ্বল কণে প্রশ্ন করলাম, "তুমি-_আপনি--জানেন এ লব ?”
“জীনি*-বহই কি। অবাক হচ্ছেন? আর শুধু আমিজানি? এযেযার।
পচা ফল কিনে খায়, পচ খাসি খাবার খাষ, সেই এদেশের লক্ষ লক্ষ লোক
জানে না? তারাও জানে ।”
আমি শরাহতের মত্তো চেয়ারে এলিয়ে পভলাম, কানেব মধ্যে ভে ভে]
আওয়াজ শুনছি শুধু-_আর মাঝে মাঝে মনে হৃচ্ছে গ্রকোলের এত শক্তি।
ভিখারী সোজা হয়ে বসল । মে তখন উত্তেজিত হয়ে উঠেছে । থামল
না, বলে চলল-_“জানে, সবাই জানে । আপনি আমি যেমন জাশি, তারাও
৫৮ পরিষীল গোস্বামীর শ্রেঠ বাজ-গর
ঠিক তেমনি পানে, হয়তো বিজ্ঞানের ভাষাটা জানে না। কিন্তু কেন খায়
তারা এসব পচা বানী খাছ, ভেবে দেখেছেন কখনো ?”
আমি সম্পূর্ণ যন্ত্রের মতো, কিছু নল! ভেবে বললাম, *“ন11”
জলের গেলা'লট1 ওর হাতে ধরা ছিল, উত্তেজনায় হাত কীপছিল, সে
তাড়াতাড়ি আন এক ঢোক জল খেয়ে নিয়ে বলতে লাগল--"আপনি মনে
করেন, এই যে দেশের লোকের! সবাই অখাছ্য গিলছে, তা কি অথাছ্য না জেনে
গিলছে? পচাখাছ্য খাচ্ছে সে কি ব্যালাম্মভ. ভায়েট ফেলে দিয়ে? আপনারা
সবাই দেশের লোককে হাইজীন শেখাতে চান। দেখুন, অজ্ঞতাঁকে ক্ষমা করা
যায়, কিন্ধ বোকার মতে! কথা বললে ক্ষমা করা শক্ত ।”
আমার মুখ থেকে শুধু অস্পষ্ট স্বরে তোতলার মতো একটি শব্দ বেরুচ্ছে-_
*আপনি- আপনি”
“আমি? আমি শুধু অনেস্ট থাকার চেষ্টা করেছিলাম । চাকরি করেছি
এককালে, হাইজীন শেখানোরই চাকরি, মশাই । তারপর বয়ল হ'ল, অবসর
নিতে হ'ল, তারপর আর পেটের ভাত জোটাতে পারিনি। হাইজীন
প্রচারের মহিমা উপলব্ধি করেছি অবশ্থী। কিন্তু কি হবে শুনে এসব। শোনবার
মতো নয় এসব কথা। শুধু একটি নীতি ঠিক রেখেছি, ভিক্ষা করিনি, চুরি
করিনি, শুধু অনেন্ট থাকার চেষ্টা করেছি। বোকা এবং 'অনেস্ট বলতে
পারেন। বুদ্ধিমান হতে পারতাম, ভিক্ষা অথবা চুরি করলে। করিনি,
তাই তার একমাত্র বিকল্প রেফিউজ বিন থেকে উচ্ছিষ্ট কুডিয়ে খাওয়া,
তাই খাচ্ছি।”
প্রথম ধাক্কায় চিন্তা অলাড় হয়ে পডেছিল, সেটা কাটতে এতক্ষণ লাগল ।
না, গ্কোনের শক্তি এ নুয়। আমি বার বার ভূল করেছি, আর নয় । দাড়িয়ে
উঠে ভিখারীর হাত ধ'রে বললাম, "আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ৫ক,
আমি জানি পা, যদি কিছু মনে না করেন, আমার সঙ্গে আমাদের বাড়িতে
চলুন_ সেখানে আপনি থাকবেন আমাদেরই একজনের মতো, যত্বের ক্রটি হবে
না, বড় ভাইয়ের সম্মান দেব আপনাকে ।”
আমার বহুদিনের জমাট বাধা হৃদয় যেন গলে গিয়েছিল সে সময়, তাই
ভাষায় মাত্রাঙ্জান ছিল না।
ভিখারী একটুখানি চিস্তা ক'রে বলল, "অনুগ্রহের অন্ন? সে আর হয় না,
তাই। আপনাকে অনেক ধন্তবাদ, আমার স্বাধীনতা থেকে আমাকে আর
'জেলে পুরবেন না। অনেক ছুঃখ সন্গে এই খাওয়া অভ্যাস করেছি । আমারই
বুষেরাং ৫৯
অমতলে নেষে এসে যারা আমারই সঙ্গে আমার মতোই খায়, আমার সেই
ভাইদের ছেড়ে উপরে উঠলে শাস্তি পাব না মনে মনে। তারাও অনেস্ট 1...
আপনার দয়া আমার মনে থাকবে__”
ভিখারী ধীর পায়ে চলে গেল, আর ফিরেও তাকাল না। কিন্ত আর
তাকে ভিথারী বলছি কেন।
তাকে প্রথমে মচকাব এবং পরে ভাঙব এই ছিল আশা। হ'ল না।
আমিই প্রথম মচ্কেছি।
তারপর সম্পূর্ণ ভেঙেছি।
কারণ বাড়ি ফিরে গিয়ে ভেবে আবিষ্কার করলাম-_এবারেও, আমি ওকে
যা দিতে গিয়েছিলাম, তাই ছু'ড়েই আমাকে মেরেছে ।
(১৯৫৩)
দান-প্রতিদান
১
ছেলেটি জলে পড়তেই একটা মোরগোল উঠল, সবাই তীরে দাড়িয়ে হৈ হৈ এবং
হায় হায় করতে লাগল।
আমি মাধব চক্রবর্তী দৈনন্দিন সান্ধ্যত্রমণ করতাম হেদুয়ার পুকুর বেষ্টনীতে।
তখন ছান্ধ ছিলাম, পড়া শোনার যনোযোগ ছিল বেশি, খেলা ইত্যাদি দেখে
নষ্ট করবার মতো! পময় পেতাম না, প্রবৃত্তিও হ'ত না। আমার পক্ষে সে জন্বো
বাসস্থানের নিকটস্থ হেুয়া পুকুরে সন্ধ্যাবেল৷ তিনটি বা চাবটি চক্রের সাহাষ্যে
স্বাস্থারক্ষা করা ভিন্ন 'গতি ছিল না।
আমি ঘে সময়ের কথা বলছি তখন কলকাতার পথঘাট অথবা হেদুম়া
গোলদীধি অপেক্ষাকৃত জনবিরল ছিল। বেড়াতে মাসত অনেকেই, কিন্ত
তাদের সংখা! গোনা যেত।
পরে আমার অনেকবার মনে হমেছে সেদিন দৈবাৎ যদি এ দুর্ঘটনান কাছে
আমি উপস্থিত নাথাকতাম, তা হ'লে ছেলেটির জীবন রক্ষা হ'ত কি না সনেহ।
তার পিতা! হরেন্্রকুমারের সঙ্গেও যে একট| সম্পর্ক গ'ডে উঠত না, এ কথা বলা
বাহুল্য মাত্র ।
জলে ঝাপিয়ে পা আমার পক্ষে সহজ ছিল। খাল্যকালে পদ্মা নদীতে
সাঁতার শিখেছি, এবং ঘণ্টাখানেক সাতার না কেটে কোনে। দিনই শ্রানপর্ব
শেষ করিনি |
ছেলেটির বয়ন বারো তেরো হবে। সঙ্গে তৃতা ছিল। হঠাৎ কি ক'রে
জলে পে গেল, তা দেখি নি। যখন চীতকার-রতদের ভিড় ঠেলে তাকে
উদ্ধার ক'রে উপরে তুললাম, তখন সে প্রায় জ্ঞানহারা। আমি নিলেই
তার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করলাম, এবং একটুক্ষণ পরেই বোঝ! গেল সুস্থ
হয়ে উঠতে আর দেরি হবে না। ইতিমধ্যে সম্ভবত ভূতোর মুখ থেকে খবর
পেয়ে ছেলের বাড়ির লোকের! হাঁফাতে হাঁফাতে ছুটে এলেন এবং ছেলের পিতা
ছেলেকে ততংক্ষণাৎ হালপাতালে নিয়ে গেলেন একখান! ঘোড়াগাড়ি ডেকে ।
কাড়ি থেকে পিজের গাড়ি আনতে দেরি হয়ে যাবার আশঙ্কা ছিল, সে কথা
তিনি ব্যক্ত করেছিলেন উদ্ভ্রান্ত অবস্থায়। ছেলের মাতা আমাকে নিযে
দান-প্রতিবান ৬$
পড়াজেন। আমি যেকি উপকার তাদের করেছি ইত্যাদি । অবশেষে আমার
নাম ও ঠিকানা নিষ্বে চ'লে গেলেন।
আমি যথারীতি মেসে গিয়ে ভিজে জামা কাপড় ছেড়ে পড়তে বললাম ।
আমার দিক থেকে কোনো মহৎ কাজ কবেছি ধলে মনে কোনে চাঞ্চল্য জাগে
নি। আরও কারণ, সামনে বি. এ. পরীক্ষা । আমি স্থির মনেই ত্রিশ নম্বর
কর্নওয়ালিস গ্্রীটের মেসে দোতলায় বসে ট্রামের ঘর্থর শবেব সঙ্গে পড়ার শব্দ
ম্িলিষে দিলাম ।
পরদিন ছিল বুবিবার। সকালেই ছেলেব পিতা! এসে হাজির । ব্ললেন
_ তোমাকে একবার, মাধব, আপতেই হবে আমাদের বাডিতে, আমার স্ত্রীর
বিশেষ অগ্রৌধ । তিনি নিচে অপেক্ষা করছেন।
পড়াটি বেশ জমে উঠেছিল, এমন সময় বাধা। নিচে মহিল| অপেক্ষা
করছেন, উঠতেই হ'ল । এসে দেখি গাড়িতে তিনি এবং একটি ছোট ছেলে
ঝসে আছে। মুখ সবারই খুশিতে উজ্জ্ল। শ্রধু ডাইভাবেব পাশে উপবি
কুকুরটির দৃষ্টিতে কিছু সন্দেহ।
আমি আগেই ভেবে নিয়েছিলাম, উপকার যখন একটু করেছি তাৰ
প্রতিদানে প্ীতিসঙ্গত কিছু লোক চারেব হাত থেকে নিন্কতি পাব না। অর্থাৎ
কিছু খেতে হবে এবং গদগদ রুতজ্ঞতার ধারাবর্ষণ মাথা পেতে নিতে হবে।
অতএব আপত্তি জানানো পৃথা।
বাড়িখানা বাজকীম়, ধৈঠকখানায় আসবাবপত্র দামী এবং কচিসঙ্গত |
আমার অন্যান মিথ্যা হস্ল না, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ চলল সর্বক্ষণ এবং সকলেই
যে খাবার আয়োজন হ'ল তাতে পেদিনের মতো আর না খেলেও চলবে এ রকম
বোধ হ'ল। কিন্কু এর পরেই এমন একটি প্রত্তাব এলে। হবেন্ত্রকুমারের কাছ
থেকে যাতে আমি সত্যই বিব্রত বোধ ন। ক'রে পারলাম না। তিনি আমাকে
স্তস্তিত ক'রে বললেন, “তোমাকে এই মহৎ কাজের জন্তে কিছু পাবিতোধিক
নিতে হবে"কিন্ত 1”
আমার সকল সত্তা এ প্রন্তাবের প্রতিবাদ ক'রে উঠল । আমি সদ্য এখিক্সের
বইখানায় ঘে অধ্যায়টা পড়ছিলাম, তাতে উদ্দেশ্তুহীন, স্থার্থহীন, আনন্দই
আমাদের সৎ্কাজে প্রেরণা দেয় কি না এই আলোচনাঁটি ছিল। কথাটি "ভাল
লেগেছিল। তাই আমি কিছু চিন্তা না করেই বললাম, “পারিতোধিকের
লোন্ডে আমি এ কাজ করি নি, সামান্য কর্তব্য হিসাবেই করেছি, কিংবা সে
সময় কিছুই না ভেবে শুধু অভ্যাসবশত করেছি ।”
২ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাছ-গল
ইরেম্্রকুমার একটু হেসে বললেন, "ও নিয়ে নানা তর্ক আছে। একদিকে
ইগোয়িহিক হেভোনিজম্-_অন্ত দিকে ইউনিভার্গালিস্তিক হেডোনিজম্। কিন্ত
এ সবের বাইরেও আর একট! জিনিন আছে, অর্থাৎ কাজের মূলে যাই থাক,
ব্যক্তি বা সমাজের কাছ থেকে তার কিছু দাম পাওয়া উচিত, এই কথাটিই
আমি যনে করিয়ে দিতে চাই 1”
'আমার বয়স কম এবং গৌড়। আপর্শবাদ মাথায়, তাই দাম পাওয়ার কথা
শ্তনে স্বভাবতই নিজেকে বড্ড ছোট মনে হতে লাগল। অথচ মুখের উপর
কোনো! গ্রতিবাদও করতে পারছি না। তাছাড়া এ বিষয়ে আমার মনে স্পষ্ট
কোনো ধারণাও ছিল ন1।
হরেন্দ্রকুমার বলতে লাগলেন, “জান, সংসারে প্রেমও নিঃস্বার্থ লয়। তারও
দাম দিতে হয়। তোমাদের কবির কথায় পাবে এর উত্তর। দূরদেশী সেই
রাখাল ছেলে ষখন তার প্রণস্বিনীর মালাখানি চেয়েছিল তখন সে ভাবতে বল,
দিই যদি তে! কি দাম দেবে। দাম অবশ্ রাখাল ছেলে দিয়েছিল, কিন্তু মালা
পেয়েছিল কি ন! সে কথা এখানে অবাস্তর 1” ব'লে তিনি হাসতে লাগলেন।
তারপর বললেন, “যাই হোক, হাসির কথা নয়, তৃমি বেস্থামের লেখা পড়েছ?
708691005 ০01 [৪07৮ ? সেও এক মজার নীতি |”
হবেন্দ্রকুমীবের স্ত্রী বাধা দিয়ে বললেন, “ও ছেলেমানুষ। ওর সঙ্গে ওসব
কঠিন বিষয়ের আলোচনা করার দরকার কি? তারপর আমার দিকে চেয়ে
বললেন, “তোমাকে, বাবা, তর্ক শুনতে হবে না, তর্ক করতেও হবে না। উনি
একটু কিছু দিয়ে নিঙ্গে খুশি হ'তে চান। তুমি যেমন একজনের জীবন বাচিয়ে
খুশি হয়েছ, উনিও তেমনি তোমাকে কিছু উপহার দিয়ে খুশি হবেন, এতে
আর আপত্তি করো না, বাবা । আমবা সবাই এতে খুশি হব।”
এই স্নেহ সম্ভাবণে আমার মনটি হঠাৎ খুব নরম হয়ে এলো, সবারই মুখ
আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল, এবং মনে হল কুকুরটিও ল্যাঙ্গ নাড়ছে একটু একটু ।
ই
একটি ছেলেকে জল থেকে উদ্ধার করার জন্তে মনে একটা পবিভ্র ভাব ছিল
'অবস্তাই, নইলে তার জন্য মূলা গ্রহণ ক'রে মনটা! এত খারাপ হয়ে গেল কেন?
থে মূল্য পেন্পেছিলাম তা দিয়ে তখনকার দিলে একটি জমিদারি কেন! যেত,
কিন্ত তা সত্বেও মনের মধ্যে একটি খোঁচা অন্গভব করতে লাগলাম সর্বদাই ।
ছান প্রতিদান ৬৬
পাঁচশ টাকার চেক! আমার পক্ষে তখন স্বপ্নের ব্যাপার | কি মনের
কোথাও কি দুর্বলতা ছিল? নইলে সে সময় ওখানা না নিয়ে উঠে এলে কি
ক্ষতি হত?
কিন্ত এখন আর ভেবে কিহবে? কারণ ইতিমধ্যে কে যেন এই খবরাট
কাগঞ্জে বের করে দিয়েছে__“যুবকের সাহস ও কুতজ্ঞ পিতাব বদান্যতা।” এই
নামে খবরটি প্রকাশ্শিত হবামাত্র সামান্য ঘটনাটি অত্যান্ত বড় হয়ে উঠল সবার
কাছে। আমার যা ক্ষতি হল তা আব বলবার নয়। পড়াশোনা! চুলোয় গেল,
একপাল বন্ধু এসে ধরল খাওয়াতে হবে। দেশ থেকে পিতা চলে এলেন
ব্যাপার কি জানতে । আরও আত্মীয়ম্বজন ছএকজন ধারা কাছাকাছি ছিলেন
তাঁরাও আমাকে অভিনন্দন জানাতে এলেন। তাদেরই মধ্যস্থতায় কোনো
বিশ্বস্ত লোকের ব্যাঙ্ক আযাকাউণ্টে চেক জম] দেওয়া হল। এটাকার প্রায়
সবটাই আমি দান ক'রে দেব এটি মনে মনে আমি প্রায় স্থির ক'রে ফেলেছিলাম।
কিন্তু এই উপলক্ষ্যে আমার পরীক্ষা প্রস্ততির উপর ঘষে আক্রমণ শুরু হল তা
থেকে বাচবার কোনো উপায় আমি ভেবে পেলাম ন1।
কিন্ত উপাষ একটি হল নিতাস্তই ভাগ্যবশত। কদিন পরেই একথান। খামের
মধ্যে চেকখাঁনা ফিরে এলো ব্যাঙ্ক থেকে__লেখা আছে “রেফার টু ড্ুয়ার।”
(১৯৫২)
সতাই কি প্রয়োজন?
ফ্ল্যাটে অগ্পদিন এসেছি, প্রতিবেশীদের সঙ্গে এখনও পরিচয় হয় নি ভাল ক'রে।
বাধাও আছে কিছু) আমি আবার সহজে কারে! সঙ্গে মেলামেশা করতে
পারি না, অনামাজিক ছুর্নামটি আমান অনেক দিনের গা সহা !
জানি এ অম্পর্কে অনেক কথা উঠতে পারে। আজকের দিনে এমন
আত্মকেন্ড্রিক হওয়া পাপ, ব্যক্তিস্বাতস্ত্রা কথাটাই আধুনিক কালে খুব সম্মান্জনক
গুণ নয়। কিন্ত এ সব তর্কের কথ|। তর্ক করব ন1।
তবে একবারে চুপ করে যাওয়াও হয়তো! খুব ভাল দেখাবে না, তাই
একটিমাত্র কথা বলব।
কথা না বললেই কি পরিচয় হয় না? ফ্ল্যাটে ধারা বাস করেন তাবা
অবশ্যই জানেন যে উপরের বাপিন্দার। কখনো! কয়লা ভাঙে, পাশের বাসিন্দারা
কখন দেয়ালে পেরেক ঠোকে, নীচের বালিন্দার| কথন উচ্চনে ধোয়া! দেয়,
তাদের এই সব ধ্বনিগত একট] পরিচয় আপন] থেকেই পাওয়া যায়, কার সংসার
কি রকম চলছে তারও একটা মোটামুটি চেহার| এসবের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠে।
এর বেশি আর দরকার কি? অন্তত আমাব কাছে এটাই যথেষ্ট মনে হয়।
দেখে খুশি হলাম যে আমার বিপরীত ফ্ল্যাটের বাঁসিন্দ। ভদ্রলেকটিও প্রায়
আমারই মতো । কয়েকদিন পিঁডিপথে দেখ! হতেই আমি এটি বুঝতে
পেরেছিলাম। তিনি কাবে৷ লাতেও নেই পাচেও নেই | বেশ আছ্ছেয় চেহারা,
চুলে পাক ধরেছে, স্বাস্থ্য নিটোল, সাহেবি রং, নাকের ডগা এবং গাল ছুটি লাল
টক টক করছে, বাঙালীর মধ্যে এ রকম বড় একট] দেখা ধায় না।
শিবরামধীবু একা থাকেন, মনে হয় কোনো আত্মীয়বাঁডি বা হোটেলে
খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তিনি সংঘতবাক এটি আমার কাছে খুবই 'মারাম প্রদ
বোধ হ'ল।
দোতালায় আমার দরজার বাইরে শীতকালে একটুখানি রোদ আলত,
সেট তারও দরজার বাইরে! কিন্তু সে রোদে কাগজ নিয়ে আমিই শুধু বসতাম
এক্রা। কবরের কাগঞ্জ সম্পর্কে তার কোনো কৌতুহল আমি দেখিনি । ঠিক
ভারতী অভ্যাসের বিপরীত। কাগজ খুললেই অনাহৃত পাঠক ঘাড়ের উপর
দিয়ে পড়তে শুরু করে, বড্ড অন্বপ্তি লাগে আমার, মনে হম যেন আমার সঙ্গে
আমার থালা থেকে অপরিচিত লোক ভাত খেয়ে ষাচ্ছে।
সত্যই কি প্রয়োজন ? ৬৫
কিন্তু শিবরামবাবুর চরিত্রের একটি দিক একদিন উদঘাটিত হল একটি
ঘটনায়। কাগজের হকার নিচের গলিতে হাঁকছিল- রেলগাডি উল্টেছে__
বহুত আদমি মারা গেছে
ঠিক এই মুহ্ৃতে শিবরামবাবু বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে, এসেই আমাণ
হাতে কাগঙ্জ দেখে অত্যন্ত ব্যত্তভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, রেলছূর্খটনা ? কোথায় ?
বললাম দুর্ঘটনার কথা । পঞ্ধাব মেল লাইন থেকে পড়ে গেছে।
কথাটা শুনে শিবরামবাবুর চোখমু কঠিন হয়ে উঠল। তিনি হাত দ্বখান।
পিছনে ফিরিয়ে মাথাটি নিচু ক'রে একবার ঘরে একবার বাইরে পাইচারী করতে,
লাগলেন এবং আবার হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞামা করলেন, কত লোক মারা গেছে ?
আমি কাগঞ্জ দেখে হতাহতের সংখ্যা বলতে না বলতেই দেখি তিনি পিঁডি
দিয়ে দ্রুত নেমে যাচ্ছেন নিচে । তারপব আর তার সঙ্গে দেখা হয্নি, ভাব
কোনে আত্মীয় সে গাড়িতে ছিল কিনা লিজ্ঞাসা করারও আর প্রবৃত্তি হযনি
পরে, কেন না ও নিয়ে মাথা ঘামাবার আমার লময ছিল না, ভুলেই গিয়েছিলাম
কথাটা।
কিন্ত সেদিন আবার শিববামবাবুর সঙ্গে দেখা । এক টেলিগ্রাম পি ৪৭
নিচে জগদীশ সরকারের নাম হাকহিল চীংকার ক'বে। জগদীশ সরকাখ
তেতগার বাণিন্দ|। তিনি বাড়িতে হিপেন না। বাড়ির মেয়ের ঢেপিগ্রামখানি
নিয়ে তার অর্থ বুঝতে এলো নিচে আমারই কাছে । আমি খুঝিমে
দিচ্ছিলাম জগবন্ধু নামক কেউ তার পাঠিযম্েছে_-লিখেছে “পিতাব অবস্থ!
সঙ্কটজনক |”
এমন সময় দেখি শিববামবাবুর দরজা! একটু ফাক হয়েছে এবং তার মাথা
দেখ যাচ্ছে | মেয়েরা বিমর্বভাবে চলে গেশে তিনি এগিয়ে এলে আমাকে
জিজ্ঞান। করলেন- কার অবস্থা সঙ্গটজনক? বলল।ম সব। শুনে তার চোখ
দুটি ছলছল ক'রে উঠল, এবং সঙ্গে সঙ্গে দরজায় তালা বন্ধ ক'রে ঘব্ব থেকে
বেরিয়ে গেলেন ঠিক কদিন আগে যেমন গিয়েছিলেন ।
একটু বিম্ময় লাগল এই ভেবে যে ইতিমধ্যে আমাদের পরম্পরের এই
বারান্দাটুকুর উপর আরও অনেক ঘটনা ঘটে গেছে, কত হৈ হল্লা, কত বাইরেব
লোকের আদর জমানো, কিন্তু শিবরামবাবুকে কখনো দেখা যায় নি, সেগুলির
কেন্দ্রীয় আকর্ষণ অবশ্ঠ নিঃসঙ্গ আমি নই, আমার জনপ্রিয় পুত্র । শিবরামবাবুকে
দেখা গেল মাত্র ছুটি দিন, এবং ছুটি দিনই দুঃসংবাদের আকর্ষণে । এবং ছুটি
দিনই তিনি অস্থিরভাবে বেরিদ্বে গেলেন । স্পষ্টই বোঝ! গেল তিনি ছুখে সহা
চে
১৬ পলিনবা গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাজ-গল্প
করতে পারেন না, তা নে ছুঃখ বারই হোক। তার এই ব্যবহার থেকে ভার
নিঞ্জনবানের যর্মকথাটিও ধেন উপলব্ধি কর! গেল।
কিন্ধ তবু হাইবে পালিয়ে যাওয়া কেন?
এ প্রশ্রের উত্তর মিলঙ্গ না মনে মনে । মাত ছুটি দলের ঘটনা থেকে
কার্ধকারণ সম্ব্ধনির্ণয়ও ঠিক হয় না। একটা কৌতৃহ্ল জাগল মনে।
আরও একটা টেলিগ্রাম এলো পরদিন-_একই প্রেরক এবং একই লামে।
সেটিও আমাকেই ব্যাখ্যা করতে হল, কেননা উদ্দি্ই জগদীশ সরকার প্রথম
টেলিগ্রাম পেয়েই রওনা হয়ে গিয়েছিলেন ।
টেলিগ্রামে লেখ! ছিল “পিতা শাস্তভাবে পরলোক গমন করছেন ।”
পড়তে না পড়তে একদিকে যেমন হঠাৎ মেয়েদের কান্নার রোল উঠল,
অন্যদিকে তেষনি দরজার আড়াল থেকে চকিতে বেরিয়ে এলে! শিবরামবাবুর
বেদনাবিদ্ধ মাথাটি। তিনি শঙ্কিত ভাবে বললেন--ঙ্যা! মার গেছেন
ভদ্রলোক ? আহাহা, কি সাংঘাতিক খবর__এত বড় আঘাত, আহাহা ৷
বলতে বলতে এবারে কালবিলম্ব না ক'রে ছুটে বেরিয়ে গেলেন, যাবার সময়
দরজা ব্ধ করতেও ভূল হয়ে গেল।
আমার কৌতুহল আর বাধা মানল নাঁ। দুঃখের খবর আর শিবরাম-
বাবুর বহির্শমন, এর মধ্যে নির্ঘাৎ কার্ধকারণ যোগ আছে-_-সন্দেহ রইল
নাআর।
কিন্ত মেটি কি? এই প্রশ্রট হঠাৎ এমন বড় হয়ে দেখ! দিল যে আমি
শীতিজ্ঞান হারিয়ে ভার খোল! দরজার ফাকে মাথা গলিয়ে দিলাম । অতঃপর
কৌতৃহল আমার পাদুখানা চালিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে হাজির করল। কিন্ত
স্থবিধা হল না কিছু । ভদ্রলোক পড়াশোনা করেন খুব বোঝা গেল। টেবিলে
একখানি বই খোলা পড়ে ছিল__বেম্থামের 'পানিশমেন্টস্ আশু রিয়র্ডসঃ |
সন্দুথস্থ দেয়ালে একটি ইংরেজী শীতিবাক্য ঝুলছে-_
১৮৮৪০ছ। 2013 27 &88 ০008191, :
18 27 2১8১৬17)% 80070688188 ?
প্রথম দিনের অভিঘানে এর বেশি আর কিছু পাওয়া গেল না, অথচ
ভবিষ্যতেও যে আর ফোনে স্থযোগ পাওয়া ঘাবে এষন সম্ভাবনা কম । অনধিকাবর
প্রবেশের চেতনাতে অস্বস্তি বোধ করছিলাষ, নিজেকে ছোট মনে হতে লাগল
খুবই, তাই ভ্রত বেরিগ্নে এলাম। ঘরে ফিরেও মনটা দমে কইল । তবে এই
'অনগ্িকার গ্রবেশ থেকে একটি শিক্ষাও পেয়েছি---খ নীতিবাক্যটির শিক্ষা ।
সত্যই কি প্রয়োজন? ৬৭
ওটি যেন আমারই জন্তে লেখা ছিল। আমার কৌতূহলের জবাব ওটা ।-_
“কবিবার পূর্বে নিজেকে জিজ্ঞাস! করিও ইহা কি সত্যই প্রয়োজনীয় ?*
কিন্তু আমি মেই দিনই রাত্রে এ প্রশ্রের জবাব পেয়েছি । একটা ুল্ষ্
বশ্মিরেখা ক্রমশঃ অনিবার্ধরপে বিস্তার লাভ ক'রে মনকে আলোকিত ক'রে
তুলেছে। সেটি এই ষে “সত্যই প্রয়োজনীয় কি না” ভাবতে গেলে দেখা যায়
আমর1 অনেক.জিনিসই অকারণ করি, এ প্রশ্ন মিলিয়ে কাজ করতে গেলে
শেষ পর্বস্ত সন্ন্যাসী হওয়া ভিন্ন গতি থাকে না, অথচ সন্্যাসী হওয়া তো৷ আর
মুখের কথা নয়। তাই প্রয়োজন স্থষ্টি ক'রে নিতে হয় মনে মনে। যা প্রাণ
চায়, সেটাই ভয়ানক দরকার, ভেবে না নিলে যা প্রাণ চায় তা করা যায় না।
কিন্তু তত্বকথা থাক। দেদিন গভীর রাত্রে শিববামবাঁবু কোনো রকমে,
সিভি পর্ধস্ত পৌছতে পেরেছিলেন। পা এতই টলছিল যে রিকশ থেকে নেমে
দু পাও এগোতে পারেন নি, সশবে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন। রাত্রির
শাস্তি বিদ্িত হওয়াতে ঘটনাটি আমাদের দৃষ্টি এড়াতে পারল না। অবস্থা
এমনই দাড়াল যে আমরাই কজন ওঁকে ধরাধরি ক'রে ঘরে পৌছে দিলাম নাকে
রুমাল বেধে ।
শ্রদ্ধা! হঠাৎ ঘা খেল। হয়তো সেই জন্তেই ভীষণ ঘ্বণা হল শিবরামবাবুর
উপর। একবার এমনও মনে হল--সত্যই কি প্রয়োজন ছিল তাঁকে শিড়ির
গোঁড়া থেকে উপরে তোলার? তিনি তো মদ খাওয়ান “প্রয়োজন” স্ব ক'রে
বিবেককে তভোলাচ্ছেন এই ভাবে, আমার বিবেককে ভোলাই কি দিয়ে?
( ১০৪৫৪ )
বাটখার।
ময়দানের বুকে সন্ধা! নেমে এলো । রাজপথের পাশের দোকানগুলিতে আলো
জলেছে অনেক আগেই, সে আলো! ক্রমশ উজ্জলতর হচ্ছে। যেন কৃষ্ণ রাত্রির
দেশে ইন্দ্রপ্রস্থের মভা সাজাচ্ছে ময়দানব, ময়দান প্রান্তে ।
বিশ্রামরত জনত| এক এক দলে ভাগ হয়ে 'অললভাবে দুরে দরে বসে আছে।
এক একটা! বৃক্ষ গুন্ছ ঘনতর অন্ধকার বুকে নিয়ে সমস্ত পরিমগ্ডলকে রহশ্তময় ক'রে
তুলেছে। যে দিকে তাকানো! ঘায় সব রোমার্টিক মনে হয়, এই রূঢ বাপ্তবতার
দিনে যা চিস্তা করাও পাপ। এগন্পটিও তাই এ যুগের শেষ রোমার্টিক গল্প ।
অরুণ আর মাধবী একখানি বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে । দুরে চৌরঙ্গীব
কড়া আলোর দিকে চাইতে তাদের ভাল লাগছিপ না। সব ভাল্গাব মনে
হচ্ছিল। যে নদীর পাড় এখনই ভেঙে পড়তে পারে তার কিনারায় বসে কিছুই
ভাল লাগে লা।
দু'জনে নীরবে বসে আছে। দু'জনের মাঝখানে শুণ্ একটি প্যাশন খলে,
তার মধ্যে আডাই সেরের একটি বাটখারা। অরুণ এটি সঙ্গে এনেছে কেন
তা সেই জানে ।
কিন্ক কেন দু'জন সক্ষম বাক্তি দৃঢ মাটির শিরাপদ আশ্রয় ছেডে ফাঁটলধণ|
পাড়ে এসে বসেছে? কি তাদের দুঃখ? র্যাশনের চাল কমিয়ে দেওয়া
ছুখ? আনামের ভূমিকম্প? বিহারের বন্য।?
না। এ সব বহির্জগতের ছোয়াচ থেকে ওরা ক্ছিকাল মুক্ত আছে। ওদেন
বর্তমান সমস্যার কথা বলতে গেলে এক বছর আগের স্টিমার পার্টির কথা তুলতে
হয়। স্রিমার থেকে জলে-পড়া মাধবীর প্রাণ বাচিয়েছিল অরুণ সেই এক বছুণ
আগে। কিন্তঘেরাগ দুর্ঘটনা দিয়ে শুরু, তার শেষও একটি বড় দুর্ঘটনা ।
বহু নজীর আছে।
এমনই ঘটে। যে অরুণ জলে-পড়া মেয়েকে বাচিয়ে হয়েছিল হীরো! এবং
সামাজিক মূল্যে আজও যে হীরে, সে আজ এই মৃহর্তে কম্দল! হয়ে যেতে পারে
'এমন সঙ্কট দেখ! দিয়েছে । থেকে থেকে তার মনের ভিতরটা মোচড দিয়ে
উঠছে। থেকে থেকে তার চোখ ছটি ভয়ার্ত হয়ে উঠছে, আর বারবার সে
তার পাশের র্যাশন থলেটা হিন্তিরিয়া রুগীর মতে। শক্ত ক'রে চেপে ধরছে ।
যেন কত বড় একটা আশ্রয়।
বাটখারা ৬৯
দৃষ্টি কিন্ত তার আকাশেব দিকে । হায় রে অবুঝ মন। এখনো! সে
অসম্ভব কল্পনায় ভূবতে পাবছে। মীধবীর নীরবতার অর্থ না বুঝেও তার কল্পনা
ছুটে চলেছে বল্পাহীন। এখনও সে আকাশের দিকে চেয়ে দেখছে, সে যেন
একটি দেশী হাউই, স্কুলিঙ্গের আকাশ-ছোঁয়। স্থদীর্ঘ পতাঁকা। উডিয়ে উধের্ব ছুটে
চলেছে। যেন সে বিজ্ঞানীদের পবিকল্পিত চন্দ্রলোকগামী বকেট, যে শক্তি
তাকে উভিয়ে নিয়ে চলেছে, সে তাব অস্তরবাপী মাধবী। কল্পনা করছে, আর
তার মাথা ঝিম ঝিম ক'রে উঠছে ।
একটি বছর ধবে অকণ পুকমের চিরদিনের বপস্থষ্টির ধার! অনুলরণ কবে
মাধলী নামক অতি সাধাবণ একটি মেয়ের উপব রঙের পর রঙ চাপিষে তাঁকে
এমন ণক অনির্বচনীঘ় শোভায় দ্াড কবিয়েছে ঘষে, ভার চোখে সে ভিন্ন আর
কিছু স্থন্দর নেই, কথনে। ছিল না, কনে! হবেও না। প্রথমে সে তার মৃত্তির
উপর (১) বেগুনি চাপিয়েছে, তারপর (*) নীল, তারপর (৩) সবুজ, তারপর
(9) হলুদ, তারপর (৫) জবদা, তারপর (৬) লাল। তারপর বপালি, তারপর
সোনালি । তারপব তাকে পবিষেছে হুন্স বামধন্ রঙা মললিন, তারপর তাকেও
বেষ্টন করেছে তার আরও স্ুক্স স্বপ্ন আববণ। আর শুধু স্বপ্ন নয়, বাজার থেকেও
অনেক আবরণ কিনতে হয়েছে | বেনারপী, জর্জেট, ঢাকাই । এই তো৷ সেদিনও
সে নিজেব জুতো কিনাত গিয়ে সেই টাকায় কিন্ল একটি ভ্যানিটি ব্যাগ ।
এই মাধবীকে আজ শেন কথাটি বলতে হবে-_বিবাহে রাজি আছে কি না।
এই প্রথম প্রশ্ন এবং এই শেষ প্রশ্ন! এর আগে এপ্রঙ্গ ওঠে নি, শুধু জমি
তৈনি হচ্ছিল। কিন্ধ অরুণের এমন ভ্রান্তি ঘটল কেন? আগে তো তার
মুখেই শোনা গেছে, প্রেম যখন মানুষকে উন্মাদ করে তখনই বুঝাতে হবে প্রেমের
ধ্বংসও আপন্ন হয়ে এসছে। তখন তাকে বিবাহ নামক সমাধিক্ষেত্রের দিকে
ছুটতে হয়। দে তখন স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করে। সমাধি রচিত হয় বিবাহ
বাসবে। এই সমাধিক্ষেত্রে ধরাপৃষ্ঠ আবীর্ণ হয়ে আছে। প্রেম ও বিবাহ তাই
জীবন ও মৃত্য । অরুণই এতদিন বলেছে প্রেম ও বিবাহ ভাল নয়, বিবাহ এবং
প্রেম ভাল, কারণ শেষেরটিতে বিবাহ মারা পড়ে, প্রেম বেঁচে থাকে । কিন্ত
আজ তাব বুদ্ধি আচ্ছন্ন। সে আজ একটি বাজে প্রশ্বের উত্তরের অপেক্ষায়
বোকার মতো আকাশের দিকে চেয়ে আছে। তার শেষ আশ্রয় র্যাশনের থলে
আর আড়াই সেরের বাটথারা।
তার পাশে মাধবীও চিন্তাহীন নয়। অরুণের দৃষ্টি আকাশের একটি ক্ষীণ
নক্ষত্রের দিকে কিন্তু মাধবীর দৃষ্টি নিচের দিকে সাত নম্বরের একটি বিশেষ
প্ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্য-গল্প
ন্ষিনিসের প্রড়ি। মেয়েদের কল্পনাশক্তি কম এ কথাটির সমর্থপন্বরূপ লয়, তার
প্রতিবা্ ন্বর্ূপই । অরুণের মন হাইড্রোজেনের মতো! উধ্বগ্ী্মী, মাধবীর মন
পারদের মতো! নিম্নগামী, কিন্ত কল্পনাশৃন্য নয়।
. সে এঁসাত নম্বরের ধিনিসটি থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না, কারণ সেও
তার মধ্যে দ্রিয়ে একটি জগৎকে দেখছে, যদিও সে জগৎ রডীন জগৎ থেকে কিছু
শ্বতন্ত্র। সে জগৎ ছিন্ন জগৎ। জোড়াতালি দেওয়া! । ফেন গিবন রচিত বিখ্যাত
ইতিকথা, ষেল তাতে একটি সাস্রাজোর ঘৃণ ধরার কথা সবিস্তারে লেখা আছে।
কিছুই না, সাত নম্বরের একপাটি জুতো! । অরুণের যে পা-ধানি তার হাটুর
উপর দিয়ে মাধবীর দিকে এগিপ্ে এসেছে সেই পায়ে নাছে সেই জুতো । তার
চামড়া ভাঙ্জে ভাজে ফেটে গেছে, মৃদু আলোতেও তা স্পষ্ট দেখা ঘাচ্ছে।
সোলের পাশ থেকে একখণ্ড তালি উপরের দিকে শেলাই করা । জতোধারীর
দ্ারিত্যের ইতিহান তার প্রতিটি শেলাইয়ে গাঁথা । ফাটা চামড়ার ফাকে ফাকে
যে অন্ধকার ঘনিয়ে উঠেছে সেই অন্ধকারে একটি কশুহীন বেকার জীবনের
বেদনাময় ইন্গিত। এই জুতো ঘে পা বহন করছে এবং লেই পা ঘে মানুষটাকে
বহন করছে তার দাম কতটুকু ?--'সমস্ত পূর্বরাগ ভেদ ক'রে মাঁধবীর মনে এই
প্রশ্নটি হঠাৎ কাটার মতো! তীক্ষ হয়ে উঠল। সমস্ত প্রেম দলিত ক'রে এ ফাটা
জুতো তার কল্পিত বিবাহিত জীবনের শিরে আঘাত হানতে থাকবে দিনের
পর দিন। ভাবতেও মাধবী শিউরে উঠল। কেন এতদিন সে তাব মুখের
দিকেই চেয়েছে, জুতোর দিকে চায় নি? কেন মালা গাথার আগে শুধু ফুলের
দ্রিকেই তাকিয়েছে, সুতোর দিকে তাকাঘ নি?-মাধবীর চোখ দুটি দুঃখে
স্বণায় অশ্রপিক্ত হয়ে এলে! । সে মনটাকে তাড়াতাড়ি কঠিন ক'রে অরুণের
শেষ প্রশ্রের উত্তরে শেন উত্তর জাণিয়ে দিল__“না”। সে সময়ে তার মুখের
ছবিকে চাইলে মনে হত যেন স্বর্গে কোনো! দেবী কথাটি উচ্চারণ করছে।
সঙ্গে সঙ্গে অরুণের সমস্ত দেহে এবং বিশেষ ক'রে ঘাডে ধন্নষ্টঙ্কারের যে সৰ
লক্ষণ দেখ! গিয়েছিল তার বর্ণনা নিষ্রয়োজন । সে সময় ঘে শক্তিতে সে তার
থলেটি চেপে ধবল তা মানবশক্তি ছেড়ে অস্বশক্তির সীমানায় পৌছেছিল।
সে গ্রন্তবীভূত ঘাড়ে উধ্বমুধী অবস্থাতেই থলেটি তৃলে নিয়ে মাতালের মতো
ট্তে ট্রলতে গিয়ে একখানা রিকশর উপর চেপে বসল এবং ব্লল, “জোর
চালাও, চা্দপাল ঘাট ।*_
রিকশয় চলতে চলতে ভার মনের মধ্যে থে প্রলয়লীল। চলতে লাগল ভার
চেহারাটা এইরকম--
বাটধারা প১
প্রথমতঃ, মাধষীকে ঘিনে সে যে স্বপ্রজ্জাল রচনা করেছিল তা ছিড়ে গেল।
তারপর রাষধন্থ-বঙা সক্ যসলিন্রে আব্রণটাও ছিড়ে গেল।
বেরিয়ে পড়ল লোনালি রঙ, কম্েক সেকেগ্ডেণ মধ্য সেটাও ফিকে হয়ে
রূপালি রং দেখা! দিল, তারপর লাল গেল, তারপর জরদ্া, তারপর হলু,
তারপর নীল, তারপর বেগুনি-_স্পেকট্রামের কাচখানাই ধেন ভেঙে টুকরো
টুকরো হয়ে গেল পাদাণ পথের উপর । রিকশ ছুটে চলেছে হান্ক! যাজীকে
বহন ক'রে । অরুণের শা! চোবে ফুটে উঠল শাদা মাধবী, অতি সাধারণ, কুণ্রী,
কুরূপা একটি মেয়ে! একটি নিশ্বাপে যৌন-সৌন্দর্ধ এমনি ক'রেই মিলিয়ে যায়
এক ধাক্কায় । নির্বোধ পুরুষ তবু ওরই নাম দেয় প্রেম।
অরুণ দ্রুত র্রিকশওয়ালাকে বিদাম্ব ক'রে গঙ্গার ধারে এগিয়ে গেল এবং
বাটখাবান্থদ্ধ থলেটি গলাম্ন ঝুলিয়ে নিদ্বে জুতো খুলে ফেলল পা থেকে । তারপর
আরও কমেক পা এগিয়ে গিয়ে জলে ঝাঁপ দেবে, এমন সময় ভাব মনে হুল
“কার জন্যে ??
পর মুহূর্তেই দেখা গেল থলেটি গল থেকে খুলে “রিকশ-_-রিকশ” করতে
করতে দে ছুটে চলেছে অদৃশ্য রিকশকে অনুসরণ ক'রে। জুতোর কথা ভাববাণ
আর তার সময় ছিল না।
এদিকে ময়দানে একা মাধবী কিছুক্ষণ চিস্তামুঢ অবস্থায় কাটাবার পব তার
থেয়াল হল কি ঘটেছে এবং ঘটতে যাচ্ছে । বুঝতে বাকী রইল না অরুণ গঙ্গা
দিকে গেল কেন। নির্বোধটা নিশ্চয় আত্মহত্যা করতে চায়।
মাধবীও একখান! রিকশয় উঠে চলল গঙ্জার দিকে । সেখানে গিয়ে প্রথমেই
তার চোখে পডল সেই পরিচিত জীর্ণ জুতো! জোডা। তার সুস্থ মন্তিফও এ
দৃস্তে সাময়িকভাবে ঘেন ঝিম ঝিম ক'রে উঠল। বসে পড়ল সে এখানেই।
সখতার জানত সে। একবার তার মনে হল জলে ঝাপিয়ে পড়ে মেরুদগুহীন
বাঙালী উদ্ধারের কাজে লাগলে কেমন হয়? কল্পনাটা মন্দ লাগছিল না, কিন্ত
তখনি তার মনে আর একটি প্রশ্ন জাগল, “লাভ কি?”
জীর্ণ জুতো! জোড়ার উপর একটি দীর্ঘনিশ্বান পড়ল শুধু । নিক্বের ভবিস্যাৎট।
চকিতে একবার দেখে নিল মাধবী । উৎকৃষ্ট জুতোর খোজেই ঘুরে বেড়াতে
হবে এর পর্ব থেকে, কিন্তু কত দিন কে জানে?
€ ১৯ হ )
একটি অর্থ নৈতিক গণ্প
ভবানন্দ। মুকুন্দ আর জনার্দন।
ওর] তিনজনেই ছিল আমার সহপাঠী নিকট বন্ধু) আমরা ইণ্টারমীডিঘ্নেট
পরধস্ত একসঙ্গেই ছিলাম, কিন্তু তারপর আমি প্রাণী-বিজ্ঞান এবং ওরা ইতিহাস
ও অর্থনীতির দিকে ঝেণকাতে আমাদের পথ পৃথক হয়ে গেল, ওরা শেষ পর্যন্ত
হল কলেন্জের প্রোফেসর, আর আমি আমার পৈতৃক সঞ্চয় আর নিজস্ব বিচ্যার
সাহায্য আমার বাড়ির বহিরঙ্গনের এক নির্জন কোণে কীটপতঙ্গ নিয়ে গবেষণ।
শুরু করলাম ।
কিন্ত এ আমাদের শিতান্তই বাইরেন্র পরিচয়, এতে আমাদের বন্ুত্
কিছুমাত্র ন্ট হম নি। কারণ এ তিন জনের চরিত্রে এমন এক মহা আকর্ষণীয়
'ণ ছিল যা আমাকে মুগ্ধ করত, হয়তো ওদের প্রতি আমার যে সহদয় ওদার্য
ছিল তাতে আমিও ওদের মুগ্ধ ক'রে থাকব ।
ওরা ছিল সম্পূণ অভিনব চরিত্রেব, ওদের চিন্তা এবং কাজে একটা
কৌতুককর মৌলিকত্ব ছিল ঘাতে ওদের চারপাশের আবহাওয়া হাসিতে হল্লাতে
নাচে গানে লব সময় উজ্জ্বল হয়ে থাকত। এমন কি প্রোফেশর হবার পরেও
খন সামান্ত বেতনে ওদের চলা ছুঃাধা হল তখন বিনা দ্বিধায় মুখে রং মেখে
ঘুঙ,র-পায়ে সন্ধ্যাবেলা পথে পথে নেচে গেয়ে পেটেন্ট ওষুধ বিক্রি করতে শুর
করল, এবং দিনের ও রাতের উপার্জন মিলিয্বে সচ্ছলতার সঙ্গে স্বভাঁবসিদ্ধ
সবরসতা বজায় রেখে চলল ।
এব মধ্যে কত ঝড়-বঞ্া এবং ঝঞ্ধাট দেশের উপর দিয়ে বয়ে গেল, কত
দাঙ্গা, কত ৃত্যু, তবু ওদের উচ্ছলতা কিছুমাত্র দমল না, বরঞ্চ নব স্বাধীনতার
দমকা হাঁওয়াঘ ওদের প্রাণধর্ম আরও খানিকট1 মাথা তুলে সবার উপর দিয়ে
দুলতে লাগল। শুধু দোলা নয়-সে মাথায় সর্বত্র গুতো মেরে, বেডানোর
প্রবৃত্তিটিও বেশ ভালই জেগেছিল, আর তার প্রমাণও পেলাম আমারই
গবেষণা-ঘরে।
দমকা হাওয়ার মতোই এসে ঢুকল একদিন ওরা তিনজল-_হন্না করতে
করতে । মুকুন্দ হাসতে হাসতে আমাকে ছুই ঝাকানি দিয়ে বলল, “কীটের
সন্ধে তুইও কীট হয়ে পড়েছিস, একবার বাইরে যাঁবোইরে ঘা_দ্বেখ কি
আনদ্দোখলব চলছে সেখানে ।” ভবানন্দ হঠাৎ চিৎকার ক'রে বলে উঠল,
একটি গসর্থ দৈতিক গল্প ও
“এ কি! আজকের দিনে তৃই এতগুলো গ্রজ্জাপতিকে বন্দী ক'রে রেখেছিস*__
বলতে বলতেই আমার প্রজাপতির বাক্স খুলে নবগুলোৌকে হাওয়ায় উড়িয়ে
দিল। কিন্ধু ভারা হাওয়াতেই যেটুকু উড়ল, তার বেশি নম, কারণ সেগুলো
সবই বহুদিনের মরা প্রজাপতি । জীবন্ত প্রাণীর মধো ছিল কতকগুলো মাকড়সা,
তবে তারা বন্দী ছিল না, তাদ্দেরই জালে স্বাধীনভাবে বসে ছিল, কিন্ত
জনার্দনের ভা পছন্দ হল না, দে সেই জাল ছি'ড়ে দিল অকাঁরণ।
আমি বললাম, “আঃ! তোরা করছিস কি, এলি অনেক দিন পরে, স্থির
হয়ে বোস্্_”
ভবানন্দ চীৎকার ক'রে বলল, “স্থির হয়ে ববব কি রে? কি সবব্যাপার
ঘটে যাচ্ছে তোর বে হ্ৃদযুঙ্গমই হচ্ছে না।”
“কি এমন ঘটে যাচ্ছে ?”
ভবানন্দ লাফিয়ে উঠে বলল, “ম্বাধীনতা !-__-সবার চেহারা বদলে যাবে-_যা
কিছু পুরনো সব নতুন হয়ে যাবে-_-ঘা কিছু--”
মুকুন্দ আমার একখানা হাত খপ. ক'রে ধ'রে উন্মীদের মতো আমার দিকে
চেয়ে বলল, “শুধু চেহারা বদলাবে না, নামও বদলাবে! তোমার এ হুগলী
নদী আর হুগলী নদী থাকবে নাঁটাকুরিয়ার হুদ আর ঢাকুবিয়া হ্রদ থাকবে
না বঙ্গোপসাগরও নতুন নাম পাবে ।”
'সমি বললাম, “কি রকম ?,
মুকুন্দ বলল, “হুগপী নদীর নাম হবে মধুমতী--কারণ সেখানে জলের ব্দলে
বধে ধাবে মধু--আর মধূ। ঢাকুরিয়া হদের নাম হবে দুপ্ধ-সরোবর | কত দুধ চাই?
বলতে বলতে তিন অধ্যাপক ধ্াতের মাজনের গান গেয়ে নাচতে শুরু
করল, আমি সভয়ে আমার মাইক্রোক্ষোপ যন্থটি আলমারীতে বন্ধ করলাম।
ওরা বিজ্ঞান-ঘরে উল্লাসের যে ঘুণি হাওয়া বইয়ে দিল, সাময়িকভাবে আমিও
ওদের স্ষ.তিতে যোগ না দিম্নে পারলাম না। তার পর ধাবার পময় আমাকে
টানতে টানুতে পথে বের ক'রে বলল, “আর ঘরে ফিবিস না এখন |
ভিতরে ভিতরে সামান্য একটু আশা বা বিশ্বাসের দানা থাকলে ওরা এই
ভাবেই তাকে কেন্দ্র ক'রে অনেক কিছু ফধাপিয়ে বলতে পারে, স্ৃতরাং দেশের
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ওদের মনে ষে কিছু আশা ছিল এ বিষয়ে আমার*সন্দেহ ছেল
না। ওদের কথ! গুনে তাই আমারও মনটা বেশ প্রসন্ন হয়ে রইল।
কিন্ত ক্রমে দিন যায়, দেখি লোকের মুখ শুকনো, তাভে নিরাশার ছায়]।
বাজারে নাকি চাল দুর্লভ, কাপড় পাওয়া যায় না, খবর পাই? ক্রমে চিনি,
প$ পরিষল গোস্থাসীর রেডি বাস-গল্
করলা, চন, অনৃষ্ত হচ্ছে। সরযের তেন নেই, ঘি নেই, দুখ নেই, মাছ নেই,
সাংস নেই।
আয় সবচেয়ে শোচনীয়, কিছুকাল ভবানন্দ, মুকুন্দ এবং জনার্দনেরও দেখা
নেই। এই শেষের ঘটনাটিই আমার কিছু উদ্বেগের কারণ হয়ে রইল । ওর!
কেমন আছে এখন কে জানে! কি ক'রে যে ওদের চলছে করনা করতে পারি
না। কলেজের বেতনে চলা অনস্ভব, হয় তো ফেবিওয়ালার কাজে বেশি মন
দিয়েছে, কিংবা অন্য এমন কোনো কাজ, যাতে আর দেখা করার লময় পাচ্ছে না।
মান্যের জগৎ হতে দূরে থেকে আমার ভালই হয়েছে এ কথা চিন্তা করি
মাঝে মাঝে । আমার কীটপতঙের জগতে কোনো! রূপাস্তর নেই, তাই আমার
দিন কাটে ভাল। সম্প্রতি মত্স্ততুক মাকড়সা নিয়ে একটা গবেষণায় মেতে আছি।
জলাধার থেকে মাছ টেনে তুলে কি কৌশলে সেটাকে পাওয়ার ব্যবস্থা করছে।
কৌশলগুলে! দিনের পর দিন লক্ষ্য করছি আর নোট বইয়ে টুকে ট্রকে রাখছি।
বিষয়টি এমনই আমাকে ডুবিয়ে রেখেছে যে, আমার কাছে আন সব
মিথ্যা হয়ে গেছে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাক, শুধু আমি থাকি আর
থাক এই গবেষণাগারটি | আমাকে ঘিরে মধুর হাওয়া বয়ে ঘায়, আমার
এখানে থে ফুলের গাছগুলি আছে তার উপর রোদ এসে খেল] করে,
জলাধারটি ঝলমল ক'বে ওঠে, মাছেবা চঞ্চল হয়ে ওঠে, পাধীরা গান গায়, সব
মিলিয়ে আমার এই নির্জন অঙ্গনটি এক অপ[ধিব আনন্দ-রাজ্যে পরিণত হয় ।
কিন্ত যখন মনে পড়ে ( এবং বর্তমানে মাঝে মাঝেই মনে পড়ছে ) ঘে আমার
ব্যাঙ্কের হিসাবে জমার দিকটি বেশ খালি হয়ে এসেছে, তখন মনটা দমে মায়,
তখন বুঝতে পারি এক দিন (এবং সে দিনের বেশি দেবি নেই ) আমার এ
রাজ্যটির আর অস্তিত্ব রাখা লম্ভব হবে না, এবং শেষ পযন্ত বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েই
মিলতে হবে, জানি না নাচতেও হবে কিলা। স্থৃতরাং দেশের অবস্থা একটু
তাড়াতাড়ি ফের! দরকার এ বিষয়ে মানসিক উদ্বেগ ক্রমশই অদম্য হয়ে উঠছে।
এমন সমম্ম আমার মনে আশ! জাগিয়ে ভবানন্দ, মুকুন্দ এবং জনার্দন, এসে পডল
একদিন ধূমকেতুর মতো । আমিই এবারে আনন্দে নেচে উঠলাম এবং প্রস্থের
পর গ্রশ্নে ওদের অস্থির ক'রে তৃললাম।
কিন্তু ওদের খবর ভাল নয়। যা! শুনলাম তা এই যে, ছগ্মবেশ ধরা পড়াতে
কলেজের চাকরি গেছে তিনঅনেরই | কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, “কলেজে থাকতে
হলে সাদ্ধ্য ব্যবলা ছাত্বৃতে হবে, আর হদ্দি বাবসা! রাখতে চাও তা হলে কলেঙ্জ
ছাড়!” ওরা তিন জর্ন অনেক পরামর্শ ক'রে কলেজ ছেড়ে দেওয়াই ঠিক
একটি অর্থনৈতিক গন্প ৭৫
ককেছে, কেনন! মুখে রং মেখে নেচে গেয়ে ফেরি করায় উপার্জন অনেক বেশি।
'তা ছাড়া ছদ্মবেশী ফেবিওয়াল! হওয়াতে প্রোফেলর হিনাবে কলেজে ষে পরিমাণ
সম্মানের হানি হয়েছে, ক্রেতারা ঘুঙ়র-পায়ে বং-মাথা ফেবিওয়ালামাত্রকেই
কোনে! না কোনে। কলেজের ছদ্মবেশী প্রোফেলর মনে ক'রে সেই পরিমাণ
খাতির করছে । ফলে সন্ধ্যাবেলার এই নৃত্যরত ব্যবপায়ীমাত্রেরই খুব সুবিধা
হয়ে গেছে।
মুকুন্দ বলল, “তা ছাড়| ফেরিওয়ালার একটা ভবিষ্যৎ আছে, কিন্ত
কলেজের প্রোফেসরের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, বিশেষ ক'রে বাংলা বিভাগের পর
কলেজে ছাত্রের সংখ্যা আর প্রোফেসরের সংখ্যা ছুই-ই বেডে গেছে এবং
বোধ হম প্রোফেসরের সংখ্যাই বেশি হয়েছে আরু তার ফলে আগে যেখানে
একই প্রোফেলর মজুরদের মতো! ছু" শিফট তিন শিফট ক'রে কাজ চালিয়ে
“এক্সট্রা পেত, এখন আর সে ম্বঘোগ ততটা নেই। প্রোফেসরদের মধ্যে
যারা চতুর তার! সবাই খবরের কাগজে ঢুকে গেছে, আর যারা আমাদের মতো
বেপরোয়া তাদের দিন চলছে ন1।”
আমি বললাম, “কিন্ত দেশের এ অবস্থা ফেরি করার ভবিষ্যত্ইী ব|
কোথায়? ফেবিওয়ালার সংখ্যাও তো অনেক বেশি হয়েছে শুনেছি ।”
এই গ্রশ্লে ওদের তিন জনেরই মুখ থেকে নিরাশীর অন্ধকাব দূর হয়ে দপ
ক'রে আশীর আলো! জলে উঠল ।
ভবানন্দ বলল, “দেশের অবস্থা তো ফিরছে অল্প দিনের মধ্যেই, কাজ জু
হয়ে গেছে, যুগান্তকারী সব পরিকল্পনা, ভয়টা কিসের ?”
মুকুন্দ বলল, “এক দ[মোদর বাধ তৈরি হলেই আমাদের সব অভাব
ঘুচে যাবে।”
জনার্দন বলল, “কিন্তু তারও আগে আমাদের দুধের অভাব একেবারে মিটে
যাচ্ছে, দেখ নি খবরের কাগজে পশ্চিমা গোরুর ছবি ?”
আমি-কাগজ কদাচিৎ পড়ি, তাই জানতাম না।
অনার্দন বলতে লাগল, "শুধু তাই নয়, ফদল বাড়াও আন্দোলন আছে এর
সঙ্গে। সব যদি মিলিয়ে দেখ, তা হ'লে বুঝতে পারবে আমাদের মুখের রং
অল্পদিনেই ধুয়ে ফেলতে হবে, তখন আর ফেরিওয়ালা সেজে নাচ না,
আনন্দে লাচব।”
লক্ষ্য ক'রে দেখলাম তিন জনেরই পা একটু চঞ্চল হয়ে উঠেছে । তার পর
হঠাৎ দোখ মুকুন্দ এক লাফে উঠে গিয়ে আমার ফুলের গাছগুলো উপড়ে তুলে
শ৩ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ বাল-গল্প
ফেলছে আর চিৎকাৰ করে বল্ছে, “এখানে বেষ্ন লঙ্কা! সিম ঘা হয় লাগাও»
ফুল আর চলবে না ।
খলার্দন টেক গেকে একটি কাঠেব লহ্বা-গল। পাত্র তুলে নিয়ে বাইবে
ডুঁডে ফেলে দিল । আমি বাধ। দেবর আগেই কান্দটি শেষ হয়ে গেল; বলল,
“এ সব আর কি কাকুজ পাগব/ আনন্দ কব, আনন্দ কর।”
এতক্ষণ লক্ষ্য করি নি, যাবার মম৭ লক্ষ্য কললাম, গুদদর চোখের চারদিকে
একট। কালে! চঞ দেখ! দিয়েছে ।
বেশ বোঝ। গেল ভিতরে চিতার পদের মনের মধ ঠনরাশ্ঠ স্থামী বাসা
বেধেছে, বাইরে যে আশার কথা শোশাতে চেয়েছিল ত। ওদের হয়তো অন্তরের
কথা নয়, তাই গ্রা উপঢে এন্ং কাচেপ পাত্র ভে যে আনন্দের আবহাওয়া
স্থষ্টি করতে চেয়েছিল তা সর্পে ওপেন মনের স্থর মিপণ না, কয়েক মাল আগে
হলে ওদেন এই ভাঙাচোরার কাছে হয়তো আমি যোগ দিতাম, কিন্তু আজ
পারপাম না বলেই মামার মনট। বও খাবাঁপ হয়ে গেল। আমীর মনে একট
প্রশ্থ ভেসে উঠল, অদম্য শাখার পৌধ যদি এমন ক'বে ভেঙে পঙতে পারে,
তা হ'লে মামিই কি ল'সাপ থেকে পালিয়ে এক! বেঁচে যাব?
এব পর মাপখানক কেটে গেছে।
সন্ধ্যা পিকে কাছাকাি ম্যাডঝ্স ক্কোমারেব এক কোণে মাঝে মাঝে
চুপচাপ গায় বসে থাক। আমার অভ্রাস। আমি মে কোণটতে প্রায় বসি,
সেদিন দেখি তিনটি কঙ্কালসার ব্যক্তি সেখান বসে হাই তলছে। একটু কাছে
আসতেই চিনতে পারলাম তাঁদের এবং চিনে চমকে উঠলাম । আলাপের ভাঁষা
খুক্ে পেলাম না, পুপ্ননো কথাই তুলণ।ম-_-ছ্িজ্ঞাসা করলাম, “দামোদগ বাঁধের
খবর কি?”
ভবাশন্দন বলল, “পামোদঝ বীব বোধ করি এ জীবনে আর দেখা যাবে না|”
"দুগ্ধ পন্বিকল্রণ] 7”
“ফোটো তগ্রাফটি রেখেছি সঙ্গে, আর কিছু জানি ন1।”
“ফমল বাড়াও আন্দোলন ৮”
"আর এক পুরুষ পরে জিজ্ঞাসা করিম ।”
তাব্রপর* শুষ্ক হালি হেসে বলল, “কিছু টাকা ধার দিতে পারিন__অবশ্টয
শোধ দেওয়া সম্পর্কে একটু সন্দেহ রেখেও ?”
বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেলাম ওদের ।
ইতিমধো আমার একটি গুরুতর লমন্যা দেখা দিয়েছে। আমি নিজের
একটি অর্থ নৈতিক গল্প ৭৭
কাজে মেতে থাকি সে জন্য বাইরের সঙ্গে আমার সম্পক কম, কিন্ত সেই সঙ্গে
নিজের ঘরের প্রতিও আমি ঘষে এমন উদ্দাসীনতা প্রক্কাশ কবে এপেছি ত| এত
দিন খেঘাল কবিনি। এক দিকের একাগ্রতা ডেডে যাওয়াতে এতদিনে অন্ত
দিকেও দৃষ্টিপাতের স্মষোগ এলো। হঠাৎ দেখতে পেলাম আমার স্ত্রী শ্রীমতী
অমল ভয়ঙ্কর বুকম বোগা হয়ে পডেছে। আমাদের বিবাহ হয়েছে পাচ
ব্ছব। স্বাস্থাবতী শিক্ষিতা ম্বী, ইকনমিক্সে মনা নিয়ে বি এ পাস করেছে,
কিন্ক বিবাহিত জীবনে সে নবধ| তাব বিছ্ার পরিচয ঢেকে পাখাবই চেষ্টা কনে
এলেছে, কারণ সামান্য শিক্ষা পেবে মেয়েবা সাধাবণতঃ যে পুক্যোচিত উগ্রতা
এবং কক্ষতায় নারীধর্ম হারিয়ে ফেলে, মমপ। ছিল তার্দেব চেয়ে স্বতঙ্ত্র। সে
ছাত্রীজীবনে নীরবে দেশসেবা করেছে, কারণ তার দেশপ্রেম ছিল উগ্র বকমেখ
আস্তবিক। আমি তাকে পেয়ে নিজেকে ৮সীভাগ্যবাশ মলে করেছি, তাবহ
হাতে সংসারের সকল ভার তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে আমার কাজ কবে চলেছি।
কিন্ত তাব স্বাস্থা হঠাৎ এমন ভেঙে পডল কেন? সমসার খবচে কার্পণ্য কণাৰ
কথ। নয, অস্থথেব কথাও কখন? শুনি শি।
মাস তিনেক মাগে একদিন সে আমাকে বোঝাতে ঠেযেছিল ইকশমিন্ের
তত্ব। ন্লেছিল বিদ্শ থেকে যে খান বা যা-কিছু আম্দ।নি করতে হচ্ছে,
তাষদি কিছু দিশ একই ভাঁবে চলে তাহ'লে এর্েশ গাঁরণ গবিব হযে যাবে,
সেক্ন্ত প্রত্যেকেরই উচি * প্রাণপণে দেশের প্রয়োজন দেশের আধেযেই মেঢাবাব
চেষ্টা কপা। শইলে যন্পাতি কেনপান টাক! থাকবে ন, আপ ফরপাতি দাপট
কিনতে না পারলে দবেশেব কোনে! পরিকল্পনাহ সফল হবে ন।।
কি্চ মামি তখন গব্ষণার এমন এক পধাধে অপনাত ঘে, অর্থশীতিব্র তন্দে
সম্পর্ণ মনোযোগ দিতে পারি নি।
মার হঠাৎ মনে হল এ কি সেই অভিমানেন ফশ /
আমি নিজের অপরাধ উপপর্ষি ক'রে কারণ অশ্ুপন্ধানে শৎপর হয়ে উঠলাম,
আর তার*কলে য। জানা গেল তাতে একেবারে শুক্তিত হয়ে গেলম। জানতে
পারলাম অমল প্রথমত: বাজাবের উন্ফ্েশন কমানোর সাহায্য হবে ঝলে
সারের খরচ যথাসাধ্য কমিয়ে দিয়েছে । টাকা বাজাবে বেশি ছাড়লে
জিনিসেব দীম কখনো কমতে পারে না, তাই আমার থাছ্ভযান যর্থীসম্ভব জায়
বেখে নিজেনু এবং অন্যান্য সবার বরাদ্দ একেবারে কমিয়ে ফেলেছে । তা ছাভা
যে বিদেশী গুড়ে দুধ আমাদের উভয়ের বরাদ্দ ছিল তা থেকে তার নিজের
ংশটি একেবারেই বাদ দিয়েছে । এই গুরুতর অন্যায়টি সে কেন করল ক্ষোভে
৭৮ পরিমল গোগ্ষামীর শ্রেঠ বাল-গল্প
ছুঃখে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম । সে সংক্ষেপে ক্ষীণ কণ্ঠে উত্তর দিল, প্ডলার
বাচাচ্ছি।”
আহার গবেষণা চুলোয় গেল, আমি প্রান ক্ষেপে গেলাম । এর পর থেকে
আামি আর পুরো বিজ্ঞান-গবেষক নই, পুরোপুরি পুরুষ হয়ে উঠলাম্ এবং নিজ
হাতে সংসারের ভার নিয়ে এই গুরু অন্যায়ের প্রতিকারে মন দিলাম। আমার
সংপর্গ থেকে বঞ্চিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছাত্রীই রয়ে গেছে, গৃহিণী হতে
পাবে নি-_সে দোষ সম্পূর্ণ আমারই ।
দৈনন্দিন মংলার চালানোও একটা বিছ্যা এবং এর মধ্যেও একটি বিজ্ঞান
আছে, আনন্দ ও মাছে । এতদিন আমাৰ জগতট। ছিল নিতাস্তই কীটপতঙ্গেক
জগৎ, এখন দেখি মাভমের জগং৪ স্থন্দর |
একদিন মুকুন্দ আমার নর! প্রক্জাপতি হাওয়ায় উডিয়ে দিয়েছিল, তার মধ্যে
মস্ত বড় একটা ইঙ্গিত লুকিয়ে ছিল । আমার মনে হতে লাগল আমারই বন্দী
মৃত মনটাকে সে বাইরের আলে।-হাওয়ায নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল। তার পর
পরা] ষতবার এসেছে ততবারই আমার গবেধণাঁগারের আবহাওয়াকে লণ্ডভণ্ড
ক'রে দিতে চেগ্পেডে । আজ এসে যদি রা সব লৃগগন ক'রে নিয়ে যায় তা হ'লেও
হয়তো আর দুখ হবে না। কিন্ছ ওদের ঘে অবস্থা সেদিন দেখেছি_-আর
কি কখনো ওর। আসবে? জীবন-যুদ্ধের প্রায় শেষ ধাপে পৌছে আর কোন্
আশা নিযে এখনও বেঁচে থাকবে?
কিন্তু ওর ধেঁচে ছিল, এবং ভাল ভাবেই ছিল তাৰ প্রমাণ পেলাম মাস
ছুই পর়ে।
এক দিন ওদের সম্বদ্ধেই ভাবছিলাম, এমন সময় চিন্তার অন্ধকার ছিন্ন
বিচ্ছিন্ন ক'রে তিন বন্ধু যেন একটা উগ্ন আলোয় জলতে জ্বলতে এসে হাজির
হল। আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম ভাদের দ্বিকে চেয়ে। দেখলাম
তাদের চেহারার অনেক উন্নতি হয়েছে, চেের চারদিকের সেই কালো চক্র
আর নেই, তার বদলে কালো-চশমা_ ছম্মবেশ ধরতে যা ব্যবহার" করত।
হাড়ে মাংস লেগেছে, চালচলন ভাবভঙ্গি সম্পূর্ণ অভিনব, চেহারা! উজ্জল, পরনে
জাতীয় পোশাক, এবং সবচে বিম্মযবকর, তারা হিন্দিতে কথ! বলছে।
দেখেশুনে কৌতুক বোধ করলাম, আনন্দও হল খুব। মনে হল রাজধানী
থেকে কোনে বড় চাকরি বা কোনো বড় দাও মেরে থাকবে।
জিজ্ঞাসা করলাম, "কোনো! পরিকল্পনা কি তা হ'লে ইতিমধোই সফল
হয়েছে £_দেশোরতির কোনো! টপ্রবিক পরিকল্পনা ?”
একটি অর্থনৈতিক গল্প ৭৯
ওরা তিন জন একসঙ্গে হেসে উঠল। ভবানন্দ বলল, “কি পরিকল্পানা ?
“যেমন দামোদর”__
“দামোদবের বানে ভেসে গেছে ।”
“তা হ'লে “ফসল বাডাও” ?%
“কপল বাড়তে দেরি হবে।”
“দুপ্ধ পরিকল্পন৷ ?”
মুকুন্দ বলল, “কোনোটাই দরকার হল না। সম্পুণ নূতন এক পৰিকল্পন।
আর সবগুলোকে মেরে দ্বিয়েছে |”
আমি সবিন্ময়ে বললাম, “কি রকম? পরিকল্পনা হতে শা হতেই তার
ফল ভোগ করছ না কি?"
জনার্দন বলল, “ঠিক ধবেছ। এ পরিকল্পন। অত্যন্ত ব্যাপক এবং বিরাট,
এবং সবচেয়ে ঝড় কথা হচ্ছে এর দ্রুত সাফল্য-ষা একমাত্র এই পবিকলীনাতেই
সম্ভব।”
“তোমবা কি এর মধ্যে আছ ?”- আমি প্রশ্ন করলাম।
ভবানন্দ বলল, “আছি, এবং আম] প্রত্যেকে মোটা বেতনে এই গুরু
দাদিত্ব ঘাডে নিম্সেছি। হাজার হাজার আপিস বসছে দেখে সব জায়গাম,
হাজ।র হাজার লোক নিষুক্ত হচ্ছে__বত্ত"।, গায়ক, চিত্রকর সবাই । একেবারে
মান কণ্টাক্ট? 1"
আমি উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞাসা কধলাম, “কি কাজ করতে হচ্ছে তাদের ?”
ভবানন্দ বলল, “জনতার মাঝখানে গিয়ে, যাদেব এতকাল স্ব্ণা করেছ,
অস্পশ্ত ক'রে বেখেছ, একেবারে তাদের মধ্যে গিয়ে, তাদেরই একজন হয়ে,
একেবারে তোমার গজদন্তমিনাৰ থেকে পৃথিবীর মাটিতে নেমে এসে শুধু একটি
কথা বলা, একটিমাত্র বৈপ্রবিক কথা, একটি মাত্র বীজমন্ত্র উচ্চারণ কর], শুধু
বলা_-'কম খাও? |”
বলেই পকেটে হাত দিয়ে চট ক'রে খণের টাকাটা আমার হাতে তুলে দিয়ে
বলল, “এবারে আমি ভাই, বড্ড জরুরি সব কাজ পড়ে আছে ।”
আমি শুধু বিমুঢ় স্তপ্ভতিত ভাবে ওদের বিলীয়মান মুতিগুলোর দিকে চেয়ে
রইলাম ।
(১৯৪৯)
নারাণদার অনশন
নাবাণদার ইতিহাস কোনে! কাগজে ছাপা হয় নি, তার নামও দেশের লোকে
কেউজানে ন।, কিন্ত আমার মনে হয় তার মতো দেশপ্রেমিক এবং মহৎ লোক
এ সংসারে খুব কমই আছে।
আমি তাকে অল্পদিনের ক্ষন জানবার সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্ত তবু সেই
অন্পদিনের মধ্যেই তাবু অস্তরের যে পবিচয় আমি পেয়েছি, তা প্রকাশ না করা
পর্ন্ত আমাবু শাস্তি হবে না।
আদর্শের খাতিরে আত্মবিদর্জন করতেও যিণি পশ্চাৎ্পদ নন, তিনিই
আমাদের দেশের আদর্শ পুক্ষ। নারাণদীর মধ্যে দেখেছি সেই চরিত্র দৃঢ়তা,
সেই অমানধিক শক্তি, যার গুণে তিনি জীবন পণ করতে পেবেছেন আদর্শকে
বাচিয়ে রাখতে । অথচ দ্রঃখের বিনয় তাঁর নাম পর্যস্ত আমাঁদেৰ দেশের কেউ
জানে না। আমি মাঞজজ ভার সেই নাম জনপমাছে প্রচার করবার ভ্রুলভ
সৌভাগা লাভ ক'রে শিছেকে ধন্য মনে করছি।
নাঝাণদা ছিলেন আমাদের গ্রামের যুবকদের মধ্যে সবচেয়ে স'মাশীয় ব্যক্তি ।
খেলাধূলোর নকল রকম ব্যবস্থা, জঙ্গল সাফ কৰা, কচুরিপানা ধ্বংশেণ কাজ
থেকে শুরু কারে মুতদেহ শ্মশানে বয় নিয়ে যাওসাকোনোটাতেই তাকে
না ডাকলে চলত না। তার এমন একটা ব্যক্সিত্ব ছিল ঘাতে সবাই তাকে
সম্বম করত অন্তর থেকেই । তাকে কেউ যেমন না ডেকে খাকতে পারত না
তেমনি তার ডাকেও কেউ ন|। এসে থাকতে পারত ন|। ঘনকৃষ্ণ দীখ দেহ,
হাতে পায়ে প্রচুর শক্তি, হ্বদয় উদার। বাল্যকালে সাতার কাটাষ, গাছে
ওঠায়, ফুটবল খেলায়, দৌভ প্রতিযৌগিতায় নারাণপা ছিলেন সবার চেয়ে পটু ।
সে জন্তে তিনি সঙ্গীদের পরম বিস্ময় এবং শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। এইভাবে
সবার প্রশংসা এবং আশ্গতা সহজেই লাভ ক'রে নেতৃত্ব করধার একটা
্বাভাবিক অধিকার তার জন্মেছিল। নিজের কৃতিত্ব বিষয়ে নিরস্কৃশ নিঃসন্দেহতা
তাঁকে কিছু গবিত এবং অভিমানী ক'রে তুলেছিল, কিন্ত তাতে কারো! কোনো
লেকপানেব কারণ ঘটে নি। তিনি ক্রমে একটু খোশামৌদ-প্রিয় হয়ে
উঠেছিলেন, তাতেও কারে! কোনো ক্ষতি হয় নি। খোশামোদ করলে তাঁকে
দিয়ে অসাধা সাধন করান! যেত, না করলে সে এক বিপধয় কাণ্ড ঘটত ।
আমি বরাবর থাকতাম বিদেশে । তার সম্পর্কে এর অধিকাংশ খবরই আমি
নারাণদার অশশন ৮১
শ্রামের লোকদের কাছে পরে শুনেছি, আমার সঙ্গে তীর সাক্ষাৎ পরিচয় অতি
অল্প দিনের। বিদেশ থেকে দুচার বছর কখনোনখনে! অতি অল্প সময়ের জন্য
দেশে ষেতাম। দেশে গিয়ে সবার সঙ্কে অন্তরঙ্গ ভাবে মিশতে পারতাম না,
কারণ আমি কলকাতা শহরে থাকি বলে সবাই আমাকে খুব চালিয্া কিংবা
অহঙ্কারী মনে করত, কিংবা একটু বেশি রকম সম্্রম ক'রে দূরত্ব বক্ষা ক'রে
চলত | আমার ভাষাই বোধ হয় প্রাণ খুলে মেশবার পক্ষে তাঁদের ছিল
প্রধান বাধা । তারা শুধু এ জন্থাই হয় তো আমাকে বিদ্বেণী লোক মনে করত ।
কিন্ত তবু একবার তারা! আমারই শবণাপন্ন হল।
১৯৪৩ সাল। গ্রীম্মের বন্ধে বহুদিন পরবে দেশে গিয়েছিলাম । গ্রামের
ফুটবল টীম এবার নান! জায়গা ম্যাচ খেলবে, সেজন্ত তাপ! তাদের টামকে
বিশেষভাবে শক্তিশালী করতে চায়। কয়েকজন আমার কাছে এসে
প্রস্তাব করল, আচ্ছা, কলকাতা থেকে ছুএকনন নামকরা থেলোম়্াড় আনা
যাষ না?
আমি বললাম, কেন যাবে না? তবে তাদেব ঘত্ব এবং আবামেএ জন্য
যথেছ্ট খরচ কবা চাই, নইসে আনা যাবে ন]।
খরচ কধতে সবাই রাঙ্গি হল। কিঞ্ধ তাবা এ বিষযে একটি গ্রকাণ্ড ঝুল
কবল। এই প্রশ্চাবটি তাবা নারাণপাকে না জানিয়ে শিজেদেপ খেয়ালে
করায় নারাণদা মর্ধাহত হালেন। কিন্ধ তিশি চুপ ক'ণে পইলেন, কিছুই বশলেন
না। ওরা যে ইচ্ছে করে এই অন্যায়টি কবেছে তা নয়, নাবাণদাকে বাদ পিষে
সামান্য প্রস্ত।বমাত্র কথায় যে কোনে! বিপদ ঘটতে পাপে ত। তার। ভাবেনি ।
নারাণদা চুপ ক'রে থাকাতে তাবা আরও নিশ্চিন্ত হল।
কিন্ত ফল হল অতি মাবাম্মরক। থেলোয়াড আন| হল, কি্চ শারাণদ।
খেলার কোনো অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে বাজি হলেন না। উপরহ্থ তিনি
বললেন, বাইন্রের কোনে! খেলোধাঁড যদি তাদেব টীমে খেলে তা হ'লে তিনি
কাউকে ক্ষমা! করবেন লা।
কিন্ত তাকি ক'রে মন্তব? সমব্ত জেল! জুডে মহা উত্তেজনার শ্থ্টি হযেছে,
কলকাতার দুঙ্গন বিখ্যাত খেলোয়াড় এসে যোগ ধিম্বেছে কপিলপুরেগ টামে।
তাদের শুধু দেখতেই সকাল সন্ধ্যা লোক আসছে দলে দলে। প্রথমে শত শত
লোক, ক্রমশ: হাজার হাক্জার বুদ্ধ যুবক বাঁপক স্ত্রীপুক্ষষ এসে ভেঙে পড়তে
লাগল সেই গ্রামে--কলকাতার খেলোয়াড কেমন তাই দেখতে । এখন তো
কিছুতেই তাদের বাদ দেওয়' সম্ভব নয়
৬
৮২ পরিমল গোন্বামীর শ্রেষ্ঠ বাঙ্গ-গল্প
নারাণদা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি মুখে আর প্রতিবাদ না আনিয়ে হঠাৎ
একেবারে জনশনব্রত শুরু ক'রে দিলেন।
ঘটনাটির গুরুত্ব প্রথমে কেউ ততটা উপলন্ধি করতে পারেনি, সবাই ভাবল,
নারাপদ! অভিমান করেছেন, পরে বুঝিয়ে স্থজিয়ে সব ঠিক করা যাবে।
আপাতত এ ছাড়া আর উপায় ছিল না-_-তিন চারটে জেলার লোক উদ্গ্রীব
হয়ে আছে কপিলপুর টীমের খেলা দেখবার জন্য |
অতএব খেলা হল, গ্রাষের নামও হল, লোকের কৌতুহল নিবৃন্ত হল,
কিন্ত নারাণদা ব্রত ভঙ্গ করলেন না। তিনি প্রকাশ করলেন, বাইরের
খোলোয়াড় এনে গ্রামের যে অসম্মান করা হয়েছে তার প্রতিবাদকল্লে তিনি
আমরণ অনশন চালাবেন।
খেলার সকল উত্তেজনা যখন শেম হয়ে গেল, তখন সবাই বুঝতে পারল
নারাণদার সমশ্তা অতি মারাত্মক।
একদিকে আরাকানে মিত্রপক্ষের মংড পরিত্যাগ, বাংলাদেশ বিপজ্জনক
এলাকা ঘোধিত, মাথার উপর মিপ্রপক্ষের ম্পিউ-কায়ার এবং নি-২৯, অন্যদিকে
নারাণপার অনশন ।
দলে দলে লোক গিয়ে তার পাম্ে ধ'রে ক্ষম| চাইতে লাগল, কিন্ধ তিনি
অটল, অবিচলিত।
এক দিন এক দিন ক'রে দশ দিন কেটে গেছে, নারাণদা শুধু সোড। জল
খেয়ে শয্যাসংলগ্ন হয়ে আছেন, কথা বলবার ক্ষমতা নেই অবস্থা এমনই শোচনীয়।
গ্রামের মধ্যে এই উপলক্ষে ষে উত্তেজনার স্থটি হল তা! ক্রমে হড়িয়ে পডল
গ্রাম থেকে গ্রামাস্তরে। শেষে সমস্ত জেলায়। আত্মীয়ম্বজন বন্ধুবাঞ্ধব যে
যেখানে ছিল সবাই একে একে তাঁকে বোঝাতে লাগল নানাভাবে, কিন্ব কোনো
ফলই হল না| বাইরের লোক ঘার! শুনল তারা ঠাট্টা বিদ্রপ করতে লাগল,
লারাণদাকে ভারা কেউ চেনে না।
গ্রামের প্রবীণ লোকেরা বললেন, তুচ্ছ ব্যাপারের জন্য যৃল্যবানজীবন কি
এভাবে নষ্ট করা উচিত? নবীনেরা আবার এসে বলল, আমাদের এবারের
' মতো ক্ষমা ক'রে আমাদের সংশোধনের স্থযোগ দাও নারাণদা, তুমিই যে
আমাদের সব।
নারাণদ৷ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন তাদের দিকে, তারপর মৃদুভাবে
মাথ। নেড়ে জানালেন, হবে না।
ডাক্তার এসে কিছু বলগ্রয়োগের ব্যবস্থা করলেন কিন্তু ব্যর্থ হল তার চেষ্টা ।
নাবাণদার অনশন ল্৩
একটা আদর্শের জন্ত এ রকম মহৎ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত ইতিপূর্বে আমি
আবু নিক্ষের চোখে দেখি নি, কিন্ত কি ক'রে তাকে বাচানো। যায় সে গ্র্থ
আমাকে একটু বেশি রকম চঞ্চল ক'রে তুলল-_আমাএ মনে হল যেন এর জঙ্য
আমিই লব চেয়ে বেশি দায়ী, কারণ আমিই কলকাতা থেকে খেলোম্বাড়দের
এনেছিলাম।
উপায় চিস্তা করতে লাগলাম। এদিকে ঘুদ্ধের দরুন দেশের অবস্থা দ্রুত
শোচনীয় হয়ে উঠছে । একদিকে চলছে বিশ্বযুদ্ধ, অন্যদিকে চলছে সাধারণ
মান্ষের জীবন যুদ্ধ । এর মধ্যেই কতব্য স্থির করতে হবে, নারাণদাকে বাচাতে
হবে। অনশনের বিংশতি দিন অতিবাহিত হতে চলল, আর এক মুহূর্ত দেরি
করা চলবে না।
এমন সময় শোনা গেল কপিলপুরের কাছাকাছি মহকুম! শহরে স্বিখ্যাত
দেশকর্মী সর্বদলপমন্থয়কাবী শ্রীযুক্ত বিশ্বপ্রেম শর্মা এসেছেন দেশের আসন্ন বিপদ
সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে ।
আমি তংক্ষবাৎ ছুটে গেলাম তার কাছে। গিয়ে সব বুঝিয়ে বললাম।
তিনিও উপলব্ধি কপলেন এই মহৎ প্রাণকে তিনি ছাড়া আর কেউ বাঁচাতে
পারবে না। আমি তীকে সঙ্গে করেই নিয়ে এলাম কপিলপুর গ্রামে ।
আশ্চ্ধ ক্ষমতা এই বিশ্বপ্রেম শগ্ার! তিনি তার অলৌকিক ক্ষমতা-বলে
নারাণদাকে সম্মোহিত করতে লাগলেন। তাকে বললেন, দেশের দুর্দিনে
তোমার মতো মহাপ্রাপ ব্যক্তির জকুবি প্রয়োঙ্গন আছে। গ্রামের সীমা
ছাড়িয়ে, জেলার সীমা ছাড়িয়ে, তোম।র কর্মক্ষেত্র পড়ে আছে সমন্ত ভারতবধে।
অল্প পরিসরের মধ্যে তুমি নিঙ্গেকে জানতে পার শি, দাড়ীও এসে সমস্ত
ভারতবর্ষের পটভমিকায়, দেখ শিঙ্ষের বিরাট কূপ অন্গভব কন্ধ তোমার প্রচণ্ড
শক্তি, বিদ্তার কর তোমার দৃষ্টি আসনুদ্রহিমাচলব্যাপী। ওঠ, জাগ, খাও--
বন্দেমা তরমৃ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, আনা হো আকইবব।
মন্ত্রের কাজ হল এ কথায়। লারাণদা শী দুবল হাতখান] তুলে দেখকে
নমস্কার জানালেন
ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন। ভিনি পরীক্ষা ক'বে বললেন, একটু একটু ক'রে
এখন থেকে তরল খান্ত খাইয়ে যেতে হবে, ভাত খেতে মাপ খালেক
লাগবে।
একটু একটু ক'রে নারাণদার হুর্বললতা কাটতে লাগ । আমিও কলকাতা
ফিরে এলাম নিশ্চিন্ত মনে । ইতিমধ্যে আমার কলেঞ্জও খুলে গেছে । ভাবলাম
৮৮৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্গ-গল্প
মাসখানেক পরে গিষে অব গ্রহণের" পর তীর সুস্থ অবস্থাটা একবার গিয়ে দেখে
'আলব।
কিস্ত কলকাতা। ফিরে দুচার দিনের মধ্যে এমন এক ভয়াবহ ব্যাপার দেখতে
হবে তা ভাবতেই পারান। ছুতিক্ষ লেগেছে দেশে । পঞ্চাশের মন্বস্তর।
স্মরণ করিয়ে দেবার দরকার নেই থে সে রকম নিষ্ুর মর্মান্তিক দৃশ্ এই হুর্ভাগা
দেশেও কথনো ঘটেনি । ১৬৩ অগন্টের দাঙ্গায় যে এত বড় হত্যালীলার
অনষ্ঠান ঘটে গেল, তার চেয়ে সেই ছুতিক্ষ-ৃশ্টা শতগুণে বেশি মর্মান্তিক ।
গ্রামের হাঙ্গার হাজার পরিবার শহরের পাষাণে এসে মাথা ঠস্কছে একটু ফেন
খেতে পাবার আশায়। থেতে পায়নি, মরেছে ধীরে ধীরে-একটু একটু
কারে। নীরবে।
এ সব দেখেশুনে মনের মধো একটা বিপ্রব ঘটে গেল। এই বিরাট ব্যাপক
অলহায় মৃত্যুদৃখ্ের কাছে নারণদা তুচ্ছ হয়ে গেলেন। তবু দেশে যেতে হল
অন্তত একদিলের জন্য নিতাস্ত অনিচ্ছ। সত্বেও, কেনন! কঙব্যেব তাগিদ ছিল।
গ্রামে পা দিয়ে দেখি চার দিক ছম ছম করছে। মাগষ নেই। পথে
নিশ্চিন্ত মনে শেয়াল ঘুরে বেডাচ্ছে। গ্রামের মান্তৰ কোথায় গেছে বুঝতে
দেনি হল লা। অনেক্ষণ পরে একটি শীর্ণ লোকের সঙ্গে দেখ!। হাব কাছে
জিজ্ঞাসা করলাম নারাণধার খবব। দে বলপ, তার তো সকার হয়ে গেছে।
স্তম্ভিত হয়ে প্রশ্ব করণাম, ব্যাপার কি? তার কাছে যা জানতে পাখলাম,
তা এই-_
আজই মকালে তিনি লরু চালের ভাত খাবেন এই বকম কথা ছিপ । কিন্তু
গত তিন দিন ধরে চেষ্টা করেও কোথায়ও সঞ্চ চাল সংগ্রহ কগাযায় শি।
চালই নেই কারো ঘরে । "ছুএক মুষ্টি যার ঘরে আছে সে তা ছাডতে বার্গি নয়।
একেই বলে অনুষ্ট, গৌকটি বলতে লাগল, এত চেষ্টা কারে ভাত খাণয়ানোয়
রাজি করা গেল, কিছ্চ অন্ন গ্রহণের দিন দেশে হাহাকার পড়ে গেছে, কারো
ঘরে অন্ন নেই। নারাণদা দেশের এই ছুববস্থার কথা শুনে 'শক' পেয়ে মারা
গেছেন আমরা অতি কষ্টে তার সৎকার করেছি আজ্জ সকালেই ।
শুনে একটি কথাও আর উচ্চারণ করতে পার্লীম না। দীখনিশ্বীন ফেলে
স্টেবনেই ফিরে এলাম ।
(১৯৪৬)
ক্যা হুয়।
পাড়াগায়ে গিয়েছিলাম একদিন । শহর থেকে দূরে, রেল-স্টেশন থেকে আরও
দূরে সেই গ্রাম। জঙ্গলে ভরা । ছু-চার ঘর মানুষ যারা আছে, তারা কোনে
রকমে বেচে আছে মাত্র। তাদের এক-একটা বাড়ি যেন এক-একটা ঝোপ ।
সন্ধ্াবেলা বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, সে গায়ে মানুষ কেউ থাকে না যেন
সব মিলিয়ে মস্ত বড একটা ব্ন।
এমন পাডাগা কে নাদ্দেখেছে? এখন তো! পাঁড়াগা মানেই বন। সব
পলীগ্রামেরই নাম ঝনগ্রাম ।
কিন্তু আমি দেই গাঁয়ে গিয়ে এমন এক অদ্ভুত কাণ্ড দেখেছি, ঘা না দেখলেই
হয়তে! ভাল হহ 1 বিশে একট। কার্জে সেখানে একটা বাড়িতে শিয়ে উঠে-
ছিলাম। বাড়ির একটি লোক তখন সবে ভাত-খাওয়া শেষ করে উঠেছে।
দেখলাম, ওঠবার সময় মে গোটাকত মাছেব কাটা হাতে ক'রে মুখ ধোবার
জায়গা রেখে “তু” বলে ডাকতেই একট। রোগ! কুকুর ছুটে এলো! সেদিকে ।
কিন্ত কি আশ্চধ! কুকুব সেই কাটাষ মুখ দেবীর আগেই একটা মোটা
শেয়াল জঙ্গল থেকে বেরিষে এসে সেই কাট। খেতে লাগল, আর কুকুরটা ভয়ে
(সেখান থেকে সরে এসে কাতর ভাবে তার দিকে চেয়ে রইল ।
একদিন ছিল, ঘখন গাঁয়ের কুকুর দেখলে শেয়াল ৬য় পালিয়ে যেত। এখন
তাদের আব সেপিন সেই । এখন কুকুরের চেয়ে শেয়লের তেঙ্জ বেশি । যারা
পাডাণায়ে থাকে, তাবা এট] শিশ্য় দেখে থাকবে ।
আমার চোখে থ্যাপারটা বড়ই নতুন বণে বোধ হণ। অবাক হয়ে গেলাম
দেখে । অবাক শা হয়ে উপায় কি? বিড়াল যদি ইদ্ুন্র দেখে ভয় পায়, বাথ
ষ্দি হবিণ দেখে ভম পায়, তাহ্খলে অবাক হবে ন| কে?
গায়ের লোকেরা অবশ্য এ ব্যাপাপটা মেনে নিয়েছে। তার] জানে,
কলিক'লে নব উল্টে যাবেই । মান্রষই এখন আর মানুষ নেই, অমানুষ
হয়ে গেছে।
আমি কিন্ত এত বড় অন্ায়ট| চুপ করে মেনে নিতে পারলাম ন|। প্রথমে
হঠাৎ মনে হয়েছিল, ভূল দেখছি ন|তো? তারপর ভাল ক'রে লক্ষ্য ক'রে
দেখলাম, তুশ নয়; ঠিকই দেখছি । খুব রাগ হল শেয়ালের উপর । কাছেই
একথানা লাঠি পড়ে ছিল, ঘেইখানা! হাতে লিয়ে গেলাম এগিয়ে শেয়াঙের দিকে ।
৬৬ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
শেয়াল এর মধো খাওয়া! শেষ ক'রে ফেলেছে । সামান্ত কখানা কাটা এক
মিনিট ৪ লাগে না খেছত।
আমাকে দেখে শেয়াল বঙ্গে উঠল, “মারবে নাকি ?”
চমকে উঠলাম তার মুখে মান্বষের কথা শুনে । হাত থেকে লাঠি আপনা
হতেই পড়ে গেল, কিন্ধু তখনই ভেবে দেখলাম, চমকালে চলবে না এখন,
শেয়ালেন সঙ্গে আলাপ কারেই দেখা যাক কিব্যাপার। বললাম, “শা মারব
না, কিন্ধ মামাকে জানতে হবে তুণ্মি কে, এবং কুকুর তোমাকে দেখে ভয় পায়
কেন ।?
শেয়াল বগল, প্জানাভে চাও আপত্তি নেই, কিন্ত এখানে কিছুই বলব না ।
আমার সঙ্গে আমার রাঙ্গো চল, তাহ'লেই সব জানতে পারবে। ভয় নেই,
রাজা দূরে নয়, এউ জঙ্গলের ভিতরেই |”
বললাম, “চল |”
আঙগলের ভিতর নানা রকমের কীটাঁ-গা্, বেতের ঝাড়, বীশ-ঝাড, আরও
কত রকম ছোট বড় গাছ। ঠেলেঠলে চলতে চলতে ক্লামা ছিড়ে গেল,
হাত-পা ছছে গিয়ে রক্ত ঝবতে লাগল ।
আমীদেপ সাড়া পেয়ে অনেক শেয়ালের মাথা জ্ষেগে উঠল গর্তের ভিতর
থেকে, কিন্ঠ আমি শেয়ালের সঙ্গে আহি দেখে আনান ভাঙা অদৃশ্য হযে গেল।
বোঝ গেল, যার লঙ্গে এসছি, সে এদের মোড়ল।
মোডল আমাকে একখানা কাঠ দেখিয়ে বলল, “বম এখানে 1” আারপব
জিজ্ঞাসা করল, "তুমি কি জানতে চাও, বল।”
আমি আমার আগের প্রশ্বটাই দিজ্ঞাসা করলাম ।
মোডল লেঞ্জটা একটু “চুলকিয়ে নিয়ে ব্লল, “দেশী কুকুর আমরা পছন্দ
করি না।”
আমি দ্িজ্ঞসা করল।ম, "কেন? এখন তো আমরা স্বাধীন হয়েনি, এখন
তো বিদেশী বর্জন আর স্বদেশী-গ্রহণই আমাদের নীতি হওয়া উচিত। এখন
বিদেশী কুকুর তাড়িয়ে দেশী কুকুরকে আদর করব |”
মোড়ল বলল, “দেশী কুকুর মব ক্রীতদাস, ওরা অতি ইতর, একমুঠো খাছের
জন্য 'মনিবের্ব পা চাটে ।৮
আমি বললাম, “কেন বিলিতি কুকুরও তো তাই ।”
মোড়ল বলল, "ঠিক তা নয়। বিন্লতি কুকুর হচ্ছে জমিদার । তাঁকে
কিছুই করতে হয় না, মে বসে বসে অন্যের উপার্জনের অংশ ভোগ করে।”
ক্যা হয়! ৮৭
আমি বললাম, “তাহ'লে তো সব কুকুরই খারাপ । আর তা যদি হয়, তবে
দেশী কুকুরকে এরূপ শান্তি দিচ্ছ কেন ?”
মোডল শেয়াল আমার মুখের দিকে চেয়ে মুহু স্ব হীসতে লাগল । শেষে
বলল, “শাস্তি দিচ্ছি কেন মতা যদি শুনতে চাও, তাহ'লে বলি, রেগে! না
শুনে। এই কুকুরগুলো লেহাঙ বাঁড়ালী কুকুর বলেই__»
কথাটা শেষ হবার আগেই আমি দপ ক'রে জলে উঠলাম। চিত্কার ক'রে
বললাম, “চোপরাও, হতভাগা”_লাঠির ঘায়ে মাথা গুড়ো ক'রে দেব_তুমি
বাঙালীকে ঘ্বণা কর”--ব'লে একথান। শুকনো ভাল হাতে তুলে নিলাম।
মোডল আমাব হাতে লাঠি দেখে চি.কার কারে উঠল, “ক্যা হা”
সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গলের সকল দিক থেকে 'ক্যা-ক্যা হুয়া” ধ্বনিত হয়ে উঠল।
বেরিয়ে এলো প্রায় দুশো শেয়াল।
মোডল বলল, “লাঠি নামী ও, দেখছ না আমাদের একতা ?”
ন| দেখে উপাঘ ছিল না। দেখলাম এবং মুগ্ধ হলাম। বললাম, “এই
একতা তোমাদের কি ক'রে হল ?”
মোৌডল ব্লল, "আমাদের ভাষা লক্ষ্য করছ না? কা হুমা কোন্
ভাষা ?
প্রশ্ন শুনেই সব পপ্রিক্ষান্ন হযে গেল । এবা সবাই রাস ভাষায় কথা বলে,
শ্বাদীন ভাতে গুদের একতাও যেমশ পত্া, জোখও তেমন সত])। জিজ্ঞাসা
করলাম, “তাহ'লে বাগালী শেঘ়াল বলে কেউ নেই?”
মোড়ল হেসে বলল, “আছে দু'চারতে। দেখবে তাঁদের? কিন্ তানা
আমাদের দেখে একট শয় পাম্ব। পড়ে আছে এদিকে কয়েকটা, তুমি
এপিকটায় গেলেই ভাদেব দেখতে প।বে।”
আমি এগিয়ে গেলাম সেদিকে । দেখি ওদেব সবাই বপে বসে আড্ডা
মারছে । আমাকে দেখেই বলে উগল, “কি হল কি হল -”
একেবারে 'কা হয়ার বাঙল।। বুঝলাম বাঠালী শেয়াল বটে। তবু
জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমবাই কি বাঙালী শেরল ?”
আমার কথা শুনে ওরা তো মহা খাগ্লা। একজন দীত বের করে ব্লল,
“শেম্বাল বলছ কাকে 7?”
বুঝলাম শেয়াল বলতে ছুঃখ পেয়েছে বোধ হয়। শেয়াল তো তাচ্ছিল্যের
ভাষা, তাই শুধরে লিয়ে বললাম, “বাডালী শৃগাল ?”
শৃগাল' শুনে ওরা খুব খুশি হল। বলল, “হা, এমনি সম্মান রেখে কথা
৮৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ ব্যজ-গল্প
বলবে। কিন্তু লেখার সময় শুগাল” লিখ না, লিখবে 'ভ্রীগাল'। এই 'ভ্ীগাল'ও
বেশিদিন থাকবে না, বোধ হয় 'গালগ্রী' নামটাই আমরা চালাব।”
জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন?”
একজন বলল, "তোমরা! অনগ্রী বঙ্গ, রঙ্গশ্রী করতে পার, আমরা গালশ্রী
করব না কেন? আমরাও বাঙালী-_অন্গুকরণ করাই আমাদের স্বভাব ।”
আমি বললাম, “ভুলে গিয়েছিলাম ধে তোমরা! বাঙালী শেয়াল ।”
সঙ্গে সঙ্গে একজন ব'লে উঠল, “আবার ভূল করছ? শেয়াল নয়__
শৃগাল।
আর একজন বলল, “যাও যাও, এখন বিরক্ত ক'রে না, আমরা এখন শুয়ে
প্রয়ে একটু লেজ নাড়ব, তোমার সঙ্গে বকতে ভাল লাগছে না।
আমারও আর ওথানে থাকতে ভাল ল।গছিল না । ওখান থেকে একেবারে
সোজা বেরিয়ে এলাম বাইরে । মনটা বড় খারাপ হয়ে গেল, কারণ মনে হল
যেন আড্ডাবাজ নিষ্বর্সা বাঙালী মান্ভষেরই চেহারা দেখলাম ওদের মধ্যে ।
এমন সময় সমস্ত বন ধ্বনিত ক'রে রব উঠল, “ক্যা হুয়া ।,
মনে মনে বললাম, “নতুন আর কি হবে? যা হবার, তা বু আগে থেকেই
হয়ে আছে !”
(১৯৪২)
আধাভোৌতিক
যুদ্ধের সময় যখন জাপানী বোমার ভয়ে কলকাতা৷ শহরের অর্ধেক লোক
ভঙ্বে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই সময়ের একটি কাহিনী ।
আমিও তখন জনগণকে অন্তসরণ ক'বে পরিবারবর্গ বাইরে পাঠিয়ে বাড়িতে
একা! আছি এবং উদ্দাস মনে অবসর সময়ে স্পিরিচুয়ালিজম অধায়ন করছি।
মান্্ষের মৃত্যুর পর তাব স্থম্ম আত্মা কি ভাবে আমাদের কাছে মূর্ত হয়ে ওঠে
সেই সব কথ| যতই পড়ছি ততই আমার সময়ের ওজন কমে যাচ্ছে, একাকিত্বের
অস্থবিধাও বিশেষ অনুভব করছি না। তবে রাত্রে মাঝে মাঝে কেমন যেন
গ| ছম ছম ক'রে ওঠে। বাড়িতে পুরুষ ব্যক্তি আরও ছু একজন যাবা আছে
তারা ব:কনিষ্ঠ বলে তাদের কাছে এ সম্পর্কে একটি কথাও প্রকাশ করিনি,
কারণ একটা নিিষ্ট বয়সেব আগে শ্পিবিচুযালিঙ্গমে কাঁপও বিশ্বাস আসে না
নলেই আমার বিশ্বাস ।
মানুষের স্ম্ম আত্মা মাশ্ষেবই মাতো দেখতেন, কিন্তু থেন একটি খোসা, শশাদ
নেই, একটি আম্মিক খোসা, ধরা ছোধা যার না, কিছ দেখ। যায়। এরই
নাম হচ্তে এক্টোপ্রাম | এই কুক দেহতৰ যে শুধু আমি চচা করেছি
ভাই শয, বন্ধু বাদ্ধবদের কাছেও এব কিছু কিছু ব্যাখ্যা কবছি। কিন্ত দুঃখের
ব্ষিয়, তাদের ঠিক মতো! বোঝাতে পারছি না। তাবা তাদেব প্রতাক্ষ স্থুল
দেহ নিঘেই ব্যস্শ, »ল্ম দেহ ন্ঘিযে তাঁদের কিছুমান আাগত দেখা যায না।
এমনি অবস্থাঘ্স উদ্ব কলকাঠ| বাসী "আমার কাছে এলে! এক চিঠি,
বালিগঞ্জ থেকে । এক বঙ্গ লিখেছে, হণ বাড়িতে নাকি এক শৌতিক কাণ্ড
ঘটেছে, ভাখই ব্যাখা । সে আমাব কাছে শুনতে চায়।
বলা বাহুপা, সেই দিনই সন্ধায আমি সেখানে গিষে হাজিণ হলাম ।
ক।লট।" ছিপ কালবোখেখীব। আমি যাবাপ প্রান সঙ্গে সঙ্গেই ঝড় বৃষ্টি
শুরু হল। ধরেই শিলাম সাতটা ওখানেই বাট] হবে। বন্দু অবস্থা বুঝে
ঠাকুরকে খিচডিব আদেশ দিলেন । আরও শাল লাগল। কেবল ভয় হচ্ছিল
বুষ্টিটা হঠাৎ থেমে ন। ঘায়।
নাবৃদ্ি খামবে না। হাওযাপ বেগ বেশ প্রণ্ল। রষ্টির নর্মণও খুব
জোরালো |--এমনি অবস্থায় মন অকারণ একটা আনন্দ মিশ্রিত বেদশায় ভারী
হয়ে ওঠে। এই উপলক্ষে কোনো মনন্তত্ব প্রচার করব না কিন্ক এই অতি
৯৩ পরিমল গোন্বামীব শ্রেষ্ঠ ব্যঙগ-গল্প
পরিচিত কথাটির পুনপ্লানুত্তি ক'রে একনার মাত্র বলে রাখি থে এই রকম বর্ধামুখর
আবহাওয়ায় বহু সত্য মিথ্যা, এবং বনু মিথ্যা সত্যের ব্ূপ ধরে অতি সহজেই ।
একট! বিমূড ভাব মনের মধ্যে তখন সত্যই জেগেছিল। ভয় হল এই ষে,
বন্ধু এট রকম আবন্াওয়ার প্রভাবে তার ভৌতিক অভিজ্ঞহার কাহিনীতে
অকারণ রহন্তেব রং চড়িয়ে অতিন্রিক্ত বাড়িয়ে না ফেলে। বন্ধু বলল, শোন।
কিন্ত ঠিক এমনি সায় পাার আর এক ভদ্রলোক রেন-কোঁটে গা ঢেকে
এসে হাজির হলন সেখানে । সময্ন কারোই কাটছে না। সবাই পরিবার
বাইরে পাঠিয়ে হাস্কা হয়ে বলে আছে, জাপানী] ডায়মণ্ড হারবারে এসে নামলেই
“একল| চল রে? গাইতে গাইতে শিশ্চিন্ত মানে পালিয়ে যাওয়া যাবে।
মাগন্মকের সঙ্গে পরিচয় হল, নাম প্রচুন্নবাবু, বেশ আলাগী এবং অমায়িক।
আমরা ছুঙ্জান তখন বন্ধুর ভৌতিক কাহিনী শোনার জন্যে প্রপ্তত হলাম।
জমে বমলাম সবাই কাছাকাছি ।
বন্ধু বলতে লাগল, গভীর বাত্রে ঘুমের মধ্যে কে তার গলা টিপে ধরেছিল ।
পেস্পই অন্থভব করেছে তারম্পর্শ। চিংকার ক'ণে উঠেছ “কে কো বলে।
ছেগে দেখে জানালা খোলা । খরে কেউ নেই। কাপতে কীপতে উঠে
আলো জোলে (দেখে দলা বদ্দই আছে। তার স্পগ মনে আছে শোবাৰ আগে
জানালা বন্ধ কারে শুগেছিল বৃষ্টির ছাট আপণে ভযে। এই অদ্ভুত ব্যাপার্টির
কোনো অর্থই সে বুঝতে পাপণ্ছ না। সেই থেকে সমন্স বান আলো জেলে
শুঙ্ছে এবং তবু ভাল কারে ঘুমোতে পারছে না, কি জাশি কখন কে এসে গলা
টিপে ধরবে ।
আমরা মনোযোগ দিয়ে খুনলাম সব। কিন্তু ভূতেব সঙ্গে এব কোনো!
সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হুল শা। মনে হল ওটা শুধু একট স্বপ্রের
ব্যাপার । এবং অত লাধাপ্রণ ঘটশা, আনেকেবই এ রকম হয়ে থাকে । জানালা
হাওয়াতে খুলে যায়৷ বিচ শয়। তাছাড়া স্ুপ্প দেহ কারো কোনে অনিষ্ট
এ ভাবে করে না।
প্রঞ্ুল্লবাবু তো এ কাহিনী এক কথাম্ব হেসে উভিয়ে পিলেন। বন্ধু তাতে
একটু নিরাশ হলেও মলে মনে হয় তো আরামই অন্থভব কবল। আমিও
নিরাশ হলাস কম শয়। কারণ সুশ্ম দেহতব্ব শু বইতেই পড়ে আলছি, এ সন্ধন্ধে
নিজের কোনো অভিজ্ঞতা লাভ হয়নি, তাই আশা কগেছিলাম বন্ধুর
অভিজ্ঞভাটাও যর্দি তা কোনো এক্টোপ্রাঙ্মম সম্পর্কে হত তা হ'লে অবিলম্বে
স্ুক্ব দেহের অস্তিত্বে বিশ্বানীর সংখ্যা অনেক বাড়িঘ্বে শিতে পাঁরতাম।
আধাভৌতিক ৯১
প্রকুল্লবাবু বললেন, "ভূতের কাহিনী শোনবাব জন্য প্রস্তত হয়ে আসিনি,
তাই হঠাৎ তোমার ভূতের গল্পে আমি একটু ঘাবডে গিয়েছিলাম । কারণ
আনতভাম এ অভিজ্ঞতা সহজে কারো হয় না। কিন্তু আনরটা যখন ভূত গল্প
পলক্ষেই বসেছে তখন আমার একটা গল্প শুনতে পার ।”
"এ অতি উত্তম প্রস্তাব,” বসে আমি আমার মন থেকে সমস্ত নৈরাশ্য এক
মৃহর্তে ঝেডে ফেলে দিলাম। বুঝতে পারলাম এইবার ঠিক জমবে।
প্রফু্রবাবুকে দেখেই মনে হয়েছিল নিশ্চম্ ইনি শিল্পীপোক, তারপৰ কথা শুনে
বুঝেছিলাম ইনি পাকা শিলী। অতএব আবান জমে বসলাম তীপ্র কাহনী
শোনার জন্য ৷
প্রফৃল্নবাবু বলতে লাগলেন, “সে আজ সাত বছৰ আগেকার কথা।
কাঁলিঘাটের একট বাড়িতে থাকি । বি-এপাঁপ কবেছি সেই বহবেই। সে
এমন একটা বয়ন যখন ভূত দৃবেব কথা, বিশ্বান কোনে। বস্ততেই থাকে শা।
সকল শ্রদ্ধে্ন বস্ত্র এবং বিশ্বীনকে তর্কে আোবে উডিষে দিয়ে তখন একটা
দাসিত্বীন এলোমেলে। ভাগয়ার মতো ছটে বেডানোব অবস্থা । অথচ ঠিক
সেই সময়েই আমাকে ভতে বিশ্বান কৰতে হল। একেই বলে অথৃষ্টেগ
পর্িহান।
“এর কিছুদিন আগে থেকেই মনের নব্য একটি। অহেতুক আম্মিক স্মীতি
অগ্চভব করছিলাম, একট। লক্ষাহীন বপ্ত "ন্নহীন উচ্ছ্বাপ। মাগষেদ মতো
চেহাবা অথচ অবাস্তব, ছায়ার মতো দেখ! দেয় ঘাবাব মিলিয়ে যায, তাকেই
বল! হম ভূত ঝ| উচ্দ্বীন। এই ভৃত কেমন কাণে মামাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে
ধরল, শোন |?
মাত্র এইট্ুকু শুনেই আমি বুঝতে পারলাম প্রফুলবাবু একট োপাক্সম- এব
দ্বম্মকথ। থেকে শুক কনেতছন । মিথা। ঘাডমটকানো ভীতির গল্প শিনে শুনে
অতিঠ হয়ছি এতকাল, তাই আজ ঘথার্থ একট গুক্মাম্মা কাঠিনী শপ ভতেই
আমীর মন খুব আশান্বিত হয়ে উঠপ, মনে মনে শিছের সো হাগাকেই ধগ্তবাদ
দিলাম ।
প্রফুন্নবার্ বলতে লাগলেন, “একদিন সন্ধার পর ঘরে বসে দর বন্ধ ক'গে
একখানা বইতে জোর ক'বে মন বসাবার চেষ্টা করছিলাম । কিন্ত বইয়ের ফ্বকে
ফীকে মেদিনও বাইনেব জগতের এক এলোমেলো হাওয়া প্রবেশ কারে আমার
সমস্ত মনেযোগ নষ্ট ক'রে দ্িল। নে এক অতি রোমাঞ্চকর হাপয়া। সে
হাওয়ায় কখনও তীত্র বেদনা, কখনও তীত্র আনন্দ। যেন আমারই পাশে
৯২ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
কোনো অশরীরী মৃতি এসে দীড়িয়েছে, যেন সে আমারই মনের প্রতিফলিত এক
মৃত্তি। তাকে দেখা যায় না, তাকে স্পর্শ করা যায় না, কিন্তু তার আবির্ভাব
আমার সমস্য সত্তা দিয়ে আমি অন্তভব করি, তার গায়ের একটা! স্থম্িপ্ধ গদ্ধ সমস্ত
ঘরকে উতলা ক'রে তোলে । দিনের পর দিন চলেছে এই পাগল করা অদৃষ্ঠ
মৃত্তির আবির্ভীব। তাই সেদিন ভেবেছিলাম এই প্রভাব যেন ক'রে হোক
কাটাতে হবে। ভেবেছিলাম সমস্ত মনোযোগ ঘনীভূত করব বইয়ের পাতায়,
বইয়ের কথার মধ্যে একেবারে ডূবে যাব। কিন্তু হল না। আমার মন আমার
আয়ন্ডের বাইরে চলে গেছে।
"আমি যে সেই অশনীরীর প্রভাব কাটাতে পারলাম না তাই নয়, সে দ্বিণ
সেই অভূতি আরও বেশি প্রনল হয়ে উঠল। আমিন্তভ্তিত হয়ে চেয়ে দেখি
সেআর অশরীরা নয়, স্পষ্ট রূপ গ্রহণ ক'রে আমার সম্মুধে দীড়িয়ে। সে
মামাকে ইঙ্গিত করছে বেরিয়ে যেতে । মামার সমস্ত চিন্তাশক্তি তখন লুপ্ত,
আমি মন্ধ্ের মতো, মন্মুগ্ধের মতো তাকে অন্গপরণ করলাম । কতক্ষণ অনুসরণ
করেছি মনে নেই, সেও কখন দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে জাণি ন| কিন্ত যখন
খেয়াল হল ভখন দেখি পথের ধারে একট। আলোর কাছে একটা বাডিৰ বকে বসে
আছি লন্মুশেব বাড়িটির দিকে চেয়ে। লগ্িতভাবে পেখান থেকে উঠে
পডলাম। নিজেকেই বার বার প্রশ্ন করলাম, এর মানে কি?
“কিন্ত আমার বুদ্ধি নীরব | উদাসশাঁবে বাটিতে ফিরে দেখি অন্তত একটি
ঘটা সেইথানে কাটিয়েছি । বুঝতে পারলাম একটি বিপদ দাশয়ে আপছে।
যথে্ মতর্ক হলাম, কিন্তু সব ব্রথা কারণ সে আমাঁব সমণ্ত স্সাখুন পিয়্রণ কেন্দে
আঘাত হেনেছে, মণ্তিষ্ষের ধূমৰ কেন্দ্রকে দখল করেছে | এপ পর থেকে তাই
নে প্রতিদিন আমাকে ঘরছাড়া করতে লাগশ অতি পক্জান্গনকভাবে, অতি
অভদ্রভাবে।”
প্রচুল্নবাণ্ একট গানি থেমে চোখ বুজলেন। মনে হল তিশি ক্ষণকালের
জন্য লেই রোমাঞ্চকর স্মত্তির মধো একটু খাঁশি ডুব দিয়ে নিচ্ছেন । বাইরে
বৃপ্টি ঝরছে, নিচে থেকে আসছে খিচুড়ির গদ্ধ। এই উদ্দাস করা শব্দ আর গন্দের
পরিবেশে প্রফুল্লবাবুর গু আমাদেরও মনকে আচ্ফরন্ন ক'রে ফেলতে লাগল।
আমি প্রায় আপন মনেই বললাম, “এ তো স্পষ্ট এক্টৌপ্লাঙ্মম-এর ব্যাপার |”
জিজ্ঞাস করলাম “তারপর ?”
প্রফুল্লবাবু যেন তন্ত্রা থেকে জেগে উদ্দে বললেন, “তারপর ?_-তারপর
অবস্থা আরও খারাপ। আমার জীবনে সে দিন প্রথম অধংপতনের অন্থভূতি।
আধাভৌতিক ৯৩
মনের আচ্ছন্ন অবস্থায় ঘা করি-__আচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গেলে তখন বুঝতে পাৰি
কিকরছি। অথচ বাইবে থেকে দেখতে গেলে আমিই তো দায়ী আমীর সব
কাজের জন্য? কিন্তু একথা আমি কাকে বোঝাব? খুলেই বলি, একদিন
আবিষ্কার করলাম বেল! দশটার সমমম আমি মেয়েদের কলেজের সম্মুখে বমে
আছি! এক বন্ধুর ডাকে সেদিন আমার খেয়াল হল। বুঝলাম এক গুরুতর
সঙ্কটের দিকে ছুটে চলেছি। এর পরিণাম অতি ভয়ঙ্কর হতে বাধা । মনে
করবেন না যে এটি এক দিনেব একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা । আমি বুঝতে পারলাম
তিনমাপ ধরে আমি এই একই ঘটলার পুনবাবৃত্তি কবে চলেছি । কখনও দেখি
আমি লেই বাড়িটির সম্মুখে, আবার কখনও দেখি সেই কলেজের সম্মুখে হা ক'রে
চেয়ে আছি। এ কথা না পাপূলাম আমি কাউকে বলতে, না পাবলাম এই মোহ
থেকে নিজেকে মুক্ত করতে । বুঝতেই পারছেন আমি মনের দিক দিয়ে এবং
দ্রেহের দিক পিয়ে কি বকম বিপষন্ত হযে পডলাম অল্পদিনের মধ্যেই |”
প্রফুলধাবু আবাব একটুখাশি থামলেন।
আমি বলিলাম, “থামবেশ না প্রফুলবাবু, আমি পরে সব ব্যাখ্যা ক'রে দেব-
এ বিশু এক্টোপ্রাজম-এব্ বাঁপাখ।”
প্রফুপনবাঁবু বললেন, “স বোধ হয় আপনি পাপবেন ন। | কাবণ গো 2 থেকে
এই চগ্প দেভ একটা অশ্ডব্যক্কিৰ ধারা অনুসরণ ক'রে ৯লেছে। আপৃশ্টা অগভৃতি
এ'মশ দৃশ্য হয়েছে অথচ তা এখনও সম্পূর্ণ অনাশ্তব। কিন্ক তান আগে আমা৭
দিকটা একটু দেখুন। কারণ এব পণ শিদের্ই সঙ্গে আমার এক জীবন-মব্ণ
লডাই শুক ভুল, প্রতিজ্ঞা কবলাম হয সে ক্ষিতবে আব না হয় আমি দিতব,
এভাবে টানাটানিব্ অবস্থা কিছুতেই আর বেশিদিন চলতে দে ওয়া দিক ময়।
কিন্ত হায়, আজও 'মামি মুক্তি পাইনি পুপোপৃত্ি 1”
আমি বললাম “বলেন কি! মানে, এখনও সে আপনাকে আঙ্ছর্্
করে রেখেছে ??
“এখন ন। এবং এই মুহূর্তে ও 1”
কথাটা শুনে ভয্মে আমার সকল গ! কণ্টকিত হয়ে উঠল। প্রদ্ুল্বাবু তা
হলে এক্টোপ্লাজম্ ত্রদ্ধই আমাদের কাছে ঝস আছেন! কি ভয়াশক কথ|।
প্রফুল্লবাবুর দ্রিকে লবিস্ময়ে সভয়ে চেয়ে রইলাম। ক্রমে মনে হল*যেন ঝি
নিজেই ভূতের জগৎ থেকে সগ্চ নেমে এসেছেন আমাদের সম্মথে। হয় তো
সবটাই ভৌতিক ব্যাপার। হয় তো প্রফুলবাবু স্বয়ং এক্োপ্রাঙ্গম। আমি বার
বার তার মাথ! থেকে পা পধন্ত লক্ষ্য করতে লাগলাম কোথাও কোন হচ্ছ অংশ
৪৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাঙগ-গল্প
আাছে কি না দেখতে । আমার হাত পানের জোর কমে এলো, কথাও বলতে
পারলাম না একটি।
ইতিমধ্যে আমার বন্ধু তাকে জিজ্ঞাসা করল, “কি ব্যাপার বল তো?
কিছুই তে বুঝতে পারছি ন| ?"
্রচুল্নবাবু বললেন, “সব বলতে গেলে যে আমার জীবন ইতিহাদের একটি
গোপনীয় অধ্যায় প্রকাশ করতে হয় ।”
"তা হোক, কিন্ত এখানে কোনো! মতেই গন্প থামতে পারে না।”
্রচুল্লবাবু একটু ইতত্ততঃ ক'রে শেব বললেন “আচ্ছা শোন। কথাটা হচ্ছে
এই যে ভূতের রাজ্যে ও দেওয়া-নে ওয়! সম্পর্ক আছে, নইলে শুধু দিতে হলে কেউ,
বাচত না। অর্থাৎ থে পরিচয়হীন আকর্ষণ ছিল অপু আমারই দিকে, মেই
আকর্ষণকে অনেক অর্থ এবং কৌশল ব্যয়ে অপর দিকেও বিস্তার ক'রে দিলাম।
আমার মনের বল এতক্ষণে অনেকটা ফিরে এসেছে । আমি এইখানে একটি
কথা না বলে থাকতে পারলাম ন|। বললাম, “এক্টোপ্লাজম সম্পর্কে এ একটা
সম্পূর্ণ নতুন আবিফার যে পয়সা খরচ ক'পে তার প্রভাবকে নিউদ্রালাইজ করা!
ধায়! আমি কিন্ত কোথায়ও এ রকম পাইশি। আপনি কি স্পিরিচুয়ালিস্টদের
কাছে খবরটা পাঠিয়েছেন ?-”
"না, পাঠাবার দরকার হয়নি ।” প্রফুল্লবাবু বললেন ।
'এক্টোপ্লাঙ্গম যে আকধণে আপনাকে টানছে, পয়সা খরচ ক'রে তাকে
আপনি টানতে পারলেন, এটা কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে আমার কাছে অসম্ভব
বলেই মনে হম্ম_-ওটা আ ত্বক খোসা কি লা টানাটালিট। ওকে শিয়ে ঠিক”
বন্ধু অধীর ভাবে বলে উঠল, “ওসব কথা থাক, আর রহস্য বাড়িও না,
কি করলে খুলে ব্ল।”
আমাদের সকল উংসাহ্ের বেলুনে পিন ফুটিয়ে, সকল এক্টোপ্লাঙ্ষম ভেঙে
দিয়ে, খিচুড়ির স্বাদ বিস্বা্দ ক'রে, বর্ষারাত্রির সমস্ত রহহ্যটি নষ্ট কবরে দিযে
প্রচু্নবাবু সংক্ষেপে বললেন, “তাঁকে বিয়ে করলাম ।”
বন্ধু ক্ষিপ্তবৎ চিৎকার ক'রে বলে উঠল, “এ কি ব্যাপার?” একটা প্রেমেৰ
গল্পকে ভূতের গল্প বলে চালাচ্ছিলে ?”
-প্রছুল্লবাবু বললেন “আমার কাছে ও দুটো একই।”
(১৪৭৪৬ )
সবত্যুভয়
জীবনটাকে অতি সহজ ভাবেই লইয়াছি। শ্বধা অনুভব করিলে প্রচুর আহার
করি, হানি পাইলে হাসি, কান্না অনিবাধ হইলে প্রাণ খুলিয়া কীদি। অবশ্ত,
ইহা ছাড়া আরও ঘটনা! আছে।
কিন্তু অন্য কিছু বলিবাব পূর্বে আমার বিছু পরিচয় দেওযা আবশ্যক ।
গত পীচ বসবে আমার তিনটি স্ত্রী মারা গিগ্লাছে। মৃত্যু সবদদাই হুঃখের,
কিন্ত তৎসব্বেও সখের বিষম এই যে বিবাহগুলি একসঙ্গে করি নাই, পর পর
করিয়াছি । তাহা ছাড়া আর একটি সাস্বনার কারণ ঘটিয়াছিল এই ঘষে
ব্ছ-মুত্যাজনিত দুংখ দূর কবিবাব জন্য আমি কালবিলম্ব ন! কিয়া চতুর্থবার
বিবাহ করিবার জন্য উদ্য ত হইয়াছিলাম ।
এইখানে বুদ্ধদেব সম্বন্ধে একটি অবাস্তর কথা বলিতে হইল | বুদ্ধদেব জরা
মৃত্যু প্রভৃতি মানবজীবনের যাবতীয় অভিসম্পাত যৌবন বয়মে হঠাৎ দেখিয়া
সংসার ত্যাগ করিয়াছিলেন, ইহা আধুনিক পণ্ডিতেরা খ্বীকাৰ করেন না।
তাহাদের মত এই যে বুদ্ধদেব বহু পূর্ব হইতেই এই সব দেখিয়াছেন, এবং মাঠ
যে জরাগ্রন্ত হয় অথবা তাহার ঘে মৃত্যু হয় ইহা বাল্যকাল হইতেই জানিতেন।
পণ্ডিতদের এই মতটি প্রতিবাদঘোগা, কারণ বহুদিন ধরিযা! দেখা ও জানা
সত্বেও মানুষ সত্য করিয়া একপিনই মাত্র দেখিতে ও জাশিতে পায়। স"সার
ত্যাগ করিতে হইলে সেই দিনই করা উচিত
নিজের গৃহে ধারাবাহিক মৃত্যু দশনের সমসাময়িক কালে আমি আম'র
বাড়ির পাশে এমন অনেক ঘটনা অগঠিত হইতে দেখিয়াছি যাহাতে আমার
মনে বহু পরেই বৈরাগ্য উদয় হওয়া! উঠিত ছিল। এক ভদ্দরলেক তাহার
স্ীকে অকারণ নিুরভাবে প্রহীর করিতেন, ইহ] দেখিয়াছি, সেই শী শেষে
বিষপানে আত্মহত্যা করিয়াছেন, ইহা দেখিয়াছি, সেই ভদ্রলোক পরে এক
বালিকাকে বিবাহ করিয়াছেন, ইহা দেখিয়াছি , সর্বশেষে দেখিয়াছি সেই
বালিকাকে, সর্ব-আভরণহীনা বিধবার বেশে | এই লব দেখিয়াও আমার মলে
কোনও চাঞ্চলা উপস্থিত হয় নাই, কাঙণ চোখের দেখার সঙ্গে তা উপলকির
সম্পর্ক সব লময়ে ঘনিষ্ঠ নহে।
শেষ পর্ধস্ত সত্য আমার মনেও উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। কাহারও মৃত্যুতে
নহে, কাহারও নিঠুরতাদ নহে, বিবাহ ভাড়িয়া যাওয়াতে । আমি চতুর্থবারের
৯৬ পত্ধিমল গোস্বার্ষীর শ্রেঠ বাজ-গল্প
জন্য ঘে উদ্ভোগ করিতেছিলাম তাহার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হইল না। বিপক্ষের
লোকেরা প্রচার করিল আমি স্ত্রীতৃক। বিপক্ষদলে হয়তো কোনও তৃক্তভোগীর
আবির্ভাব ঘটিয়াছিল। প্রমাণ হইল যাহার ভাগ্যে তিনটি স্ত্রী অস্থায়ী হইম্সাছে,
চতুর্থ স্ত্রীর স্থাস্সিব তাহার ভাগ্যে কখনই লাভ হইতে পারে না।
হঠাৎ মৃত্যু আমার চোখে ভয়ঙ্কর হইয়া দেখা দিল। তিনটি স্ত্রীর মৃত্যু
একসঙ্গে বীজগণিতের ত্রিশক্তি-বীতিকেও অতিক্রম করিম্না প্রবল শক্তিতে
আমার বুকে চাপিয়া বসিল। প্রথম স্ত্রীর কথা মনে পড়িল। তাহার মহিত
কথা হইয়াছিল মে আমাকে চিরদিন ভালবাসিবে--আমি তাহাকে চিরদিন
ভালবাসিব। দ্বিতীয় স্ত্রীর কথ মনে পডিল। তাহার সঙ্গেও ঠিক এ কথাই
হইয়াছিল। তৃতীয় স্ত্রীর কথা মনে পড়িল। তাহার সঙ্গেও দেখি এ একই
কথা হইয়াছে ।
তখন বাত্রি বারোটা । ছট্ফটু করিতে করিতে ঘর হইতে বাহির হইয়া
গেলাম । শহরের প্রান্তে প্রকাণ্ড মাঠ। মাঠের চারিদিকের আমবাগান
টাদের আলোয় মহা বৃহস্থাপূর্ণ নিবিভ অরণ্যের মতো৷ বোধ হইতেছিল। তাহারই
এক প্রান্তে গিয়া ইয়া পড়িলাম। মানসিক এবং দৈহিক উত্তীপে মাঠের
হাওয়! বড়ই তৃপ্টিকর বলিয়া বোধ হইল, কিন্য মন হইতে দার্শনিক চিন্তান্সোত
রোধ করিতে পারিলাম না।
এইখানে বলা আবশ্ঠটক যে আমি জীবনে কখনও থিয়েটাঁব কবি শাই ।
দেখিয়াছিও অত্যন্ত কম। কারণ থিয়েটার মাত্রেই কেহ-নাকেহ স্বগতোক্তি
করে, এবং এই স্বগতোক্তি আমার কাছে অত্যন্ত আপত্তিলনক বোধ হয়।
কথাট। বলিতেছি এই জন্য ঘে সেদিন রাত্রি বারোটাম় টাদের আলোয় চিৎ হইয়া
শুইয়া আমি স্বয়ং শ্বগতোক্তি আরম্ভ করিয়াছিলাম। এখন বুঝিয়াছি স্বগতোক্তি
আসলে স্বতোক্কি, রসনা হইতে স্বতই স্থলিত হইতে থাকে: নাট্যকার
নিরপরাধ । ৃ
সেদিন অনিবার্ধরূপে যাহা আমার মুখ দিয়! উচ্চারিত হইতে লাগিল তাহা
সংক্ষেপে এইরূপ দীড়ায়--
মৃত্যু বিরাট, অনস্ত, ভয়ঙ্কর । দিল ও রাত্রির মতে! নিয়মিত ছন্দে জীবন ও
সবত্যার গান সমন্ত বিশ্ব ব্যাপ্ত হইয়া বহিয়া চলিয়াছে। মৃত্যু পটভূমি, জীবন
ছবি। ছবি ক্ষণকালের, মৃত্যু চিরস্তন। হে মহান্ মৃত্যু, হে স্বন্দর, প্রশাত্ত
মৃত্যু, তুমি একদিন গ্মামার জীবনের ছবিকেও তোমার পটভূমিতে মিলাইয়া
মৃত্য ৯৭
দিবে, আমি আর তুমি এক হ্ইম্বা যাইব। আমার হীসি-অশ্র, আমার ভয়-
ভাবনা, আমার সংগ্রহের বোঝা! তখন কোথায় থাকিবে?
মৃতু, তুমি ধখন আমাকে আহ্বান করিবে তখন আমার চেতন থাকিবে
কোথায়? তখন কি বুঝিতে পারিব না আমার মৃত্যু হইয়াছে? এই
ক্ষণকালের জীবন কি নিতাস্তই ক্ষণকালের? এই ক্ষণ-দীপ্তির শেষে কি চির-
অন্ধকার ? এই স্বপ্নের পশ্চাতে কি কোনো সত্য নাই, কিছু নাই?
গভীর রজনীর নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিনা আমার কানের পাশে ধ্বনিত হইয়া
উঠিল "আছে আছে।”
ভম্ে লাফাইয়া উঠিয়া! চাহিয়া দেখি আমার নিকট হইতে প্রায় সাত হাত
দুরে আর একটি মানবসস্তান বমিয়া উক্ত কথাটি উচ্চারণ করিয়াছে । কীপিতে
কাপিতে জিজ্ঞানা কবিলাম, “কে আপনি ?”
মান্বসস্তান বলিল, আমি ইনশিওর্যান্প কম্পানির এজেন্ট , আস্থন,
আপনার মৃত্যুভয় দূর ক'রে দিচ্ছি।”
বিন্সিত হইয়! বলিলাম, “তুমি মৃত্যুভয় দূর করবে [”
মানবসস্ভান এক লাফে আমার কাছে আসিল এবং আমার হাত ধরিয়!
টানিয়া তুলিতে তুলিতে বলিল, “আজ্ঞে হ্যা, দশ রকম প্ল্যান আছে, ঘেট।
আপনার পছন্দ ।”
অগত্যা তাহাকেই অনুসরণ বরিয়া চলিলাম।
( ১৯৩৭)
ভিনি
আনেক কাল আগের কথা, যে কালে এ দ্বেশের জনসাধারণ বিদেশী লু$নকাবীদের
অত্যাচাবে জর্জরিত হয়ে প্র জীবন ঘাপন করছিল । দেশের যা কিছু সম্পদ,
যা কিছু এখবর্ধ সেই লুনকারীরা দখল ক'রে নিগ্নেছিল, আর দেশের জনসাধারণ
অসহায় ভাবে ভাগ্যের হাতে আত্মসমর্পণ ক'রে দিনের পর দিন পরকালের চিন্ত1
ক'রে আসছিল। কর্ষফলে তাদের বিশ্বাস ছিল এমন দৃঢ় যে দা কিছু ছুর্ভোগ
এবং অন্যায় অত্যাচার তা যে তাদেরই পূর্বজন্মের দুন্ধুতির ফলে, এ কথা ভেবে
তারা৷ অসীম তৃপ্তিলীভ করত, এবং যত তৃপ্তিলাভ করত তত তাদের এক
দল পরম এদাসীন্য ভরে বলত জগতে একমাত্র সত্য হরিনাম, তা ভিন্ন
আর ঘা কিছু তা মিথ্যা, মায়া । এক দল মনে করত মাছুলিই সত্য । আর
এক দল মনে করত হীন্তার অপমান সহা করাই হচ্ছে রুচ্ছ, সাধন, ঈশ্বরের
কুপালাভের একমাত্র পথ। এক দল বলত 'অর্থনমর্থং ভাবয় নিত্যম্ তাদের
স্থবে স্থর মিলিয়ে সবাই বলত “কা! তব কাস্তা কস্তে পুত্রঃ |,
তারা খেতে পেত না, পরতে পেত না, কিন্তু তবু কি অশীম ধের্ষের সঙ্গে
তারা লুষ্ঠনক।রীদের মান্য ক'রে চলত। ক্রমশঃ: তাদের পা শিথিল হয়ে
আসছিল, হাতের জোর কমে 'আসছিল, আর তার ফলে বিদেশী লুষ্ঠনকারীরাই
তাদের হাত ধরে চালনা করত, নিজেব পায়ে চলার আর তাদেব কোনো
ক্ষমতাই রইল না। এমনি অবস্থাই চলছিল যুগ যুগ ধবে। এমন সময়
তাদের মধ্যে দেখ! দিলেন তিনি।
তিনি অতি সাধারণ মান্য, কিন্তু তার মনে মন্বয্যাত্বের মর্ধাদণাবোধ জ্বলস্তব
শিখার মতে! দীপমান। তিনি এসে বললেন, ধা আছে তাই ঞ্রুব নয়, যা
চলছে তা আর চলবে না, তোমরা মানুষ, তোমর] উঠে দাড়াও মানুষের মতো ।
বল, আমর] অন্তায় সহা করব না, বল, আমরা মান্্রষের অধিকার নিয়ে বেঁচে
থাকব। তিনি বললেন, এগিয়ে এসো! আমার সঙ্গে, এসো আমরা অন্যায়
শক্তিকে পরাভূত ক'রে সকল মান্তরষের মধ্যে সমাধিকাঁর প্রতিষ্ঠা করি।
লক্ষ লক্ষ লোক বিস্মিত দৃত্তিতে তার কথা শুনতে লাগল, শুনে চমকিত হল।
কেউ বলল, ই! একটা কথার মতে! কথা বটে । কেউ বলল, এমন কথা আগে
তো গুনিনি ভাই, এ যে একেবারে উঠে দাড়াতে বলে।
উঠতে ঘায় তারা, কিন্ত বহুদিনের অনভ্যাসে পা তাদের কেপে ওঠে, চলাৰ
তিনি ৯৯
শক্তি খুজে পায় না তারা নিজেদের মধ্যে, উঠতে গিয়ে পড়ে বায়। 'অন্থায়
শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে এ কথায় অনেকে ভঙ্গ পায়, কিন্তু ডাক শুনে
তাদের লোভ হয়।
তারা ঘে মানব সে কথা তারা জানত না, তাই তাদের মতো! অসহায়
অমানুষদেবও দাম আছে এ নংসাবে, তারাও থে আর সবারই মতো অধিকার
নিয়ে জন্মেছে, এ কথায় তাদের মন নেচে ওঠে । তাদের মনে স্বপ্ন জাগে।
তারা এ সংসারে মালষের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকবে, আপন ভাগ্য আপন হাতে
গড়বে, পড়ে পড়ে পরের হাতে মার খাবে না! এই কল্পন| তাদের মনে এক
অদ্ভূত আলোড়ন জাগিয়ে তোলে ।
কথাটা ক্রমে ধনিকপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে । পরামর্শ সভা বসে তাদের । এ থে
সর্বনাশের কথা । তিনি বলেন কি না আমাদের ধনদৌলতের অংশ দিতে হবে
সবার মধ্যে ভাগ ক'রে! এই ধন-দৌলতে নাকি তাদেরই অধিকার, আমব!
নাকি তাদের সম্পত্তি আমাদের কাছে গচ্ছিত রেখেছি মাত্র । তিনি নাকি বলতে
শুরু করেছেন ঘে আমরা ব্যবসা ক'রে যে মূলধন জমা করেছি তা নাকি অন্যায়,
অপরকে বঞ্চিত ক'রে করেছি । আর এই কথাটা যদি প্রতিদিন প্রচার হতে
থাকে তা হ'লে আমাদের কি হবে ভেবেছ ?
একজন বুদ্ধিমান বলল, ভেবেছি । কিন্তু দেখা যাক এর কিছু প্রতিকার
করা যায় কিনা । সবাই সমস্বরে বলল, প্রতিকার করতেই হবে যেমন হোক |
বুদ্ধিমান বলল, দেখি চেষ্ট। ক'রে।
পরদিন বিরাট জনসভা । তিনি এলেন তাদের মধ্যে, তাদেরই একজনের
মতো। আনন্দের ঢেউ খেলে গেল জনতার মধ্যে। তিনি এবারে আরও
এক নতৃন কথা শোনালেন তাদের কাছে। বললেন, আমরা আমাদের অধিকীর
কেড়ে নেব শয়তানের হাত থেকে, কিন্তু শয়তানকে ও সেই সঙ্গে মানুষের ধর্মে
দীক্ষা দেব। 'শক্রকে আমরা মারব না, শক্রকে আমর! জয় করব, তাকেও
আমর! মহুয্যত্বের ধর্মে দীক্ষা দেব।
কেউ বলল, জবর কথা । এমন কথা আমর! আগে স্তনি নি! কেউ বলল,
এষন মনের কথ! মনের মানুষ ছাড়া আর কে বলবে?
বুদ্ধিমান সময় বুঝে কাজ শুরু করল। সে চুপি চুপি সবার কানে কানে
বলতে লাগল, উনি মানুষ নন গো, দেবতা । উনি ষা বলেন তা কি আর কোনো
মাঘ বলতে পারে?
১০৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গলপ
যে গুনল সেই বলল, ঠিক কথা বটে, আমরা কি বোকা! এই কথাটা
আমাদের এত দিন মনে হয় নি! তাঁকে দেখলেই ঘে আমাদের মনে তক্ভি
জাগে, মাধাটি তার পায়ে নত হয়ে পড়ে, এ কি অমনি-অমলি।
কথাটি ভ্রুত ছড়িয়ে পড়ে লবার মধ্যে, সবাই স্বীকার করে, ঠা! দেবতা বটে।
খনিকের উদ্দেশ্ট সিদ্ধ হয়, তারা টাকা দেয়, দেবতার মন্দির গড়ে উঠতে থাকে
আকাশ-ছোয়া। সবাই এখন বুঝতে পারে দেবতা যা বলেন তা দেবতার
পক্ষেই সম্ভব, মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষের যদি কোনে! কল্যাণ
তিনি করতে চান তা হ'লে মানুষকে অগ্সি-পরীক্ষার মধ্যে না টেনেও ত। তিনি
করতে পারেন । সবাই এখন বুঝতে পায়ে তিশি ধখন বলছেন তখন হবেই
হবে, আমরা কিছু করি আর না করি।
ধনিকের! খুশি হয়ে ওঠে ।
তার কানে যায় এ কথা। তিনি বেদনা বোধ করেন। তিনি ছুটে
আসেন মান্ষের মধ্যে, এসে বলেন, আমি তোমাদেরই মতো সাধারণ মানুষ,
তোমরা এগিয়ে এসো! আমার সঙ্গে, এসো আমর! আমাদের ভাগ্য গড়ে তুলি
নিজ হাতে । কিন্তু তিনি যত বলেন লোকের ততই বিশ্বীন দৃঢ় হয় যে তিনি
মানব নন, দেবত]।
ধনিকদের চবের! ফিস ফিস ক'রে বলে দেবতা, দেবতা, দেবতা, দেবতা ।
ক্রমে তার কানে খবর এসে পৌছায় ঘে এক বিরাট মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে,
তাতে নাকি তারই মৃত্তি স্থাপন ক'রে পূজো কর! হচ্ছে । হাজার হাক্সার লৌক
সেখানে এসে জড়ো হচ্ছে, মহা! আড়ম্বরের সঙ্গে তার মৃতি স্থাপন উৎনব লম্পন্গ
হচ্ছে, লোকের! নাকি মুত্তি দর্শন ক'রে ধন্য হবে বলে অমানুষিক ছুঃখ সহ্য করেও
সেখানে এনে লমবেত হচ্ছে।
তিনি এ কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারলেন না। ছুটে বেরিয়ে এলেন
এই বর্বর অনুষ্ঠানটি বন্ধ করতে। এই বর্বরতা, এই মৃঢ়তাই মান্ুঘকে আচ্ছন্ন
ক'রে রেখেছে অন্ধকারের মতো-_এরই হাত থেকে দেশের লোককে বীচাতে
হবে। কিন্ত কেমন ক'রে বাচানো৷ যাবে ?1"""এ প্রশ্থের উত্তরের অপেক্ষা না ক'রে
তিনি ছুটে চললেন লেই অনুষ্ঠানের দিকে । এগিদ্ে গিয়ে দূর থেকে দেখতে
গেলেন হাজার হাজার লোক, লক্ষ লক্ষ লোক সমূত্রের মতো গর্জন করছে
অন্দিবের চারদিকে । মদ্দিরের চূড়া সু্যালোকপাতে সোনার মতে! জলে
উঠেছে। চাবদিক থেকে শ্রোতের মতো! লোক চলেছে সেই দিকে__সীরই
সুত্তি পুজো করতে।
তিনি ১৩৯
তিনি স্থির করলেন মন্দিরেব ভিতরে গিমে তিনি করঞ্জোড়ে অবাইকে এই
অন্ঠায় কার থেকে নিবৃত্ত হতে বলবেন। তীর চরম নৈতিক শক্তি তিনি
প্রয়োগ করবেন এ জন্য । প্রয়োজন হলে মৃত্যু বরণ কয়বেন।
কিন্তু কোথাম্ন প্রবেশ পথ । এই বিশাল নিরেট জনপ্রাচীর ভেদ করবেন
তিনি কোন্ পথে । ঘে দিকে প্রবেশ করতে যান সেই দিকেই লোকে তাকে
ঠেলে দেয়, বলে কে ভূমি, তোমার কি আকেল নেই, আমাদের ঠেলে ফেলে
তুমি এগিয়ে যেতে চাও! কেউ বলে এতই তোমার পুণ্যের বল যে
আমাদের টপকে গিয়ে দেব দর্শন করতে চাঁও আগে? হবে না, হবে না,
অন্যপথ দেখ ।
তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেন কিন্তু কোথায়ও প্রবেশপথ পান না। সর্বত্র
তাকে ধাকা মেরে দূরে সরিয়ে দেয়।
মন্দিরে উৎসবের সঙ্গীত আর দেবতার জয়ধ্বনি প্রতি মুহূর্তে তীব্র হতে
তীব্রতর হতে থাকে।
(১৯৪৭)
নতুন পরিচয়
হ্রদে চলছিলাম কলকাতার ধাইরে।
আজ লাত বছয়ের শহুরে একঘেয়ে জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। কিন্তু
লেটাই কি একমাত্র লতা কথা?
চলছিলাষ গননা, ভাবী শ্বস্তবের একমাত্র কন্তাকে দেখতে | মৃগয়াও বলতে
পাবেন !
কট! বছর নিজের সম্বদ্ধে কিছু ভাববারই সময় পাই নি, অথচ চুলগুলো আমার
অপেক্ষা না করেই পেকে উঠেছে, দাতও অনেকগুলো স্থান ত্যাগের নোটিস
দিয়েছে। বনদ্সসটা যে চলছে সে কথাটা যুদ্ধান্তে হঠাৎ বেশি অন্থভব করছি । আর
দুটো বছয় পার হলেই চল্লিশে গিয়ে,উত্তীর্ণ হব, সৃতরাং আর বিলম্ব করা ঘায় না।
মনে একটা সন্দেহ জেগে উঠেছে । অন্তরে আমি যাই হই বাহিরটা কি
ইতিমধ্যেই পরিণয়-কাধের প্রাতিকৃলে সাক্ষ্য দিচ্ছে না? শুধু সন্দেহ নয়, ভয়ও
জেগেছে মনে। নিজের সম্বন্ধে সঙ্কোচ বেডে গেছে । এখন কি ক'রে আমার
ভাবী শ্বশুরকে বোঝাব ঘষে আমার অন্তরবাহির এক নয়? আমার এই
অকালপক্কতাই ব৷ কে বিশ্বাস করবে? আমার অস্তর-বাহির এক নয়, এবং
আমি অকালপক্ক, এই দুটি কথ! আমার সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কেউ বলে নি ব'লে
আমার একট! গর্ব ছিল। অথচ আজ সমস্ত মন্প্রাণ দিয়ে আমি এই প্রীর্থনাই
করছি, আমার ভাবী শ্বশুর যেন এ ছুটি কথা আজ আমীর সম্পর্কে বিশ্বাস করেন।
স্থৃতরাং বলা বাহুল্য যে আমি খুব নিশ্চিম্তচিত্ে ট্রেনে উঠি নি। তা ছাড়া
পাস্তব্য স্থানটি প্রেতলোকের সঙ্গে ঘোগাযোগের একটি প্রধান স্টেশন, সেখানে
অভিপ্রেতের সন্ধানে ঘাওয়াটাই কেমন ষেন একটা নিকুৎসাহজনক ব্যাপার ।
সে জন্যও মন ভাল নেই।
সেকেগড ক্লাসের উপরের একটা বার্থ রিজার্ড ক'রে চলেছি। গাড়ি হাওড়া
ছাড়বার মুখে আমাদের কামরায় মোট যাত্রী সংখা হলাম পাচ। আমার
বিপরীত দিকে এক জন ইউরোপীন্ব ভদ্রলোক । আমার নিচে মোটা শাল
জড়ানো এক বাঙালী দত্তহীন বৃদ্ধ। মাঝখানে আর এক বাঙালী বৃদ্ধ, গায়ে
কালো কোট, গলায় কষ্র্টর। ইউরোপীন্ন ভদ্রলোকের নিচে পশ্চিম জেলার
পুট্কায় এক ভদ্রলোক । দূর্দান্ত শীত। সবাই বিছানা! বিছিষ্বে শোবার
বন্দোবস্ত করছেন। আছি আগেই গুয়েছি।
দতুন পাস্বিচয় ১৩৩
কেউ কাবো পব্ষিচিত নন, সুতরাং কারো মুখেই কোনো কথা নেই।
ইউরোপীয় ভদ্রলোক শ্য়ে পড়ে একখানা বই পড়তে লাগলেন । তার পথেই
লেপচাপা দিলেন পশ্চিমা ভদ্রলোক । ছুই বৃদ্ধ বাঙালী তখনও ইতত্ততঃ
করছেন। কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারলেন না, শীতে হাড়ন্দ্ধ কাঁপিয়ে
তুলছে বারই ।
ট্রেন তখন চলতে জ্বর কনেছে।
কিছুক্ষণ বেশ নিশ্চিন্ত মনেই কাটল। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই দ্বেখি
কালো-কোটধারী বৃদ্ধ উস্ধুস করছেন। আমাক নিচের বৃদ্ধ ভত্রলৌকটিকে
দেখতে পাচ্ছি না, কিন্ত মনে হল তিনিও জেগে আছেন।
কালোকোট লেপ মুড়ি দিম্সেছিলেন, কিন্তু স্থবিধা হল না, মাঁথ! বের ক'রে
হাই তুললেন ।
এতক্ষণ পরে শালধারী প্রথম কথ! বললেন। জিজ্ঞাসা করলেন, “মহাশয়ের
ঘুম আনছে না বুঝি? আমারও তাই ।”
"না তাঠিক নয়।” বলে কালোকোট চিস্তাবিষ্ট হলেন।
শালধারী প্রশ্ন করলেন, "মহাশয়ের কতদূর যাওয়া হবে?”
কালোকোট বললেন, “গয়]।”
গম্বা শব্দটি আমাকে বিচলিত করল। এদের আলাপে যোগ দেবার ইচ্ছে
হয়েছিল, কিছু চেপে গেলাম। কে জানে, ইনিই যদি আমার ভাবী শ্বশুরের
পদ অলঙ্কত করেন? নান! রকম সন্দেহে মল চঞ্চল হয়ে উঠল। লেপট!
মুখের উপর আরও টেনে দিয়ে কৌশলে চোখ দুটো বের ক'ৰে স্থিরভাবে দৃষ্টি
নিবদ্ধ করলাম কালোকোটধারীর উপর | ভদ্রলোক যেন দাগী আসামী, আর
আমি ঘেন ভিটেকটিভের লোক ।
ইনিও পাণ্টা প্রশ্ন করলেন, “আপনি কতদূর ?”
সংক্ষিপ্ধ উত্তর এল, “ধান্বাদ ।”
ইতিমধ্যে কালোকোট উঠে বসেছেন। এইবার কি তযে আলাপ ভাল
ক'রে জমবে? কথায় কথায় কি কন্যার বিবাহের কথাটাও উঠবে না? উঠলে
যে বীচি। ভাবী জামাত সম্বন্ধে তার মতামত স্পষ্ট বোঝা যাবে। কিন্তু
আমার ভাবী শ্বশুর এ সময্বে কলকাতা! আসবেন কেন? কিছুই বলা যায় না,
হয়তো আমার সম্পর্কে অনুসন্ধান নিতে এসেছিলেন গোপনে । হয় তো
গত কাল ফিরে যেতে চেয়েছিলেন, কোনো কারণে বাণুস্বা হয়নি তাই আজ
চলেছেন। মনের সন্দেহ আমার দূর হুল না, বরঞ্চ ক্রমশই ধারণা হতে লাগল
১০৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাজ-গপ
যে কাল একেই গিয়ে সশ্রন্ধ নমস্কার নিবেদন করতে হবে। স্ৃতরাং আমার
কৌতৃহলেয় চেয়েও অস্বস্তি বোধ হতে লাগল খুব বেশি।
কাঁলোকোটের মূনে কি আছে কে জানে?
কিন্তু তিনি ওকি করছেন? ব্যাগ খুলছেন কেন? সবিল্ময়ে চেয়ে দেখলাম
ব্যাগ থেকে চওড়া-মুখ তরল পদার্থপূর্ণ একটা বেটে শিশি বের করলেন। তারপর
শিশির কর্ক খুললেন। তারপর ফল ক'রে তীর বাধানো দাত ছুপাটি খুলে সেই
শিশিতে পুরলেন এবং পুনরাম কর্ক এটে সেটি ব্যাগের মধ্যে রেখে দিলেন।
শালধারী বলে উঠলেন, "আপনার তে! মশাই সব বন্দোবস্তই বেশ পাঁকা।
ভাল করেছেন দাত খুলে বেখে |”
কালোকোটের মুখের চেহারা! সম্পূর্ণ বদলে গেল। ছিলেন প্রা্ম ষাট
বছরের, এখন আমী বছরের মতো! হলেন। তীর উচ্চারণও সঙ্গে সঙ্গে বদলে
গেল, “মশাই, বাঢ্য হয়ে বণ্ডোবস্ট করটে হয়েছে ।-__দীত খুলে নেওয়াতে দস্তা
উচ্চারণগুলে! আর হ'ল না।
শালধারী বললেন, পবাধ্য হয়ে কি রকম ?”
"শীতে বড় কষ্ট পাই, দীত ঠক ঠক্ করতে থাকে, এই যুদ্ধের বাজারের
চতুগ্তণ দামে কেনা বীধানো দাত ঠক্ ঠক করিয়ে লাভ কি?” বলে বিষণ
হাসি হাসলেন।
শালধারী বললেন, "দামের কথ যদি বললেন, তা! হ'লে দাতে আমার 1
লোকসান হযেছে সেআর বলবার নম্ব।”
কোট মে কথ! জানবার জন্য উৎসাহিত হলেন।
শালধারী বললেন, "আর বলেন কেন। শস্তার বাজারে কিছু দোনা কেনা
ছিল, তাই দিয়ে দুপাটি দীত করিয়ে নিলাম যুদ্ধের বাজারে । খরচ একই পড়ল,
কারণ বাজাবের দাতের দামও তখন সোনার মতোই । গত মাসে এই গাড়ির
মধ্যেই ুমস্ত অবস্থায় আমার মূখ থেকে সে দাত চুি হয়ে গেছে, তাই এখন
বিনা ঈীতেই কাটাচ্ছি।” ৃ
“বলেন কি! এতো সাংঘাতিক চুরি ।”
“সাংঘাতিক বলে সাংঘাতিক !”
মিনিট তিনেক চুপচাপ কাটল । কালোকোট বলে উঠলেন, “দুঃখ করবেন
না মশাই, শুধু বিনা দাঁতে তো নয়। ঘা! দিনকাল পড়েছে, বিনা অল্পে, বিনা
বন্ধে, বিন! বু জিনিমে কোনো রকমে টিকে থাকা মাঅ।
এ কথা শুনে আমাব মনটা কেন যেন খারাপ হয়ে গেল। শুনেছি আমার
নতৃণ পরিচয় ১৩৫
ভাবী শ্বশুর শ্রীযুক্ত অন্ন! মজুমদার খুব ধনী বাক্তি। কলকাতায় বাঁড়ি আছে,
দেশে বাড়ি আছে, দেশের বাইরে গম্নীতে বাড়ি আছে-__এবং কন্তা মাত্র
একটি । তথাপি এ কি কথা? “কোনো বকমে টিকে থাঁকা” তো৷ কোনো
ধনী ব্যক্তিরই হতে পারে না। ওর দিকে করুণ দৃষ্টি মেলে এই সব
কথা ভাবছি-_হঠাৎ লক্ষ্য পড়ল ব্যাগের উপরকার ছুটি অক্ষরের উপর।
ইংরেজী এ. এম. ছুটি অক্ষর। আর সন্দেহ বইল লা লোকটি কে। আমি
কিংকর্তব্যবিযু; ভাবে লেপেন্স মধ্যে ভাল ভাবে আত্মগোপন ক'রে বইলাম।
ক্রমশই আমার মনে নৈরাশ্থের সঞ্চার হতে লাগল আমার চেহারা সম্পর্কে ।
আমার পাকা চুলই আমাকে পরাভূত করবে এ বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। তা
ছাড়া ভাবী শ্বশ্তর যদি ধনী না হনতা৷ হ'লে অযথ! এ পরীক্ষার মধ্যে নামি
কেন? তার চেয়ে এখনই আত্মপ্রকাশ করা ভাল নয় কি?
কিন্ত অবুঝ মন আশা ছাড়তে চায় না।
শালধারী বললেন, “মশাই ছত্রিশ বছর জায়গার মধ্যেও ঘে সব ঘটনার স্থান
হয় না, তার চেয়েও বেশি ঘটন| ঘটে গেল ছটা! বছরের মধ্ ।”
“ঠিকই বলেছেন আপনি ।”__কোট উৎসাহিত হয়ে বললেন। “ঠিক তুবড়ি
বাজির মতো । এক-আঙ্ুল খুপরীর মধ্যে এমন সব জিনিস ঠেসে পুরে দেয় যার
মুক্তি পেতে জায়গ! লাগে পঞ্চাশ হাত।”
"তবেই দেখুন কি ভয়ানক ব্যাপার ! ছত্রিশ বছরের জীবন ছ-ব্ছরের খুপরীর
মধ্যে কাটানে৷ কি সোজা! কথ1?”__ব'লে শালধারী ওই কথার প্রতিধ্বনি বরলেন।
হাহুতাশের হাওয়ায় আলোচন]| হুতাশনের মতোই জলে উঠতে লাগল ।
কোট বললেন, “মশাই ভেবে দেখুন ১৯৩৯ থেকে আমাদের নার্ভের উপর
মিনিটে দশটা ক'রে হাতুড়ির ঘা পড়েছে কি না?”
শালধারী বললেন, "আপনার মতো! ভাষার জোর নেই, কিন্তু আপনি খাঁটি
কথ! বলেছেন । ছূর্তাবনায় দুশ্চিন্তায় চবিবশ ঘণ্টা কাটাতে হয়েছে |”
“শুধু “দুশ্চিন্তা? দুশ্চিন্তা করতে গেলেও তো মনের খানিকটা সক্তিদ্বতা
দরকার হয়। এ যে একেবারে বেঁধে মারা ! মন কিছু ভাববার সময়ই পায়নি-_-
পড়ে পড়ে কেবল মার খেয়েছে । যুদ্ধের প্রথম বছরখানেক অতটা বোঝা যায়নি,
কিন্তু এই মার খাওয়া! অসহ্য হযে উঠেছে ১৯৪১-এর মাঝামাঝি সমদ্ব থেকে |”
"ঠিক কোন্ সমম্নটার কথা বলছেন ?”
“বলছি ঘখন থেকে আলো-ঢাকা গুরু হল। অন্ধকারে গুতো খেতে থেতে
পথ চলতে হল ।”
১০৬ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্ছ-গল্প
পাঁলধারী একটু চিস্তা ক'রে বললেন, “কিন্ত আপনি একটি বড় কথা বাঘ
দিচ্ছেন। জিনিসপত্রের দাম তার আগে থেকেই বাড়তে শুরু করেছে ।”
“বাদ দেখ না কিছুই__সবই বলছি একে একে”_-ব'লে কোটধারী লেশটা
গায়ে জড়িয়ে বেশ ভাল ভাবে বসলেন ।
কি সর্বনাশ, এই ছ-বছরের দুঃখের ইতিহান শুনতে হবে পড়ে পড়ে! কিন্ত
জার তো কোনো উপায় নেই। ন্বাত্রি ক্রমশ বেড়ে চলেছে । আর-হজন
যাত্রী বহুক্ষণ ঘুমিয়ে পড়েছেন । আমার ভাবী শ্বশুরকে এতক্ষণ ওই শালধারী
উৎসাহ দিয়ে দিয়ে এমন একটা বিষয়ের মধো টেনে এনেছেন যা মনে হল তাঁর
'ত্যন্ত প্রিয় । নানা রকম উপম। দিয়ে হে রকম ফলাও ক'রে তিনি এ সম্পর্কে
ছু-চাবটে কথা এতক্ষণ বলেছেন তাতে স্পষ্টই বোঝা গেল যুদ্ধজনিত দূর্ঘশাকে
তিনি নিপুণ বৈজ্ঞানিকের মতোই আপন মনে বিশ্লেষণ ক'রে এসেছেন এতদিন ।
এ সম্বন্ধে তার উৎসাহ একটু বেশিই মনে হল। তানাহ'লে তিনি ঘুরে ফিরে
আলোচনাটা এর মধ্যেই টেনে আনতেন না। তা ছাড়া বাত্বি গভীর। চল্ত
ট্রেনের একটানা শব্ধ, চারিদ্দিকের অন্ধকারের বুকে একমাত্র শব । এই শবের
পটভূমিতে, এমন গভীর রাত্রে, এমন সহানুভূতিশীল শ্রোতার সম্মুখে যে-কোনো
লোকেরই মর্মবেদন| আপন থেকেই উদঘাটিত হতে থাকে । এ ক্ষেত্রেও তার
ব্যতিক্রম হল না। আমি স্পট লক্ষা করলাম কোটধারী বুদ্ধ আর নিজেকে
ধরে রাখতে পারছেন ন।। তার আ্বাফুর উপর ছ-বছর ধরে মিনিটে দশটা ক'রে
সাতু়ির ঘা পড়েছে, এই ছ-ব্ছরে স্প্রিঙের যতো তীর মনের চারদিকে থে
শ্বারোধকারী কঠিন পাক পড়েছে তা তিনি আজ একে একে খুলবেন এ বিষয়ে
শন্দেহ রইল না। স্থতবাং আমাকেও বাধ্য হয়ে প্রস্তত হতে হল তার কথা
শোনবার জন্য।
শালধারীকে তিনি প্রশ্ন করলেন, "শুনবেন সব ?”
শালধারী জোর গলায় বললেন, “শুনব না মানে? নিশ্চয় শুনব। এ সব
কথা যত শোনা ঘায় ততই মনটা হাক্কা হয়। তা ছাড়া ছুঃখ-হুর্দশা তো শুধু
আপনার একার নয়, আমাদের সবার, এবং কলে আপনি ঘত আরাম পাবেন,
আম! শুনে তত আকাম পাব।”
"মে তো বটেই। কিন্তু নব শেষে এমন একটি কথ! গুকাশ করব যা শুনে
হয়তো আপনি চমকে ধাবেন, আর হয়তো কেন, আমার বিশ্বান আপনি নিশ্চয়
চকে ঘাবেন।”
পালধারী চমকে যাবার আগে আধি চমকে গেলাম এই কথাটি শুলে।
নতুন পরিচন্ব ১০৭
আমীর সন্দেহ ছল উনি লর্বশেষ যে বিশ্বয়ের কথা বলবেন নেটি নিশ্চন্র আমারই
সম্পর্কে । বলবেন-"ছ-বছনের দুর্দশা কাটিয়ে যাদ বা আলোর মুখ দেখা গেল,
যদি বা কন্ঠাটির বিবাহ দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইলাম, কিন্তু প্রথমেই থে পাত্রটিকে
পেয়ে খুশি হব ভাবলাম দে একটি অপাত্র। একেবারে বুড়ো, আমারই বয়সী;
এই ভাবে মশাই ধান্কার পর ধাক্কা, আঘাতের পর আঘাত খেয়ে চলেছি ।”
অথব! এই কথাই অন্য ভাষায় বলবেন।
এই কাল্পনিক অপমানে আমার অন্তরাত্ম। বিদ্রোহী হয়ে উঠল। নে বেঁকে
ফ্াড়াল। আমি গলা নামব না ঠিক ক'রে ফেললাম। গাঁড়িভাড়াট। গেল,
ঘাকগে । বিয়ে যদি করতে হম, ঘরে বলে করব। আরও অনেক বক্ষ শপথ
করলাম মনে মনে ।
শীলধারী একটুক্ষণ চিস্তা করলেন। বোধ হয় এই যুদ্ধের কয়েকটি বছরের
মধ্যে চমকে যাবার মতো কিছু আছে কি না খুঁজে দেখলেন, কিন্তু পেলেন ন!।
বললেন, “বলুন না আপনার কথা-__খুবই অন্তূত কথা না কি?”
"একেবারে আরব্য উপন্যাসের মত অদ্ভত। দীড়ান দাত লাগিয়ে নিই আগে,
নইলে বড্ড অস্তুবিধা হচ্ছে |” ব'লে ব্যাগ থেকে দাত বের করতে লাগলেন।
কথা আরম্ভ হুল। শুর হল ১৯৩৯ সালের যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে ।
কি রকম দিনের পর দিন আতঙ্ক বাড়তে লাগল, কি ভাবে আলোক নিমন্ত্র
শুরু হল, জাপানী আক্রমণের আশঙ্কা হল, তারপর জাপানীরা যুদ্ধ ঘোষণ।
করল__সব একে একে বললেন। এর প্রত্যেকটি ঘটনা, প্রত্যেকটি খবর, কি
ভাবে মানুষের নার্ভের উপর ঘ! মেরেছে তা শোনালেন। তার পর জিনিসের
দাম বেড়ে যাওয়া__ছ্ষিনিস দুপ্পাপ্য হওয়া_ লোকের দুর্গতির কথা, শোনালেন ।
হুর্গতি ক্রমশ বাড়তে লাগল । জাপানীরা বর্া প্রবেশ করল, কলকাতার লোক
শহর ছেড়ে পালাল, আবার ফিবে এল, তারপর ৪২ সালের ২* ডিসেম্বর
কলকাতায় প্রথম বোম! পড়ল, দ্বিতীয় বার শহর ছেড়ে পলায়ন শুরু হল।
এইভাবে শ্রহরবানীরা নানা ভাবে নাস্তানাবুদ হতে লাগল। জাপানীরা
আন্দামান দখল করল। যখন তখন কলকাতা আক্রমণের ভয়। এই অবস্থায়
আবীর একে একে শহরে ফিরে আস। এবং দ্বিতীয় বার সর্বস্বান্ত হওয়া_এই
লব কথা একটি একটি ক'রে তাতে অতি ভয়ঙ্কর রং ফলিয়ে তিনি তীত্ঘ শ্রোত্াকে
স্তক্তিত করতে লাগলেন ।
বলা বাহুল্য আমিও ভ্তভিত হয়ে শুনছিলাম । এ রকম বিভীষিকা বিশ্লেষণ
আমি আর ইতিপূর্বে দেখি নি। তাই তার একটানা একটি পর্বের বক্তৃতা
১৬৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
শেষে ষখস তিনি হঠাৎ তার শ্রোতাকে প্রশ্ন করলেন, "শুপছেন ?- তখন
আমিই হঠাৎ আত্মবিস্বত হয়ে আগে বলে উঠলাম, “খুব মলোষোগের লঙ্গে
গুনছি।”
আমার নিতাস্ত মৌভাগা যে ঠিক দেই সময় শীলধারীও উত্তেজিত ভাবে
বলে উঠলেন, “নিশ্চয় শুনছি__আপনি__-আপনি থামবেন না।” তাই আমার
ক্ষ চাপা পড়ে গেল। আমি কখন থে এই কাহিনীর মধ্যে ডুবে গিয়েছিলাম
বুঝতেই পারি নি।
আধ মিনিট বিরামের পরেই কোটধাবী আবার ত্বার কাহিনী শুরু করলেন।
এ কাহছিনীগ মধ্যে নতুনত্ব কিছুই নেই-__এর প্রত্োকটি অংশের সঙ্গে আমাদের
প্রত্যেকেরই প্রতিটি দিন ওতেপ্রাতভাবে জড়িত-_এর প্রতোকটি মিনিটের
অভিজ্ঞতা আমাদের সবার অভিজ্ঞতা, কিন্তু তিনি যেভাবে সব কিছুর ব্যাখ্যা
করছিলেন, এবং বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কি ভাবে এগুলো আমাদের স্নায়ুর উপর
আঘাতের পর আঘাত দিয়ে চলেছে-__তা আমার কাছে অন্ততঃ সম্পূর্ণ নতুন ।
যুদ্ধ ঘষে এমন ভয়ঙ্কর ভাবে আমাদের সর্বনাশ ক'রে গেছে তা এই প্রথম উপলব্ধি
ক'রে আমি হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছি ।
১৯৪৩-এর ১৬ জানুয়ারি তারিখের বোমার আক্রম্ণটা তিনি বর্ণনার
ভঙ্গীতে আবার বান্তব ক'রে তুললেন। এত দিন পরে তা শুনে আবার বুক
কীপতে লাগল। তার পর নিপুণভাবে ব্যাখ্যা ক'রে বুঝিয়ে দিলেন প্রথম
শহর ছেড়ে পালানোৌয় আাষুর উপর যে পরিমীণ ঘা লেগেছিল, দ্বিতীয় বারের
পলায়নে তার চেয়ে অন্তত দশগুণ বেশি ঘা লেগেছে । উপরন্ত এ অবস্থাতেও
যখন ৩* মার্চ তারিখে গোটা বাংল। দেশকে বিপজ্জনক এলাকা ঘোষণা কবা
হল তখন থেকে শহরের কোনে। মান্নষই আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে
পাবে নি-_-সহজভাবে কেউ আর নিশ্বাদও নিতে পারে নি।
বৃদ্ধের বলবার ভঙ্গি সত্যই অতি চমকপ্রদ । যখন কথা শুরু করেন তখন
ক কিছু ক্ষীণ থাকে । তার পর নে ক ধাপে ধাঁপে চড়তে থাকে এবং কথার
পর কথা চলতে থাকে অবিরাম গতিতে । তিনি না থাম পর্স্ত মাঝখানে
আর কারও কিছু বলবার অবদর থাকে লা। তাই এতক্ষণ আমর! মন্তমুগ্ধবৎ
তাঁর কথ! গুলে গিয়েছি, কখনও বিরক্তি বৌধ করিনি-_জান। কথার পুনবাবৃত্তি
এক মুহূর্তের জন্যও একঘেয়ে লাগেনি।
বৃদ্ধ দ্বিতীয় বার একটু খামতেই শালধানী নিতান্ত বৈচিত্র স্থির জন্যেই
তীর কতক্ডলো কথ! নিজেরই কথা বলে আবৃত্তি করতে লাগলেন এবং
শতৃন পরিচয় ১৬৯
জানালেন দুবার শহর ছেড়ে পালানোর ব্যাপারে তিনিও প্রায় সর্বস্বান্ত
হয়েছেশ।
কোটধারী আবার অনুপ্রাণিত হনে বলতে লাগলেন, “হতেই হবে, কারোই
নিস্তার নেই। কিন্তু এই ছুশ্চিস্তা আতঙ্ক আর ছুটৌছুটিতেই তো! সব শেষ
নয়, শুধু কাল্পনিক ভয় তে। নয়, বিভীষিকা মুতি ধরে এলো একেবারে চোখের
সম্মুথে । ডাইনে বামে নিরন্রের হাহাকার__ডাইনে বামে মৃত্যু দৃশ্য! পথ
চলতে হচ্ছে মৃতদেহ ভিডিয়ে ভিডিয়ে। মানুষের এমন মৃত্যু তো কখনও
দেখি নি, কখনও ভাবি নি! এ রকম নিষ্র করুণ মৃত্যু, এমন অসহায় নীরব
মৃত্যু! শত শত নব্নারী শিশু বালক বৃদ্ধ যুবক যুবতী- শুন্য দৃষ্টি মেলে
ধুকে ধৃকে মরছে চোখেব সামনে_এ কি দেখা যীয়? চোখ খুললে এই
বেদনার দৃশ্ত, চোখ বুজলে গভীর আতঙ্ক। পায়ের নিচে ঘেন মাটি নেই,
আশ্রয় নেই। অন্ধকারে দম বন্ধ হয়, আকাশে চাদ উঠলে বোমার ভয়ে বুক
কাপতে থাকে । এমনি অবস্থাতেই তো মানষ পাগল হয়ে যায, পাগল হইনি
এ খুব আশ্চষ মনে হয়, কিংবা হয়েছি কি না কে জালে!”
শালধারী বললেন, “এমন কি খবরের কাগজ খুললেও কেবলই বীভৎস
সব ছবি দেখতে হয়েছে__জাপানীদের অত্যাচারের সব ছবি।»
“ঠিক কথা। এইভাবে শহরের লোকের হাত পা! বেধে ছ-বছর ধরে তার
তার উপর ষেন লাঠি চালানো হয়েছে । মনে আতঙ্ক, চোখে বিভীষিকা, কানে
করুণ ক্রন্দন _ এতদিন ধরে কোনো মান্ষের পক্ষে সহ কর। সম্ভব? কিন্ত
আজও কি মুক্তি পেয়েছি? যুদ্ধ শেষে ষে মুক্তি আশা করেছিলাম, মে আশা
আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে । এখন শুধু সাইরেন নেই, কিন্তু আর সবই
আছে । আরও কতদিন থাকবে কে জানে ?”
এই পর্যস্ত বলে বৃদ্ধ চুপ করলেন। তার দৃষ্টি বেদনাচ্ছন্ন, উদাল। যেন
ভবিষ্যৎ কালের অনিশ্চম্নতার মধ্যে আরও একবার সে দৃষ্টি চালনা করবার চেষ্টা
করছেন কিন্তু পারছেন না, দৃষ্টি প্রতিহত হয়ে ফিরে আসছে ।
আমি একদৃষ্টে তার চোখের দিকে চেয়ে আছি। এতক্ষণ তার কথাগুলো
অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গেই শুনেছি এবং আমিও ঘে এমনি একটি ভয়াবহ
'অবন্থার মধ্যে দিয়ে এই ছটি বছর কাটিয়ে এসেছি তা এই মুহূর্তে উপলব্ধি ক'রে
ত্যস্ভিত হয়ে পড়েছি । আমি ভুলে গিয়েছি আমি কোথায় চলেছি, কেন
চলেছি। এমন সময় শালধারীর কণ্ঠ থেকে প্রশ্ন কানে এলো! “আপনি সর্বশেষ
কোন্ কথাটি বলতে চেয়েছিলেল ?”
১১৪ পরিমল গোত্থামীর শ্রেঠ ব্য-গয়
এই প্রশ্নটি আবার আমাকে বিহ্বল ক'রে তুলল । নিশ্বাস রোধ ক'কে
অপেক্ষা ক'রে রইলাম সেই কথাটি শোনবার জন্য, যেন এইবার জামার
মৃত্যুদণ্ডের আদেশটি শুনতে পাব।
কিন্তু বা শুনলাম সে তো মৃত্যুদণ্ডাদেশ নম্ব ! অত্যন্ত সাধারণ একটি কথ!
এবং ভার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কই নেই । বললেন, “মশাই শুনলে বিশ্বাস
করবেন না, আমি এই শক্ কাটিয়ে উঠতে পারি নি।”
তা হ'লে কি বৃদ্ধ উন্মাদ? কে জানে! হয তো তাই। কারণ তিনি
উদ্মাদের মতোই পলকহীন দৃষ্টিতে শালধারীর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন।
তারপর হঠাৎ তার দিকে ঝুঁকে পড়ে বললেন, “এই দেখছেন চুল? এর
একটিও কালো নেই। এই দেখছেন মুখ? মুখের চামড়া ঝুলে পড়েছে ।
প্ীতের কথা তো আগেই জানেন । কিন্তু কেন আমার এই ছুশা 7? এই
যুদ্ধের আঘাতে, ন্ামুর উপর অবিরাম ধাক্কায় । আমার আযু শেষ ক'রে দিয়েছে
এই ছটি বছর |! আমি-__-আমি সম্পূর্ণ অকালে একেবারে বুড়ো হয়ে পড়েছি__
সম্পূর্ণ অকালে, আপনি বিশ্বাস করুন।”
শীলধারী মাত্র একটি বিস্ময়স্চক শব্দ করলেন, তার মুখ থেকে কিছুক্ষণ
আর কোনো কথ। শোনা গেল শা। আমার মনে সহসা নতুন আলোকপাত
হল! আমি এই স্থযোগে একেবারে উঠে ব্ললাম। বৃদ্ধের যুক্তি আমি
কাজে লাগাব। তার কথাম্ব আমারই আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি মিলে গেল,
হয় তো মুক্তিও এতেই মিলবে। এখন একমাত্র ভাবনা রইল, ভাবী শ্বশুরের
কন্যাকে কি বলে ভোলাব? তবু পকেট থেকে ভায়েরি বের ক'রে কয়েকটা
পয়েন্ট নোট ক'রে নিতে লাগলাম।
এম সময় আমার সমস্ত আশা নিমূ্ল করে কোটধারী বলে উঠলেন,
“মশাই বিশ্বীন করতে পারেন আমার বয়ম আটত্রিশ বছর? বিশ্বাস করতে
পাবেন, চব্বিশ ঘণ্টা ধরে কি অমানুষিক ব্দনাম্ম একখানি কাচা মন বয়ে
বেড়াচ্ছি একখান] পাকা দেহের মধ্যে ?”
আমার আর ভাববার ক্ষমতা ছিল না। এব ঘদি বছস আমার সমান
হয়, তাহ'লে ইনি যে আমার ভাবী শ্বশুর নন সে কথ! ভেবে তৎক্ষণাৎ আমার
কিছু, আরাম বোধ করা উচিত ছিল, কিন্তু এতক্ষণ ধরে ধাকে অস্তর থেকে
পৃ্ধনীয় ক'রে তুলেছি-_মনে হল তিনি ষেন আজ আমাকে নানাভাবে ঠকাবার
জন্তই উদ্যত হয়েছেন। হঠাৎ একট! আশাভঙ্গের বেদনার চেয়েও নিজে
অনগুমানশক্তির এতখানি দাবিভ্র্য উপলদ্ধি ক'লে বেশি বেদনা পেলাম । সমস্যাই
নতুন পরিচয় ১১১
কেমন যেন একটা ধাঁধা বঝে বোধ হতে লাগল। যেন গাড়ির মধ্যে একটা!
ভৌতিক ক্রিয়া চলছে__ঘেন সমন্তই অবাত্বব, সমস্ত্ই মায়
সে বিশ্বাম আরও দৃঢ় হল যখন শালধারী বললেন, "মশাই কে কাকে অবাক
করবে তাই ভাবছি । আমার বয়স কত মনে হয়? বিশ্বাস করবেন, আপনার
চেয়ে আমি মাত্র ছ-বছরের বড়? বলিনি এতক্ষণ, কারণ দরকার হয় নি।
কাউকেই বলি না, চুপ ক'রে থাকি, কৌতুক বোধ করি মাঝে মাঝে নিজেকে
বুদ্ধ মনে ক'রে ।”
কোটধারী একেবারে হো। হো ক'রে হেসে উঠলেন এই কথা শুনে । হাঁসতে
হাসতেই বললেন, “তা! হ'লে দেখছি আমার নিজের কথ! সত্যিই সবার কথা
হয়ে ঈীড়াচ্ছে! এ যুদ্ধের ধাক্কায় তা হ'লে ক্ষীণজীবী সব বাঙালী যুবকেরই
এই দশা ঘটেছে ।_-আমি একা অন্ুকৃল মুখুজ্জেই শুধু বুড়ো হই নি!»
শালধারী তড়িৎগতিতে দীড়িয়ে উঠে অনুকুল মুখুজ্জেকে জাপটে ধরলেন,
এবং গলা ফাটিয়ে উচ্চারণ করলেন, “তুই অনুকুল? তৃই আমাকে চিমতে
পাঁরছিস না? আমি সন্তোষ!”
এইবার আমার পালা । আমার হাত-পায়ে প্রক্কৃত ঘৌবনশক্কি ফিরে
এলো, আমি এক লাফে নিচে পড়ে ছুজনকে একসঙ্গে জড়িয়ে ধরলাম-_“আর
আমি যে বিনয় রে! চিনতে পারছিশ তোর! ?”
এর পর ষা ঘটল তা! অকথ্য । চলল বেপরোয়া চিকার। তিন অকাল-
বৃদ্ধের কোলাহলে ইউরোপীয় ভত্রলোক রক্তচক্ষু খুলে কর্কশ কণ্ঠে হাকলেন
"হোয়াটস আপ. দেয়ার ?”
"নীথিং সাহেব, উই ওল্ড ফ্রেও্স্ মীট আগার নিউ সারকমস্ট্যা্গেস্”__
বলে আমি সাহেবকে আশ্বস্ত করলাম । সাহেব পাশ ফিরে শুলেন।
সাহেবকে সত্য কথাই বলেছিলাম । আমরা তিন জনেই সহপাগী অস্তরঙ্গ
বন্ধু মাত্র ছ-সাঁত বছর আমাদের দেখা হয় নি।
এত কোলাহলেও পঞ্চম যাত্রীটির কোনো অস্থব্ধা হয় নি। তার চেহারা
দেখে মনে হল বন্থ বাডীলীকে মেরে ইনি সম্প্রাত স্বীত হয়েছেন, তাই তার
নাক-ডাকা একই ভাবে চলতে লাগল।
(১৭৪৭)
প্রতিযোগ
পৃথিবী একদিন অগ্নিপিগুবৎ ছিল, তারপর ধীরে ধীরে আগুন নিবে এলো
ধেোয়াটে জিনিস জমাট বাধল, জল এবং স্থল দেখ! দিল, তারপর একক সেল্দেহী
প্রথম প্রাণীর আবির্ভাব ঘটল, তার্পর সেই প্রাণী বিবর্তনের ধারাপথে মানুষন্ধপে
দেখা দিল, তারপর সে মানুষ ভাষা শিখল, দেশবিদেশের পরিচয় সংগ্রহ করল
এবং পৃথিবীর ভূভাগের একটি ক্ষুদ্রতম অংশের নাম দিল পাবনা জেলা । নেই
পাবন! জেলার একটি ছোট্র গ্রামে পদ্মানদীর ধারে হরেন দাস তার সঙ্গীদের
নিয়ে বলে আলাপ করছে।
দে বলছে “দূর দূর, গায়ে আবার যানুষ থাকে? না আছে রেলগাড়ি, না
আছে থিয়েটার বায়োক্কোপ, না আছে সাহেবমেম, যত সব মুখ খু চাষার আড্ডা ।
আর, কাজের মধ্যে কি? না, মাঠে লাঙ্গল নিয়ে তা-তা৷ কর, না হয় জাল নিছে
গাঙে মাছ ধর, না] হয় কুডুল দিয়ে গাছ কাট। এমন গ্রামের মুখে
লাখি মারি।”
উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে গ্রামের হীনতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে । তাবা বিস্মিত
হয়ে চেয়ে থাকে হরেনের দিকে | হরেন চেয়ে থাকে পল্মার শ্রোতের দিকে ।
সেই যোত বেয়ে হরেনের মন গ্রাম ছেড়ে কোন্ সুদূরে চলে যায়। তারপর
হঠাৎ বলতে থাকে, "আমি তো বাবা, এ গীঁয়ে বেশি দিন থাকতে পারব না,
লে তোরা যাই বলিস। ঘেন্না ধরে ঘায় না রোজ রোজ একপাল রোগা মুখ খু
চাষার মৃখ দেখে দেখে ? দম বন্ধ হয়ে আসে না এই জেলখানায়? পেটে চর
পড়ে যায় না মুড়িচিড়ে খেয়ে খেগে ?
কথাগুলো হরেন এমন চালের সঙ্গে উচ্চারণ করে যাতে এই প্রশস্ত উদার
নদীর কলগান মুখরিত, সহন্ব স্খস্থিতিবিজড়িত ছোট্ট গ্রামখানি সঙ্গীদের চোখে
অতি কুৎখনিত কালিমালিপ্য হয়ে দেখা দেঘ্। তাদের মনে হয় এই বিপুল
ঘ্েহবর্ষী গ্রামথানির মধ্যে কোথায় যেন একটি মন্ত ফাকি আছে, কিন্তু কোথায়
তা তারা বুঝতে পারে না।
হবেন খুব গম্ভীর ভাবে বলে, দেখে নিন তোরা, হরেন দান কবে সট্ুকেছে
গাঁ থেকে ।”
হরেন ম্যাটিকুলেশন ক্লাসে পড়ে । গ্রামেই এক ভাঙা স্থল আছে। কিন্ত
স্থলকে সে বড় গ্রাহ্থ করে না। নে সাধারণ চাষী গৃহস্থের ছেলে হয়েও ওঁকধত্ে
প্রতিষোগ ১১৩
এবং অহঙ্কারে গ্রামের সবার মনে ত্বণা জাগিক্ে তৃলেছে। ওর জামাকাপড়
পরার ভঙ্গিতে, ওর চালচলনে, ওর কথার উচ্চারণে, যতদূর সম্ভব গ্রামাতা
বর্জনের চেষ্টা আছে। শিক্ষকের! বিরক্ত হয়ে বলেন, ছোকরা মহা ওস্তা।
গ্রামের লোকেরা বলে, ও একটি কুলাঙ্গার। কিন্তু সে অন্য কারণে।
হরেনের বাবা বিশ্বস্তর দামে অবস্থা গ্রামের অনেকের চেয়েই ভাল।
গ্ুহস্থ হলেও স্থবী পরিবার। সবার মনে ঈর্ষ। জাগানোর পক্ষে এইটুকুই
থেষ্ট। কিন্থ এ ছাড়াও কারণ আছে। বাব! ছেলেকে আক্কারা দেয়, প্রশ্রস্ব
দেয়, এমন ছুর্নাতিৰ দৃষ্টান্তে গ্রামের ছেলেদের মাথা খাওয়ার চেষ্ট। করাতেও
ছেলেকে কিছুই বলে না । ছেলে জেলা-শহরে গিক্ে মাঝে মাঝে চুল ছাটিয়ে
আসে, আর কি বাহার তার। এক কান থেকে আর এক কান পথন্ত পিছনে
শুর দিয়ে চাছা1। এই দুক্ষাযেব পম্বসা দেয় তার বাবা অথচ দরকার মতে!
দাঁয়েঘায়ে ঠেকলে ছুটে] টাকা হাওলাত পাওয়া যায় না।
বিশ্বস্তব দাপ অবশ্য মাঝে মাঝে বির্ঞ্িব ভান ক'রে বলে, "তোর চোদ্দ
পুরুষে যা কর্সেনি, তা করতে তো লক্ষ! হয ন1? হবেন জার দেয়, “আমার
চোদ্দ পুকষে কেউ ম্যাট ঝুলেশন পড়েছে 7?” এপ্র পব আর বিশ্বস্তবের বলবার
কিছু থাকে না।
গ্রাম ঘে হাব জন্য নঘ্--এ ধারণা হরেনেণ মাথায় কোথেকে ঢুকল তা
কেউ দানে ন।। কিন সে এই আশাতেই অন্তরে বাতিবে প্রস্তুত হচ্ছে অনেক
দিন ধবে। এপ জন্যই সে গ্রাম্য শাঘার সঙে কলকাতার উন্চ।রণ মিশিয়ে
কথ। বলে। অশুপু তাই নয়, এপ সঙ্গে ইংরেজী শংদরও মিশেশ আছে। সে
জানে কথার সঙ্গে ইংবেজী ন| মেশীলে ভন্রলোকেনু ভাষাই হয় না।
গ্রাম হিটতৈষধী লোকেরা বিশ ম্তরকে বলে, “হবেনকে গায়ে আটকে রাখতে
পারবে না, দাসের পো। সময় থাকতে বিয়েটি দিয়ে ফেপ, নইলে অগ্থভাপে
কাটবে সারাটা দীবন।”
কিন্ধ হরেন বিষের প্রস্তাবে ক্ষেপে যায়। মাকে বলে, “গায়ের মুখ খু মেয়ের
অন্য নগেন আছে ।”
নগেন ওদের শরীতের ঘরের ছেলে । দুই শরীকে বিবাদ, যেমন হয়ে থাকে।
বিশ্বস্তর নকুলেশ্বর ছুই ভাই, কি এখন ওদের সবই আলাদা | বিশগর চতুর,
নকুলেশ্বর সাদাসিদে। স্থৃতরাহ একই জমিজমার উত্তপাধিকাপী হয়| সত্বেও
নকুলেশ্ববের অবস্থা খারাপ। নকুলেখর ছোট থাকাতেই বিশ্বস্তর বাকী খানায়
সম্পত্তির অলেকখানি অংশ নিলামে চড়িয়ে বেনামীতে আত্মলাৎ করেছে।
৮
১১৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্ন-গল্প
তাই ওষ্বের দেমাক একটু বেশি! ছেলেদের মধ্যেও এই বিষ ছড়িয়েছে।
হরেন নগেনকে ছোট নজরে দেখে । ওকে তাচ্ছিল্য করে। নে জন্ত নগেন
দাস ওর মুণ্ডপাত করে, কিন্তু বাইরে কিছু করতে পারে না। পড়াশোনার
দিক দিয়েও ও হরেনকে নিচে ফেলতে পারে না, সেইজন্য মনে মনে জলতে
থাকে, হিংসা! জেগে ওঠে ওর মনে, কিন্গ সে অসহায়ের হিংসা । স্ৃতরাং সে
যতই চেষ্ট/ করে হরেনকে ছাড়িয়ে উঠতে, ততই মে আরও যেন নিচে পড়ে
ষায়। হরেন দেখতে দেখতে ইংরেজীতে অনেক উন্নতি ক'রে ফেলল, নগেনের
সেই কারণেই ইংরেজী ভাষার উপর দ্বপা জন্মাল। হরেন প্রাণপণে শহুরে হযে
উঠল, নগেন আরও বেশি ক'রে গ্রাম্য ভাব ফুটিয়ে তুলল তার চালচলনে।
ইতিমধ্যে সামান্য একটি ঘটনায় হরেন গ্রামের মধ্যে রীতিমতো একটি
উত্তেজনার স্থট্ট্রি কবে বসল। ঘটনাটি এমনই অপ্রত্যাশিত এবং অতকিত ঘে
মুহূর্তকালের জন্য হবেনের শত্রু মিত্র সবাই শ্ুস্ভিত হয়ে গেল।
হরেন গ্ীমারের এক সাহেবের সঙ্গে ইংরেজীতে কথা বলে এসেছে! বাপরে,
কি কাণ্ড! স্বয়ং হেডমাস্টার পর্যন্ত ভম্ম পায় সাহেবের সামনে যেতে! পথ
চলতে দবাই নবিম্ময়ে হরেনের দিকে চেয়ে থাকে! সাহেব আর হরেন
মুখোমুখি, সেই অকলিত দৃশ্ঠটি কল্পনায় ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে।
অন্য ছেলেদের আর মাথা উচু ক'রে চলবার উপায় রইল না। সবাই বলে,
বিশ্বতর দাসের ছাওয়াল ছাওয়াল নয়, হীরের টুকরো । আর তোরা হতভাগারা
সব অকালকুম্মাণ্ড।
চক্রবর্তীর সঙ্গে দত্তের দেখা ।
“ওহে শুনেছ ?”
“আজে দাঠাকুর, কে না শুনেছে?"
একদল ছেলে পাশ দিয়ে ঘাচ্ছিল, চক্রবর্তী তাঁদের ডেকে বলল, "মুখে
একেবারে কালি মাখিয়ে দিয়েছে না? একই গায়ের ছেলে, ছোটলোকের
ছেলে, আর তার কাছে কি না তোদের মাথা হেট হল ?”
ছেলের দল কোনো রকমে মাথা নিচু ক'রে সবে পড়ল।
চক্রবর্তা দত্তের চোখের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে রইল, তারপর চারদিকে সতর্ক
দৃষ্টিতে চেয়ে চাপা স্থুরে বলল, “হারামজাদা ছেলে খিরিষ্টান হবে, গী ডোবাবে
বলে দিচ্ছি ।*
দত্ত মোৎসাহে বলল, “তাতে আর সন্দ আছে।”
প্রাতিঘোগ ১১%
হরেনের বহির্জগতের সঙ্গে যৌগাযোগ স্টিমারের মারফৎ বেড়েই চলল ।
কেউ তা রোধ করতে পারল না। এবং একদিন সবাই স্তভিত হনে শুনল
হরেন ছ্টীমারে উঠে কোথায় চলে গেছে।
চক্রবর্তা বলল, “শালা ছেলে গেছে না বাচা গেছে।”
দত্ত বলল, “আগেই বলেছি দাঠাকুর, অতি বাড় বেড়ো না ঝড়ে ভেঙে ঘাবে।”
সরকার বলল, “এখনও বিশ্বাস নেই বাবা, ফিরে এলে আরো! কি কেলেঙ্কারি
ক'রে বলে, ছুদিন সবুর ক'রে দেখ ।”
চক্রবর্তী প্রস্তাব করল বিশ্বস্তরকে কিছু সাস্বনা দেওয়া দরকার । বিশ্বস্তর
ওম্ হয়ে ভঁকা টানছিল! তার স্ত্রী একটু দুরে বলে ইশিয়ে-বিনিয়ে কাদছে।
চক্রবতী তাকে শুনিয্বে বিশ্বস্তরৃকে বলতে লাগল, “ভাবনার কি আছে এতে?
ও ছেলে তোমার ঠিক ফিরে আসবে।”
দও বলল, “তবে ছেলে সাহেব হবে”
সরকার বলল, “তাতে আর হয়েছে কি? হাতে না খেলেই হল।"
চক্রবতা বলল, "তাই বা খাওয়া যাবে না কেন? প্রাচিত্তির কারে
নিলেই হবে।”
ঘটনাটি নিশ্বস্তর পরিবারের পক্ষে ধফতই মর্শীস্তিক হোক, গ্রামের সবাই
বেশ একট! উত্তেজনাপূর্ণ আরাম অনুভব করতে লাগল। নগেনের পক্ষেও
ঘটনাটি এক রকম ভালই হল। হুরেনকে পে শক্র মনে করত, সে শক্র সরে
গেল। তদছৃপরি গ্রামের লবাই এখন তার দিকে মনোযোগ দিপ। তারা
ওকে বোঝাতে লাগল হরেনের মতো ছেলে শ্রামে ছিল বলেই নগেনের উন্নতি
হয়নি। বলা! বাহুল্য নগেনও তাই মনে করে।
হবেনের পদম্ধাদা পাবার জন্য নগেনও ভাষার সঙ্গে ইংরেজী মেশাল;
লোকে বলল, এই তো উন্নতি হচ্ছে। নগেন ঘাড় কামিয়ে ফেলল, লোকে
বলল, হরেন্রে চেমে নগেন কিনে কম? নগেন উগ্র বুঙচডা জাম! পরল,
লোকে বলল, চমৎকার । কেবল এই অস্বাভাবিক বর্ণধাহুল্যে গ্রামের শুকনো!
কুকুরগুো৷ ভয় পেয়ে নগেনের পিছনে পিছনে তাড়া ক'রে ফিরতে লাগল ।
কিছুকাল বেশ ভাগ্লই কাটল। নগেনের ভাগ্যতণীখানা৷ বেশ উজিয়ে আসছিল,
এমন সময় এক দযকা বাতাসে তার পাল ছি'ড়ে তরী মাঝপথে ঘুরপাক খেতে লাগ্ুল,
সম্পুর্ণ ঘে ডুবে গেল না সে কেবল নগেনকে নিয়ে আরও একটু খেলাবে বলে ।
মাস তিনেক পরে বিশ্বস্তরের নামে চিঠি এলো লিখেছে হরেন। এতদিনের
নিরুদ্দিষ্ট ছেলের উদ্দেশ পাওয়া গেল সত্যি সত্যি।
১১৬ পরিমল গো্বাধীর শ্রেষ্ঠ ব্ঙগ-গল্প
এই চিঠি সকলের আগে পড়ল পোস্টমাস্টার, তারপরে পোস্টম্যান, তারপরে
ভাকঘরে উপস্থিত সবাই । চিঠি বিশ্বস্তরের হাতে পৌছনর আগেই তার কাছে
খবর পৌছে গেল, হরেন কলকাত। আছে, এবং এক মদাগরি আপিমে চাকরি
করছে। আরও লিখেছে আপিসের সাহেবরা তার কাজে খুব খুশি স্থতরাং
ভবিষ্যতে খুব উন্নতির আশা আছে।
একট। বোমা এসে যেন ফেটে পড়ল।
“দসের বেটা ঘে তাক লাগিয়ে দিলে হে?”
“তথনই সন্দেহ হয়েছে মনে মনে, ও ছেলে একট! কিছু করবেই |”
চক্রব্ ক্রুত পায়ে বিশ্স্তবের বাড়িতে গিয়ে বলল, “ঘা ভেবেছি ঠিক
তাই হল কিন?”
দত্ত গিয়ে ফলাও ক'রে বলতেই লাগল, “আমি কিন্ত অবাক হইনি দাস
মশায়। বুঝলেন না? এযে হতেই হবে। স্থব পৃৰ দিকে ওঠে এতে কি
কেউ অবাক হয়? তুমিই বল ন। ?”
একবার চঞ্বতী বলে, একবার দন্ত বলে। কেউ সহজে উঠতে চায় ন| |
চক্রবতখ মনে মনে অধীর হয়ে বলল, "ও, চল এবারে উঠি ।”
দও ধলল, “আপনি এগোন, আমি একটু পবেই যাজ্ছি।”
চক্রবতগ উঠে যাবার পর ক'দিন আগেক প্রস্তাবিত হালা তটা আক চেয়ে
ব্সল। গোটা দশেক টাক1 আজ্জ তাঁকে দিতেই হবে।
বিশ্বপ্তর খুশি ভাবেই টাকাটা তাকে দিয়ে দিণ। পূবেকাণ অনাদায়ী
পাঁচট। টাকার কথা আর তাৰ তৃলতে ইচ্ছে হল না।
দত্ত চলে যেতে না৷ যেতে চক্রবর্তী এসে তারও কিছু শিব্দেশ পেশ কবে
রাখল।
হবেনই ঘষে ভবিষ্তুতে গ্রামের একমাত্র ভরসা! এ বিষয়ে কাগো আর সন্দেহ
নেই, তাই তারা অতি নিষ্ঠা সর্পণে হরেনকে উপলক্ষ কবে তাদের ভবিষ্যৎ
স্বপ্ন গড়ে তুলতে লাগল । এবং অবসর পেলেই নগেশের বাড়ি গিয়ে
ন্কুলেশ্বরকে বলতে লাগল, “ছেলেকে আর গাধার মতো পড়িয়ে লাভ কি?
ও সব ছাড়িঘে চাষের কাজে লাগিয়ে দাও ।”
ব্লা বাছন্য বিশ্বস্তরের প্রতি তাদের আহ্গত্য প্রকাশের এ এক নিষ্থব
গ্রাম্যপন্থা ছাড়া আর কিছুই নঘ।
ন্গেন অত্যন্ত আহত হয়, তার পড়া এগোয় না, মনে হয় গ্রাম ছেড়ে
পালিঘ্ে ঘায়। কিন্তু কোথায় দে যাবে? বাইরে যাবার পথ তার বন্ধ,
প্রাতিঘোগ ১১৭
বাইবের সহান্বভৃতি সে পায় না, এমন অবস্থায় বাধা হয়েই লে খরের দরজা
বন্ধ ক'রে পড়াশোনার মধ্যে নিঙ্জেকে ডুবিয়ে দিল, এবং থারাপ ছাত্র হওয়া
সঞ্ধেও যধাসময়ে মাটিকুলেশন পাস করল । এ ঘটনাও দাদ-পরিবাবের পক্ষে
স্মরণীয়, কিন্ব তবু কোনে! উত্সাহ মে পেল না একমাত্র বাপমায়ের কাছ
ছাড়া । নকুলেশ্বর ওকে বুঝিয়ে বলল, “ভাগা যখন এই দিকেই ফিরেছে তখন,
চালিয়ে ঘা যতদূর পারিস |”
নগেন৪ বুঝে দেখল, এ ছাড়া বড় হবার আর পথ নেই। কালক্রমে
আউন পল করতে পানলে গতম মধো কিছু খাতির পাওয়া ঘাবে--তার
আগে কিছু হবে বলে বিশ্বাস হয় না। যুদ্ধের বাঙ্গারে কষ্ট করেও পে আই-এ
পড়তে গেল জ্লো-শহবে ।
স্থদীর্ঘ দ্ট বছর গেল। বডই ছুঃখের ছুটি বইর। কিম্থপে সকল ছুঃখ
ভূলে গেল ঘখন লে জানতে পারল আই-এ পরীক্ষায় পে পাস করেছে।
এই দ্রন্হারে ছপেনও বহুদূর এগিয়ে গেছে । সম্প্রতি তার চিঠি এসেছে,
যুদ্ধের কাজে খুব বড় 'একট। কনট্রান্টের কাছেব ভার সে পেয়েছে । জানাতে
ভোলেনি ঘে এই লৌভাগ্য সহন্ধে কেট পায় না, কিন্ধ সাহেবল| তাকে ছাড়া
আব কাউকে নিশান করে না বলে তাকেই এভ বড় দামিজের কাজট দধিয়েছে।
শুনু চিঠি নয়, হাঙ্গারখানেক টাকাও পাঠিয়েছে মে বাবার নামে । এই টাকায়
বাডিপান! নুতন কবে ফেল, আরও টাকা যা দরকার দ্বানালেই পাঠাব ।
এতবড় খবর এ গ্রামে ইতিপূৰে আপ আসেনি । এক হাঙ্ঞার টাকার
ইনশিওর করা চিঠি এ গ্রামের ডাকঘপ্ে অভূতপৃৰ । ভীষণ উত্তেজনার ত্য
হল এই ঘটশায়। এই উত্তেঙ্নাপ ঘৃখিপাকে নগেনের আই-এ পাপের কৃতিত্ব
কোথায় তলিয়ে গেল! এই উপলক্ষে নকুলেশ্বর সামান্ত কিছু উত্সবের
আয়োজন ক'রে আহ্মীযস্বজন বন্ধুবান্ধবকে নিমন্ত্রণ কল্পেছিল, কিন্ত তার! খা পয়া
উপলক্ষ ক'রে সবক্ষণ তবেনের গুণগানেই কাটিয়ে দিল। হরেন কন্টাক্টের
কাজ শেষ কপলে কি ভাবে গ্রামের চেহারা ফিপিযে দেবে, এবং কি কি করলে
গ্রাম শহর হয়ে উঠবে তারণ পরিকর্পনা তারা মুখে মুখে তৈরি কারে ফেলল
ন্কুলেশ্বরের বাড়িতে খেতে খেতে । ব্ল। বাহুল্য নগেন সম্পর্কে তারা একটি
কথাও বলল না।
দাল-পরিবারে কেউ আই-এ পাস করে নি এটা মন্তবড ঘটনা, কিন্ু দাসবংশে
কেউ সাহেবের কপালাভ করে নি সেই ঘটনাই আকন সবচেয়ে ঝড় হয়ে উঠল ।
বার্থ হল নগেনের আই-এ পাস কর]।
১১৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ ব্যন-গ্
এই আঘাত প্রচণ্ড বেগে নগেনের মনে এক ধাক1 মারল । সে হঠাৎ
কঠিন হয়ে উঠল । শপথ করল মনে মনে এ অপমানের প্রতিশোধ নিতে হবে।
দিনের পর দিন চলে হায়। যুদ্ধ থেমে গেছে, লোকে সামস্সিকভাবে
স্বত্তির নিশ্বাস ফেলেছে, কিন্ত নগেনের মন ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে
উঠছে। ভাগাদেবতা তাকে কোন্ পথে টানছে তা নে জানে না, কিন্তু এক
দৃশ্য প্রবপ টান সে অনুভব করছে দিনের পর দিন।
ইতিমধ্যে হরেনের অলৌকিক সব কীপ্তি কথ! গ্রামে ছড়িছ্বে পড়তে থাকে ।
হবেন নাকি লাখ-লাখ টাক! জমিয়ে ফেলেছে, মোটর গাঁড়ি কিনেছে, বাড়িও
নাকি কিনেছে কলকাতা শহরে ।
কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। যুদ্ধের বাজারে টীকা লুটে নেবার ষে
সুযোগ পাওয়া গেছে তা এবারে কোনো চতুর লোকেরই হাতছাড়া হয়নি।
কত ফ'ড়ে এই স্থযোগে বাড়ি-গাঁড়ির মালিক হয়েছে তার সীমাসংখ্যা নেই ।
ধূর্ত হরেনের পক্ষে লাখ-লাখ টাঁকা করা কিছুমাত্র অসম্ভব ঘটনা নয়।
বিশ্বস্তরের কোঠাবাড়ি তৈরি হয়ে গেছে । তাকে কিছুই ভাবতে হঘ্নি;
চক্রবর্তী, দত্ত, সরকার-- সবাই মিলে বাড়ি তৈরির সমস্ত বঞ্চাট স্বতঃপ্রবৃত্
হয়ে ঘাড়ে নিদ্বে বিশ্বম্তরকে উদ্ধার ক'রে দিয়েছে । রাজপ্ুত্রে বাব! হয়ে
নিজে এসব তদারক কর! শোভা! পান্ব শা, এ কথা ওরা বিশ্বন্তরকে ভাল কবেই
বুঝিয়ে দিয়েছে, এবং এই নিংস্বার্থ পাচহাজার টাকার কাঙ্ছে তিন মুকবিব মাত্র
হাজারখানেক টাকা "গায়েব করতে পেরেছে, তার বেশি কিছু তারা লোভও
করে নি, নেয়ও নি।
নগেনের বাড়িতেও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে । তার বাবা আর বেঁচে নেই।
হঠাৎ কলেরার আক্রমণ হয়েছিল । নগেনকে দুএকজন সাস্বনা দিতে এসেছিল ।
চক্রবর্তী দুঃখ ক'রে বলেছিল, “হরেন ঘথন গীয়েব উন্নতির ভার নেবে তখন
পীয়ে আর কলেরা হবে না। আহা, নকুলেশ্বর সে কটা দিন যদ্রি বেঁচে যেত!”
বাড়ি তৈরির খবন্ পেয়ে হরেন আরও টাকা পাঠিক্নে আদেশ করেছে,
স্বীমার ঘাট থেকে বাঁড়ি পর্যস্ত রাস্তাটা ভাল ক'রে তৈরি করিয়ে রাখতে,
আসখানেক পরেই মে একদিন দেশে যাষে।
রাজপুত্র দেশে আসবে, এ খবর গ্রামের মধ্যে একট! শিহরণ জাগিয়ে তুলল।
চক্রবর্তী সবেগে এগিয়ে এলো বান্তা তৈরির জন্ত । হাজার টাকার বরাচ্দ।
চক্রবর্তী তার প্রাপা অর্ধেক অংশটা উজ্জ্বল ক'রে দেখতে লাগল কলনার
'চোখে। কিন্ত হল না। দত্ত এবং সবকারকে বাদ দেওয়া গেল না, কাজেই
প্রতিঘোগ ১১৯
ববাস্ত) ঘতটা ভাল হতে পারত, ততটা ভাল হল না। যেটুকু হল দেও
ওদের পিতৃপুক্রুষের পরম লৌভাগান্শত ক'দিনের বৃষ্টিতে ধুয়ে পদ্মায়
মিশে গেল।
হয হায় করতে লাগল সহাই। চক্রবর্তী দত্ত ছু-দফায় দুঃখ পেল। প্রথমত,
বাস্তা ভেঙে গেল; দ্বিতীয়ত, গেলই যি তা হ'লে সেই রাস্তার জন্কে সাড়ে
তিন শ টাকা খরচ করল কেন? শ'খানেক টাকার উপর দিয়েই ঘেত। এপ্দিকে
হাতেও থাকত তিনভাগে তিনশ টাকা ক'বে।
গতশ্য শোচনা নাস্তি-_চক্রবর্তী পরবর্তাঁ চালের জন্য প্রস্তত হতে লাগগ।
লে সংস্কৃত বই খুলে ভাল ভাল আশীর্বচন মুখস্থ করতে লাগল প্রাণপণে, হরেন
এলেই মেগুলে৷ তার মাথায় বর্ষণ করবে, এবং তারই জোরে নিজের একপাল
অপদার্থ ছেলেকে মানুষ করবার জন্য তার হাতে সম্প্পণ করবে।
দত্তও বসে নেই। সে তোরণ তৈরির কাজে লাগল । সরকার শোভাঘাজ্রার
বন্দোবস্ত করল। হরে'নের মতো স্থসস্তান যে স্থলে যান্ুষ হয়েছে সে স্ুলও টুপ
ক'রে রইল না, তারাও হরেনকে উপযুক্ত অভ্যর্থনা করবে বলে প্রস্তুত হল।
পাবনা শহরে গিয়ে স্কুলেব অভাব অভিযোগের তালিকা মহ রিপোর্ট এবং
অভিনন্দনপত্র ছেপে আনল । আশ। ক'বে রইল হাঁঞ্গীপ পাঁচেক টাকা আদায়
কর] যাবেই । স্কুলের নাম হরেন্দ্র হাই স্কুল দেওয়। হবে এই রকম একটা প্রস্তাব
করবেন হেডমা+টার, কিন্ধ সেকথা আর কাউকে জানালেন না।
কিন্ত সব গোলমাল হয়ে গেল। কে জানত হরেন এক মোটর গাড়ি সঙ্গে
নিয়ে আপনে? সে আগে পাবনা এসেছিল একট। জকরি কাঙ্গে, অনেক
ঘোরাঘুরি করতে হবে দেজন্য ছোট একখান! গাড়ি নঙ্গেই রেখেছিল। তা
ছাডা গ্রামে এসে মোটবে করেই বাড়িতে পৌছবে এ কল্পনাও ছিল। কিন্ত
স্টীমার থেকে নেমে পথের অবস্থা দেখে মে তো আগুন। এত টাকা খরচ কনে
এই পথ । খীক-_সবাই খীফ,। চক্রনর্ভা কাপতে লাগল, তার আশীর্ষচন নব
ভুল হযে গেল। সরকার এনং দত্ত কোনো রকমে বাকী অনুষ্ঠানের ভিতর
দিয়ে শেষ পর্যস্ত পান্ধী এনে হরেনকে বাডিতে তুলল । হবেন হেঁটেই যাবে
বলে উদ্যত হয়েছিল, কিন্ত ভার পথরোধ ক'রে তাকে এত বড হীন কাজ থেকে
সবাই বাচিয়ে দিল।
হরেন রাজা হয়ে ফিরেছে এই খবরটাই গ্রামের পক্ষে ঘথে্ট ছিল, কিন তার
মোটব্র গাড়ির খবরটা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল চারপধিকের গ্রামে । যুদ্ধের
রুপায় গায়ের লোকেরা এয়ারোপ্লেন দেখেছে, কিন্তু মোটরকার আজ পর্যস্ত
১২৩ পরিমল গোখানীব শ্রেষ্ঠ বাহ-গল্প
দেখেনি । হরেন গিষে বাড়িতে উঠল, কিন্ধ হাজার হাজার নরপারী পল্সানদীর
ধারে এলে জমল মোটরগাড়ি কেমন দেখতে ।
হবেন বাঁড়ি থেকে কোথাও বেরোল না। প্রথম থেকেই তার মেজাজ
বিগড়ে গেছে । তারপর বাড়ির চেহারা দেখেই বুঝতে পারল বাড়ির কণ্ট্টাক্টে
কত টাকা চুরি হয়েছে । মে নিঙ্গেও কণ্টাক্টের কাজ করে, “মাসতৃতো৷ ভাইদের
পরিচয় তার কাছে আর অজানা থাকবার কথা নয়। হরেন গুম্ হয়ে রইল ।
তার কাছে কেউ যেতে সাহস করল না, সবাই তার গাড়ি দেখতে ঝুঁকে পড়ল।
আশেপাশের সমস্ত গ্রামে একটা বিপ্লব বেধে গেল। দৈনন্দিন বাজার ঠিকমত
বনল না, কারো বাড়িতেই যথাসময়ে উন জলল না।
কিন্তু এই মহা উত্তেজনা আব হৈচৈ-এর ভিতর নগেনের স্থান কোথায়?
হবেন তাব কথ। একবার গ্িজ্ঞাপা৭ করল না। এটা অবশ্য দে আশা করেনি-__
কিন্ত আজ তাঁর মনট। অত্যন্ত বিপগ্ন হয়ে পড়ল । ঘেছু-একজন বন্ধু লোক হিল
তারাও আজ সমস্ত দিন তার কাছে এপে। না, তারাও মোটর গডির উত্তেজনায়
কাওজ্ঞান হারিয়েছে! এই ছুঃখট। তার বড্ড বেশি বেছে উঠল মনে। মনে
ষেন বেদনার ঝ বয়ে চলেছে । তাব বাবার কথা মনে এলো। তার নিচু মাথা
নিচু হয়েই ছিল চিরধিন--তাঁর মায়ের মক বেদনারই বা কোন্ সান্বনা দিতে
পারল সে?
কোনো দিকেই তার কোনো জোর ছিল না, কিন্ধ জেদ ছিল। এই জেদের
বশেই সে আই-এ পাস ক'রে বি-এ পড়তে উদ্যত হয়েছিল, কিন্ক আজ তার
মনে হল তাব্র জীবনের গতি চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছে । এই অবস্থায়
সে পড়ে থাকবে না কোলো মতেই । চারদিকের নির্মম ঘ| খেষে খেয়ে তাব
কঠিন জেদ কঠিনতর হয়ে উঠতে লাগল ।
মোটর গাডির জন্য তার এই অপমান? "
আচ্ছা-'.তাই হোক ""
নগেন অস্পষ্ট স্বরে আপন মনেই এক অভাবনীয় শপথ ক'রে বলল । গ্রামা
আবহাওয়ায় ছোটলোকদের্ মধ্যে বর্ধিত নগেন্ এই সব তুচ্ছ মান অভিমানের
উপর দিয়ে আঙ্জ আর উঠতে পারল না।
(বিছানা থেকেও মালখানেকের মধ্যে প্রায় আর উঠল না। মাসখানেক পরে
তাকে দেখা গেল পাশের গ্রামের এক জোতদারের বাড়িতে ধেতে।
ক'দিন ধরে পর পর লেখানে গেল। কিন্ত তার ফল ষাহল তা আত্া-
হত্যারই নামাস্তব
প্রতিধোগ ১২১
গায়ের লোকেরা ঘদ্দিও হরেনের কাছ থেকে বিশেষ কিছু আর আশা করছে
না, এবং তাকে ঘুঘু ছেলে বলে অভিহিত করেছে, তবু তারা আজও নগেনেন
প্রতি প্রসন্ন হতে পারল ন!। তারা তবু বলতে লাগল, “নগেনের মতো হিংস্থুটে
তারা আর দেখেনি-__এই হিংসেয় তার মথ| থাবাপ হয়েছে ।”
কিন্ত কথাটা তাব। মিথ্যা বলেনি। নইলে এমন সম্পত্তি কেউ এত শস্তায়
বিক্রিকরে ? এমন মাটি কেউ মাটির দরে বিক্রি করে? একশ বিঘে খামার
জমি মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকায়? কেন, হরেনের কাছে চাইলে এই
টাকাটা সে অমনি দিতে পারত না? হাজার হলেও ভাই তো?
নগেন বিষাক্ত হাসি হাসল এ সব শুনে ।
চক্রবর্তী একদিন এসে বই দরদেব সঙ্গে বলল, “নির্বংশে হতচ্ছাডা, আমাকে
একবার জাঁনালি নে ?”
চক্রবতখীর দিকে নগেন অগ্নিময দৃষ্টি নিক্ষেপ কবল ।
চক্রবর্তীকে ন। জানানো তার নিতান্তই অপবাধ--জ্ানাচে সে নিদ্দে কিনতে
পাঁরত। হাতে তাব কিছু কীচা টাকা এসেছে সম্প্রতি ।
কিন্দ নগেন এক মুহ্ুতে সকল বন্ধন ছিন্ন ক'রে জীবনে আন্গ এই প্রথম
নিভীক ভাবে মাথ। তুলে দীডাল মুক্ত আকাশের শিচে। আজ কারে! জন্য
তার কোনো ভয় নেই, লজ্জা নেই, সঙ্কোচ নেই ॥ এতদ্দিন সে পডে পড়ে বিনা
প্রতিবাদে অসহায়ের মতো মার খেয়েছে, কিন্ত ঘাজ সে মারনার জন্য প্রস্তত।
তার মনের বন্ধন যে মুহর্তে খুলে গেছে, সেই মুহূর্তে সে সম্পূর্ণ নতুন এক শক্তি
অন্র৬ব করেছে নিজের মধ্যে । এই শক্তি আধম্য, এবার। এ তাকে কোন্
পথে টানবে তা সেঞানে না। এরই অতি প্রবল আকর্ষণে মে ঝাপিয়ে পল
অজানা অন্ধকার জগতে ।
কলকাতা শহর । নগেন ছুটে চলেছে মোটরে । আজ সে গাডির মালিক!
মোটর গাড়ি হলে কৌলিন্য হয়, না? তার মনে পৈশাচিক আনন্দ। এই
গাড়ি নিয়ে সে গ্রামে ফিরবে । কিন্ম তার আগে হবেনের কাছে তার কৌলিন্ত
প্রমাণ করে যাবে। আজ এক মুহুতের জন্ত ও সে হরেনের সমপদস্থ হবে এই
কল্পনা তাকে উন্মাদ ক'রে তুলেছে । হরেন চমকে যাবে তাকে মোর্টরে দেখে !
ভাকে খাতির করতে এগিয়ে আসবে | মুর্খ, টাকার মধাদ| ভিন্ন আর কোনো
মধাদা সে বোঝে না।
নগেনের মন ক্রমশ হিংস্র হয়ে ওঠে।
১২২ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যদ-গল্প
ড্রাইভারকে বলে, “আরও জোরে চালাও, আরও জোরে।” “কত দুর পথ?
পথ যে ফুদবোয় না?”
অধৈর্ধে সে ছটফট করতে থাকে ।
ঠিকান! সে ড্রাইভারকে দিয়ে দিয়েছে। সে ঠিক পথেই নিয়ে চলেছে গাড়ি।
বছ ছুটন্ত গাড়ির সংঘর্ষ বাঁচিয়ে বেআইনী গতিতে ছুটে চলেছে সে।
এবই জন্য সে যে তার সমস্ত ভবিষ্যৎ বাঞ্জি রেখেছে।
আর কত দূর ?'.
গাড়ি চৌবঙগগী ছাড়িয়ে, কালীঘাট ছাড়িয়ে, টালিগঞ্জেই এলে পড়ল।
গাড়ির বেগ কমল | ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট ম্বরের কাছে এলো, আরও ধীরে প্রবেশ
করল ফটকের মধো।
ভিতরে প্রশস্ত মাঠ "তুল হল না তো1?...এখানে এয়ারোপ্রেন কেন ?-
নগেনের জকুঞ্িত হল |
গাড়ি দ্বিধা গ্রশ্তভাবে এগিয়ে চলল ।
এয়ারোপ্রেনধানা তথুনি রওনা হচ্ছে। কিন্তু এ ঘে ছুটে আসছে তাদেরই
দিকে! মাটি থেকে একটু উচু হল, আরও উপরে উঠল! প্রোপেলারের
আওয়ার্জে কান ফেটে যাচ্ছে। মুহূর্তে এয়ারোপ্লেনখানা সৌো-ক'রে তার গাড়ির
গ্রায় পনেবে। ভাত উপর দিয়ে কামানের গোলার মতো ছুটে উপরে উঠে গেল।
কোথায় এলো সে?
গাডিস্থন্ধ এগিয়ে গিয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল, "হরেন কোথায় ?”
সম্ম্খস্থ ক্ষুত্ব জনতার মধা থেকে একজন আকাশের দিকে চেয়েই বলল,
"এ ষে উপরে!”
আর একছন উচ্ত্রন্ত্বিত ভীবে বলে উঠল, "দেখ দেখ এরই মধ্যে কত উপরে
উঠে গেল, দেখ।”
নগেম টলতে টলতে গাড়ি থেকে নেমে আকাশের দিকে চাইল । কিন্ত
কোথায় এয়ারোপ্রেন ?-."সমন্ত আকাশ এত অন্ধকার কেন ?-."পায়ের নিচে
থেকে পৃথিবী সরে যাচ্ছে কেন ?.-"
স্যতির পূর্বে সমস্ত পৃথিবী ধৌয়াটে ছিল_-পৃথিবী কি আবার সেই অবস্থান
ফিরে গেল 1"
“কত উপরে উঠে গেল' এই শব্দটি শুধু সহস্র স্থচের মতো! তার মর্ষে বিধতে
লাগল_ চারদিকে আর কোনো শব নেই, কোনো দৃশ্ট নেই ।
ফিরে চল' কথাটি শুধু উচ্চারণ করবার মতে! চেতনা তার তখনও
অবশিষ্ট ছিল।
( ১৯৪৬)
০ফেল
অরূপকুমার গত হবছবের মতো এবারেও সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি ক'ৰে
পিতাকে বলল, “বাবা, আমি ফেল করেছি ।*
পিতা অক্ষমকুমার শুনে গম্ভীরভাবে শুধু বললেন, "1
অরূপ কিছুক্ষণ লঞ্জিত ভাবে মাথা নিচু ক'রে রইল; তারপর ধীরে ধীরে
মুখ তুলে কিছু বলতে গেল, কিন্তু বলা হল না। নে দেখতে পেল তার পিতার
মুখখান। চালি চ্যাপলিনের মতো বেদ্দনাহত। সে সরে পড়ল।
সন্ধ্যাবেলা আবার পিতাপুত্রে সাক্ষাৎ । অরূপের সলঙ্জ ভাবটা কেটে
গেছে। সে লহঙ্গেই পিতাকে বলল, “আমাকে আব পড়তে বলবেন না,
আমি এখন কিছুকাল বাইরে একটু ঘুরে বেড়াতে চাই । ঘুরে বেড়াতে বেড়াতেই
ভবিষ্যৎট। চিন্তা ক'রে নেব।”
অক্ষয়কুমার আপন মনেই যেন ব্লতে লাগলেন, “কলকাতার পথে পথে
এত হঙ্গামা, ছুটিক্ষের জগ্ত এত ভিখারীর মৃত্া, তার মধ্যে ঘে পডতে পার শি
দে তো বুঝাতেই পাবছি।”
অরূপ যেন পে কথার প্রতিবাদ ক'রে বলল, “মুনের ছুভিক্ষ আরও কঠিন, বাব।।*
“সে আবার কি?”_ অক্ষয়কুমার চমকিত হলেন। কথাটা কার ভাল
লাগল লা।
মরূপ বলল, “মনের ছৃতিক্ষে আত্মার মৃত্যু ।”__বলে দী্থনিশ্বান ফেলল ।
অক্ষরকুমাৰ গশীরতর চিন্ত।ক্রিষ্ট হয়ে ঘরে গিয়ে বসে পড়লেন। অব্পের
মনে হল যেন বিমর্ষ বান্টার কীটন সামনে থেকে সে গেল।
অবূপকুমার যে-পথে পা বাড়িয়েছে সে-পথ পরীক্ষা পাসের পথ শয়। কিন্ত
দে কথ। মে পিতাকে কেমন ক'রে বলে ?_-কলকাতার সেই সবগ্রাণী স্মৃতি!
উঃ, দেশত্রমণ করলেই কি তাযাবে। তবু সে চেষ্টা করবে।
কলকাতা শহর তার নিম়ন্্িত আলোকের রহস্যময় পথে তাকে যে টেনে
বের কবে আনে প্রতিদ্রিন। তারপর মে গিয়ে পৌছয় সম্পূর্ণ এক অন্ধকাৰ
আবেষ্টনে। সেইখানে তার সম্মুখে উদ্ভাদিত হয়ে ওঠে এক বিচিত্র আনন ময়
জগৎ। সেখানে স্বর্গায় সঙ্গীত, দেখানে স্থখদুঃখ হাপিকান্নায় রচিত মৃহামানবের
বিশ্বয়কর সংসার- সেখানে মানুষের হৃদঘ্নের আবেগময় অনুভূতি তার হৃদয়ে
অপূর্ব স্পন্দন জাগিয়ে তোলে।
১২৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ -গন্প
এই রহস্যের জগতের সঙ্গে অরূপের সমস্ত রক্তকণিকা আত্মীয়তা গড়ে
তুলেছে, এ থেকে দূরে পালাধার তার উপায় নেই।
দেশ অমণ ?
মুখে বলল বটে, কিন্তু তার সমস্ত সত্তা ভিতরে ভিতরে একথার প্রতিবাদ
করতে লাগল। যাঁকে দে হৃদয় নমর্পণ করেছে তার স্থৃতি মন থেকে মুছে ধাবে
না, থেতে পারে না।
“আপনি যদি দ্রঃখ পান, তাহ'লে আমি আবার কলকাতাতেই ফিরে যাব ।”
একটু পরেই অরূপ তার পিতাকে গিয়ে বলল।
বিটায়ার-করা। অক্ষয়কুমার মধুপুবের তার নবনিক্িত কুটারে বসে পুত্রের এই
কথাম্ব অনেকখানি তৃপ্তিলীভ কবলেন ।...কিন্ধ মনের দ্রতিক্ষ । তার মানে কি?
__ কথাটা! তার মনের কোণে একনট তিল পরিমাণ স্থান অধিকার ক'রে রইল।
কলকাত1 শহরে অবপকুমার সে কোন্ আকর্ষণে বাধা পড়েছে? সে
আকর্ষণ সিনেমার । কলেজে পড়তে পডতে মাঝে মাঝ সে বন্ধুদের সঙ্গে
সিনেমায় গেছে । প্রথমে সষ্টাহে একদিন, তাঁর পব ছ্ধিন, তারপব প্রত্যহ
এবং এক1। সিনেম। তাকে গ্রাপ করেছে।
সিলেমাগন্পের নায়ক নায়িক। তার পরম আত্মীয় । তাদেব হদয়ের ঘাত
প্রতিঘাত তার হৃদয় আলোডিত করে। জীবনের বহু শ্বপ্ন সিনেমার ভিতর
দিয়ে লে সফল হতে দেখে । দিনেমাব অভিনয় তার মনে নতুন স্বপ্ন জাগায়।
অভিনয় লোকের কেন ভাল লাগে, আর্টের আবেদন কোথায় সার্থক, এ সব
বিষয় পাঠ্য পুস্তকে পড়তে গিয়ে মে চমকিত হয়েছে । তাতে দে পেষেছে
নিজেরই সমর্থন । য| ছিল বিশ্লেষণমাত্র, তাই তাকে আর বেশি ক'রে প্রেরণা
জ্গিয়েছে। অভিনয়-শিল্পের প্রতি তার আকর্ষণ আরও বেডে গেছে ।
মান্তষের জীবনে ঘে সব স্ত্রবদুঃখের থেলা মে অভিনয়ের ভিতর দেখতে
পায্প, নিজের জীবনের সঙ্গে তা মুখাভাবে জড়িত নঘ্ব। সেখানে যে অর্ভেদী
দুঃখের দৃশ্য দেখে, তাতে তার চোখে জল আসে, কিন্তু তবু তার সঙ্গে সে
নিজে সম্পফিত নয়। যে হত্যাকাণ্ড এবং অপরাধমূলক অন্যান্য নিষ্ঠুরতার
বীভত্লত! তাকে আহত করে, তা থেকে তাকে দূরে পালিয়ে যেতে হয় না।
আক্ষিকাঁর অর্গলের ভীষণ-দর্শন হিংল্্র সিংহের সম্মুথে সে অবলীলা ক্রমে বসে
থাকতে পাবে। নরখাদকদের পল্লীতে, আগুণ জ্বেলে, খন তার! কোনো
শিকার কর! মানুষকে পুড়িয়ে খাবার আগে উত্সব করে, তার মধ্যে বসে
থাকতেও তার ভয় কবে না।
ফেজ ১২৫
জীবনের লমস্ত স্ৃপ্রী এবং কুষ্ প্রকাশ একই ক্জাস্গাম্ম বদে এমন নিশ্চিত
মনে দেখার মোহ থেকে সে নিস্তার পাবে কিমে? মিনেমা দেখতে দেখতে
সে নিজে কখনও প্রেমিক, কথনও অত্যাচারী ববর, কখনও হিংশ্র বাঘ, কখনও
সিংহের নঙ্গে একাত্মতা অন্রুভব করে।
অরূপের কাছে প্রথমে শিক্সের আকর্ষণই ছিল প্রধান, কিন্তু কিছুপিনের
মধ্যেই শিল্পীরা এসে তার মন অর্ধিকার করুল। হ্াপউডের সব শিল্পী। তাৰ
তার সমন্ত সত্তাকে নাড়া দিতে লাগল। সে ফিলদফিতে মন দিতে পারে না,
ইকনামক্মে মন দিতে পারে না। শেক্সপীয়ার পডতে গেলে আবও বিপদ ।
প্রতোক্টি নাটকীয় চরিত্রের সর্পে সঙ্গে একটা আনন্দব্দশামাশ্রত ম্বৃতি জেগে
ওঠে তার মনে। রোমিও জুপিয়েট পড়তে শরম| শিয়ারার, টোঁমং অব দি শ্র
পড়তে মেরি পিকবোড। লক্ষ্য পথে প। বাঙাতে প্রতি পদে এক একটি ফুল
ফুটে ওঠে, ফুলের শোতায় গন্ধে মন মেতে ওঠে, পক্ষ্যেব কথা তুলে ঘয |
আচ্ছ॥ খেল কবার মূলে কি এহ সিনেমা? কিন্তু ফেল কাপ দামেই
তো মে জীবনের সাখকতা বিনেছে। যেল করা কিলজোকপ? তাষদি
হয় ৩1 হ'লে ।সনেমা তাৰ কারণ শম্ব। আপ যদি সিশেখাই ফেল কার কীণ
হয় তা হ'লে সে বেন দন্জ জন্ম ফেল কপে।
কিন্ত আবার লে পগাক্ষা তে রাজি হণ কেন? তাখবিছ্ভা যেখানে
এসে থেমেছে মেইখ।শেহ যে তার লীষ। এ কথায় ভাগ শন্দেহ নেই। সে ভাল
করেই জানে, সে বিদ্যায় বিশ্ববিদ্যা৭ আলয়ে বার্ধ খাপ মাথা খুঁডলেও ডিপ্লোম।
নামক প16চখেশণ্ের কাগলখান। তাপ ভাগো জুডবেন।।
কি্ত তবু অস্তবের আবর্ষশকে মে এডাতে পাল লা। এবাদে৪ সে
পরীক্ষা দিতে রাজি হল। বুছ্িমান পুত্রের বুদ্ধতে খুন ধর্ণ কেন সে খবর
পিতা জানতে পারলেন ন1। তিনি অণান্ত শ্বেহশাল বনেই কোনো সন্দেহ
তার মনে জাগেনি। তবে দ্ুবাব খেল কর্ণাতে পুত্রের উপর বিরপ্ত না হয়ে
তিনি পারেননি । চটেও গেছেন মাঝে মাঝে, কিন্ত প্রকাশ্যে নয় মনে মনে।
সে সময় মনের পা থেকেই অরূগ্ঠ জুতো বেপিয়ে অতি গোপনে পুত্রের
পিঠে গিয়ে পড়েছে।
সেই দিনই রাত্রে শুয়ে শুয়ে অক্ষয়ঞ্রমাগের মনে একটি কথ। হঠাষ খোচা
দিল। অরূপ তৃতীয় বার পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তাবে বাইবে খুরে বেডাতে চায়
কেন? তার মনে কিসের দুিক্ষ ?
এ কথার অর্থ কি?
১২৬ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ ব্যজ-গঞ্
এর ভিতর কি কোন ইঙ্গিত নেই?
সে কি মর্সাহত ভাবে এই কথাই বোঝাতে চায়নি যে সংলারে আর ভার
যন নেই? কিংবা ঘরে?
অর্থাৎ সে কি..'অক্ষয়কুমারু চকিতে বিছান! ছেড়ে উঠে বমলেন।
চিন্তার আভা মাত্রে তার সমস্ত রক্ত হংপিণ্ডে এসে জমা হওয়াতে দহ বন্ধ
হয়ে আসছিল, তাই উঠে বসে চিন্তাটি সমাপ্ত করলেন:-*সন্ন্যাসী হতে চায়?
গভীর রাত্রে অক্ষয়কুমারের চোখে আর এক অন্ধকার নেমে এলো। তিনি
হঠাৎ কেমন যেন অস্থির হয়ে পড়লেন ।
তিল পরিমাণ সন্দেহট] ক্রমেই তার মনে তাল পরিমাণ রূপ নিতে লাগল।
তিনি দেখতে পেলেন পুত্র জটাজুটধারী হয়ে পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে
উপাম্ কি?
একই মাত্র উপায় আছে; তাকে অন্রাস থেকে ভ্রষ্ট করতে হবে।
বিশ্ববিগ্ঠালয়ের পরের ধাপই যদ্দি হয় বিশ্বতৃবন, তবে তাকে সেই বিপজ্জনক
পদপাত থেকে বাচাতে হবে।
অক্ষমকুমার নিজে বিপত্বীক। ভেবেছিলেন পুত্র রুভী হওয়ার আগে গৃহের
শৃন্ততা তিনি যেমন ক'বেই হোক সহা করবেন। কিন্ত তা আর হল না।
পাত্রী এক রকম ঠিকই ছিল। অক্ষমকুমারের এক বন্ধুব কন্যা। তার
প্রতিই তার লক্ষ্য ছিল। মেম্নেটি ম্যাটিক পাল, বড় সুশ্রী, বড় সরল ।
মেম্বের দিক থেকেই এতদিন প্রস্তাব চলছিল, অক্ষয়কুমার বরাবন্ন বলে
আসছিলেন ছেলে এম-এটা পান করলেই আর কথা নেই। কিন্ত নাধ্য হয়ে
এখন তাঁকেই প্রস্তাব করতে হুল ।
কিন্তু হায়, তিনি জানতে পারলেন না, তিনি কি হারাচ্ছেন !
অরূপ শুস্তিত হল সব শুলে। মন তার একেবারেই প্রস্তত নয়। কিন্তু
বহু চেষ্টা করেও দে বুঝতে পারলে- বন্দোবস্ত এমন কঠোর ভাবে পাকা, ষে এ
থেকে তার শিষ্কাতি নেই।
চুপচাপ মাঠের ধারে বসে বসে সে কদিন ম্দ্লুটাকে প্রত্তত করতে লাগল।
ক্রমে বিবাহিত জীবনের কল্পনাট। তার কাছে ভালই লাগল । সিনেমাতেও
লে বিবাহদৃষ্ত অনেক দেখেছে। হ্ঠাৎ্পরিচয়ের পর প্রেমের পথে দ্রুত ধাবন
এবং শেষ পর্যস্ত বিবাহ।
কিন্তু'"*সিনেদায় প্রথম দৃশ্থেই যাদের বিয়ে হয় তারা তো৷ স্থধী হত্ন না।
তবে কিসেতৃল করবে? না না। ভুল সে করবে না। এর মধ্যে এক
ফেল ১২৭
অভূতপূব রোমাঞ্চ আছে। এ বেন আলো থেকে জন্ধকাবে-জানা থেকে
অদ্জানায় ঝাঁপিয়ে পড়া। আর এই তো বীরের পথ-_-এই পথেই সে জীবন
নাট্যের প্রধান ভূমিকার নামতে পারবে ।-..
বিবাহের পর বরবধূর প্রথম মিলন-রাত্রি।
অরুপের হৃদমে পুলক, মনে উন্মাদন1।...শীহারিকা | বেশ নামটি । ওকে
ডাক যাবে, মনোহারিকা !.' চোখ ছুটি ঠিক গ্রেটা গার্বোর মতে] । জুটে]
কামিয়ে স্থক্্ ধন্থরেখার মতো! ক'রে দিলেই কুইন ক্রিষ্টিন। !
অরূপ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল নীহারিকার মুখখানির দিকে ।"..কিন্ত
কি নিম্সে আলাপ করা ষায়?
সমশ্যা কঠিন ।...অরূপ বড়ই অস্বস্তি বোধ করতে লাগল | প্রথম বারেই
স্ত্রীর মনে রেখ(পাত করা চাই । সাধারণ কথায় চলবে না । প্রথমেই একটা!
নাটকীয় ভঙ্গী চাই। সিনেমা! ছবিতে দেখা সমজাতীয় দৃশ্বের কথা মনে আনার
চেষ্টা করল লে। কিন্তু কাজের সময় কৌনোট।ই কি মনে পড়ে »'*.তবে কি
মে স্ত্রীর কাছে হার মানবে? তার কাছে ছোট হবে?
অবশেষে মবীয়া হয়ে ডাকল, “শীহারিকা”__
নীহারিকার বুকে তখন আনন্দের ঢেউ ভেঙে পড়ছে। স্বামীর মুখেন
প্রথম সম্ভামণ। তাঁর নিজের নাম যেন একটি স্বতন্ত্র রূপ ধনে ভার কানে
ধ্বশিত হল।
“শীহারিকা”__
লীহারিকীর মুখে কোনে! কথা নেই ।
আবার ডাকল, “নীহারিকা |”
নীহারিকা অস্ফুট স্বরে বলল, “কি ?”
অপ্রত্তত অরূপের মুখ থেকে ফস্ ক'রে বেরিয়ে এলো] “তুমি 'শিনচ্কা।
দেখেছ ?”-_-অবূপ জানল না, তার বিবাহিত জীবনের ফাঁসীর হুকুম বেবিষে
এলো! তার মুখ থেকে ।
নীহারিকা নিরবাক।
"দেখেছ? কি হ্ন্দর, না?”
অরূপ বুঝতে পারছে প্রথম মিলনের ঠিক সথরটি সে লাগাতে পারছে নাঁ_
কিন্তু তবু যেন কোন্ এক অদৃস্ত অন্ধ শক্তি তাকে এই পথে জোর ক'রে ঠেলে
দিল।
১২৮ পরিমল গোম্বামীর শ্রেঠ বাজ-গল
“বল, নীহারিকা !”
নীহারিকা ভীতভাবে বলল, “কি বলব ?,
প্নিনচ কা?
“জানি ন।সেকি। দেখিনি।”
নীহারিকা শিঙ্দের অজ্ঞতাজনিত মহা! অপরাধে এতটুকু হয়ে গেছে।
অন্ধপ স্তপ্তিতভাবে দেখছে তার অজ্ঞতার পরিধি ।
্রেটা গার্বোকে দেখেছ ?”_ স্বর এবারে দৃঢ |
নীহারিক| কেঁদে ফেলল।
অবূপ বিছানায় অর্ধশায়িত ছিল লাফ দিয়ে উঠে বলল ।
বিবাহ এত বড় ফাকি?
দে আর স্থির থাকতে পারল না, সর্পাহতের মতো! ঘরের মধ্যে ছটফট করতে
লাগল আর আপন মনে, শূন্য দৃষ্টিতে, বিড়বিড ক'রে বলতে লাগল-_টু বী,
অর নট্ টু বী”_“টু বী, অর নট্ টু বী-»
পরুদ্দিন অবপের কেনো সন্ধান পাওয়া গেল লা। আরও দুর্দিন কেটে
গেল। তৃতীয় দিনে চিঠি পাওয়া গেল। "ব্যর্থ বিবাহে জীবন ব্যর্থ হয়ে গেছে,
অতএব শার্কতার অনির্দি্ পথে ঘাত্র। করলাম । বি-এ ফেল করেছি, বিয়েতিও
ফেল কলাম, আমার অপরাধ মার্জনা করবেন ।”
আরও কিছু দিন পরে খবর পাওয়া গেল, বোম্বাইতে কোণ এক সিনেমায়
নায়কের ভূমিকা নিয়ে সে বেশ জমিয়ে তুলেছে ।
(১৯৪১)
ভেলকি
১
যে ঘটনা ঘটবে, আগে থাকতেই তার ছায়াপাত হয়, এই রকম একটা প্রবাদ
ইংব্জদের মধ্যে চলতি আছে। কিন্তু আপনর ঘটনার ছায়াকে উক্ত ঘটনার
কারণ বলে মনে করা ঠিক নয়, একটা আর একটার পূর্বে ঘটে মাত্র ।
আমার কাছে কিন্ধ সবই ইন্দ্রজাল বলে বোধ হম। ষেন কোনো
অদৃষ্থ জাদুকর আড়ালে বনে সুতো টানছেন, আর তারই টানে টানে কেউ
বলছে শাস্তি চাই, কেউ বলছে রক্ত চাই, কেউ আরামে বধে চা খাচ্ছে, কেউ
হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করছে । অর্থাৎ সবই কাধকারণ শৃঙ্খলে বীধা।
এই ভাবে দেখতে গেলে যাবতীয় ঘটনাপাবম্পধ পুগ্ভীভূত হযে মনকে পিষে
মারতে চায়, স্থতরাং তত্বকথা বেশি দূরে না টেনে দৃষ্টিকে সুশীল, মাধব আব
মিহিরের সঙ্কীর্ণ পরিসরে নিবদ্ধ করা যাক ।
স্বশীল ওকালতি পান করেছে সম্প্রতি, মাধব এম. এ. পরীক্ষায় ফেল করেছে,
মিহির গত এম-এস্সি. পরীক্ষা পদার্থবিছ্যায় দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করেছে । কিন্তু
বদ্ধিপ্রথরতায় ওদের মধ্যে মিহিরের ব্যক্তিত্বই আর সবার উপরে ।
বয়ন ওদের কারোই চব্বিশের বেশি নয়, সবাই অল্পবিস্তর ছিট গ্রস্ত. বিষয্ন-
বুদ্ধির ছৌয়াচ লাগে নি কাবে। মনে, মন এখনো অপরিণত, যদিও কোনে! বিষয়ে
আলোচনা কালে বুদ্ধি ওদের মৃহূর্তের মধ্যে বেশ সজাগ হয়ে ওঠে। বহু জনের
মতে ঘষে সিনেমা ছবিটি সবচেয়ে নিকুষ্ট, টিকিট কিনে সেইটি দেখতে যায় ওরা
আমোদ বেশি পাওয়! যাবে বলে, তা নিয়ে হাসা যাবে বলে। বাক্গার থেকে
নিকুষ্ট বই বেছে বেছে কেনে, আলোঁচন৷ এবং উত্তেজনার বিষয়বস্ব পাওয়া যাবে
বলে। রেডিও খুলে চীনদ্েশীয় সঙ্গীত শোনে প্রতিবেশীকে বিভ্রান্ত করবে
বলে। প্রবীণের! বলেন, ওরা বালকই বুয়ে গেল, সাবালক হুল প1।
সন্ধ্যাবেলা। স্থশীল বন্ধুদের আগমন অপেক্ষায় তার বৈঠকখানা ঘরটিতে
বসে 'লিসেনার, সম্পাদক রিচার্ড ল্যান্বার্টেব লেখা বি. বি. সি-র *আভ্যন্তরীণ
অবস্থা সংক্রীস্ত একখানা বই পড়ছিল। তার এক জায়গায় ইগ্ডিয়ান রোপ টিক
বা ভারতীয় দড়ির খেলার কথা বেশ বিস্তারিত ক'রে লেখ আছে। সেই
জায়গাটা সে বেশ তদগতচিত্ত হয়ে পড়ছিল ।
ঞী
১৩০ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাছ-গলপ
এমন সময় মাধব এসে হাক্ষির। ম্থখীল তাকে পেয়ে যেন একটা বিরাট
নৈরাশ্রের হাত থেকে বেঁচে গেল।
"আচ্ছা বলতে পার লোকে ম্যাজিক দেখে অবাক ছদ্ন কেন?”
মাধব তার অভ্যন্ত আসনখানি দখল ক'বে বলল এবং বলল, "লোকে একটু
আমোদ উপভোগ করতে চায়, তা যে কোনো উপলক্ষেই হোক না, আপতি
কি? তা কি বই পড়ছিলে?,
“বইখানা ম্যাজিক সংক্রান্ত নম্ন*__বলে সে তার ভিতরকার এ অধ্যায়াট
ম্বাধবকে পড়ে শোনাল, এবং বলল, “ম্যাজিকের কৌশলটা তো! একটা ধালা
ছাড়া কিছু নয়। হাতের মুঠোয় একটা টাকা ছিল, মুঠো খুলে দেখা গেল
টাকাটি নেই__এতে অবাক হবার কি আছে? যদি জানা থাকে টাকাট! থাকবে
না, আর সবাই যদি সেটা আগেই ভেবে নেয়, তা হ'লে আমোদটা কোথায় ?”
মাধব হেসে বলল, “আগে ভাববে কেন? যাতে না ভাবতে পারে জাদুকর
সেই চেষ্টাই তো কনে।”
এমন সময় উক্ত রঙ্গ মঞ্চে মিহিরের আবির্তাব ঘটল, আর সঙ্গে সঙ্গে দু'জনেরই
চোখ আনন্দোজ্জল হয়ে উঠল। দু'জনের দ্বন্বে তৃতীয় ব্যক্তির দেখা মিললে
ু'আনেই মনে করে তাকে নিক্ষের দিকে টেনে যুক্তির জোর বাভানো যাবে।
মিহির একটু বিস্ময়ের সঙ্গে তাদের দিকে চেয়ে বলল, “সামনে বই খোলা
এবং ছু'জনেই শীরিয়স, ব্যাপার কি?”
স্থৃশ্ীলন বলল, “জাদুবিদ্যা । বলছিলাম ম্যাজিক জিনিসটা আদিম প্রবৃত্তিকে
তুষ্ট করে। যখন লোকে প্ররুতির সমস্ত ঘটনাতেই অলৌকিকত্ব খু'জজত সেই
সময়ের মন এখনও ঘাদেের মধ্যে আছে তারাই ভেলকিতে ভোলে ।”
মিহির বলল, “একটু চ। খাওয়াবে ?”
স্থশীল ব্যন্তপমস্তভাবে উঠে গিয়ে চায়ের ব্যবস্থা ক'রে এলো ।
"ভাগাস আদিম লোকেরা চা খেত না, নইলে হয়তে। শুনতে হত এটাও
আদিম অতএব এতে আনন্দ নেই ।” বলে মিহির হানতে লাগল ।
মাধব বলল, “আদিম বল, এডাম বল, বা আদমি বল, এড়াবার উপায় নেই,
কামণ আমর! সবাই আদিম--একফেবারে আদিম আদমি |”
স্থলীল বলল, “আমরা আদমি নই, মানুষ |”
মিহির বলল, "তুমি একটি অমান্য |”
সুশীল বলল, “মানুষ বলেই চট ক'রে অমাচ্ুষ হতে পারি, কিন্ত আদমি তা
পাঝে না, অলাদমি হওয়া কঠিন।”
সুপীন খলজ, "আমার হতে ভেলকি জিনিসটি হাত সাফাইয়ের ব্যাপার,
ওটা! বর্টেঝ পর্ধান়ে পড়ে না। ওতে পরিণত গন ডোলে না, ছোটদের মন
ভোলে, এই কথাটাই মাধবকে বোঝাতে যাচ্ছিলাষ, কিন্ত ওকে ভোলাতে
পারছি না, এখন তোমার মতটা জানতে পারলেই একটা মীমাংসা হয়ে যায় ।”
মিহির বলল, “চিস্তাশক্তিকে পোলারাইজ ক'রে বলে আছ দেখছি!
চারদিকে ছড়ানে। আলোকরশ্মিকে নিয়স্্িত ক'ঝে এমন করা যায বাতে তা শুধু
নিয়স্রাকের খুশীমডো এক দিকে ছড়াবে । চিস্তাকেও সেই রকম শিয়ন্ত্রণ করার
দন্রকার মাঝে মাঝে হয়, কিন্তু তর্কের সময় নয়। অভর্কের সময় বিষয়বন্তর
চারদিকে চিস্তাটাকে বিকিরণ কর, দেখবে তুমি যা দেখছ তার চেয়ে আরও
বেশি দেখা ঘায়।”
স্থশীল কিঞিঃৎ্, অনসহায়ের মতো মিহিরের দিকে চেয়ে বলল, “বুঝলাম না
কথাটা ।”
“ন] বোঝার কিছু নেই, সোজা কথা। অর্থাৎ যা কিছুতে মন ভোলে তা
সবই জাছু। ভিতরের কৌশলটা জানলেই কি তার মাধুয কমে? তোমার
এই আদমিকেও তো বৈজ্ঞানিক-আদমি টুকরো টুকরো ক'রে দেখেছে, সবই
কতকগুলো রাসায়নিকের যোগাযোগ । জাছুকরের জাছু ফান হয়ে গেছে
অনেকে কাল, কিন্ত-_কি বল মার্ধব__মানুষের রহ্কশ্য কিছু কমেছে কি?"
মাধব কিছু রোমান্টিক ধমী, মে ইতিমধ্যেই তার কোনে! প্রিজনকে
কল্পনীর চোখে রহশ্যাবৃত ক'রে দেখতে শুপ্চ করেছিল, মিহিরের প্রশ্থে চমকে
উঠে বলল, “আমিও তো! তাই বলি-_নইলে তোমার দ। ভিঞ্চি, মিশেল-আজ,
রাফায়েল এত পুজো পেতেন কি ক'রে?”
মিহি বলল, “তারা তে তৃলিতে একেছেন মান্থষকে, আমরা মনে মনে
একে চলেছি সর্বক্ষণ ।”
মাধব চমকে উঠে ভাবল, টের পেয়েছে না কি মিহির তার মনের কথা?
মিহির বলতে লাগল, “আসল কথ! কি জান? এই যে তোমার টেবিলে--_
কি বইখান! পড়ে আছে _এরি-য়ে-ল আযা-গু হি-জ কো-য়ালি-টি | কি বিষদ্বের
বই এটা ?-_এর প্রথমেই দেখছি টেমৃপেস্ট থেকে উদ্কাতি-_
“&])1 0501) 31556 11886870755 তি 0881 2 1 007309
হট 5087 60 10556 10199801615,
১৩২ পরিমল গোত্বামীর শ্রেঠ বাঙগ-গল্প
খাম্চর্য নয় কি এই এবিয়েল: এই টেম্পেস্ট, নাটক ? শেক্পীপ্গার কি জাদুকর
মন? যে পবগুলে! ব্যবহার করে তিনি তার নাটাজগৎ হুঙি করে গেছেন
সে শবগুলো কি অভিধানে মেলে না? সেগুলে! তুমি সাজাও না নিজের
ইচ্ছামতোঁ--হও না দ্বিতীয় পেক্সপীয়ার ? বাংলা শবকোষ নিয়ে বসে, হও ন!
দ্বিতীয় রবি ঠাকুর ?”
সুশীল বলল, “তুমি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছ__কোথায় ম্যাজিক আর কোথায়
সাহিত্য!”
মিহির সগ্যাগত চায়ের দিকে চেয়ে বলল, দাড়াও আগে চা খেয়ে নি।”
চা খাওয়ার পরে মিহির এমন এক বক্তৃতা দিল যাতে স্থশীলের আব কিছু
বলবার রইল না। সে বুঝতে পারল বিশ্তদ্ধ উপভোগের ক্ষেত্র বিস্তৃত, সবারই
মূল উদ্দেশ্ট মন ভোলানো, তবে এটুকু স্বীকার্ধ যে জাছুবিগ্যা নিয়শ্রেণীর আর্ট।
'আরও বুঝল ম্যাজিক দেখার সময় কৌশল টের পাওয়াটা বড় কথা নম্ব, জাদুকর
তার সাহাষ্যে কতথালি মন ভোলাতে পারল সেটাই বড কথা ।
ঘরের মধ্যেকার উন্বেজনাপূর্ণ আবহাওয়াটা এতক্ষণে কেবল একটুখানি
ত্বাভীবিক হয়ে আসছিল, এমন সময় এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল ।
ওদের আর এক বন্ধু, উপেন, বেশি রুকম উত্তেজি তভাঁবে এসে বলল, “এখনও
ঘরে বসে আছ তোমরা ?”
“কেন, হঠাৎ উঠে যাবার কি ঘটেছে ?” প্রশ্ন করুল মাধব।
“অমর সিং এসেছে কলকাতায় ।”
“অমর সিং ?-সবাই একপঙ্গে চেচিয়ে উঠল । “বল কি? কৰে
এসেছে 1”
“বিশেষ সংখ্যা কাঁগজ বেরিয়ে গেছে এই খবব নিয়ে-_-পডে দেখ |”
সবাই উপেনের হতেবু কাগজ খুলে মস্ত বড বড় অক্ষরের মোট শিরোনাম
পড়ল-_-"কলিকাতায় বিশ্ববিখ্যাত জাছুকর অমর লিং ।”
“দেখতে হবে এই অমর মিং-এর থেপা।” ব্লল মিহির ।
“আমিও দেখব |” বলল মাধব।
“আমিই কি বাদ্দ যাব?” বলল ত্রশীল।
, বলা ধাছুল্য এব পর আর কোনো আলাপ জমল না। এত বড় একটা
উত্তেজক খবর, একেবারে অভাব্য, অচিস্ত্য খবর । সুতরাং শহবের বিরটি
মানবলোতের সঙ্গে এদের চিস্তাসতরোত অমর মিং-এর দিকে প্রবলবেগে ধাবিত
হয়ে চলল। মলে সন্দেহ জাগল তবে কি এ প্রবাদটাই সত্য? অমর সিং
ভেলকি ১৩৬
আসবে বলেই কি জাছুবিগ্া এদের মনে তার পূর্বাভাস জাগিয়েছিল ?
হয় তো তাই।
২
পৃথিবী ভ্রমণ শেষ ক'রে উত্তর-দক্ষিণ পৃব-পশ্চিম লকলদিকের জাছুক বদের
পরাজিত ক'রে এক-জাহাজ মেডেল .৪ অন্ঠান্ত পারিতোধিক নিয়ে অমর সিং
এসেছেন কলকাতা শহবে । বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর উদ্দ্যা এবং হুডীনিব প্রধান
শিষোব। অমব্প মিং-এর কাছে হার মেনেছেন, ভারতবর্ষের এটা জাতীয় গৌরব ।
এত দিন সবার জান! ছিল তাতকডা লাগানো অবস্থায় বাক্াবনীী জাদুকরের
বাক্স থেকে অনায়াস শির্গমনই হচ্ছে জাছুবিদ্যার চরম খেলা । যেমন খুশি,
যেখানে খুশি, দর্শকদের শিজ হাতে তৈরি সিন্দুকে তালার পর তাল! লাগিয়ে
যেখানে ইক্ফা বন্ধ ক'রে রাখা হোক না, সেই বন্ধন এবং বন্দিত্ব মুহূর্তে ঘুচিয়ে
জাদুকর বেরিয়ে এসে দর্শকদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন-_-এর চেয়ে বড কৌশল
আর নেই। কিন্তু মর পিং এ কৌশলকে ছাড়িয়ে বছ উপ্বে” উঠে গেছেন ।
অর্থাৎ তিনি বেখিয়ে আসেন ন', আবিভূ ত হন না, অদৃশ্য হন। রাত্রের কালো
ষবনিকান সম্মুখে দর্শকদের দিক কড| আলো ফেলে অদৃশ্য হওয়ার যে খেলা
সবাই জানে, অমর সিং-এর খেল সে খেলা নয় । তিণি প্রকাশ্য দিবালোকে
লোকবেষ্টনীর কডা পাহারার মধ্যে সবার সঙ্গে কথ! বলতে বলতে অদৃশ্য হন।
এ খেলার বৈশিষ্ট্য এই যে, এতে চোখে ধূলো দেওয়া নেই । শিবজীর
অদৃশ্য হওয়া, স্বশাষ বস্থর অদৃশ্য হওয়া, অথবা লায়েক আলির অদৃশ্য হওয়ার
সঙ্গে এ তুলনা চলে না। এ একেবারে অলৌকিক। অতএব লৌকিক
আকর্ণ ঘে এর সবচেয়ে বেশি হবে সে কথা বল। বান্ুল্য মাত্র ।
৯০.
রেখাচিন্রে সূর্যোদয়ের ছবি আকবার একট] পরিচিত প্রথা আছে। একটি
দিগন্তজাপক রেখা, তার সঙ্গে সংলগ্ন একটি অর্ধবৃত্ত এবং তা থেকে" বিম্রিত
অনেকগুলি সরল রেখ স্ববরশ্মির পরিচয় বহন করে।
গত এক সপ্তাহ ধরে কলকাতা শহরের একটি বিশেষ অংশে এই রকম একটি
সর্ধোদয়ের বৃহৎ রেখাচিত্র বিমানভ্রমণকারীবা আকাশ থেকে দেখতে পাচ্ছে।
3৩৪ পরিমল গোম্বানীর শ্রেচঠ ব্াষ-গল্প
বিবন্থটিতে রহন্ত কিছুই নেই। এ অর্ধবৃত্ত হচ্ছে অমর সিং-্এর প্রকাণ্ড
প্যাভিলিয়ন, আর রশ্মিরেখাগুলি সাতটি বিভিন্ন কিউ'-এর রেখ! ।
গ্রুথম দু'দিন খেলা দেখানো সম্ভব হয় নি, শহরের যাবতীয় লোক একসঙ্গে
গিয়ে ভেডে পড়েছিল সেখানে, অনেকে হাড ভেঙেও পড়েছিল, অবশেষে
সেনাবিভাগের সাহায্যে ভিড় নিয়ন্ত্রিত ক'রে, সাতটি বিভিন্ন “কিউ? রচনা কারে
তবে দেখানে! সম্ভব হয়েছে । বুদ্ধ পুরুষ, বৃদ্ধা মহিলা, যুবক পুরুষ, ঘুবত্তী মহিলা,
বালক, বালিকা, এবং থোকা ও খুকীর ( এটি সম্মিণিত ) পৃথক গেট এবং “কিউ:
করাতে এবং সমস্ত আমনের নম্বর ক'বে দেওয়াতে সবার পক্ষেই খুব সুবিধাজনক
হয়েছে । প্রত্যেক গেট-মুখ পর্স্ত ঘে এক একটি লাইন দীভিয়েছে তার
পিছনের দৈর্ঘ; সীমাহীন |
বু লোক মহ্থমেণ্টের মাথীয় উঠে এই দৃশ্য দেখছে, কারণ এরও একটি
আশ্চর্য শোভা আছে । তা ভিন্ন প্রত্োক ছুটি কিউ-এব মধ্যবর্তা স্থানে একটি
কারে সাজোয়া গাড়ি স্থাপিত হ ওয়াতে দৃশ্যটি সুন্দরতর হয়ে উঠেছে।
সাত দিনের চেষ্টার ফলে সুশীল, মাধব এবং মিহির বসতে পেরেছে ভিতরে
গিয়ে । বহু রকমের খেলা, বিচিত্র সব ভেলকি, একটার পর একট] দেখানে।
বচ্ছে। কত ঘডি চর্ণ হয়ে আবার নতুন হল, কত পায়রা বেরিয়ে উডে গেল
একট ট্রপীর মধ্য থেকে, কত তাসের খেলা, টাকার খেলা, ভূতের খেলা, কিন্ত
তবু সেগুলো ঘেন দর্শকদের মনে ধরছে না। এরা শুধু দেখতে চায় সকল খেলার
সেব! খেলা_--অমর মিংএব অন্তর্ধান |
সেই খেলা অবশেষে দেখানো হল। কঠিন দর্শক-প্রাচীব-বেষ্টিত অমর সিং
প্রথমত ভাবতীম্ন তাস্থিক সাধন|, হঠযোগ এবং বহু প্রক।ব কৃচ্ছ যোগের বৈশিষ্ট্য
বিষসতরে ছোট একটি বক্তৃত! দিলেন এবং বলেলন, “এবারে আমি ।”
সবাই চমকিত বিশ্মিত স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে দেখে অমর সিং নেই ।
দীর্ঘস্থায়ী করতালিতে চন্দ্রাতপের নিচে এক অভূতপূর্ব আনন্দ পরিবেশ ।
হঠাৎ দেখা গেল অমর পিং দাডিরে আছেন প্রধান অতিথি রাষ্রপালের পাশে ।
--বিল্ম়ের উপরে বিন্ময় |
বাষ্ীপাল উঠে দাড়িয়ে আাদুকরকে ধন্তবাদ দিতে গিয়ে বললেন, “আজকের
পৃথিবীতে অমর সিং-এব মতো! এক্জালিক আর কেউ নেই ।*
কিন্ত তার কথা শেষ হতে না হতে এক স্ুলকায় বাক্তি বলে উঠলেন “জুড়ি
গযাছে। সেই জুড়ির কাছে অমর সিং শিশু ।”
দর্শকের! এ কর্থা শুলে প্রায় ক্ষেপে গেল, বলল, প্হতে পাবে না-ও রকম
ভেলফি ১৬৫
সস্ভব কখা' আমরা শুনতে চাই না।* এই চিৎকাযের হধ্যে স্থলীল, মাধ,
মিহির এবং উপেনের ক$ও শোনা গেল।
সুলকায় বললেন, “সত্য কথা বলছি ।”
গগুগোলের সম্ভাবনা দেখে ব্বাষ্পাল ক্তত চলে গেলেন সেখান থেকে।
জনতা স্থলকায়কে চালেঞ্জ ক'রে বলল, “নিয়ে আস্থন আপনার জাছুকরকে |”
সুলকায় বললেন, “ভাত মঞ্চ এখানে নম্ম, উত্তর-প্রদেশে, সেখানে গিয়ে
দেখতে হবে তার খেলা ।”
তখন স্থুলকায়ের পরিচয় নেওয়া হ'ল, এবং সবাই বুঝতে পারল, একজন
বিশিষ্ট ব্যক্তি তিনি, তার কথ। অবিশ্বাস করা ধায় না।
হৈ হৈ পড়ে গেল সভাস্থলে । সেকি উত্তেজনা! কি উৎসাহ! সঙ্গে
সঙ্গে কমিটি গঠন করা হয়ে গেল এবং ঠিক হল, স্বয়ং অমর সিং সেখানে
শিয়ে সেই খেল দেখবেন এবং ভিনি নিজে যদি শ্বীকার করেন সে খেলা
তার খেলার চেয়েও চমকপ্রদ, তা হ'লে সে কথা মানা হবে, অন্যথায়
হবে না।
কিন্ত অমর সিং-এর মুখে একটি কথা নেই । অমর পিং কিছু না বললে
চ্যালেছ্ করার কোনো মানে হয় না। ব্হু সাধ্যসাধনা করে শেষ পর্যস্ত তাঁকে
রাজি করানো হল। স্থুশীল, মাধব, মিহির বলল, “আমরাও যাব আপনার
সঙ্গে, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এর মধ্যে কোথায়ও ধাপ্লা আছে, কিন্থ সেটা কি
তালা দেখা পধন্ত বলা শক্ত |”
স্থলকায় ব্যক্তিটি সমত্ত বন্দোবস্ত পাকা ক'রে ফেললেন এবং ঠিক হল
উত্তর-প্রদেশের গ্রদেশপাল স্বয়ং থেলায় উপস্থিত থাকবেন ।
সে খেলার কথা ষা শোন। গেল তা সতাই অবিশ্বাস্য । কিন্তু যদি সত্য
হয়, তা হ'লে অমর সিং-এর ভাগ্ো কি হবে তা অনুমান ক'রে সবাই শিউরে
উঠল। শোনা গেল প্রকাণ্ড একটি পাহাড় সবার সম্মুখে উড়িয়ে দেওয়া হবে।
কথার ফাকি নেই এব মধ্যে, কেউ হয় তো মনে করতে পারে পাহাড় তো
ভাইনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যায় অথবা আটম বোমায়, কিন্তু ব্যাপার তা
নয়। পাহাড়ের চারদিকে ঘত ইচ্ছা লোক থাকতে পারে, পুলিস থাকতে
পারে, দৈম্যদল থাকতে পারে, কিন্তু তবু গ্রকাশ্য স্ুর্ধালোকে দৃশ্ঠ পাহাড় কমেক
মুহূর্তের মধ্যে সবার চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে যাবে।
সুশীল মিহিরকে বলল, “ভাবতে পারছ কিছু ?”
মিহির বলল, গকৌশলটা আমার কাছে অবান্তর, আমার কাছে এ রকম
১৩৬ পৰিমল গোত্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
একটি ঘটনাই হচ্ছে বড় কথা । কি ক'রে হয় জানতে চাই না, বুঝতেও চাই
না, আমি শুধু উপভোগ করতে চাই ।”
মাধব বলল, “আমি আর্টের জন্তেই আর্ট কথাটা! যোল আন! মানি না, তাই
ওব কৌশল বু'জি, উদ্দেশ্য ও থু'জি।__সব আমি তলিয়ে বুঝতে চাই ।”
স্থশীল বলল, “তোমর! সবাই মিলে ঘা চাও আমিও তাই চাই ।”
দিন ঠিক হয়ে গেল। কলকাতা থেকে অমর সিং-এর সঙ্গে বিমানে গেল
পঞ্চাশ জন বিচারক | তার মধ্যে মিহির, স্থশীল ও মাধব । পরে দেখ! গেল
উপেনও তার মধ্যে স্থান পেয়েছে কোনোমতে?
রেলগাড়িতে যে কত লোক গেল তার সংখ্যা নেই। তারা সবাই
যথাপময়ে গিয়ে পৌছল উত্তর-প্রদেশে। সব আয়োজন আগে থাকতেই পাক]
করা ছিল।
বিপুল জনতা, বিপুল উন্নাল, বিপুল উত্তেজনা । একটি দিন ধরে কি ঘে হয়ে
গেল তা! প্রকাশের ভাষা নেই ।
খেল! দেখানো শেষ হয়েছে । নিশ্বান রেধ ক'রে সবাই সকল ভেলকিবর
চরম ভেলকি দেখেছে । কিন্তু কলকাতার উৎসাহীপের চোখে সকল আলো
নিবে গেছে, তাদের কল আশা ভেঙে গেছে, সকল উৎসাহ জল হয়ে গেছে,
রক্তের চাপ কমে গেছে, ধাত বসে গেছে, ক নীরব হয়ে গেছে, মেরুদণ্ড খীর।
হয়ে গেছে, কহুই-হাটুর অস্থিবদ্ধনী টিলে হয়ে গেছে, কটিদেশ বেদনায় টনটন
করছে, কপালের শিবা দপ দপ করছে, পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে।
আর অমর সিং? তার অবস্থা অবর্ণনীয়, সবচেয়ে সম্কটজনক | আ্যান্থুল্যান্সে
করে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছে, হাত-পা ঠাণ্ডা-গরম সেক দিচ্ছে
নার্সরা, উত্তেজক ইন্জেকশন দিচ্ছে ডাক্তাররা, উপরন্ধ পেটে কিছুই থাকছে না
বলে শিরার ভিতর গ্লকোসের জল ঢোকানো হচ্ছে।
দীর্ঘ সাত দিন কাটল এই ভাবে। ম্যাজিক বিষয়ে সকল তত্বকথা ওদের
মনে গলোটপালট হয়ে গেছে। সবারই মুখ ঝুলে পডেছে, সবাই নিবাক, শুধু
বসে বলে বিষ দৃষ্টিতে পরম্পরের দিকে তাকানো] ।
দিন ভিনেক পরে একে একে সবাই কলকাত! ফিরতে লাগল । অমর সিং
বিমানে ফিরলেন, ফিরব ন। শুধু সুশীল, মাধব আর মিহির ।
ভেলকি ১৩৭
কলকাতায় ধারা ফিরে এলো, তাদের আর কাউকে কিছু বলতে হল না,
খবর আগেই পৌছে গিয়েছিল। তা ছাঁড়। বলবার কিছু ছিল না।
সেখানে যে খেঙগাটি সবাই দেখল সেটি হচ্ছে এই ঘে পাহাড়টি ঠিক পাখরেন্ব
পাহাড় ছিল না, দশ লক্ষ মণ চিনির বস্তার পাহাড় ।
সরকানেনত লোক লেখানে উপস্থিত ছিল, পুলিস ছিল, সেনাদল ছিল, স্বয়ং
প্রদেশপাল ছিলেন, সরকারী খাতায় চিনির হিসাব ছিল, তাতে লেখা ছিল
লাত লক্ষ মণ চিনি উদ্ধৃত্ব আছে। কিন্তু জাছুদণ্ডের ছোয়া লেগে সবার সামনে
চিনির পাহাড় অদৃশ্য হয়ে গেল, পড়ে রইল নিচের সুরের পাঁটাতনগুলি, এবং
হিসাব ক'রে দেখ। গেল সাড়ে নলক্ষ মণ ঘাটতি পড়েছে।
কি ক'রে এটি সম্ভব হল তা সরকারী বুদ্ধি, বে-সর্কারী বুদ্ধি, বৈজ্ঞানিক
বুদ্ধি, অবৈজ্ঞানিক বুদ্ধির অগম্য। স্বয়ং অমর সিং-এর জাছু-কৌশল পরাহত।
স্শীলরা পড়ে বইল উত্তর-প্রদ্দেশে, একটি প্রশ্ের উত্তর তাদের চাই-ই,
নইলে তার! ফিরবে না পণ করল।
ওর! তিন বন্ধু জাছুকরের পদধূলি নিতে লাগল প্রতিদিন। কিন্তু তবু
প্রশ্নের উত্তর মিলল ন1। মিহিরের মুখে একমাত্র প্রশ্ন, এত বড় পাহাড়
গেল কোথায় !
অবশেষে জান্রকর ওদের অবস্থা দেখে করুণাভরে কানের কাছে মুখ শিয়ে
বললেন, “সিঙ্গাপুর” ।
পরদিনই কাগজে খবর বেরুল, সিঙ্গাপুরে উত্তর-প্রদেশের সাড়ে ন'লক্ষ মূণ
চিনির চৌরা চালান ধর] পড়েছে।
(১৯৫০)
বহুরূপী
এখন কলকাত। শহরের অলিতে গলিতে সাংবাদিক, জিশ বছর আগে এ রকম
ছিল না। তখন আমরা সাংবাছ্িককে দেখতে খবরের কাগজের অফিসে
যেতাম ।
বর্তমানে সাংবাদিক-পপুলেশন বৃদ্ধির কারণ--এ যুগটাই হচ্ছে সংবাদের
যুগ। ছুই যুগের লংবাদেও তফাৎ কত। আগে ঘটনা আগে ঘটত, এখন
সংবাদ আগে ঘটে । চাই সাংবাদিক প্রতিভা
কিছুকাল আগে এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল । হঠাৎ
আলাপ । আমার বাড়ির সামনে কয়েকদিন তাকে ঘুরতে দেখেছিলাম একখানা
নোট বই € পেন্সিল হাতে । দেখতাম তিনি মাঝে মাঝে মে নোট বইতে
কি সব টুকে রাখছেন। পুলিসের লোক ভেবেছিলাম আগে। অনম্য
কৌতুহল বশত একদিন দু'এক কথায় আলাপ শুরু করলাম, ক্রমে আলাপ জমে
উঠল।
তিনি ষে সাংবাদিক সে পরিচয় তিনিই দিয়েছিলেন ।
তখন কলকাতা শহরে দৃভিক্ষে পথে পথে লোক মরছিল। একদিন
বলেছিলাম তাকে, “কেমন দেখছেন সব?” আমার প্রশ্নটি অবশ্য নিতাস্তই
অর্থহীন ; উদ্দেশ্ট, কোনো রকমে একটু আলাপ জমানো ।
তিনি বললেন, “অদ্ভুত ।”
“কি পরিমাণ লোক মরছে ?”
পস্বাভীবিক।”
কথাটা ভাল বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলাম, “স্বাভাবিক মানে কি?
রিপোর্টটা কি ভাবে লিখছেন? যত লোক মরছে ততটাই কি আপনি আশা!
করছেন ?”
“মৃত্যুর কথা কিছু লিখছি ন1।”
“কেন?”
“আমাদের দেশে ওটা খবর নয় |*
“বলেন কি? এত মৃত্যু, এমন অন্বাভাবিক মৃত্যু!"
সাংবাদিক বললেন "আমীর চোখে এর কোনোটাই অস্বাভাবিক নয়।”
“আপনি অবাক্ষ করলেন আমাকে |”
বহণী ১৬
“আমি ডিফই বলছি। খবর কাকে বলে বোধ হয় আনেন না। কুকুছ
মাক্ছকে কামড়েছে এটি খবর নয়, মাচুষ কুকুরকে কামড়ালে খবর হয়।
বিলেতের এক কাগজের অফিসের গল্পটা জানেন? বার্তা সম্পাকের কক্ষে সবাই
বিচাঁলত, উত্তেজক কোনো খবর সেদিন আসে নি। এ দিকে বাত বানোট!
বাজে, শেষ কপি দেবার সমক্ক উপস্থিত । এমন লময় এক সহকারী তার নিজের
কুকুরটি পাশের ঘর থেকে ধরে এনে টেবিলে তুলে তার পা কামড়াতে লাগল,
সঙ্গে সঙ্গে খবর তৈরি হয়ে গেল। সম্পাদক তার সহকারীকে জড়িয়ে ধরে
আদর করতে লাগলেন ।”
“তা হলে যারা মরছে তাদের খবর কি ক'রে হাতে পারে ?”
"হতে পারে, যারা মরছে তারা দি মারতে পারত। কিন্তু যাক সে কথা,
আজ গোটা ছুই খবর পেয়েছি। একটুক্ষণ আগে দু'জন কেরানি আমার পাশ
দিয়ে বলতে বলতে ছুটে গেল__ভরপেট খেয়ে এ ভাবে হেঁটে অফিসে যেতে
তাদের বডই কষ্ট হচ্ছে, ভিডের জন্য ট্রামে-বাসে উঠতে পারেশি তার1 1”
প্ধবর হল কোথায়, বুঝতে পারছি না।”
“কেরানি তয়েও পেট ভরে খেতে পেয়েছে এটি অবশ্যই খবর । আর
একটি খবর-_অবশ্ঠ এটি আগেই আমার জানা উচিত ছিল--এই শহরে
কোথাও ঘি পাওয়া যায় না|”
আমি বললাম, “এ তো পুরানো খবর, আমরা সধাই জানি, কারণ সব
ঘি-তেই ভেঙ্গাল থাকে ।”
সাংবাদিক বললেন, “ভেজাল ঘিও পাওয়া যায় ন1।”
“বলেন কি, হঠাৎ কি হ'ল? আমি তো! জানি ভেজাল ঘি-তে বাজার ছেয়ে
গেছে, আপনি অসম্ভব কথা বলছেন ।”
“অসম্ভব কথা বলছি বলেই সংবাদ হিসাবে এর দাম খুব বেশি। আর
অসস্ভব বলে এ তথ্য আবিষ্ধারে আমার দেবি হয়েছে ।”
কথাটা শুনে একটু বিরক্ত বোধ করলাম। বলঙগাম “মিথ্যাকে সত্য বলে
চালানোটাও কি সংবাদ ত্যপ্তি নাকি?”
সাংবাদিক এ প্রশ্নে বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন, বললেন “সত্য আর
মিথা! বলে কোন জিনিস নেই। ও দুটির মাপকাঠি কি? আশখনি চোখে
দেখেছেন বলে ভাবছেন ঠিক দেখছেন, এই তো? কিন্ত একটা জিনিম বা
একটা ঘটনার কতটুকু আপনি এক সঙ্গে এক লময়ে দেখতে পান? প্রত্যেকটি
জিনি্ বা ঘটনার জনেকগুলে! ভাইমেনশন আছে, স্থান ও কালের যধো তার
১৪০ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্াজ-গল্
বিস্তার আছে, আপনি হাজার চেষ্টা করলেও একই সময়ে কোনে। জিনিসের সব
দিক দেখতে পান না, আজ পরবস্ত কোনো! মানুষ তা! পায় নি। অতএব আপনার
কাছে ঘা মত্য তাই বলছেন সতা, শুধু আমার কাছে যা সতা সেটি আপনি
মানছেন না। কিন্ত যন্ত্র দিয়ে মেপে দেখলে বুঝতেন সবই আংশিক সত্া।
আসল জিনিনের একটুখানি অংশ দেখেই আমরা সত্য মিথ্যা নিয়ে এত
মারামারি করি।”
আমি বললাম “কিন্ত তাই বলে কোনো জিনিস আছে এবং নেই একই সঙ্গে
সত্য হয় কি কারে ?”
"তাও হম, মশায়, একই সঙ্গে একটি জিনিস চলছে এবং চলছে ন, একই
সঙ্গে একটি জিনিন ছোট এবং বড়, ভাল এবং মন্দ হতে পারে। বিজ্ঞান
এ কথা ত্বীকার করেছে। আঁপেক্ষিকবাদ পড়ুন, তা হ'লেই বুঝতে পারবেন
আপনি যাকে একমাত্র সত্য বলে চেপে ধরে আছেন, দেখবেন তা আপনার
মুঠোর মধ্যেই মিথ্যা হয়ে আছে ।”
আমি বললাম "তা যদ্দি হয তাহ'লে আপনার কথাগুলোও তো সত্য না
হতে পাবে ?”
“অবশ্যই না হতে পারে । আমি তো! বলছি না যে আমার কথা ঞ্রুব সত্য ।”
“তাহ'লে বাজারে ঘি ও নেই, ভেজাল ঘি-ও নেই, এই ছুটি কথাকে আপনি
খবর ভিসাবে চালাবেন কি ক'রে ?”
“এটা সম্পূর্ণ পৃথক প্রশ্ন । আপনি যেদ্িক থেকে দেখে বলছেন বাজারে
ভেজাল ঘি আছে, আম সেদিক থেকে দেখছি না। আমি অন্য দিক থেকে
দেখে বলছি বাজারে ঘি-ও নেই ভেজাল ঘি-ও নেই |”
“তা হ'লে কি আছে?”
“আছে বিশুদ্ধ ঘি অথবা "খাটি ঘি'। ঘি নেই। 'বিশ্তদ্ধ ঘি' অথবা
“খাটি খি' ঘি থেকে পৃথক । তেমনি ধরুন বাজারে দূধ নেই, আছে শুধু বিশুদ্ধ
তুখ। হোটেল নেই,,আছে পবিত্র হোটেল ।”
কথাটা শুনে স্তম্ভিত হচ্ছিলাম, এমন সময় সামান্য কিছু দূরেই গুরুতর
দুর্ঘটনা ঘটাতে আমাদের আলোচনা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। একখানা বাস
দাকুণ শব করে থেমে গেল, বাই চিৎকার ক'রে উঠল এক সঙ্গে । মুহৃ্তে
সেই বাস ঘিরে দুর্ভেদ্য ভিড় জমে উঠল । শোন। গেল বাস একটি স্কুলের চ্মেয়েকে
চাপ দিয়েছে ।
ভিড় ঠেলে দুর্ঘটনা! দেখবার শক্তি বা প্রবৃত্তি আমার ছিল না, বলা! বাহুল্য
বছরূপী ১৪১
আমার সঙ্গে আলাপ-রত লাংবাদিক বছ পূর্বেই অদৃস্ট হয়েছিলেন নেই ভিড়ের
মধ্যে ।
অতিরিক্ত আরও একটি দুর্ঘটনা & একই সঙ্গে ঘটছে শোন! গেল বাইরে
থেকেই। বাস-এর ড্রাইভারকে উপস্থিত জনতা ইতিমধ্োই মেরে আধমবা
ক'রে ফেলেছে।
পরদিন খবরের কাগজে দুর্ঘটনার বিবরণ পড়তে অতি-উৎসাহ বশতঃ তিন
খানা কাগজ কিনলাম । সত্যা-দৃষ্টি সম্পর্কে নবলন্ধ জ্ঞানই আমীকে এ কাজে
প্রেরণা যুগিয়েছিল। যাঁচাই ক'রে দেখছিলাম বিভিন্ন রিপোর্টার একই ঘটনা
কিভাবে দেখেছে ।
একথানা কাগজ লিখেছে, মেয়েটি দাড়িয়ে ছিল পথে, বাস তার ঘাড়ে এসে
পড়ে। আর একখান! কাগজ লিখেছে__বাপ-চালকের কোনো দোষ নেই,
মেয়েটি এমন অত্কিতে চলন্ত বাস-এর সামনে এসে পড়ে যে সে অবস্থায় বাস
থামানোর প্রশ্নই ওঠে না। আর এক কাগঙ্জ লিখেছে মেয়েটি কলার খোসায়
পা পিছলে চলস্ত বাম-এর নিচে পড়ে গেছে ।
কয়েকদিন পরে দেখা হল সাংবাদিকের সঙ্গে | বললাম, “আপনি সেদিন
ঠিকই বলেছিলেন_-একই ঘটনা নান] জনে নানা ভাবে দেখে |”
“কি কারে বুঝলেন ?”
“দুর্ঘটনার পর পিন আমি তিন্ধানা কাগজ কিনেছিলাম দেখলাম
কোনোটার সঙ্গেই কোনোটা! মেলে না, তিন কাগজে তিন রকম রিপোর্ট 1”
তিন্খান! কাগজের নাম ব্ললম। সাংবাদিক মুছ্ধ হেসে বললেন, “এ
তিনথানা কাগজেরই রিপোর্টার আমি নিজে ।”
(১৯৫২)
মুক্তির স্বাদ
কাপড়ের জন্য একফিন, তেলের জন্য এহপ্দিন_-উদ্জনাথ এই ছুঙ্গিন ছুটি নিয়েছে
অফিন থেকে। কাল কাপড় কিনেছে একবেলা লাইনে দীড়িয়ে, আঞ্জ
ধড়িয়েছে তেলের জন্ত। একা মান্য, ছুটি না নিলে কাপড়, তেল, কয়লা,
বিছুই কেন! হয় না।
লাইনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে চন্ত্রনাথের পারে ব্যথা ধরে গেছে । পয়স] দিযে
জিনিদ কিনবে তার জন্ত এত শান্তি কেন? কি পাপ করেছে দেশের লো?
ছ-চার ভজন চোরাবাজারীর জন্ত এত লোক স্ভগবে? তারাই হবে সবার
ভাগ্যবিধাতা? ক্যাবিনেট মিশন আসছে! গোষ্ঠীর যাথা আসছে । দ্বেশ
স্বাধীন হচ্ছে লাইনে দাড়িয়ে !
চন্দ্রনাথ দাড়িয়ে দীড়িয়ে ধৈর্ধ রাখতে পারে না, সামনের লোকটিকে এই
অবিচারেন্ বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার চেষ্ট। কবে, কিন্তু সে লোকটি নিধিকার।
সে শুধু ওর কথায় একবার চকিতের জন্য চোখ ফিরিয়ে ওর চেহারাখানা দেখে
নেয়, তারপর যেমন ছিল ঠিক তেমনি নিজীবের মতো দাড়িয়ে থাকে । চন্দ্রনাথ
মনে মনে বলে ভেড়ার পাল নব, একটু চটতেও জানে না।--একটু উত্তেজনার
স্ষ্টি হুলে সময়টা একটু সহজে কাটতে পারত।
ইঞ্চি ইঞ্চি ক'রে এগিয়ে দৌকানের দরজায় পৌছতে দীর্ঘ তিনটি ঘণ্টা কেটে
গেল চন্দ্রনাখের, কিন্ত হায় রে অদৃষ্ট! তার পাল যখন এলো, তখন দোকানে
আর তেল নেই।
তার মানে একটি মস বিনা তেলে কাটাতে হবে।
ছুটি এ মানে মে আর পাবে ন|।
দোকানীকে খুন করতে ইচ্ছা হল তার। চিত্কার ক'রে দোকান ফাটাতে
ইচ্ছা! হল তার। দ্্েকানের আনবাবপত্র ভেঙে একটি দাঙ্গা বাধাবার ইচ্ছা হল
তার। কিস্তুকিছ্ুই সে করল না।
করতে পারল না।
দুঃসাহত্মর বয়স চলে গ্েছে। শক্তিও অস্তহিত।
আঠায়ে। বছরের চাকরি তার সকল শক্কি হরণ করেছে । স্থৃতরাং মনে
মনে গভর্ষেন্টকে অভিশাপ দিতে দিতে খালি টিন হাতে বাড়ি ফিরতে হল
তাকে ।
সকিগা ব্হা উজ
একটি দিনের ছুটি অচ কিছুই হজ না
এই ভ্যর্থতা, অই নিক্ষল প্রম্মাসের আলা চঞ্জনাথ আম থেন লহ কতে
পারছে মাঃ উত্তেজনার চরহ অখট কিছুই করবার নেই। তেলের 'অভাষে
স্রেফ লেন্ধ ভাল মান্ছ খেতে হবে, তিন টাকা বেতের বাদাম তেল কত দিন কেন!
যায়? কিনবে না বাদাম তেল। আত্মবঞ্চনার কাজে সে নতুন অ্রতী নম্ব। এ
তার অভ্যাস হতে গেছে। তাস জন্ত আর ভাবনা কি? ভাবনা হচ্ছে যনের
জাল! জুড়ালে! যায় কিসে ?
আচ্ছা, খবরের কাগজে অনেকে অভাব অভিযোগ জানায়, তাতে কি কিছু
ঘা হয় না? না হলে এত চিঠি ছাপা হদ্ব কেন? আর কিছু না হোক নিজের
কথাটি তে! পাচ জনকে শোনানো বায়? তাতেও অনেক শাস্তি। চুপ করে
বলে থাকার চেয়ে অন্তত ভাল। হাক্রার হাঞ্জার লোক চিঠি পড়ে, তাতে
একটা সাস্বনা আছে ঠবকি। সেও কেন লিখবে না? লিখলে নিশ্চম্ ত!
ছাপ। হবে।
অবশেষে চিঠি লেখাই সে ঠিক করল । এককালে কলেজে পড়ার
সময় রচনাশক্তি তার ভালই ছিল, ব্ছকাল পরে একখানি পত্র রচনার
স্থযোগ পেয়ে তার মনে বেশ একটা উত্তেজনার স্ব্্রি হল। অনেক খুঁজে একখগ্ড
কাগজও সে সংগ্রহ করল, কারণ কাগজেরও ছুভিক্ষ লেগেছে । কিন্তু হাম!
লেখা ষে বেরোয় না কলম থেকে! খবরের কাগজে যে চিঠি ছাপা হবে, তাৰ
চেহারা কেমন হবে? মন অত্যন্ত আত্মচেতন হয়ে উঠল, যত লেখে তত কাটে,
কিছুতে চিঠির ভাষাম্ ঠিক স্থরটি লাগে না। অবশেষে কাটতে কাটতে দেখে
কাগজ শেষ হয়ে গেছে।
মনে আগুন জলছে অথচ কলমে ভাষা নেই!
ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর গলদঘর্ম হয়ে উঠে পড়ল চন্দ্রনাথ | অসহায় সে
সকল দিকেই । মনটা বিষিয়ে উঠল ভার । মনে পড়ল লাইনে দাড়িয়ে চিৎকার
করতে চেয়েছিল, কিন্ত পারেনি। এখন দেখল কাগজে চিৎকার করার ক্ষমতাও
তার নেই ।
চন্দ্রনাথ দ্রুত আত্মস্থ হল। আশ্র্ধ মানুষের মন! কল্পনাবলে বা হঠাৎ,
উত্তেজনায় নিজেকে যত বড় করেই দেখুক, লেই অতিকায় চেহারার পরমাঘু
দীর্ঘ হয় না। কান্নণ কদ্পেক মুহূর্ত পরেই তান মনে এই তত্বকথার উদয় হল যে
চুপ ক'বে বাওয়াই ভাল । অনেকেই তো! চুপ ক'রে আছে। তান্াও তেল
5৪৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ ব্যন-গল্প
পায় না, কাপড় পায় না, অথচ বেশ নিশ্চিন্ত মনে অফিস করে, সন্ধ্যাবেল! রকে
বসে দাবা খেলে, হারমোনিছাম তবল1 নিষ্বে বাত বারোটা পর্ধস্ত আসর জমায় ।
এটাও কিন্ত আবার বাড়াবাড়ি । এত ছুঃখ ছূর্শশার মধ্যেও এত সুখে আছে
দেখানোর চেষ্টা। চন্দ্রনাথ ওর মধ্যে নেই। ওর! উচ্ছন্ন যাক, চন্দ্রনাথ
বাড়াবাড়ি করবে না। দুঃখ নিয়েও না, স্থুথ নিয়েও না।
দিনট! চন্দ্রনাথের সত্যই খারাপ কাটল। ছুটি পেয়েও তার সদ্ববহার
হল ন।। বাড়ির বদ্ধ আবেষ্টনে মনটা তার হাপিয়ে উঠতে লাগল। ইচ্ছে
হল বাড়ির বাইরে গিয়ে একটু ঘুরে বেডায়। নিকুদ্দিষ্টভাবে চলতে চলতে
একেবারে পৌছল গিয়ে ময়দানে । বহু বখসর পরে তার মন একটুখানি খোলা
আকাশের জন্য আর্ত হয়ে উঠেছে।
আঃ! কি মুক্তি কি আনন্দ! একটা নির্জন জায়গা বেছে নিয়ে বসে
পড়ল দে দেইথানে । ময়দানের হাওয়া তার ক্ষত মনের উপর একটা মধুর
প্রলেপ লাগিয়ে দিল, একট! আশ্চর্য পরিবর্তন ঘটল তার মনে ।
এ রকম দায়িত্বহীন ভাবনাচিন্তাহীন খোলা আকাশের নিচে বসে দিনের
পর দিন কাটিয়ে দেবার কল্পন! ছাত্রজীবনে কতবার দে করেছে, এবং সে কল্পন]
মিলিয়েও গেছে সে জীবনের সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু তবু এতদিন পবে অথচ
সে দিনের দেই পরিচিত হাওয়াটাই যেন আজও মেদিনের লেই স্িপ্ধতা বহন
ক'রে বয়ে চলেছে ।
একঘেয়ে দৈনন্দিন জীবনের ফাঁকে, এতদিন পরে, ভাগ্যের হাত থেকে জোর
ক'রে ছিনিয়ে নেওয়া এই ক্ষণমুক্তির অবপরটুকু তার কাছে পরম উপাদেয় বলে
বোধ হতে লাগল। উদার আবেষ্টনে একটুখানি বসেই তার পুনজন্ম ঘটল।
জীবনভর বাজার করা, খাওয়া, আর অফিসে ছোট।, হাস্যকর মনে হতে লাগল ।
যেন ওসব স্বপ্র, সব মিথ্যা ।
সব চেয়ে মজার কাণ্ড, আকাশ, মাঠ, বাতান সম্পর্কে কতকগুলো ফিল্মের
গানও অবচেতনার নিভৃত সমাধি থেকে হঠাৎ জেগে উঠে তার মনের মধ্যে
'গুধরূণ ক'রে ফিরতে লাগল ।
খোল আকাশের এত শক্তি ?
এ তে ভয়াণক ব্যাপার |
চন্দ্রনাথ অভিভূত হয়ে পড়ল ।
ষে মান্ষ ছিল এত বড়, যার দুশ্চিন্তা ছিল পর্বতপ্রমীণ, মেই মান্থঘ এই
বিরাট আকাশের নিচে এত ছোট হয়ে যেতে পারে |
মুক্তির শ্বাগ ১৪৫
কীটেন মতো! ছোট!
ভাবনা চিন্তার পাহাড় পড়ল ধ্বলে।
একটা মধুর আনন্দে মশগুল হয়ে চত্দ্রনাথ শুয়ে পড়ল সবুজ ঘামের বিছানায়।
চোখ ছুটি তার বুজে এলো অতি সহজেই |
হাওয়ায় ভেসে চলেছে যেন-""দেহমনের সকল মানি তার মুছে গেছে।
ভাবছে মনে মনে, যেমন ক'রে হোক প্রতিদিন এইথানে একবার ক'রে
আপতে হযে, এসে মুক্তিন্নান ক'বে প্রতিদিন নতুন মাছ্ষ হয়ে ফিরতে হবে।
দিনের গানি ময়দানের আকাশ-গঙ্গাম় ভালিয়ে দিতে হবে প্রতিদিন |"
হঠাৎ কার স্পর্শ?
চন্দ্রনাথ বিদ্বাৎস্পৃষ্টের মতো! তড়াক ক'রে উঠে বসল। স্তস্তিত*বিম্ময়ে চেছ্ে
দেখে এক ভীষণ গুণ্ত1। সে আগুলের ইসাবা ক'রে বলছে, বাবুজি, কি আছে
মেহের্বানী ক'রে দিয়ে দাও ।
অন্য হাতে তার এক ছোরা-সন্ধ্যার অন্ধকারে ঘেন জলছে।
বিযৃঢ় চন্দ্রনাথ হস্ত্রের মতে! উচ্চারণ করল-_কি আছে? কিছু তো
নেই |
ছোনার তীক্ষ ফলক চন্দ্রনাথের পাঁজর স্পর্শ করল। গুণ্ডার চোখ ছুটিতে
ব্যঙ্গের হাসি ।- চন্দ্রনাথ মন্রমুগ্ধ |
একেবারে সর্বাঙ্গীন মুক্তি। মনের বোঝ। আগেই নেমেছিল, এবারে
নামল অঙ্গের বোবা । চন্দ্রনাথ বলেছিল কিছু তো নেই, কিন্ত দেখা গেল তার
কথা ঠিক নম। পকেটে আড়াইটি টাকা ছিল, গায়ে শার্ট ছিল, চাদর ছিল,
হাতে ঘড়ি ছিল, চোখে চশমা ছিল, পায়ে একক্বোড়া নতুন জুতে। ছিল,
পরিধানে ধুতি ছিল।
গেঞ্জি গায়ে, খালি পায়ে, ল্যাঙ্গটপর, উল্ভান্ত চন্দ্রনাথ রিকশম ফিরছে
মযদান থেকে__যেন কুস্তির আখড়া থেকে ফিরছে ।
তৃতীয় আর একটি মুক্তির স্বাদ এখন কেবল তাব বাকী রইল-_কিন্ত সে
মুক্তির ভাক কবে আসবে কে জানে ।
(১৯৪৭)
একাট দেব-নৈতিক গণ্প
৯
জন্ব্বীপে এমন একটা সময় ছিল যে-সময়ের কথা ইতিহাসে লেখা নেই।
সেই সময়ে এই দ্বীপ দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত ছিল £ পূর্ব অংশ ও পশ্চিম
অংশ। দুই অংশে একই জাতীয় লোক বাস করত কিন্ত তবু এদের মধ্যে
একটা বিষয়ে গুরুতর ভেদ ছিল।
ভেদের বিষয় হচ্ছে ছাতা ও পাগড়ী।
পুবের লোকেরা বলত, ছাতাই হচ্ছে মাথা রক্ষার একমাত্র উপায়, কেননা
ছাতা একই সঙ্গে মাথা থেকে মুক্ত এব" ছ1তার সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে ত্যাগ
এবং ভোগ । একই সঙ্গে মিলন এবং বিচ্ছেদ । একই সঙ্গে সীমা এবং
সীমাহীনতা।
পশ্চিমের লোকেরা বলত, পাগডী হচ্ছে মাথার রক্ষক এবং ভষণ। যে
জিনিন মাথা বাচাবে, মাথার সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা হওয়া চাই ঘনিষ্ঠ ।
একেবারে অঙ্গাঙ্গী ভাব। তিলেক বিচ্ছেদ নেই। যাকে বন্ধু বলে মানব
তাকে বন্ধু বলেই চেপে ধরব। তার অর্ধেক ছেডে অর্পেক ধরে রাখার মধ্যে
কোনো যুক্তি নেই। যাঁকে একবার মাথায় তুলে শিয়েছি তাকে চিরদিনই
মাথান়্ বাখব। পাগডী আমাদের চিরশিরোধাষ ।
পৃবের লোকেরা যখন ছাতার গৌরব প্রচারে একটু বেশি মুখব হয়ে উঠত,
তখন পশ্চিমের লোকেরা অপমাশিত বোধ ক'রে তাদের মাথা ভাঙত। আবার
পশ্চিমের লোকেরা যখন পাগড়ীর গুণগানে দেশ কাপিয়ে তুলত, তখন পৃবের
লোকেরা তাদের উপর গিয়ে হানা দিত ।
এমনি ক'রে কেটে গেল তাদের বনু যুগ। পৃব পৃবই থেকে গেল, পশ্চিম,
পশ্চিম ।
কিন্তু পৃব-পশ্চিমে যত বৈপন্বীত্যই থাক, তবু দুইয়ের মাঝখানে একটা মিলন-
বেখা থাকেই । লেইখানে স্বভাবতই একট। মিলন-ভূমি গডে উঠতে থাকে । সেই
খংনে বিরোধ যত হয় তীব্র, ঠোৌকাঠকি ধত হয় কঠিন, ততই পরম্পর আঘাত
প্রত্যাথাতের ভিতর দিয়ে একট। মিশ্রণ ঘটতে থাকে । এদেরও হয়েছিল
ভাই। এইখানে পৃবের লোকেরা পাগড়ী এবং পশ্চিমের লৌকেরা ছাতা সহজেই
ব্যবহার করতে শুরু কবল। আর নতুন বিরোধেরও সুত্রপাত হল তাই থেকেই ।
স্পা
একটি দেব নৈতিক গল্প ১৪%
পুবের চরম পূর্ব প্রাস্ত থেকে পশ্চিমের চরম পশ্চিম প্রান্ত পর্যস্ত গ্রচণ্ড
আন্দোলন আরম্ভ হল। অতি মারাত্মক ব্যাপার । পুবের লোক পাগড়ী
পরবে_-এই অভ্ভৃতপূর্ব ব্যাপার পৃবের লোকেরা কিছুতেই সহা করবে না।
ছাতাই তাদের ধর্ম, ছাতাই তাদের মর্ম, ছাতাই তাদের জীবন। এত বড়
সভ্যতা তাদের গড়ে উঠেছে ছাতাকে কেন্দ্র ক'রে । তারা হয়েছে ছত্রপতি,
দানাম্দাসেরা হয়েছে ছত্রধন্ | ছাতার কথা যনে হলে গর্বে তাদের বুকের
ছাতি ফুলে ওঠে । এই ছাতা তাদের একতাস্থত্রে গেথেছে, ছাতা ত্যাগ কর!
আর এঁক্যবদ্ধ পুবের ছত্রভঙ্গ হওয়া একই কথা।
পূব তই ছাতার মহাত্মা অনুভব করে, পশ্চিমও ততই পাগড়ী প্রতি
তাদের ভক্তি বাড়িয়ে তোলে । পশ্চিমবানী যে-কোনো লোক পাগড়ীর জন্য
প্রাণ দিতে পারে, পাগড়ীর মান বাচাতে প্রাণহরণের চেয়ে পুণ্য আর হতে
পারে না। পাগড়ী দেওয়া আর শির দেওয়া তাদের চোখে এক । পাগড়ীর
ব্দলে শিপ নেওয়াই তাদের ধর্ম।
আপোব প্রাপী ম্ধ্যব্তীদের নিয়ে এইভাবে বিরোধ ঘনিয়ে ওঠে আর
তার ফলে পৃব-পশ্চিমবাসী সবার শান্তি ভঙ্গ হয়। যুগযুগ ধনে চলে এই
অশান্তি। দুই পক্ষই ক্লান্ত হয়ে পড়ে একদিন।
কিন্তু কোতন। মতেই আপোষ সম্ভব হয় না।
ছুটি মাত্র আপোষ প্রস্তীব উঠেছিল £
এক- ছাতা ও পাগডী একই সঙ্গে সনাই ব্যবহার করলে কেমন হয়।
দুই-_ছাত। ও পাগচী একই সঙ্গে ত্যাগ করলে কেমন হয়।
প্রথমটির বিক্দ্ধে বলা হয় পৃব-পশ্চিম সংস্কৃতি এক পঙ্গে মিলতে পারে না,
তাতে সংঞ্চতির বিশুদ্ধত। নষ্ট হবে।
দ্বিভীরটির বিপ্ুদ্ধে বলা হয, সংস্কতি মানেই ধর্ধ, স্থতরাং সংস্কৃতি ছাড়া
মানেই ধর্ম ছাড়া, আমরা তাতে রাক্সি নই । স্ববর্মে নিধনং শ্রেয়: ।
খ্
মীমাংসা হল না, উপরপ্ তুপক্ষেরই উত্তাপ ক্রমশ: এত বেড়ে গেল যে একটশ
বড় রকমের সংঘর্ষ আপসন্র হয়ে উঠল। নানারকম প্যান চলতে লাগল
আক্রমণের ।
এমন সময় এক অপ্রত্যাশিত কাণ্ড ঘটে গেল জদ্ব্ধীপে |
১৪৮ পরিমল গোম্বামীর তেষ্ঠ বানগ-গর
কিছুদিন ধরেই অনাবৃত্রি চলছিল দেশে । খবর প্রচার হন্বে গেল, এবাবে
খান শস্তের অভাবে দুভিক্ষ অনিবার্ধ।
সবাই উদ্ধি্ন হয়ে উঠল | মাঠে শস্ক নেই!
পরম্পর আক্রমণের এমন সঙ্ঘবন্ধ পরিকর্পনাটাও মাঠে যারা গেল।
উদ্মোগকরীর! হতাশ হযে পড়ল। পৃব-পশ্চিম দুদিকেই বৈজ্ঞানিকেরা অভিনব
অস্থ তৈরি করেছিল, কবির! দেশের লোকের মনে হিংশ্রতা জাগানোর জন্য গান
লিখেছিল-__লবই ষে বৃথ! বায়! ছুভিক্ষের মুখোমুখি দাড়িয়েও কি লডাই করা
ঘায় না? ধর্মের চেয়েও কি পেট বড ?-_দুতিক্ষই এই মীমাংসা ক'রে দিল।
দেখা গেল, না খেয়ে কিছুই কর! ঘায় না।
এলো ছুভিক্ষ প্রবল মৃতিতে । পৃৰপশ্চিম দুদিকের লোকেরাই মরতে লাগল
হাজার হাজার । অপেক্ষারূত ভাগ্যবানেরা অধণহারে দিন কাটাতে লাগল।
এই মহাবিপদে ছুপক্ষই ভুলল তাদের বিরোধ, ছুপক্ষই পরস্পরের আরও কাছে
সরে এলো ।
দুভিক্ষের সঙ্গে এলো মহামারী । বছরের পর বছর চলল ষড়কের লীলা ।
পুব-পশ্চিম মরতে লাগল একই নিয়মে । ছাতা এবং পাগড়ী কারও মাথ৷
বাচাতে পরল না ।
এখন উপাম্ব ?
পৃৰ প্রশ্ন করল পশ্চিমকে, পশ্চিম প্রশ্ন করল পূবকে ।
আবার বসল পরামর্শ সভা ।
প্রাণ বাচাতে হবে।
পৃবকে বাচতে হবে, পশ্চিমকে বাঁচতে হবে। অর্থাহারে অনাহারে ধুকে
ধুকে জীবনধারণের কোনো অর্থ হয় না।
পূব পশ্চিমকে ডেকে বলল, ভাই, ছাতা মিথ্যা, ত্যাগ করলাম ছাঁতা।।
পশ্চিম পৃবকে ডেকে বলল, পাগড়ী আমর আগেই ফেলে দিয়েছি । আমরা
দুদিকের লোকই এখন বিশ্তুদ্ধ মন্থত্তত্বের নিরাপদ ক্ষেত্রে এসে দাডিয়েছি, এখনও
যদি আমরা আমাদের নিশ্চিত ধ্বংসের কোনে প্রতিকার খুঁজে না পাই তা
হলে ধিক আমাদের মনুযাত্তের |
পৃব বহু চিস্তা ক'রে বলল, অম্বতের অধিকারী হতে হরে।
সে চেষ্টা তে! আমরা করেছি কিন্তু কোনো ফল হয় নি।
আমরাও করেছি, তাতেও কোনে ফল হয় নি।
তা হ'লে চেষ্টা ক'রে লাভ কি?
একটি দেব-নৈতিক গল্প ১৪৪
লাভ আছে। এতদ্দিন আমন্া চেষ্টা করেছি পৃথকভাবে, এবারে চেষ্টা
করতে হবে এক সঙ্গে মিলে ।
তা হ'লে হবে ঠিক?
হবে, যদি মিলনটা ঠিক হয়।
মিলতেই হবে অমতের জন্ত। অমৃত না পেলে আমবা পৃথিবী থেকে
সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়ে যাব। '-কিন্ত মিললেই যে অমৃত লাভ করব, তার নিশ্চন্বতা
কোথায়? দেবতারা তো। বলেছেন, অস্থত তার! ছাড়তে রাজি নন।
আমাদের মেলবার পরেও তাই বলবেন, কিন্তু আমর! তা শুনব না।
কেন না এবারে জোর ক'রে অমুত আদায় করব, আর ভিক্ষা নয় ।
আমাদের মিলিত শক্তি কি ছুর্বার হবে না?
মিলিত শক্তিতে স্বর্গ আক্রমণ করলে দেবতারা বিনা সঙতে আত্মসমর্পণ
করতে বাধ্য হবেন
)
স্বগগের আজ সতাই বিপদ। এতপিঃন্র অমৃত ভোগের মেমাদ এবারে
বোধ হয় ফুরিয়ে যায়।
জন্থদ্ধীপের লোকেরা একছ্দোট হয়ে স্বর্গে আছে অমৃত দখল করতে ।
দেবতাদের মধ্যে একটা প্রবণ উত্তেজনা এবং ভয়মিশ্রিত অস্থিরতা জেগে
উঠেছে।
স্বয়ং ব্রহ্ধা স্বর্গের রক্ষী-ব্যবস্থাগুলো৷ পরীক্ষা ক'রে বেড়াচ্ছেন । দেব-
সেনাপতি কাত্িকেয় তার বাহিনী প্রস্তত ক'রে আত্মরক্ষার জন্য যথাস্থানে
দাড়িয়ে আছেন। চোথে তার দূরবীণ। ক্রদ্গা হাকলেন, সেনাপতি?
কাতিকেয় চমকিত হয়ে আদেশের অপেক্ষায় চুপ ক'রে রইলেন ।
ত্রদ্ম! প্রশ্ন করলেন, পারবে ?
কাকের বিনীত ভাবে বললেন, ভাবছি ।
তা হলে ভাব-_বলে ব্রহ্মা ইন্দের দ্বারস্থ হলেন।
অমৃত কার কাছে আছে?
ইন্দ্র বললেন, আজ্ঞে, আমারই কাছে রেখেছি।
ব্রহ্মা প্রশ্ন করলেন, পারবে?
কি ?--নির্বোধের মতো ইন্দ্র পাণ্টা প্রশ্ন ক'রে বসলেন ।
১৫০ পরিমল গোম্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ-গর
ত্রশ্বা মহ। বিরক্তভাবে বললেন, তোমার মাথা ।
মাথা বক্ষ করতে পারব কি না প্রশ্থ করছেন ?
সে প্রশ্নে আমার দরকার নেই । অমুত রক্ষা করতে পারবে কি না ব্ল।
চেষ্টা করব।
্রক্ষা মত্যস্ত ক্রুদ্ধভাবে ব্ললেন, তোমর! সবাই দেখছি কাপুরুষ, দৈববিশ্বীসী,
অদৃষ্ঠবাদী। তোমরা! অপদার্থ। জন্দ্বীপের লোকদের কি ক'রে ঠেকিছেছ
তাই ভাবছি ।
আজ্ঞে, সোজা উপায়েই ঠেকিয়েছি ; বলেছি দোব না।
ওর] অমুত চায় কেন, বলেছে ?
বলেছে, ওরা দেবত্ব লাভ কণতে চায়। ওদের মধ্যে হিংসাছেষ মারামারি
কাটাকাটি চলছে বহুদিন। ওরা বহু রকম দুঃখ ভোগ করছে যুগের পর যুগ,
আর পাবছে না। ওর| আমাদের সঙ্গে এখন কো-প্রস্পেবিটি চায়।
তুমি এই সব চুপ ক'রে শুনেছ, এবং আত্মরক্ষার নন্য কিছুই বল নি?
আজ্ঞে, বলবার আর কি আছে ।
কেন বলনি ঘে আমবা মুতের অধিকারী হয়েও তোমীদেরই মতো
'ছোঁটলোক, হিংসা দ্েষ হানাহানিতে তোমাদের মতোই পটু? কেন ব্লশি
যে অমৃত পেলেও তোমাদের ছুঃখ ঘুচবে না?
বললে বিশ্বাম করত না বলেই বলি নি।
এখন বধাচবে কি ক'রে ওদের হাত থেকে? ওরা এবারে একজোট হয়ে
আসছে, এবারে তো] আর দুখের কথায় কা হবে না, এবারে ঘে লডাই করতে
হবে।
ইন্দ্র চিস্তিতভাবে ৰললেন, আজ্ঞে মাযের সঙ্গে তো কোনো দিন লডাই
কবি নি।
তা হ'লে জয়লাঁভে ভোমাবও সন্দেহ আছে । যা ভেবেছিলাম তাই হল
শেষটায়। তা হ'লে এখন যে যাঁর পথ দেখ । আমি চললাম নার্দকে খুজতে ।
--বলেই ব্রহ্মা ছটলেন নারদের এলাকার দিকে ।
পথে বিশ্বকর্মার সঙ্গে দেখা।
বিশ্বক্রা ত্রক্মাকে ছুটতে দেখে সভয়ে প্রশ্ন করলেন, প্রস্থ, ব্যাপার কি?
ব্যাপার অতি গুরুতর । এখন সব বলবার সময় নেই। তুমি সাইরেন
বাজাবার জন্য প্রত্তত হয়ে থাক । ইঙ্গিত পেলেই বাজিয়ে দেবে।
বিশ্বকর্মী বললেন, তথাত্ত, তবে__
একটি দেব-নৈতিক গল্প ১৫১
তবে কি?
মন্দাকিনী নদীর উপর যে সেতুটি তৈরি করেছিলাম, যমবাজ তাঁর উপর
দিয়ে স-বাহন পারাপার করাতে সেতুটি ভেঙে পডেছে, সেইটি মেরামত করা৷
অত্যস্ত প্রয়োজন ছিল ।
ব্রহ্মা বললেন, সেতুটি সম্পূর্ণ ধ্বংস কর। কেন, প্রশ্ন করে! না, ষা বলি
চোখ বুজে শুধু মেনে যাও। এখন আর সময় নেই। জন্ুত্বীপের মাহুষেবা
আসছে স্বর্গ আক্রমণ কবতে, হুশিয়ার থাক।
ব্রদ্ধা আবার ছুটতে লাগলেন। কিছুদূর গিয়েই দেখেন, একটা নিরিবিলি
জায়গায় নারদ বসে তার চারদিকে ধূত্রজাল স্থপতি করছেন।
্রন্মা এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে চেষ্টা কবতেই নারদ হাতের ইসারাঁষ তীর
ধ্যান ভাঙতে শিষেধ করলেন ।
ডার চাবদিকে ধোয়ার আবরণ ক্রমেই গাঁ হয়ে উঠতে লাগল, কিছুক্ষণ
পবে মার তাক খাই গেল না।
ব্র্গা অতান্ত বিবক্ত হলেন নারদের এই স্বার্থপর বাবহারে। যীরা প্রবীণ
উভাদেব উচিজত আব সবাইক বীচান পথ ক'রে দেণ্যা, তা না কানে পাব্দ
নিছেকে রক্ষা কনতেই বাগ্র। এউ পলায়শী বৃন্তি নারদেব পক্ষে অতি জঘন্থা
মনোরত্তির পণ্বিচাযক |
ব্রহ্ম। ইন্দ্রকে ডেকে নাবদেরু চাঁবিত্রিক কুটির কগা নিব্দেন কনলেন।
ইন্দ্র বললেন, কিন্ধ এখন আমাদেন প্রত্যেকেরই তে! ও হাড। আব পথ
নেই। আপনি 9 তাহ বলেছেন ।
ত্রদ্দা বললেন, “স বলেছি তোমাদের জন্য। তোমাদের উচিত ছিপ
মেযেদেব পাডাঁয় গিবে তাদের 'মাজ্সরক্ষার ব্যবস্থা করা তাবা হয়তে৷। এখনও
কিছুই জানে না।
ব্রহ্মার কথা শেষ হতে না হাতে ভাদার ভাজার মণমেব ক্ণস্বৰ ভেসে এলো
তাঁদেব কানে । তার। মাঝামাঝি পথে এসে পড়েছে, তাদের দূরাগত ধ্বনি
্রন্মা এবং ইন্দ্র জনকেই দিশাহারা ক'বে দিল।
ইন্দ। আমি চললাম নন্দন কাননেপ দিকে, পার তো তুমিও এসো-_বলে
ব্রহ্মা উন্মাদের মতো ছুটে পালালেন ।
ইন্দ্র বললেন, আপনি আগে পালান, আমি অমুত ভাগুটি নিয়ে এখুনি আমছি।
ইন্দ্র অম্বত ভাগুটি ঘাঁডে ঝুলিয়ে একটু পরেই নন্দনকাননের দিকে ছুটে
চললেন ।
১৫২ পরিমল গোদ্কামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ-গ্জ
মাক্চষদের কোলাহল আন্পও কাছে শোন! যেতে লাগল। তার! এসে
পড়েছে স্বর্গে। বিশ্বকর্মা নাইরেন বাজিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে দঙ্গে দেবসেনাপতি
তার বাহিনীকে নিঘ্নে কোথায় সরে পড়েছেন, তার কোনো পাতা নেই । মেয়েরা
নিবিড় অরণো প্রবেশে করেছে।
জন্থুীপের লোকেরা সম্পূর্ণ নশস্্ হয়ে এসেছে । ব্রহ্মা! ধোয়ার আবরণে
বলেই বুঝতে পারলেন তারা সংখ্যায় কয়েক হাজার হবে ।
নারদ আরও শুনতে পেলেন তারা নানারকম লোগান আওড়াচ্ছে, তার
মোটামুটি অর্থ হচ্ছে এই ফে, তারা! এবারে দেবতাদের শক্তি চূর্ণ ক'রে অমুতভাগ্ড
লুন ক'রে নেবেই ।
নারদ ধৃত্রকুণুলীর ভিতর থেকে সব শুনে আরও একা গ্রচিত্তে প্রতিকার
চিন্তা করতে লাগলেন । তবে একটা বিষিয়ে তিনি এই ভেবে নিশ্চিদ্ত হলেন
যে মান্ুষের। দেবতাদের সহজে খুঁজে পাবে না, কারণ তারা থে ইতিমধ্যেই
আত্মগোপন করেছেন এ বিষন্কে তার কোনে! সন্দেহ নেই ।
নারদের ধারণা ঠিক।
মানষেরা স্বর্গে এলে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভ্রীস্ত হয়ে পডেছে। তারা এখানে
কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। সাইরেন বাজার শব শুনে তাঁর] যতটা উল্লসিত
হয়ে পড়েছিল, দেবতাদের আশ্রয়স্বলের কোনো সন্ধান না পেয়ে তার! তেমনি
দমে গেছে।
তার! এলে জড়ো হল মন্দাকিনী নদীর ধারে।
কিন্তু আসতে না আসতেই ঝপাৎ ক'রে নদীতে এক শব! সবারই দৃষ্টি
সেদিকে আকৃষ্ট হল।
কি হল? কি হল? চেয়ে দেখে একটা গাভী তার ল্যাজটি শুন্তে তুলে
নদী পার হয়ে যাচ্ছে ।-_-গোরু এলো কোখেকে ?
কামধেস্ত !
সে নদীর ধারে একটি ঝোৌপে লুকিয়ে ছিল, বিপদ বুঝতে পেরে নদীতে
ঝাপিয়ে পড়েছে ।
কামধেনুই ঘেন তাদের পথ দেখিয়ে দিল | তারাও নদ্দী পার হবে। তারা
আজ দৃঢপ্রতিজ্ঞ। আজ এস্পার কি ওস্পার একটা কিছু করবেই। তা ছাড়া
দেবতাদের অনৃশ্ট হওয়ার ব্যাপারে ওরা স্পষ্টই বুঝতে পারল তীরা ইতিমধ্যেই
একটি দেব-নৈতিক গল্প ১৫৩
প্রায় হার স্বীকার হরেছেন। আত্মসমর্পন তাদের করতেই হবে, না হছ তো
স্বর্গ থেকে তার! নড়বে না।
ওরা ঝাপিক্নে পড়ল মন্দাকিনীর জলে ।
নদীটি বেশি প্রশস্ত নয়, পচিশ কিংবা ত্রিশ গজ হবে।
বায় নদীর জলে পথবলান্ত মানুষদের সমস্ত ক্লীস্তি দূর হয়ে গেল।
নদী থেকে উঠেই সম্মুখে দেখতে পেল পারিজাত বৃক্ষ । এই বিখ্যাত বৃক্ষের
কথা এবং এর বিখ্যাত পুম্পের কথা ভাদের আগে থাকতেই জানা ছিল। তারা
গিয়ে দীডাল সেই গাছের নিচে। প্রচুর ফুল ফুটে ছিল গাছে, কিন্তু আপাতত
তারা সেদিকে মন দিতে পারল না। মনোযোগ দিলে ইন্দ্রের পক্ষে একটু
মুশকিল হত, কারণ তিনি ইতিমধ্যেই অমুতভাগ নিয়ে নেই গাছের ভালেই
গ! ঢাকা দিয়ে বসে ছিলেন।
ওদের একজন প্রশ্ন করল, যদি কাৰও দেখা না পাই ?
আর একজন প্রশ্ন করল, স্বর্গটা দখল করলে কেমন হয়?
আর একজ্রন বলল, দেবতার! পৃথিবীতে গিয়ে জন্বত্থীপে বসবাস করুক,
আমরা থাকি এখানে ।
ইন্দ্বের কানে এই সধ মারাত্মক কথা গিয়ে তীকে আরো উতলা ক'রে তুলল ।
স্বর্গ ও ষাবে, অমতও ষাবে, এ থে এক মহা বিপধয় !
ওদেব্ু আর একক্ষন বলল, স্বর্গ দখল করা এখন আর কঠিন মনে হচ্ছে না,
কিন্ধ এখানে আমর] খাব কি?
যুক্তিসঙ্গত প্রশ্থ।
একজন প্রশ্ব করল, ন্বর্গেও কি খাওয়া দরকার হয়?
আব একজন বলল, না হলে ইতিমধ্যেই খেতে ইচ্ছে হচ্ছে কেন?
সাব একজন বলল, তোমার একাব উচ্ছেয় তে বিচার তবে না।
ছুহাক্গার লোক সমস্বরে বলে উঠল, মামূর। সবাই খেতে চাই, ক্ষিদেয় পেট
জলতে আরস্ত কবেছে।
উত্তর দীর্ঘনিশ্বান ফেলে ভাবলেন, হায় রে ছুতিক্ষেব দেশের লোক !
একজন প্রস্তাব করল, কামধেম্রকে খুজে বের করতে হবে।
ওদের কেউ কেউ কামষধেনর পরিচয় দ্রানত না। তারা এ প্রস্তাবে হতাশ
হয়ে বল, তাকে দিয়ে চাষ করিয়ে, ফসল ফলিয়ে তবে খাব?
প্রস্তাবকারী বলল, না। ওকে পেলেই আমাদের সকল ক্ষুধার অবসান।
ওর কাছে ঘা চাইবে তাই পাবে এবং চাওয়ামাজ্র পাবে।
১৫৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাছ-গল্প
সে আবার কেমন গোরু ?
ও আপলে গোরুই নয়। গোরুর ছদ্মবেশে ৪ হচ্ছে ম্বর্গের কমিশন এজেণ্ট |
ও সব সময় সবার কাষনা পূরণ করে।
কামবেনু ওদের কাছাকাছি এক গর্তে লুকিয়ে ছিল, সে এ-কথায় বেশ
কৌতুক অনুভব করল ।
€
৪! এইথালে নানা রকম আলোচনা এবং আক্রমণ আর অন্থলন্ধান পরিকল্পনা
শেষ ক'রে চাটি পৃথক দলে বিভক্ত হল এবং চতুর্দিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে
পড়ল ।
উত্্ বৃক্ষতল নিরাশদ জ্ঞান কবায় ার শাশ্রয় শীথা থেকে নিচের 'দিকে
পা বাড/তই গাছের মাথা থেকে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন দবনিত হল, ওরা কি চলে
গেছে?
ইন্দ্র চমকে উদ্তে চেয়ে দেখেন, ব্রন্ম। তীণ 'পবের এক ডালে বসে মাছেন।
উন্দ্বের অয় পেয়ে তিনিও এলেন নিচে । এপেই প্রশ্ন করলেন, বিশ্বকর্মা
কোথায়? তাকে ডেকে তাডাতাডি এখন এমন একটা চর্গ তৈনি কবানো
দরকার, যেখানে মানুষেরা আর প্রবেশ করতে নাপারে। নারদ ধোঁয়া মধ্য
বসে আছে-_ ও নিতান্তই নিবোধ, ওকে এখনি ডেকে আন।
ডেকে আনতে হল না। দেণা গেল নাবদ বীণা বাজাতে বাজাতে সাদর
দিকেই আসছেন ।
ব্রহ্ধা বললেন, তা হলে কি মাঞ্ষের জন্ৃদ্বীপে ফিরে গেল? তাহলে কি
নারদের বীণাকে 'অল ক্রিয়।ব মনে করতে পানি?
নারদ কাছে এগিয়ে এসে বললেন, পারেন। তার কারণ আমি ব্বর্গের
বিপদ আশঙ্কা করেই ধ্যানে বসেছিলাম । বিশ্বাস ককন, এ রকম একাগ্রচিত্ত
ধ্যান আমি ইতিপূর্বে আর কখনও করিনি । আমার বিশ্বাস আমি সাফলাযও
লাভ করেছি। কিছুক্ষণ ধ্যানে বসেই আমি দেখলাম মুক্তির উপায় অতি
সহজ। আমরা মান্গষের সম্পর্কে এতদিন একটা মন্ত বড তুল ক'রে আসছিলাম ।
আমরা ভেবেছিলাম ক্রশুত্বীপের লৌকেরা কখনও একসঙ্গে মিলতে পারে না।
তাই ঘখনই পুবের লোকেরা এপেছে তখনই বলেছি অন্ত দেব না,
পশ্চিমের লোকদের এ এক কথাই বলেছি। আমরা জানতাম, ওরা
একটি দেব-নৈতিক গল্প ১৫৫
তিন পৃথক থাকবে ততদিন আমাদের কোনো আশঙ্কাই নেই। শুধু পৃ
বা শুধু পশ্চিম কথনও পথকভাবে আমাদের কাছ থেকে অমৃত কেড়ে নিতে
পাবে না। আমরা এই ভেবেই এতদিন নিশ্চিন্ত ছিলাম।
ব্রহ্মা বললেন, এখন কি ভাবে ওদের সম্মিলিত চেষ্টা বার্থ করবে?
নারদ বললেন, সেট মুখে না বলে একেবারে কাজেই দেখিয়ে দিই।
মানুষেরা তো দেবতাদের বার্থ অস্থসন্ধানের পর আবার ফিরে এদিকেই আসছে।
আপনার। নিভীীকচিত্তে এইখানেই দ্রীডিয়ে থাকুন এবং আমি যা করি, বিনা
প্রতিবাদে তা দেখুন ।
ব্রহ্মা বললেন, তোমার কথা বরাব৭ই বিশ্বাপ করেছি, এখনও কবলাম,
কিন্ধ ঘা পরীক্ষানাপেক্ষ তর উপর তোমার এতখানি ভবসা করা কি
ঠিক হচ্ছে?
নারদ বললেন, দেখুনই শা। আমার বিশ্বান আমি সফল হব। পারব
স্বর্গকে বাচিয়ে দিতে । এ তো মানুষেরা সব এসে পঙল।
ইন্দ্র ওয়ে কাপতে কাপতে বললেন, মম্বৃতভাগুট। কি সামনেই পঙ্ডে
থাকবে?
নাব্দ বললেন, যেমন আছে তেমনি থাকবে।
বঙ্গা এবং ইন্দ্র অতান্ত সন্দিপ্ষচিন্তে এব" সভয়ে শারদের পাশে দীড়িয়ে
রইলেন। কাষণেন্ত ঝবে-পড়া পাগিজাত ফুলগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে
লাগল।
ঙ
জন্থুদ্বীপের লোৌকে?। আমছে যেন নণ্াান্প স্বেতেব মতো। তারা দেখতে
পেক়েছে ব্রন্ধ নারদ, ইন্দ্রকে। তারা গহ্র্তে মুহর্তে অধিকতর উল্লাসে নন্দন-
কাননের প্রান্ত কাঁপিয়ে তলছে । তাব। দর্বার, তার! দ্ুদাস্ত, তারা হুর্মদ, তারা
দুরপনেয়। তাদেৰ শ্বোত ঘি প্রতিহত না কর। যায় তা হ'লে তারা সমস্ত
স্বর্গকে ভাসিয়ে নিয়ে ধাবে। তার! গর্ধন করতে করতে আসছে, বর্ধাব নদীর
মতো তারা পাক খেয়ে ফুলে ফুলে উঠছে ।
ব্রহ্মা কম্পিত কণ্ঠে নারদকে বললেন, ৰাঁবা, এখনও হয় তো সমফু আছে৷,
নারদ বললেন, নির্ভয়ে অপেক্ষা করুন, পিতঃ ।
ইন্দ্র মাথা নিচু ক'রে রইলেন, উট পাখীর বিপদাশঙ্কায় বালিতে মাথা গুজে
থাকার মতো ।
১৫৩ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাঙ্-গল্প
ভয়ে তিনি অমৃতভাগ্তের কাও তৃূললেন।
জনুস্বীপের সম্মিলিত জলপ্রপাত মাথার উপর ভেঙে পড়ার ঠিক পূ মূহুর্তে
নারদ হাত তুলে বললেন, স্তব্ধ হও। আমরা আজ তোমাদের অমুত দান
করব বলেই প্রস্তত হয়ে এসেছি । এই নাও অমুত।
নারদ অমৃতের ভাগুটি তাদের সম্মুখে এগিয়ে দিলেন ।
জলপ্রপাত মস্ত্রবলে যেন প্রন্তরীভৃত হল ।
আর পাথর হয়ে গেলেন ত্রন্ধা, ইন্দ্র এবং কামধেনু ।
এই অপ্রত্যাশিত সম্প্রদান-এবণ1 দেখে জদ্বদ্বীপের লোকেরা কিছুক্ষণ কোনো
কথাই বলতে পারল না। এত বড প্রতিক্রিয়া তাদের মনে আর কিছুতে
এতদিন হয় নি। এ অভিজ্ঞতা তাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন।
একজন মাত্র অমৃত ভাগুটি দখল করার জন্য হাত বাডিয়েছিল কিন্ত
মধ্যপথে তারও হাত থেমে গেল ।
অমৃত তার! কেডে নিতে এসেছিল, কিন্তু এ ষে দিতে চায়।
আরও একজন হাত বাডাতে চেষ্ট। করল, কিন্তু তারও মনে লন্দেহ জাগল,
দিতে চায় কেন?
সবাই পণম্পপের মুখের দ্রিকে চেয়ে সবিন্ময়ে শুধু বলে, একি হল। এ ফে
দিতে চায়।
সাহমী লোকটি বলল, সত্যিই দিতে চান, ন। প্রতারণ| ?
নারদ গম্ভীর ভাবে বললেন, অমুতভাগ্ তোমাদের সামনেই ।
ওরা এ কথায় আবার চম্নকিত হল, আবার ওদের মনে সন্দেহ
জাগল।
একছ্ন এগিয়ে এসে পরীক্ষা ক'রে বলল, অমুতই বটে। এ বকম বর্ণ এবং
গন্ধ আর কোনো বস্তর হতেই পারে না। বনস্পতি মেশানো থাকলেও শতকরা!
পাচের বেশি নেই।
ওরা আরও কিছুক্ষণ পরুম্পর মুখ-চাওয়া চাওয়ি ক'রে বলল, আমরা অস্ত
নিতেই এসেছি, নিই যাব, কিন্ত তাৰ আগে নিজেদের মধ্যে একটুখানি
পরামর্শ কারে নিই, কারণ অমুত আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন। ওর ফলাফল
কি হতে পারে এতদিন বিস্তারিতভাবে ভাবার দরকার হম্ব নি, আজ সেটা
বিশেষ দরকার মনে করছি ।
দূরে একটি লতাকুগ্ধ দেখা যাচ্ছিল, গোপন পরামর্শের পক্ষে স্থানটি উত্তম
বিবেচনা! ক'রে ওদের দলপতিরা মেইখানেই গেল।
একটি দেব-নৈতিক গল্প ৯৫৭
সেখানে ব্বর্গের নর্তকীদল লুকিয়ে ছিল, তারা মান্থষের শব্দ পেকে পিছন
দিক দিঘে লতাকুণ্র ভেডে পালিয়ে গেল ।
দলপতিদের পরামর্শ সভা বলল এইখানে । একঘণ্টা আলোচনার পর, অস্ত
ভোগ করতে পারলে জন্থদ্বীপের কি অবস্থা হবে, সে বিষয়ে ওরা সম্পূর্ণ
একমত হল।
ওর] কল্পনা ক'রে খুশি হল ঘে-_
(১) কারও কোনে! ছুঃখ থাকবে না।
(২) সবাই স্বাধীনভাবে সুস্থদ্েহে প্রফুল্লমনে বাচতে পারবে।
(৩) অকালম্বত্) সম্পূর্ণ লোপ পাবে।
| ৪ ] দেশে প্রচুর ফপল ফলবে।
| ৫] কোনো অভাব না থাকাতে পরম্পরের মধ্যে অন্যায় প্রতিযোশিতাও
থাকবে না।
[৬] পুৰ এবং পশ্চিম দুর্দিকেরই সম্পদ সমানভাবে বুদ্ধি পাবে।
|? ] ধর্ম এবং সংস্কৃতি বিষয়ে পূণ স্বাধীনতা থাকবে।
আলোচনা শেষ ক'রে সবাই খুব খুশি হয়ে উঠল। সবাই বলল, এখশ
অমৃত নিশ্চিন্ত মনে দখল করা থেতে পারে, কোনো দিক দিয়েই আপত্তির কোনে
কারণ থাকতে পারে না। অতএব আরবলম্বে অমুতভাওটি হস্তগত হশরয়।
দরুকারু।
সভা ভঙ্গ হল, সবাই উঠল ।
একজন কিন্তু উঠল না। সে বলল, মস্ত একটা সন্দেহ ঢুকেছে আমার
মনে।
সন্দেহ । সন্দেহের কথায় সবাই উৎসাহিত হয়ে উঠল। তাইতো সন্দেহ
ঘখন আছে তখন তার্দের মনেও তো তা জাগা উচিত। এত নহঙ্জে তা হ'লে
মতের মিল হওয়া! ঠিক হয়নি ।
সন্দেহ যাদের মনে জাগেনি তারা নিজেদেব শির্বোধ মনে করতে লাগল।
সন্দেহবাদী বলল, ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা মানে কি জান?
ওর মধ্যে কি কোনো প্যাচ আছে নাকি? ওর| সবাই প্রশ্ন করল।
সন্দেহবাদী বলল, আছে। ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ে পূর্ণ শ্বাধীনতা মানে
হচ্ছে গিয়ে, পৃব ইচ্ছে করলে পাগড়ী ব্যবহার করতে পারবে, পশ্চিম ইচ্ছে
করলে ছাতা ব্যবহার করতে পারবে।
সবাই হতাশ ভাবে বসে পড়ল ।
১৪৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যত-গল্প
পৃব অনেক চিন্তা ক'রে বলল, তাই তো, তা হ'লে অমৃত নিয়ে আমাদের
লাভ কি?
পশ্চিম বলল, আমরাও ভাবছি, লাভ কি? অম্বতে তা হ'লে তো সমস্যা!
যিটছে না। বিরোধ বিনোধই থেকে যাচ্ছে, উপরন্ধ আমাদের স্বাস্থ্য ভাল হযে
গেলে এবং মনে এবং দেহে নতুন শক্তি লাভ হলে আমাদের মধ্যে আগের
চেয়েও বেশি ক'রে দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধবে।
পৃব বলল, এট| সম্পূর্ণ ন্যায্য কথা ।
একজন আপোধপন্থী ছিল, সে বলল, বেশির ভাগই যদি ভাল হয় তবে
একটা বিষয়ের স্থৃবিধা ছাড়লে ক্ষতি কি?
পৃব-পশ্চিম লমন্বরে বলল, ছাড়তে হয় তো! অমৃতই ছাড়ব, ধর্ম ছাড়ব
না।
ছুপক্ষই উত্তেঙ্গিত হয়ে বেরিয়ে এলে। লতাকুগ্ধ থেকে এবং এসেই নারদকে
গিয়ে বলল, অম্বত শ্বর্গেই থাক।
ব্ন্মা এতক্ষণে স্বস্তির নিশ্বা ফেলে বললেন, "ত্রঙ্গ রূপাহি কেব্লম্।”
৬
স্বর্গে বিরাট উত্দবের আয়োজন চলছে। দেবতারা আজ মুক্তি দিবস
পালন করবেন, এই উপলক্ষে নার্দকে মানপত্র দান করা হবে।
্রন্মা নারদকে বলছেন, আমর] স্বর্গে বসে অনেক কিছু স্থ্টি করেছি,
কিন্ত বিভেদস্থষ্টিতে তুমি অদ্বিতীয়।
নারদ বিনীতভাবে বললেন, আপনাকে ম্মরণ করেই ধ্যানে বসেছিলাম ।
হঠাৎ এই সত্যটি মনের মধ্যে উত্ভামিত হয়ে উঠল যে, “দেব না বলে যণ্দি
অকরুতকাধ হয়ে থাকি, ত1 হ'লে “দেব বললে সফণ হতে বাধ্য । পরীক্ষাতেও
তার প্রমাণ হয়ে গেল, এখন আর আমাদের ভম নেই। ওরা যখনই আপবে,
বলতে হবে, এই নাও অমৃত । ওরা আর নিতে পারবে না। ঘর্দি নিতান্তই
নেয় তা হলে দেখবে পান্রটিই নিয়েছে, অমৃত তলার ফুটে? দিকে বেরিয়ে
গেছে, কারণ,দেবার আগে পান্টি ফুটে। ক'রেই দেব।
(১৯৪৫)
প্রায়শ্চিত্ত
সকালে পারিবারিক টেবিলে বসে চা কেক ইত্যাদি উপভোপ করা
স্বাভাবিক ঘটনা, কিন্তু মিস্টার চক্রবর্তী চায়ের টেবিলে বসেও আজ যেন কেমন
দৃশ্িস্তাগ্রস্ত । চা খেতে বিবেকে আটকাচ্ছে। থেকে থেকে পৃর্বরাত্রের স্বতি
মনে এসে ধান্কা মারছে । সমান্র আক্রান্ত, লঙাই আসন্ন, কর্তব্য কঠিন। তা
ফেলে চাখাওয়া?
পাশের বাড়ির মিসশার ভট্টাচাধের অবস্থাও প্রায় একই । তার সমপ্ত
বাত ঘুম হয় নি। তার শ্বীর৪ না। সামনে সাধাহিক ম্যানচেস্ণার
গাডিয়ান খান। পড়ে আছে, মন লাগছে না। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।
পরবতী আর একটি বাডিতেও এ একই ছবি। মিন্টার মুখাজির সামলে
চা ঠাণ্ডা হচ্ছে । তীর স্বীর মাথা ও দপদপ করুছে।
নিকটস্থ আরও অন্ত দশখানা বাডিতে এ একই কারণে শান্তি ওল
হয়েছে । মাত্র একটি লোকের অনাচাবে মাছের বাধন ছি'ডে যায যায়।
সবার শক সমাজপ্রোহী শটবর সান্তালকে লিষে কি করা যায়। ভার শী
দুর্গারাণী আরও অসহ্য |
গত রাত্রে উত্তেজনা চরমে উঠেছে | নটবর সান্তাল শাসিয়েছেন, তিনি
যা করছেন তাই করবেন। রাত বারোটা পধন্দ দটশ্রঙ্খলাবছ্। সমাজকে
অপমানিত.ক”র মাথা উচু কবে ফিরে গেছেন । তাৰ «ই চ্যালেপ্চ সমাজ
পতিদের বুকে জর আঘাত হেনেছে । অতএব আব পেরি করা চলে লা।
নিজেদের কিছু এর্ণশতা আছে বলেই, অশাচার জেনেও, কোনা রকমে
সাম্তালকে এতদিন তো তারা মেশে এসেছেন, কিন্ত অবস্থ। চরমে উঠেছে,
আর নয়।
নটবব সান্যাল ধনী, অতএব মাঝে মাঝে টাকা ধান পাওয়া যায় । এমন
লোককে অকারণ কষ্ট কবাম় তাই কারে। গা ছিল ন! এতদিন । কিন্ত বাইরেন
গণ্যমান্য লোকের সামনে তাকে নিজেদের একজন বলে পবিচয় করিয়ে দেওয়ার
হীনতা আর যে সহা করা ধাচ্ছে না। তাই আগে ঘা ছিল অভন্বোধ-উপরোখ
তা এখন আক্রমণের পর্যায়ে উঠেছে নেহাথ্ বাধ্য হয়েই । আর সেই কারণেই
একা অনাচারীর বিরুদ্ধে তার! সবাই এমন একাবছ্ হতে পেরেছেন। এবারে
নটবর সান্তালকে সত্যই ভাবতে হচ্ছে, যদিও মৌখিক দাস্তিকতা কমেনি।
১৬০ পরিষল গোম্বাষীর শ্রেঠ ব্াঙগ-গল্প
মেয়ে মহলে লক্দাটা হয়েছে আরও বেশি। দুর্গারাণীকে এতদিন তীর
আভানে ইর্চিতে তাচ্ছিল্য ক'রে আনছিলেন, তার ছোয়া লাগলে অপবিজ্্র বোধ
করেছেন, রান্নাঘরে এলে রান্নাঘর ভিডিটি দিম ধুম্নেছেন, এবারে হাতেকলমে
তাকে একঘরে করতে হযে, ভদ্রলোক বুঝুন লত্যমেব জয়তে।
নটবর সান্তালের কানে এসেছে সব কথাই । সযাজস্থদ্ধ সবাই একদিকে
হলে শুধু টাকার জোরে স্বাতত্ত্য বজায় রাখা কঠিন, একথা স্বামীস্ত্রী দুজনেই
সমশ্তড রাত জেগে আলোচনা করেছেনশ। ছজনে একমতও হয়েছেন
এ বিষয়ে ।
মে যুদ্ধ আপন্ন হয়ে এলে।।
দঘু'[তন দিন ধরে লমাজপতিরা ঘোরতর উত্তেজিতভাবে জটল। ক'রে
অবণেষে দিশ ঠিক কারে ফেললেন। নটবর নান্যালকে চরম পত্র দেওয়া হল
তাদের সামাজিক বিচাগাণয়ে উপস্থিত হতে । অপরাধীকে তারা যথেষ্ট- সময়
এবং স্থষোগ দেবেন তাদের শিরিষ্ প্রাননশ্চিত যদি তিনি মেনে নেন। না
যানলে তাপ ফলক হবে তা তাকে শোনানে। হবে। তিনি এ সমাজে যাতে
বাণ কমতে লা পাবেন তার সফল এবং অব্যথ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে- শুধু
একঘরে হবেন তাহ শয়।
সভা সবাই উপস্থিত হয়েছেন ।
ঘড়ি দেখছেন সবাই, সময় হয়ে এসেছে । মুখাজি ও চক্রবতী হয়েছেন
মুখপাত্র । ঘ। কিছু বলবা প্রথমে তারাই বণবেন। নটবর সান্তাল রণপাজে
সজ্জিত হয়েই আলবেন এটা তারা এক রকম ধরেই নিয়েছেন।
কিন্ত এত আয়োজন বৃথ! হল। একিব্যাপার?
ন্টবর সান্তান এলেন চোরের মতো ।
ঘাঝড়ে গেলেন সবাই । আক্রমণে জোর কমে এলো] ।
মিস্টার ৮এব্তী সংক্ষেপে বলপেন, “ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, সামাজিক৮__
মিস্টার মুখাজি বাক্যটাকে আও একটু এগিয়ে দিয়ে বললেন, “সমাঞ্জের
দিকে থেকে”
কথাটা আপ্র শেষ করা হল না। নটবর বললেন, "যা হয় ব্যবস্থা করুন,
আমি বাজি.।”
সমাজপতিরা! বিস্ময়ে একেবারে স্তস্ভিত হয়ে গেলেন। কিছু মন:স্কু্ও
বটে, কিন্তু হঠাৎ বুঝতে পারলেন, এ তো! তাদেরই জয়। নটবর সান্তাল
তাদের সঙ্গে লড়াই করতে আসেন নি, পরাজয় শ্বীকার করতে এসেছেন।
প্রায়শ্চিত্ত ১৬১
তখন আনন্দে এবং বিজয়গর্বে তার! প্রান্শ্চিত্বের আগেই নটবরকে জড়িয়ে ধরে
লাচতে লাগলেন ।
মিস্টার চক্রবর্তা বললেন, "দেখুন তে সামান্্ বিলেত যাওয়। নিয়ে কি
কাটাই করলেন এত দ্রিন। সবাই যাচ্ছে, শুধু আপনি জেদ ক'রে বলে
আছেন 1”
নটবর সান্তাল বললেন, "ব্যবস্থা করুন তবে। কি করতে হম কিছুই
তো জানি না।”
মিস্টার মুখাজি বললেন, “কোনো ভাবনা নেই, পাসপোর্টের ব্যবস্থা, স্থট
তৈরি সব আমরা করিয়ে দিচ্ছি। টাকা আছে আপনার, বিলেত ঘুরে এসে
সাতে উঠুন, মাথা উচু ক'রে চলুন, নইলে আমরা ষে লজ্জায় মারা যাই।”
মিন্টার মিত্র বললেন, "এক লঙ্গে থাকতে হচ্ছে, অথচ আপনাকে বন্ধ বলে
পবিচয্, করাতে কি পজ্জাই পেয়েছি এতদিন ।”
মিদ্টার দত্ত বললেন, “নম্বামী স্ত্রী মিলে মুবগী খাওয়াটা! অভাস ক'রে
ফেলুন আঙ্গ থেকেই ।”
একটা মানন্দ কোনাহলে বৈঠকথান! মুখরিত হয়ে উঠল । মিসেস্ মুখাঁজি
কোখেকে একটা মুরগীব কাটলেট এনে নটবরের হাতে দিয়ে বললেন,
“খাল ।”
মিসেন্ চক্রবর্তী বললেন, “বিলেত ফেরৎ গৌডাদের সমাজে বাস কারে
বিলেত যেতে রাজি না হওয়া একটা উচ্ছ,জ্বলতা, একটা মস্ত বড় অফেন্ম।*
মিন্টার দত্ত বললেন, “গোঁড়ামিটা থাকা ভাল সমাজের পক্ষে, ওটাই হুল
তার বাধন, কথাটা! 'মাশা করি মার ভূল হবে শা শটবরবাবু |”
নটবর সান্যাণ বিরুত মুখে কাটলেট চিবোতে চিবোতে মাথা নেডে ইঙ্গিত
করলেন--ছ্ুল হবে না।
১৬
বিবাহে চ ব্যতিক্রমঃ
নায়েবী আর নবাবীতে ঘে কালে কোনো তফাৎ ছিল না, দেই কালের
মানুষ তারিণী রায় ।
তারিণীও নায়েব ছিলেন এক জামিদারের, অথচ মাসিক বেতন ছিল মাত্র
ত্রিশ টাক1| এই টাকাম্ তিনি দেশের গ্রামে মন্তবড দোতলা বাডি করেছিলেন,
অনেক টাকার মালিক হয়েছিলেন। এবং তীর দীর্ঘকানব্যাপী নায়েবী আসলে
নবাবীরই নামান্তর ছিল। পাস্কী অথবা ঘোড়া ভিন্ন চলতেন না, হুকুম ভিন্ন
কঠে অন্য কোনো ধ্বনি ফুটত না, মদ ভিন্ন পাকস্থলীতে অন্য কোনো পানীয়
নামত না। বুদ্ধি ছিল পাকা, এবং নে বুদ্ধির প্রায় ষোল আনাই শয়তানের
কাছ থেকে পাওয়া । চিরজীবন কেবল নিয়েই এসেছেন, দেননি কাউকে
কিছু। অবশ্য একটি জ্বিনিষ দিয়েছেন তিনি অনেকবার- প্রজার ঘরে
আগুন । প্রজাদের জন্য বাজনার ব্যবস্থাও করেছেন-_নিলামের ডিক্রীঙ্জারীর
সময় ।
কিন্তু কালের এমনি গতি _এ হেল তারিণীকেও একদিন ঘোর ছুর্দশীয
পড়তে হল, আর সেও বয়স যখন সত্তরের কোঠায় সেই সময়। যে সুযের
তাপে তিনি তপন হয়েছিলেন, বাংণাদেশের পেই স্থ্যসমাঙ্জের তেজ কালক্রমে
নিবে যাওয়াতে তারিণীর তাপও ভক্ত কমে এলো । আধুনিক কালটাই ব্ড
ভয়ানক, বাক্তিম্বাতন্ত্র বঙ্গায় রাখ! ঘায় না। চোখ রাঙিয়ে কাজ চলত যখন,
এখন সে যুগ অতীত।
ভারিণীর নগদ টাক! যা ছিল তা ৭ অতিলোভে পরহস্তগত, চক্রবুদ্ধির চক্রট।
হঠাৎ অচল হয়ে পড়ল, কোনোটাই আদাম হল না। শেষকালে জমি পুঁভিয়ে
পুড়িয়ে কৃত্রিম তাঁপ বজীয় রাখতে হল কিছুকাল, তারপর তারিণী আর নায়েব
নয়, নবাব নয়, একেবারে নবু হবুর মতো সাধারণ মান্তৰ। শুধু বুদ্ধিটিতে ছিল
জীবনম্বত্ব, সেইটি রইল হাতে, যদিও তাঁর নিজের ধারণা বুদ্ধি থাকলে তাঁর এ
দুর্দশা হত ন1।
দুর্দশা তার সত্যিই হয়েছিল, খাওয়া জোটে না এমনি অবস্থা। একমাত্র
পুত্রকে লেখাপড়। শেখাননি, পৈতৃক জুতোধ় প| ঢুকিয়ে নবাবী করবে আশা
ছিল। ভাগ্যক্রমে সেই পুত্র এখন দায় স্বরূপ হল, উপরন্ধ পুত্রের এক কন্তার
বিষের বয়স হওয়ায় সমস্যা গুরুতর হয়ে দেখা দিল ।
বিবাহে চ ব্যত্বিক্রম: ১৩৩
টাকা ভিন্ন লে মেছ্ে অচল। যে কোনো উপার্জনক্ষম আধুনিক যুবক কিছু
লেখাপড়া জান! মেয়ে চায়, টাকার্ প্রশ্থ তো আছেই । টাকার অভাব কোনো।
কোনে! ক্ষেত্রে পূর্ণ কর! চলে রূপের দ্বারা, গুণের দ্বারা, কিন্তু সেদিকে পথ
বন্ধ। এদিকে যেয্ের বন্ধন চলেছে বেড়ে, ঘরে রাখা আর চলে না। কাছাকাছি
ভাল ছেলে অনেক আছে, তারা নিঃস্বার্থ কাজ অনেক ক'নে থাকে, কিন্ত
বিয়ের বেলায় কোনে। ছেলে অকারণ বাপ-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করতে চায় না।
এমন কি ভূুতো নামক যে যুবকটি যে-কোনো! ছুঃলাহসিক কাজে সর্বদা প্রাণ
দিতে প্রস্ত, সেও বিবাহ বিষয়ে স্বাধীন নয়। ছেলেটি ভাবপ্রবণ অতান্ত বেশি,
ভাবের তারটি চড়া হবে বেঁধে দিলে তার অসাধ্য কাঞজ্জ নেই, একেবারে খাঁটি
বাডালী। অথচ নময় কালে দ্রেখ! ঘাম তারিণী রায়ের প্রায় পায়ে ধরাকেও
সে বেশ এড়িয়ে যেতে পারে। তারিণীর নবাবী কণ্ঠে হয়তো মর্মম্পশী কথন
বেরেশম না।
ব্ছর খানেক ধরেই তাৰিণী এই ছেলেটিকে নানাভাবে ভঙ্গাতে চেষ্টা
করে আপছেন, তার বাবার কাছে বার্থ হযে তার কাছেই আবেদন জানাতে
আরম্ভ করেছেন, কিন্কু কাছে গেলেই সে পালিয়ে যায়ু।
তারিণীর বুদ্ধি সত্যই ভেঙে পড়ার মুখে । অবশেষে আর কোনো উপায়
না দেখে তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করলেন ।
আম্মহত্যার জন্থ নয়। যাদের তিনি এতকাল সামাঞ্জিক মধাদায় ছোট
বলে হ্গনেছেন তাদের কাছে এই পরাজদ্ধ সত্যই মর্মান্তিক। (লোজা পথে
কাজ হবে না, অথচ বক্র পথটিও যে কি তা বুদ্ধির অতীত। মন গলানোর
ভাষ] তার ছাপা নেই। বুদ্ধির পথেই আরও একবার চেষ্ট/ করতে হবে। সেই
উদ্দেখ্যেই রুদ্ধন্ধারে রুদ্ধপথের প্রবেশ মুখ খুক্ষতে তিনি স্থদীর্ঘ বারোটি ঘণ্টা
কাটিয়ে দিলেন । পরদিন সকাল বেলাই বিদেশ যাত্রা। হয়তো কোনো
পথের সন্ধান তিনি পেয়েছেন।
তিনদিন পরে তারিণী রায় যখন ঘরে ফিরে এলেন তখন তার এক আশ্চর্য
পারবর্তন দেখা গেল। যেন মুমর্ষূ লোকটি হঠাৎ নতুণ জীবন লাভ ক'রে
ফিরে এলেন। একেবারে শুভশ্য শীঘ্বম যাকে বলে-বিয়ের নাকি আর মাত্র
সাতদিন বাকী। খুব উৎসাহের সঙ্গেই তিনি সব জায়গায় প্রচ্চার করতে
লাগলেন নাতনীর বিয়ের কথা । কিন্তু পাত্রটি' যে কে তা কেড জানতে পারল
না, বাড়ির লোকেও ন!। তবে এইট্রুকু জানা গেল পাত্রের বন্মন একটু বেশি,
কিন্তু উপায় কি?
৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্য্-গল্প
বয়ন বেশি, কত বেশি? সবাই প্রশ্ন করে।
তারিণী বলেন পঞ্চাশ পেরিয়েছে, তবে দেখতে চল্লিশ। ভাল পাত্র।
তৃতীয় পক্ষ হলেও আগের ছুপক্ষের মাত্র কয়েকটি মেয়ে আছে, ছেলে নেই।
অবস্থা ভাল, দৃব্লে দু্টে! খাওয়া জুটে যাবে, না খেয়ে মরবে না মেম্বে।
শুনে গ্রবীণের! মুখটিপে হাসেন, তরুণেরা উতকর্ণ হয়, উত্তেজিত হয়।
বিয়ের দিন চলে এলো ।
বর পূর্বপিন সন্ধায় আসবে, দুরের গ্রীম্যপথ, একদিন হাতে থাক! ভাল।
গ্ামের এক আম্বীয় তীর বাড়ির এক অংশ ছেডে দিলেন, এবং বর ও
বরঘাত্রীরা এসে পৌছল ষখ সময়ে ।
তারিণী রায় একটু হাতে রেখে বলেছিলেন, কারণ বরের বয়স খুব কম
করেও পয়বাট্ট বছর, দীত নেই, চুল সমস্ত পাকা, লোলচর্ম, লাঠিতে ভর দিয়ে
চলে, চোথ দুইটি ষেন কাচের তৈরি, চশমাতেও ভাল দেখতে পায় না।
কিন্তু তবু বিয়ে বাড়িতে কি উৎসাহ, ছুটোছুটি আর হৈ হল্লা। কিন্তু সে
উৎসাহ শুধু তাব্রিণীর একার । বর দেখে সবাই দযে গেছে, প্রকাশ্যে বলাবলি
করছে মেয়েকে বিষ দিলেই ভাল হত এবু চেযে। তাপ্রিণী বাঁয়ের উপর যাবা
অত্যস্ত চট। ছিল, তারাও তার নীতনীর কথা ভেবে দুঃখ কপতে লাঁগল।
তারিণী বায় লহান্তে বলেন, তা বিয়ে আর মনের মত হম ক'জনের?
অবস্থ৷ বুঝে ব্যবস্থা না করলে চলবে কেন? বরের বাইরেটা দেখেই বিচার কর
কেন, মেয়ে সথখে থাকবে ।
যুবক মহলে চাঞ্চল্য জাগে । তাবা উত্তেজিত হয়, বলে, বুডোৌকে এইধানেউ
সাবাড় করে দ্রিই, কোথাকার এক মডা ধরে এনেছে শ্মশান থেকে, তানিণী বায়
শিশীচ-ইত্যার্দি।
কিন্তু বিষের লগ্ন জ্রত এগিয়ে আমে । ভূতে! অস্তরালে দল পাকায়। এ
বিয়ে ভাঙতে হবে যেমন কারে হোক।
এমন লময় শাধ বেজে ওঠে, উনুধ্বনিতে বিবাহসভা মুখরিত হয, বর বিয়ের
'বেশে গ্রস্তত হয়ে আসে ।
বিবাহ সভায় শুধু মেয়েদের আর বুড়োদের আনাগোনা, কাজের লোক,
ছুটোছুটির লোক একটিও নেই, একটি যুৰকেবও দেখা নেই, এক অস্বাভাবিক
আবহাওম়া। প্রলঘ়্ের আশঙ্কায় চারিদিকে যেমন শাখ বেজে ওঠে, তেমনি শখ
বাজছে মেয়েদের মুখে, করুণ স্থরে | মেয়েটি কাপছে থর থর করে। মেয়ের বাবা
ঘরে দবূজ। বন্ধ করেছে । মেয়ের মায়ের দুচোখ বেয়ে জল ঝরছে অবিন্বাম ।
ব্বিবানে চ হাতিক্ষমঃ ১৬
এমন সমস্ব সত্যই প্রলয় নেষে এলো]। এতক্ষণের 'অদৃশ্ঠ ঘৃষকেরা লাঠি
হাতে হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে এনে হাজির সভাস্থলে । ভীত তারিণী যা
এক লাফে গিয়ে বরকে জড়িয়ে ধরলেন তাকে বীচাবার জন্ত |
ভূতো৷ বলল, এ বিয়ে হতে পারে না। আপনি ছাড়ুন বুড়োকে, ওকে খুন
করব আমরা ।-_-ভভোর লঙ্গীরা সে কথার প্রতিধ্বনি করল।
মেয়ে বিধবা হবে?
বিয়ে এখনও হয় নি, চালাকি শুনব না।
তারিণী রায় বললেন, তার চেয়ে আমাকে মারে! ভোমরা ।-_বলতে বলতে
কেঁদে ফেললেন।
তারিণীর জীবনে বোধ হয় এই প্রথম কানন, কিন্ব এর জন্য তিলি তৈরি
ছিলেন আগে থাকতেই । কাদ:ত কাদতেই তিনি বললেন, আমাব্র সর্বনাশ
করবে ভোমরা ? এ মেয়েকে এধন কে বিদ্বে করবে?
ততো! বলল, সে ব্যবস্থা আমরা করছি ।
কানাই বলল, আপশি বুড়োকে দূর করুন। কিন্তু সেজন্য অপেক্ষা না
কষে সমীর তাব্িণীকে ও বরকে এক ধাক্কায় পরিয়ে দিয়ে ভূতোৌকে সেখানে
দীডাতে ইসারা করল ।
কানাই চিৎকার ক'রে ধলল, বিয়ের নিমঙ্্রণে ববের 'বাঁমশরণ দত্ব' এই তুল
নাম বলা হয়েছিল, বরের নায ভূতো-__মর্থাৎ ভতনাথ সরকার |
হতো কিন্ত চমকে উঠল এ কথা শুনে, কারণ মে এর ধ্বংসমূলক দিকটিই
ভো.বছিল, গঠন ঘুলক দিক ভাববার সময় পায় নি, কিন্তু কানাই য্থাসমযষে
তার নামটি উচ্চারণ ক'রে তাকে আর অন্থা কিছু ভাবতে দিল না। বর সেজে
দা্ডানে।র জন্য যতখানি উত্তেজনা দরকার, কানাই বুঝতে পেরেছিল ঠিক
ততথানি উত্তেজন। ভূঁতোর মনে জেগেছে, তাই মঙ্ের মতো কাজ হয়ে গেল।
ভূতো৷ লাঠি ফেলে এক লাফে এসে দীড়াল মেয়ের পাশে ।
সেই মুহূর্তে সেই পরিত্যক্ত লাঠিখানা ভূতোর বাবা হস্তগত ক'রে পুত্রের শির
লক্ষ্য ক'রে এগিয়ে আসতে লাগলেন, কিন্ক ছেলেরা সহজেই তাঁর হাত থেকে
লাঠি কেড়ে নিল। এবং দলের আর কয়েকজন তাকে জাপটে ধরে রাখল,
তিনি নিক্ষল আক্রোশে গর্জাতে লাগলেন ।
হঠাৎ বিবাহসভায় রোমাঞ্চ জাগল। একটা নাটকীয় চরম দৃশ্যের অনিশ্চিত
পরিণামের জন্ সবাই দম বন্ধ ক'রে অপেক্ষা করতে লাগল । সবাই উন্মুখ,
সবারই মুখ উজ্ভ্রল।
১৩৬ পরিষল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাহ্গ-গয
পুরোহিত যুবকদের ইঙ্গিত পেয়ে মন্ত্র পড়াতে আরম্ভ করল। সভাস্থল
সত্যকার আনন্দ কোলাহুলে মুখর হয়ে উঠল ।
পরদিন তারিণী এবং রামশরণের মধ্যে নিভৃতে শিম্বলিখিতর্ূপ আলাপ
হচ্ছিল__
রামশরণ । নাতনীর বিয়ের জন্য এই শ'খানেক টাকা যোগাড় ক'রে এনেছি,
নে রেখে দে।
তারিণী গদগদ্দভাবে টাকাগুলো ট'্যাকে গুজতে গুঁজতে বললেন, উপযুক্ত
বন্ধুর কাজ করেছিন তুই ।
রামশরণ। কিন্ধ ছোকরার! মেরে ফেলেছিল আর কি। তোর ষতসব
কাণ্ড, কিন্ধু প্যাচটা ভগবানের আশীর্বাদে খেটে গেল তাই রক্ষে।
তারিণী। কিছু মনে করিলনে ভাই, নিরুপায়ের এ একটি মাত্র পথই
ছিল।
বামশপণ। কিন্ত ছোঁকরারা যদি এগিয়ে না আসত ?
তারিণী। সম্বন্ধে নাতনী, চলে যেত এক রূকম,কি বলিস? কিন্ধ আমি
জানতাম ভৃতো আসবে।
(১৭৯৫১)
আমাদের “জন্মত্বত্ব*
“বাঙালী কোনে দিন কোনো অন্তায় সা করেছে? করেনি । বাংলাদেশের
অংশবিশেষ বিহারের অন্ততুক্ত হয়েছিল যখন, তখন বাঙালী তা সম্হা করেছিল,
কারণ দেশ তখন ছিল ইংরেক্ষের। কিন্তু স্বাধীন ভাবতে সেই অন্যায় সে আর
মানতে প্রস্তত নয়। তার আরও কারণ”__
প্রথম বক্তা কথ! শেষ না করতেই দ্বিতীয় বক্তা বলল--“জানি, বিহারে
থেকেও বাঙালী এতদ্দিন বাংল! ভাঘায় পড়াশোনা করতে পেরেছে, কথা বলতে
পেরেছে, কিন্ত আর পারছে না। এখন তাদের উপর জোর ক'রে হিন্দিভাষ!
চাপানো হচ্ছে, এত বড অন্তায় বাংলাদেশ সহা করবে না|”
৯৯৪৭ সনে বাংলাদেশ উত্তেজিত । সর্বত্র সভা বসছে এবং এই জাতীয় বক্তৃতা
তচ্ছে। বই ছাপা হচ্ছে শত শত। বাঙালীদের মধ্যে এমন একতা ১৯০৫-এর
পরে আর দেখা যায় নি। বাংল। ভাষার প্রতি সবার মমতা! হঠাৎ খুব বেড়ে
গেছে। শিক্ষিত বাঙালী বলছে এমন ইন্হান্টিদ আমরা টলাবেট করব না।
নেভার। নাঙলা ভাষায় কথা বল! আমাদের বার্থরাইট, এই বার্থরাইটে হাত
দেয় কে?
কি উত্তেক্না এবং আবেগ । শুধু সভা নয়, তার সঙ্গে শোভাঘাত্রা। শুধু
যে দিন ভাল খেলা থাকে অথবা নতুন সিনেমা ছবি ( বাঙলা অথবা হিন্দি)
আর্ত হয়, শুধু সেই দিনটা শোভাষাত্রা বাদ যাঁয়।
ওদিকে হিন্দি প্রচার দিনের পর দিন ধত জোরালো! হয়ে উঠতে লাগল, এ
দিকের উত্তেজনা বাডতে লাগল ঠিক সেই পরিমাণে । দ্বিখগ্ডিত বাংলাদেশ।
আশ্রন্বপ্রার্থীর জায়গা হয় না । আমরা আমাদের হারানো সীমা ফিরবে পেতে
চাই। আমরা য| চাই তা! দিতেই হবে, এ কি মগের মুল্ুক পেয়েছ বাছাধনর! ?
বেদখল করলেই হল ?
দাবীর যেমন জোর, কলমের জোর তেমনি । পুস্তিকার সংখ্যা দ্রুত বাড়তে
লাগল। আশ্চর্য গব্ষেণা, নিভূলি হিপাব। এই সব পুস্তিকা পড়নে জান! যাবে
আমাদের কত বর্গমাইল জমি বিহার দখল ক'রে আছে, তাতে কত বাঙালীর
বাস, শতকরা কত জন বাঙলা বলে এবং তাদের উপর জোর ক'রে হিন্দি
ভাপানোয় তাদের শতকব! কতজন এই ধর্মাস্তর গ্রহণের ছুঃখ ভোগ করছে।
১৬৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ ব্ঙ্গ-গল্প
এ নব অকাট্য সতা কথা। প্রতিবাদ চলে না। মাতৃভাষা ভুলিয়ে
দেওয়া পাপ।
কিন্ত কোনো প্রতিবাদ শোভাধাত্রাই আধ-মাইলের বেশি দীর্ঘ হয় না, তার
গতিও কম্েক মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কলকাত। শহবের সীম। ছাভিয়ে তা
লিহার সীমানা স্পর্শ করে লা। তাই বিক্ষোভের ধ্বনি শহরের হাওয়াম্স মিলিয়ে
যায়, মুদ্দিত পুস্তিকা ঘরে জমতে থাকে, বিহার নিশ্চিন্ত থাকে, নতুন শক্তি লাড
করে। এমনি ক'রে কাটে বছরের পর বছর।
এলো ১৯৫০ ।
কলকাতা বিশ্ববিগ্ালয় লক্ষ্য করছিল সব। কিছুদিন থেকেই সিণ্িকেটের
গোপন সভা বসছিল। হাজার হাজার পরীক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের
থে ধ্বংদ আসন্ন হয়ে উঠেছে এইবারে তার পুরণ হতে পারবে এমন সম্ভাবনার
কথা সভায় আলোচিত হল। এবং তার পরেই দেখা গেল বাংলার বাইরে
বাডালীর সংখ্যা, তাদের ভাষা, তাদের ইতিহাল, তাদের ভূগোল এবং মোট কত
প্রবাসী বাঁডালীর বাংলা ভাষায় পড়াশুনা করার অধিকার, এই বিষষে এম-এ
পরীক্ষা নেবার জন্য পৃথক একটি পোস্ট-গ্রাজুয়েট বিভাগ খোলা হযে গেছে।
বিষের নীম হয়েছে আর-এল-বি অর্থাৎ “রিক্লযটমেশন অব লস্ট বেঙ্গল ।”
অন্যান্য এম-এ বিষয়ের মতো! এরও প্রশ্নপঞ্জ আটটি । যে সব পাঠাপুপ্তক নুচিত
হয়েছে তাদের নাম__
“র11100800870651 10017501009 136008118 0036870513810291 +
“1590 3610£9] 10৪6 6০ 12810180810, ৪1081168110 10. 120:7799 ৪10
50 0100100 “10981))68 [8616100 78 89. 86111 ৪8878 00163
ইত্যাদি।
এই বিষয়টি এম-এ পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিগ্তালম শুধু
থে লোকমান এডিয়েছে তাই নয়, তার উদ্বৃত্ত টাকার পরিমাণ এত হয়েছে যে
সে পৃথক একটি ব্যাঙ্কিং-এর ব্যবসা চালাবার আয়োজন করুছে। আর শুধু
বিশ্ববিভ্যালয় নয়, পুস্তক প্রকাশকদের ভাগ্য ফিরে গেছে এই সঙ্গে, বিশেষ ক'রে
মোট প্রকাশকদের । কারণ রিক্র্যামেশন অব ল্ট বেঙ্গল-এ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা
লাখের কাছে। সমব্য মারমূখী গ্র্যাজুদ্বেট দলে দলে গিয়ে ভর্তি হয়েছে । এমন
কি ছোট প্রকাশকেরাও “বেঙ্গল বাউণ্ডারি এক্সটেনশন মেড ঈজি” "বেঙ্গলী ফর
দি বেঙ্গলীজ ইন ওয়ান আওয়ার” "আওয়ার বার্থরাইট আট এ গ্যান্স” জাতীয়,
মব বাশের সাকে। বাধছে পরীক্ষা মৈতবণী পাবের যাজীদের অন্য |
"আমাদের “জন্মন্বত্ব? ১৩৯
১৯৫% সনের মধ্যেই বাংলাদেশের যাবতীয় লোক বিহারের অস্ততু-ক্ত
বাংলার অংশ, বাঁডালীর সংখ্যা এবং এ সম্পর্কে হাজার রকম তথ্য মুখস্থ ক'রে
ফেলল । বাঙালী মাত্রেই এখন হয় এম-এ ( আর-এল-বি ), অথবা রিক্লামেশন
অব লস্ট বেঙ্গল” ব্যয়ের জানে তাদের সমান । এখন তারা শোভাঘাত্রা হেব
করে না, কিন্ত আর-এল-বি বিষয়ে ঘাবতীয় তথ্য গড় গড় ক'ৰে মুখস্থ বলে থেতে
পারে। এখন তারা তাদের সংস্কৃতি বৈঠকে ( মংখ্যা অগণিত ) বসে মালে
একবার ক'রে হিন্দি ভাঘার বিরুদ্ধে আলোচনা করে। তার পধাপ্ক্কমিক
বিবর্তন ইতিহাস এই-_
প্রথম পধায় ; ভাষার ভিত্তিতে দেশের সীমান। পুনংস্থির নীতি কংগ্রেশেরই
নীভি। অথচ ষত ধিন যাচ্ছে ততই দেখছি এই দীতির বিপরীতটাই ঘটছে।
বিহারের থে ভাগে বাঙীলীবাই বাপ করে সেটা তো বাঙলাদদেশরই অংশ,
সেখানকার মীতৃভাষাও বাংলা । এই মাতৃভাষার উপর জোর ক'রে হিশ্দি
চাপানো আমরা সকল শক্তি ধিয়ে প্রতিরোধ করব। ইতাদি ইত্যাদি ।
দ্বিতীয় পযায় £ (প্রতিবাদ সভা আরও বড) আমাদের ভ্বাতভাইদের
ভাষা কেডে নিয়ে তাদের উপর জোর ক'রে ভিশ্দি চাপালে সে হোবে না। এ
অন্যান আমর! মানবে না। ফেমোন ক'রে হোক লোভাই ক'রে হোক হাঙগালীৰ
জন্ম সোত্ো বঙ্জায় রাখতে হোবে। প্রোভিনশিম্বাল ঝগড়া হোবে, ভাই সাথ
ভাঁই লোড়বে আপ্রাণ লড়বে, তবভি ছোঁডবে না” ইত্যাদি ইত্যাদি
ততীম্ম পখায়ের (১৯১৩০ সনের ) সভাম হঠাৎ ব্যতিক্রম দেখা গেল। থে
সভা ঘরে চলছিল সেই সভ! বপল ময়দানে মন্থমেটের লিচে। বিরাট লভা,
বিরাট খরু৮, কিন্তু এত টাকা বাঙালী কোথায় পেল ১ আর এটাই হল তার
শেষ পযায়। তার বলল :
“কেও, কেও, কেও হাম ভয়ে জবর বরদান্ত ক্ঙ্গা) আংরেজ নে
ফেকরণাজি করকে মেরা দেশ ছলরা কে। দে পিয়। খ।। লেকিন আঙ্গ যৰ
আজাদি কি হাওয়া বহন। শুক কী হার তব কেও হামার] মুবুক মেরি মাতৃভমি
মেরা দখলমে নেহি আগ্গ ? হাম লডুংগ।, জান কবুল লড়ুংগ।, আওর ঘে।
যে হামার! দৌলত হঙ্জম করন! চাহতা হ্যায় উন্সে ছিন্ লুংগা! | হাম বাংগালী৪
সান ককুব্বান করুংগ। পর দেশ কভি নেহি ছোড়ুংগ! 1” ইত্যাদি ইত্যাদি ।
শত্রুর! বটাচ্ছে, বেহারের লোকেরাই বাঙালীদের এই আন্দোলনের সমস্ত
খরচ জুগিয়ে চলেছে নিয়মিত ।
(১৪৫, )
স্বর্গীয় সমস্ঠা
বিশ্বকর্মা সবিনয়ে লোকপিতামহ ব্রদ্ধার কাছে এনে নিবেদন করলেন, "স্বর্গে,
সিমেন্টের বড়ই অভাব ঘটেছে, এখন আর নবাগতদের জন্য নব উপনিবেশ গভে
তোলা সম্ভব নয়, সাহিত্যিকদের উপনিবেশেই ওদের জায়গ! করতে হবে।”
সিমেন্টের সত্যই অভাব ঘটেছিল। দেব সেনাপতির আদেশে স্বর্গের
স্থবৃহৎ দেবস্থানের জন্য চীনের প্রাচীরের মতো! একটি রক্ষীপ্রাচীর সম্প্রতি
গডতে হয়েছে । এর কারণ মানবাত্বাদের স্বর্গবামের উপযুক্ততা আগে যেমন
কঠোরভাবে বিচার করা হত এখন আর তা হচ্ছে না। নানা স্বার্থের গ্লাক
এখন স্বর্গে আলছে এবং এ বিণয়ে অনেকক্ষেত্রে মান্তষের বিচাবের উপরেই নিব
কর! হক্ছে। তাই আশঙ্ক। ন্বর্গশাননতন্বে ডেমোক্রেপির দাবী প্রবল হলে হয়
তো কালক্রমে দেবস্থান মাঞ্রান্ত হতে পারে।
বিশ্বকর্মা ব্রহ্মার উত্তরের অপেক্ষা দাড়িয়ে রইলেন। চত্ুরানন তার
উত্তরদিকস্থ মুখে উন্তর দিলেন, “আমিও সেটা ভেবেছি । আর শুধু ভাবা নয়,
কর্তবাপথের বাধা ঘাতে দূর হয় ঘে চেঈাও অনেকখানি ক'রে ফেলেছি এর
মধ্যে। পাহিতাকদের উপলিবেশেই ওদের স্থান হয়ে ধাবে।”
এই এককত্রবাসই বিশ্বকর্মীর সাম্প্রতিক সমস্যা । সংঘর্ষ অনিবার্ষঝ। তাই
ব্রহ্মার সম্মতি নিতে চান। ব্রন্ধারও তাই ইচ্ছা! জ্রেনে তিনি উত্সাহিত হয়ে
বললেন, "প্রথম গগুগোলটা কেটে গেলেই ওরা পরম্পরকে সম্থ করতে পারবে,
এ বিষয়ে লন্দেহ নেই |”
ত্রদ্ম। জিজ্ঞাস! করলেন, “যার| এসেছে তাদের সঙ্গে কি কি বস্ত আছে ?”
বিশ্বকর্মা বললেন, “চালের বস্তা, চিনির বস্তা, লিমেন্টের বস্তা, তেলের টিন,
আরও কত কি। কিন্ত হিরিশ্যগর্ভ, কর্তব্যপথের বাধা ধর করা বিষয়ে কি
ভেবেছেন শুনতে বাসনা |”
ব্রদ্ধা বললেন, “শুনবে ঘি তা হ'লে সরে এলো পশ্চিম দিকে । আমার
উত্তরদিকস্থ মুখ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে কদিন ক্রমীগত কথা বলে ।”
বিশ্বকর্মা, ঘথাদিষ্ট সরে এলে ব্রদ্ধা পশ্চিমর্দকের মুখে বলতে লাগলেন,
কিছুদিন ধরে একটা গুক্বব কানে আসছিল ষে সাহিত্যিকরা তাদের সঙ্গে ঘে
কীতি বহন ক'রে এনেছে তার মধো ফাকি আছে। তাদের কীতির শতকরা
আমী ভাগ না কি বাতিগ হবার ঘোগ্য। সম্প্রতি আমি পৃথিবীতে দূত
স্বগায় সমস্যা ১৭৯
পাঠিয়ে নিশ্চিত জানতে পেবেছি গুজব ভিত্তিহীন নয়, সত্য । স্থতন্বাং তাদের
বাতিল অংশ বাদ গেলে সাহিত্যিকদের উপনিবেশে অনেকখানি জাম্প] ফাকা
হবে এবং সেখানে নবাগতদের জাম্সগা হয়ে যাবে ।”
দেবশিল্পীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল একথা শুনে। তার যেন একটা! ফ্কাড়া
কেটে গেল। পৃথিবীর খবরের কাগজে চোরাকারবারীদের দুক্ষার্যকে 'কীত্তি,
বলে প্রচার হবার পর থেকে যখনই চোরকারবারী মারা যাচ্ছে তখনই তাদের
সুক্ষরদেহ তাদের কীতির বোঝা। নিয়ে স্বর্গে চলে আপছে, তাই স্বর্গের গৃহ সমস্া
প্রবল হয়ে উঠছিল । বিশ্বকর্মা পিরুপায় হযে পড়ছিলেন নানা কারণে।
সিষেণ্টের অভাবটাই তার মধ্যে প্রধান। কিন্ত ব্রক্ষান্থ কথায় বোঝা গেল
বিশ্বকর্মীকে আপাতত আর নতৃন আশ্রয় শিবির গড়তে হবে না। তিনি খুশি
ভাবে বললেন, “এখন সাহিত্যিকদের তোয়াজ টোয়াজ ক'রে রাজি করাতে
পারলেই নব মীমাংসা হয়ে যায়, কিন্তু ওরা যে রকম অটিমানী !”
ব্রহ্মা বলিলেন “আমি ওদের ডেকে বুঝিয়ে দিচ্ছি । যদ্দি বুঝতে পাবে
ওরা অন্যায় ভাবে অনেকখানি জায়গা দখল ক'রে আছে তা হ'লে আর গণ্ডগোল
করবে না। তুমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও; লোকটি
যুক্তির পথে চলতে ভালবাসে, একেই সব বুঝিয়ে বলি ।”
কিছুক্ষণের মধোই রবীজ্্নাথ এসে উপস্থিত হলেন। স্বর্গে বাস কবে
তাঁর চেহার| আরও উজ্জল হয়ে উঠেছে, হঠাৎ দেখে মনে হয় স্বর্গেরই স্থায়ী
বাসিন্দা কোনে। দেবতা ।
রবীন্দ্রনাথ নমস্কারাস্তে সবিনয়ে বললেন, “আদেশ করুন, প্রজাপতি ।”
ব্রহ্মার পশ্চিম দ্রিকের মৃখও ইতিমধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় দক্ষিণমূখে কথা
শুরু কত্বুলেশ। কবি বুঝতে পারলেন এট৷ দাক্ষিণোর মুখ, প্রসন্নতার মুখ:
অতএব ভয়ের কারণ নেই কিছু।
্র্ধা প্রশ্ব করলেন, “তুমি শাঙ্জাহান কবিতা লিখেছিলে মনে আছে ?”
“অবশ্য আছে ।”
“ওর মধো এক জায়গায় লিখেছিলে__তোমার কীতির চেয়ে তুমি ষে মহৎ,
তাই তব জীবনের রথ পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীতিরে তোমার বারস্বার'__
মনে আছে ?”
“মনে আছে ।”
"ভূল বুঝতে পেরেছ ?”
“মর্ভ্যবানীর এত সৌভাগ্য আগে কণ্নন। করতে পারি নি, ভেবেছিলাম
১৭৯ পরিমল গোল্বামীর গে ব্াহ-গর
কীতিম্মান কীতিকে পরিছনে ফেলে একা স্বর্গে আদে। কিন্তু এখানে এঙেই
মে ভূল তেডেছে। কারণ আপামাত্র শাঙ্গাহানন আমাকে বললেন “এ দ্বেখ,
আমার তাঙ্জমহল ও আমার সঙ্গে এসেছে ।, বিস্মিত হওয়া উচিত ছিল, কিন্ত
হওয়া গেল না, দেখি আমার কীতিও পিছনে পড়ে নেই । আমার প্রথম বই
থেকে শেষ বই সবই আমার সঙ্গে এসেছে, এবং সব্গুলে৷ সংস্করণ। ওর যধ্যে
আগেকার সচিত্র চয়নিকা, পকেট ক্ষণিকা, জাপানী শোভন সংস্করণ সব আছে ।”
“শেক্সপিয়ারের ঘর দেখেছ ?”
“দেখেছি, পিতামহ। তার সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন আলাপ হচ্ছে নাটক
বিষয়ে । ভেবিওরাম এভিশনটা আমাকে তিনি দেখতে দিয়েছেন। কিস্ক
আব বোধ হম দেখা চলবে না, কাবুণ কয়েকজন চোর তাদের লটব্হর নিস্বে
আমাদের পল্লী দখল করতে চাইছে |”
ব্রহ্মা বললেন, “তাদের জয়গা দিতে হবে তো? সুতরাং তোমাদের আয়গা
কিছু ছাডতেই হবে। অনেকখানি জায়গা তোমরা অন্যায়ভাবে দখল ক'রে
আছ । এতে অবশ্থা তোমাদের বাক্তিগতভাবে কোনো দোষ নেই । তোমাদের
কীতির নধো যে এত ফ্লাকি আছ্ধে তা আমিও আগে জীনতাম না। মেই
ফাকি সমেত নব চাল এসেছে তোমাদের সঙ্গে |”
কবি বললেন, "আমি তো আগেই বলেছি_বাত্রের আধারে হায় কত
পোনা হমে যাম্ম মিছে, লে দব ফেলিয়া! যাব পিছে |, স্বর্গে আলার পরে দেখছি
ফেলে আসা যায় না।
ত্রঙ্গা বললেন, “জানি, আর সে জন্য তোমার উপর আমার শ্রদ্ধ/ আছে।
তোমার কীতি যে তোমার সঙ্গে এলপেছে সেজন্য তৃমি অবশ্যই দায়ী নও, স্বর্গের
বিধান দায়ী । কিন্ত সম্প্রতি আমি একটি সত্য আবিফার করেছি এই ষে
তুমি এবং তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদের কীতি অতি সামান্য । ঘা সঙ্গে
এসেছে এখন তার শতাংশও টেকাতে পারি কিনা বলা শক্ত |”
কবি বললেন, «কি ভাবে আবিষ্কার হল ?” বলে বিশ্মিতভাবে চেত্সে
রইলেন চতুরাননের প্রতি ।
চতুবানন বললেন, “বড় ক্লান্ত, পূব দিকে এসো।” অতঃপর তিনি
পৃবদিগের মুণ থেকে ব্ললেন, “চাক্ষ্ষ প্রমাণ দেখাচ্ছি । দূত”
দূত এসে প্রণাম জানাল।
"পৃথিবী থেকে কি এনেছ দেখাও ।”
ইতিমধ্যে দেখা গেল কালিদাস, শেক্সপীয়্ার, মিলটন, ওয়ার্ডস ওদা
স্বগীয় সমস্া। ১৭৩
ক্রীউনিং, শেলী, কীর্টস্, এবং আরও অলেকে তাদের সাহিত্যিক উপনিখেশ
থেকে হস্তদস্ত হয়ে ছুটে আলছেন ব্রন্ধার দিকে । চোব্দের সঙ্গে থাকতে কেউ
বাজি নন।
ব্রহ্মা বললেন, “শাস্ত হও তোমরা। জায়গ! ছাড়তে হবে নবাগতদের
জন্প | তোমর! এসে পড়েছ যখন, তখন সব প্রত্যক্ষ কর ।”
দূত বিরাট এক বোঝা এনে নামাল তাদের সম্মুখে । বোঝাটি পুস্তকের ।
ব্রদ্মা শেক্সগীয়ারকে বললেন, "তোমার যে কোনে! একথানা বই এর মধা
থেকে নিয়ে খুলে দেখ |”
শেক্সপীয়ার যেখানা তুলে নিলেন সেখান ম্যাকবেথ । খুলে দেখলেন মাঝে
মাঝে পেন্সিলে চিহ্ন শ্রাকা আছে, এবং চিহ্বের পাশে লেখা আছে
[20378 ,
প্বন্গা বললেন, “যয সব জায়গা ইম্পরট্যাণ্ট লেখা আছে, মাত্র সেই
অংশগুলে! তোম।র কীন্তি। তোমার এ পাঁচ অক্ষের নাটকথানাম্ম মাত্র এ
অংশগুলো লিখলেই চলত, বাকীটা শ্রেফ ফাঁকি । অবশ্য এই আবিষ্কারের
গৌরব আমার নয়, তোমাদেরই কণে্গের অধ্যাপকদের |”
রবীন্দ্রনাথ ফন ক'রে তার একখানা কাব্যগ্রন্থ তুলে নিয়ে দেখেন, সেখানেও
প্র একই চিচ্ছ। প্রতোকটি কবিতার চার লাইন থেকে ছ'লাইন মান
ইম্পরটান্ট । এবপর কালিদাস, ব্রাউনিং, (শলী, কীটস, টেনিসন সবাই
কৌতৃহলী হয়ে নিক্গ নিদ্র বই খুলে দেখেন, এ একই ব্যাপার ।
রবীন্দ্রনাথ স্মভিত হয়ে বললেন, “ভাব যেখানে গাচ হয়ে উঠেছে শুধু সেই
স্বানটিই পৃথকভাবে কাব্য নয়, সমস্তটা মিলে একটা শখণ্ড কাব্য ।”
শেঝ্সপীয়ার আত্মগতভাবে আবৃত্তি করতে লাগলেন-_
[10-10170%/ ছা] 0-70000% 200 60110001710
(15608 10. 6018 108৮0510506 (1010. 085 60 ৫8 -..
ব্র্গা সেদিকে লক্ষ না ক'রে রণীন্দ্রনাগের দিকে চেয়ে বললেন, “সমস্মটা
মিলে খণ্ড একটি কাবা, ওটা তোমার কল্পনামাত্র। যাব| পড়ায় এবং ঘারা
পড়ে তারাই কাবোর ষথার্থ জহুরী। পবীক্ষার্থারাও এটুকু মাত্র পড়েই পাস
করে। অতএব এ খণ্ড অংশগুলোই তোমাদের কীতি। যে ফুলচায়সে
গাছটাকে বাদ দেয়।”
রবীন্দ্রনাথ একটু চিন্তা ক'রে বললেন, “কিন্ত ফুল যে ফোটায় তার পক্ষে
গাছটাকেও যে গড়ে ভোলা! দরকার । ফুলের ব্যবসায়ী ফুল ছিড়ে নেয় বটে,
১৭৪ পরিমল গোন্বামীর শ্রেঠ ব্যঙ্গ-গল্প
কিন্ত যে ফুল উপভোগ করতে চান্ন, দে ফুলের সঙ্গে গাছও পালন করে, এবং
ফুল ছেড়ে না ।”
্রন্ধা স্বয়ং শর্ট তিনি ভাবতে লাগলেন কথাটা । তার বিশ্বাস গাছটা
সত্যই অবান্তর। শুধু ফুলস্থৃষ্টি করলে হত। বাংলাদেশের কলেজীয় প্রভাব
আর কি।
এদিকে রবীন্দ্রনাথের বুকে এক দীর্ঘ নিশ্বাপ ঘনিয়ে এলো | তিনি মনে মনে
বাপ্যকালে লেখা কবিতাটি আবৃত্তি করতে লাগলেন-_
“ "শত খতু আবর্তনে শতদল উঠ্িতেছে ফ্ুটি
স্কৃতীক্ষ বাসনা ছুরি দিয়ে তুমি তাঁহা চাও ছিডে নিতে ?
লও তার মধুর সৌর
দেখো তার সৌন্দয বিকাশ
মণু তার কর তুমি পান
চেয়ো না তাহারে ।”
ব্রন্ধা আত্মগত ভাব থেকে জেগে উঠ বললেন, “ফুল গাছের কীতি, এ কথা
মাল তো! ?”
রবীন্দ্রনাথ বললেন, “প্রঙ্গাপতি, গাছই যেখানে অষ্টা, ফুল সেখানে তার
কীতি। কিন্তু গাছকে ধিনি হ্ছজন করেছেন তিনি ফুলের সঙ্গে গাছকে রাখতে
বাধ্য। অতএব আপনার যুক্তিতে হুল আছে ।”
্রন্ধা সত্যই বুঝতে পারলেন কবির কথায় যুক্তি আছে। কারণ এ
ইম্পরট্যাণ্ট লাইনগুলো৷ কাব্য যদি নিজে হষ্টি করত, তা হ'লে, এ লাইনগুলো
বেখে আর সব বাদ দেওয়া যেত। কিন্তু কবি হচ্ছেন সব খাশির শ্ষ্টা, তাই
বাদ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তার গাছ বাদ দিয়ে ফুল ফোটানোর কল্পশাটা ন্ট
হয়ে গেল, তিনি উদ্বাসভাবে ভ।বতে লাগলেন ।
লেখকদের ভিড়ের পশ্চ(দ্ভাগে দাড়িয়ে ছিলেশ বারনাড শ। এতক্ষণ কেড
তাকে লক্ষ্য করেন নি। তিনি এতক্ষণ চুপ ক'রে দাড়িয়ে ছিলেন একখানি
বইও স্পশশ না কৰে, কিন্তু শান্তভাবে নয়, বন্ধমুষ্টি অবস্থায় ।
্রন্ধার দৃষ্টি পড়ল তার দ্রিকে। তিনিও তার এই অন্ভুত আচরণ লক্ষ্য
কবে বলশেন, "তুমি বই দেখছ না কেন? তোমার এ রকম হিংস্র মৃত্তিই
ব| কেন?”
বারনার্ড শ বললেন, “আমার একটি প্রার্থনা আছে ।”
“কি প্রার্থন। ?”
স্বগীদ সমস্যা ১৭৫
“আমি বাংলাদেশে ফিবে যাবার অন্থমতি চাই । মাত্র এক সপ্তাহের জন্ত।
দেবেন অনুমতি ?*
ব্রহ্মা প্রশ্থ করলেন, “সেখানে কলম চালিয়ে কিছু হবে আশা করছ ?”
বারনার্ড শ বললেন, “না, কলম নয়, বন্ধমুষ্টি চালাতে চাই ।”
ব্রদ্ধা তাকে সম্গেহে বললেন, “তা আর দরকার নেই, এখানেই তোমন্না
শাস্তিতে থাক, তোমাদের উপনিবেশের সীমানায় অন্যদের প্রবেশ নিষেধ কানে
দিচ্ছি। শিক্ষীর ক্ষেত্রে বাডালী নিজেই এক অদ্ভুত কৌশল আবিষ্কার করেছে,
ভাতে বাংলা দেশের কলেজেও মহ! শাস্তি বিরাজ করবে, কোনো গগুগোল নেই,
কোলাহল নেই, পাঠ নেই, পরীক্ষা নেই, ছাত্রও নেই, অধ্যাপকও নেই । কারণ
শিক্ষা ওরা আর চায় না, ওরা পরম্পরকে শিক্ষা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইবে,
বোমার সাহাষ্যে | স্তবাং ইউরোপীয় মধ্যস্থৃতারও আর দরকার নেই ।»
ধারনার্ড শ কল্পনা করতে লাগলেন সেই অবস্থাটা । তাঁর মুখ উজ্দ্বল হনে
উঠল এবং ধীরে ধীরে বদ্ধমুষ্টি খুলে গেল।
তথন সবাই মিলে ত্রন্মাকে অভিনন্দন জানিয়ে স্ব স্ব স্থানে ফিরে গেলেন।
(১৯৪৫ )
বাহাম্ন মালের পুজা-নংখ্য।
রাজেন্্র তরফদার নামক এক প্রধান ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলা তীর বৈঠকখানায় বসে
একখানা ডিটেকটিভ উপন্যাস পড়ছিলেন। ইনি কে এবং ফেন ডিটেকটিভ
উপগ্যাস পড়ছিলেন সে খোজে দরকার নেই | কিন্ত ইনি সহস! এক অপরিচিত
যুবকের আবির্তাবে বিন্দিত হলেন কেন, দেখা যাক ।
যুবক ৰিনীতভাবে তরফদার মহাশয়কে নমস্কার ক'রে নীরবে দাড়িয়ে রইল ।
তরফদার প্রশ্ন করলেন, কোথেকে আমলছ ?
যুবক বলল, আলছি বালিগঞ্জ থেকে, একটি বিশেষ কাজে ।
বিশেষ কাজটি কি?
আজ্ঞে সেটা ঠিক প্রকাশ ক'রে বলনার মতো নয়, কাজটি অত্যন্ত তুচ্ছ।
আমাকে মাপনি দয়া ক'রে একখানি ম্পারিশ পত্র যদি দেন__
চাকরির ?
মান্জে না, শুনছি যক্েখবর চাটযো আপনার বন্ধু। তার কাছে আপনার
একথা নি পরি5য়-পন্র চাই। তীর কাছে সোজ| গিয়ে দেখ। করা নাকি বডই
কঠিন।
তোমাকে ন! চিনেই পরিচয় পত্র দেব কেমন ক'রে?
আমার পরিচয় আমিই দিচ্ছি । আমি করি।
ষজ্ঞেশ্বর কবিতা পছন্দ করে বলে তো জাশি না।
আজ্জে, তিনি পছন্দ না করলেও ক্ষতি নেই। তীর কাচ থেকেও একথান।
চিঠি নেব আপনার“চিঠি দেখিয়ে ।
তোমার কি মতলব বল তো?
যুবক একটু ইতস্তত ক'রে বলল, যজ্ঞের বাবুর জামাই এবারে “ছু:খ নিশি
ভোর” কাগজের পূজো সংখ্যার সম্পাদক । তীর কাগজে যদি আমার একটা
কবিতার স্থান হয়।
কবিতা ছাপার জন্য এত কাণ্ড করছে হয নাকি?
আজে "আমরা উদীয়মান কবি, এ ছাড়া আর আমাদের গতি নেই।
সুপারিশ পত্র দেখালেও যদি না ছাপে?
এবারে শ' খানেক বিশেষ সংখ্য। কাগঙ্জ বের হচ্ছে পুজে৷ উপলক্ষে-_কোনো।
না কোনোটায় লেগে ষেতে পারে।
বাহাক্ন সালের পৃজা-নংখ্যা ১৭৭
একই সুপাত্িশ পত্রে?
আজ্ঞে না। খান পঞ্চাশেক জোগাড় করেছি নানা কাগজের জন্য-_
যেখানে লেগে বাঁয়।
তুমি কি বেকার? সারা দিন এই ক'রে বেভাচ্ ?
আজ্ঞে বেকার নই। আমি এক অফিসে কাজ করি। কিন্ত ঘোরাঘুরির
জন্য এক যাস ছুটি নিম্নেছি বিনা বেতনে ।
বল কি!
আজ্ঞে আমি এক] নই, শহর নানা অফিস থেকে অন্ততঃ শ' পীচেক কবি
আর গল্প লেখক আমারই মতো ছুটি নিয়েছে । না নিয়ে উপায় কি বলুন ?
রাজেন্্র তরফদার বিশ্মিত দৃষ্টিতে যুবকের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন,
ভীরু দয়া হল এবং কাগন্জ কলম সংগ্রহ ক'রে স্থপারিশপত্র লিখতে বললেন ।
চ
“স্র্বোদয়” কাগজের পৃঙ্গাসংখ্যাব সম্পাদকের ঘব। কাগক্জগ প্রকাশ
হতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ আছে, কিন্ধ সম্পাদক বিচলিত । ধাঁদের গল্প না
হলে কাগজ্জ বের করা বৃথা, তাদের অধিকাংশেরই খোঁজ নেই এখনও ।
কবিতা বন সংগ্রহ হয়েছে, কিন্ধ গল্প নেই। আব একটু পরেই উদীয়মান
কথাসাহিত্যিক ও কবির ভিড লেগে যাবে। তাঁদের ঠেকানো ছুঃসাধা।
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো তারা এসে ভেঙে পডে। অধিকাংশের মুখেই ফেনা
উঠে যায়, তারা সর্মন্ধ ঘুরে ঘুরে মাথা কুটে বেডাচ্ছে, কিন্ত কোথায় ও তাদের
স্থান নেই | সম্পাদক তাদের অনেকের লেখা পে দেখেছেন-_উতকুষ্ট সব
লেখা । ভাল গনও অনেকে লেখে, ভাল কর্িতাও লেখে, কিন্তু সেগুলো ততো!
আর ছাপা যায় ন। ছাপলে মেইগুলোতেই কাগঙ্গ ভর্তি হয়ে ঘায় এবং সে
কাগজ পাঠ্য হিনাবে অবশ্ঠ খারাপ হয় না। কিন্তু ছেপে লাভ কি? কাগজ
বিক্রি হবে না। পরিচিত "লেখকের লেখা চাই । তাদেরও দাবী আছে পুজা-
সংখার উপর। বহু নিন্দা মাথায় বয়ে, বু ঘ। খেয়ে, বন অপঘশ সহা করে,
এতদ্দিন তীর! শুধু স্বাস্থা ভাল বলে টিকে আছেন। ধাদের স্বাস্থা ভাল ন্বয়,
ঘা খেয়ে ধার বিচলিত হয়েছেন, তারা ইহসংসাঁরে আর নেই ।
স্বতরাঁং পরিচিত লেখকদের স্থান দিতেই হবে পূজা সংখ্যায় । এবং তাদের
স্থান দিতে গেলে নবাগতদের পথ বন্ধ। নবাগতদের মধ্যে ঘাদের স্বাচ্থ্য ভাল
১২
১১৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ ব্যল-গল্প
তারাও একদিন স্থান পাবে, সম্পাদক এই ভরসা দিযে তাদের বিদ্বায় ক'রে
দিচ্ছেন। কিন্তু বিদায় করা সহজ নয়। প্রাণ অতিষ্ঠ হয় । পথে দেখা হলে
দ্ূলে দলে অনুসরণ করে। বাক্জারে গেলে সেখানেও ক্রেতাদের মধ্যে শতকরা
অস্ততঃ ত্রিশজন কবি বা গল্প-লেখক বাজার ফেলে সম্পাদককে চেপে ধরে।
রাত্রে ঘুমোলে এসে ঘুষ ভাঙায় ।
“মুর্যোদয়” সম্পাদকের হাতে আর সময় নেই। “দুঃখ নিশি ভোর”
কাগজের সম্পাদকেরও এ একই অবস্থা । ক-কাগজ, খ-কাগজ, গ-কাগজ
প্রত্যেকের এক অবস্থা ।
এবারের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির অর্থ কি?
বার বার চিঠি দিয়ে এবং দেখা ক'রেও কোনো পরিচিত গল্প-লেখক এবারে
এতদ্দিনও গল্প পাঠাচ্ছেন না কেন ?
সমশ্ত পৃজা-সংখ্যা সম্পাদক উন্মাদপ্রায়-_-এ বকম বিপষয়ের অভিজ্ঞত।
ইতিপূর্বে তাদের কথনও হয় নি।
এক দিকে নতুন লেখকদের আক্রমণ, অন্যদিকে প্রাথিত লেখকদের
উদাসীনতা, এই ছুইয়ের মাঝখানে পড়ে একশ পৃজা-স'খ্যা সম্পাদকের ভবিষ্যুৎ
অন্ধকার হয়ে উঠল। প্রতি গল্পের জন্য একশ টাক] দক্ষিণা কবুল ক*নেও লেখ!
পাওয়া যাচ্ছে না, এ কেমন কথা?
অবশেষে আত্মরক্ষীর শেষ পথই তাঁরা অবলম্বন করলেন। ঠিক করলেন,
নিজেরাই লেখকদের বাড়িতে গিয়ে পডে থাকবেন, এব" পলখা না নিয়ে উঠবেশ
না। এর পরিণাম হল অতি মারাত্মক । সে কথা বলতে হলে গোডার কথা
কিছু বলা দরকার ।
১১
এক মান আগের কথা । একটি দৃষ্টান্ত দিলেই সব বোঝা যাবে । আমরা
স্থবিধার জন্য একজন লেখকের কথাই উল্লেখ করব। পৃথকভাবে সবাৰ দৃ্টীস্ত
দেবার দরকানু নেই, কারণ সম্পাদকদের মতো! লেখকদের্ও একই ইতিহাস ।
গোবর্ধন তলাপাত্র পরিচিত গল্প লেখক ।
বাত্রে তিনি গভীর নিতাম মগ্ন ।
কিন্তু রাত তিনটের লময় কড়ানাডার শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে গেল।
কে ?-_গোব্ধন নিক্রাজড়িত কণে প্রশ্ন করলেন ।
ৰাহান্র সালের পৃজা-নংখ্যা ১৭৪
আমি ক-কাগজের লোক, একটি গল্প চাই আপনার কাছে, পৃজা-সংখ্যার
জন্য।
গোবধধন দরজা খুলে বাইরে এসে প্রশ্ন করলেন, এই অসময়ে?
ক-কাগব্জের লোক বলল, গল্প এবারে একটু আগেই দরকার কি নাঁ_
পঁচিশটি টাক] সঙ্গে করেই এনেছি। নানা জান্নগা্ ঘুরতে হবে, সময় পাব
না, তাই একটু সকাল সকাঁল এসে পড়েছি । টাকাটা রেখে দিন, দিন সাতেক
পরে এসে গল্প শিয়ে ষাব।
কুড়ি টাকার বেশি একটি গল্পের জন্য কোথায়ও পাওমা যায় শি, এবাবে
অযচিতভাঁবে কিছু বেশি পাওয়াতে গোবর্ধনের মনে পুলক জাগল। বললেন,
সাত দিন পরেই আসবেন।__গোব্ধন আবার গিয়ে শুয়ে পড়লেন, কিন্তু
ঘুম হল না।
আঁধ ঘণ্টা পরে পুনরায় কড়ানাড়া।
এবারে খ-কাগলের লোক । অগ্রিম ত্রিশ টাকা নিয়ে এসেছে ।
গোবর্ন আর শুতে পারলেন না।
আরও পরে গ-কাগজ থেকে লোক এসে জানাল তাদের লেখাটাও খুব
জরুরি, অগ্রিম ত্রিশ টীকা।
ঘ-কাগঙ্দের লোক পয়ত্রিশ টাকার (প্রস্তাব নিয়ে এলো |
কাগজের লোক এনে বলল, তাদের সম্ধপণ অতি কম, মাত্র কুড়িটি টাকা
তারা দিতে পাপ্ে।
গোবর্ধন বললেন, পুর্জোর পরে আসবেন, পারি তো দেব।
চ-কাগজ থেকে চল্লিশ টাকার প্রস্তাব এলো।
গোব্ধন গল্প লেখা রদ্ধ ক'রে বসে বসে শিস দিতে লাগলেন।
গোবর্ধনের ইতিহাসই নব লেখকের ইতিহাস ।
খিল দিতে দিতে গোবর্ধন ভাবতে লাগলেন, এতদিন আমরা কি নির্বোধই
ছিলাম। বসে বসে এতদিন চোবাবাজার মুনাফা শিকারীদের বিরুদ্ধে লিখেছি,
অথচ তাদের কৌশলট! আয়ত্ত করতে পারিনি । এবারে পেয়েছি স্থুযোগ,
এবারে চোখ খুলেছে । এস্কযোগ ছাড়া হবে লা। এবারে শেষ দেখতে হবে।
'আধিক ছুনিয়া'্র সম্পাদক এসে প্রস্তাব দিলেন, আপনার। সব আমার
আশ্রয়ে আন্বন। শতকর! দশ টাকা কমিশন দেবেন, আমি বাজার দর আরও
তেজি ক'বে দিচ্ছি।
গোবর্ধন এ প্রস্তাব খুশি হয়ে সমর্থন করলেন।
১৮০ পরিমল গোস্বামীর পরেষ্ঠ ব্াদ-গর
পত্রদিন থেকে গল্পের বাজার দর 'আধিক ছুনিয্বাস্ নিম্নষিত ছাপা হতে
লাগল। “অগ্যকার গল্পের -দর চল্লিশ ।” “অগ্যাকার গল্পের দর আরস হয়
চল্লিশে, বন্ধ হম্ব পদ্মতাল্লিশে |” “গল্পের বাজার দর আজ স্থির আছে।”
“আঙ্ গল্পের দর সহল! চড়িয়া পঞ্চাশ টাকায় দীড়াইম্বাছে, যনে হইতেছে আরও
চড়িবে।” “আঙ্গ গল্পের দর ঘাট টাঁকা।” “আঙ্গ গল্প বিক্রি বন্ধ আছে, মনে
হয় দর আরও চড়িবে।”
এই ভাবে চলল 'আধিক দুনিয়ার অভিযান । লেখকেনা এই কাগজের
দ্রিকে চেয়ে ফেঁপে রইলেন, গল্প কাউকে দিলেন না। ক্রমশ দর একশ টাকায়
পিয়ে দাড়াল ।
কোনো! প্রবীণ ব্যবসাম্মী ইতিমধ্যে লেখকদের কাছে প্রস্তাব করেছিল, সব
গল্প সে এক] কিনে নেবে এবং ব্লযাকমার্কেট ক'রে দর আরও চড়িয়ে দেবে, কিন্ত
'আধিক ছুনিয়া'র সম্পাদকের তাতে মত না থাকাতে উক্ত ব্যবসাম্ী গল্পগুলো
হাত করতে পারেনি ।
৪
'আথিক দুনিয়া" গল্পের বাজার দরু প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সম্পাদ্কেবা 9
উদ্পীব হয়ে প্রতিদিন লে দিকে লক্ষা ক'রে ঘেতে লাগলেন। মাঝে মাঝে
ভারা লেখকদের কাছে গিয়েছেন কিন্তু লেখকেরা কোনে মতেই গল্প হাত ছাডা
করেননি । তারপর যখন বাজার দর একশ টাকা উঠল, তখন সম্পাদকের
আরও একবার চেষ্টা করলেন, কিন্ত তবু কিছু হল না। এর বেশি গেলে
স্বাদের পক্ষে একেবারেই অপভ্ভব। সব জিনিমেরই একটা সীমা আছে।
অবশেষে তাদের যেতেই হুল লেখকদের বাড়িতে । এইবার শেষ চেষ্টা।
ক-সম্পাদক প্রথমে গেলেন গোবর্ধনের কাছে। গিয়ে দেখেন তার
আগে অন্তত পঞ্চাশ জন সম্পাদক সেখানে উপস্থিত হয়েছেন, এবং আরও সবাই
আসছেন একে একে ।
ক-নম্পাদক গিক্ে শুনতে পেলেন, গোবর্ধন ইতিমধোই অন্ত সম্পাদকের
সঙ্গে কথাবলতে আরস্ভত করেছেন। তিনি বলছেন, এই যুদ্ধের সৃযোগে গত
ছ-বছর ধরে বাহসানীর! লাখ লাথ টাকা লাভ করেছে, অথচ আমন্লা ব্যবলাম্বী
হয়েও কিছুই করতে পারিনি। ভবিষ্যতেও কখনও পারব না।
খ-কাগজের লম্পাদক বন্ত্রছেন, সে কথা ঠিক, কিন্ব আমরাও তো! লেখার
বাহার সালের পূজা-সংখ্য। ১৬১
দাম অসম্ভব রকম বাড়িদ্নে দিয়েছি এ বারে, এখনও গল্প ছাড়তে আপতি
করছেন কেন?
আপত্তি করছি কেন? যুদ্ধ কি আর কখনও হাব? যুদ্ধ থেমে ঘাবার
মুখে ষে যেভাবে পারছে লুঠে নিচ্ছে । আমাদেরই এক টাকার বই বাজারে
চার টাকা ক'রে বিক্রি হচ্ছে অথচ আমরা জানিনা । ষে কোনো ব্যবলান
দিকেই দেখুন, কেউ ছাড়ছে না কাউকে । এমন কি ভাক্তারেবাও ঘে-
কোনে! অন্থুখে অপারেশন চালাচ্ছে-_ম্যালেরিয়া জরেও চালাচ্ছে, সর্দিতেও
চালাচ্ছে। আমরাই কি বাজারের একমাত্র ও'ছা ব্যবলামী থে দু-পয়সা লাভ
করলেই অপরাধ?
ক-সম্পাদক মনীয়! হয়ে এসেছেন । তার গায়েও যেমন শক্তি, মনেও
তেমনি সাহস । তিনি আজ আব কোনো যুক্তি শুনবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।
খণ্সম্পাদককে ঠেলে দিয়ে তিনি এগিয়ে গৌবধনের মুখের উপর গিয়ে
বললেন, শুন আমি শেষবার জানতে এসেছি আজ আপনার গল্প পাব কিন!।
গৌবর্ধন বললেন, আজকের বাজার দর না দেখে ছাড়ব না। একশ টাকার
উপরেও কিছু আশা করছি এ-বেলা।
“আমি আশা করছি অন্য রকম”, বলে ক-সম্পাদক গোবর্ধনের ঘাড়ে
লাফিয়ে পড়লেন, এবং তাঁকে জাপটে ধরে চিৎ ক'রে ফেললেন। তা দেখে
অন্তান্য সম্পাদকেরাও গোবর্ধনের উপরে গিয়ে পড়ে কেউ বা হাত কেউ বা
প1 ধরে টানাটানি করতে লাগলেন। মনে হল যেন গোবর্ধনকে তারা টুকরো
ট্রকরে। ক'রে ছিড়ে ফেলবেন ।
আক্রান্ত গোব্ধন আর্তনাদ ক'রে উঠলেন।
তিনি চিৎকার করতে করতে বললেন, গল্প এখুনি দিচ্ছি। আমাকে
ছাড়ুন ।
সবাই সমস্বরে বললেন, ছাড়ব না।
গৌবর্ণন আবার বললেন, দর কমিয়ে দিচ্ছি ।
সবাই সমন্বরে প্রশ্ন করলেন, কত?
এক হাতে যত আডঙ্ল। ছাড়ুন আমাকে ।
ছাড়ব না।
ছু হাতে ঘত আঙুল ।
তবু ছাড়ব লা।
চার হাত-পায়ে যত আঙল।
১৮২ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ ব্যহ-গ্গ
তবু ছাডব লা।
অর্ধেক কমাব।
আরও কমান ।
তা হ'লে মারা পড়ব। “শক্” কাটিয়ে উঠতে পারুব না।
আচ্ছা অর্থেকেই রাজি !
গোবর্ধনকে সবাই ছেডে* দিলেন। গোবর্ধন বড় একখানা নভেল লেখ
শেষ করেছিলেন মাস দুই আগে। পৃজোর চাহিদা! দেখে তাড়াতাড়ি সেই
নভেলকে একশো ভাগে ভাগ ক'রে একশটি ছোট গল্প তৈরি ক'রে রেখেছিলেন।
একশ জন সম্পাদককে সেই একশটি গল্পই পঞ্চাশ টকা হিসাবে বিক্রি করতে
বাধা হলেন। ১৩৫২ সালেই একশ টাকা ক'রে সেগুলে। বেচে বাড়ি কেনার
মতলব করেছিলেন তা আর হল না।
পরদিন শোনা গেল প্রত্যেকটি লেখকের কাছ থেকে প্রায় একই উপায়ে
এঁরা লেখা সংগ্রহ করেছেন, এবং কেউ কেউ আর কমে বাজি হয়েছেন, এবং
কয়েকজন লেখককে হীদপাতালেও যেতে হয়েছে ।
'আথিক ছুশিয়াণর সম্পাদকের কাছেও এরা গিয়েছিলেন, কিন্ত লেখা
সংগ্রহের জন্য নয়।
তিনি এখন হাদপা তালে ।
(১৯৪৫ )
কমন সেন্স
দাতের ব্যথাট। ক্রমেই বেডে চলেছে।
ভেবেছিলাম ব্যথাটা ক দ্দিন পবে আপন থেকেই সেরে যাবে, সৃতরাং
আযম্পিরিনের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। কিন্তু তিন দিন পরেও যখন কিছু কমল
না, বরঞ্চ আরও অসহ্য হয়ে উঠল, তথন বাধ্য হয়েই আত্মচিকিৎস] ছেডে দত্ত-
চিকিৎসকের দিকে আকুষ্ট হলাম ।
আগেই বলে রাখি আমার বল পচিশ বছর এবং আমি বাল্যকীল থেকেই
দাতের যত্ব নিয়ে আসছি, স্ততবাং এ বয়সে আমি যে আমার আবালা ল)লিত
দৃটসম্থদ্ধ দশনকুলের একটিকে অস্থস্থ হতেই চিরকালের জন্য ত্যাগ করব এ কল্পনা
স্বভাষতই মামার মনে আসে শি। আমি যাচ্ছিলাম চিকিৎসকের কাছে কিছু
ওষুধের ব্যবস্থ। আনতে ।
পথে বন্ধু তারকের সঙ্গে দেখা ।
“কোথায় চলেহিপ সকাল বে্লোই ৮”
“আর বলিস কেন, বড ব্পিদে পড়েছি"
“কি রকম 7?”
“দাতেব বাথ ।”
“তোব দাত তে] চমতকার, ব্যথা! হল কেন £”
প্রশ্নটা অযৌক্তিক । কারণ দাতের যে অংশ দৃশ্য সে অংশ কুশলেই আছে।
অন্থস্থ হয়েছে অদৃশ্য অংশ, দাতের খিকড়, স্থানটি দস্তীত্র আয়তের বাইরে।
তাই যন্থণ। লত্বেও তারকের ভুলটা] দেখিয়ে দিণাম, বললাম-_
"শ্রীমতী মালতীবও তো! লৌন্দযের খ্যাতি আছে, অথচ দিন সাতেক আগে
তার অস্থ্থ শিয়ে তুই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলি।”
তারক সবিম্ময়ে আমার দিকে চেয়ে বলল, “তোর অন্থখটা ষে মারাত্মক লয়,
তা তোর এই মারাত্মক রসিকতা থেকেই বোঝা যাচ্ছে ।”
আমি বললাম “& তোর আৰ এক। হুল। সংসারে সকল রপিকতারই
মূল উৎস ব্যথা ।”
“টীতের ব্যথা নয়”"__তাণক গম্ভীর স্থরে বলল।
আমি বললাম, “যেকোনো ব্যথা”
১৮৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রে্ঠ হাগ-গল্
“বিস্ক একটু পরেই বুঝতে পারবি তোর ব্যথা নিয়ে তোরই উপর রসিকতা
করবে আর এক অন।”
“কে?”
“ডাক্তার ।”
“কেমন ক'রে ?”
“তোর রদিকতার উৎসের মূলোৎপাটন ক'রে |”
"আমি তো দাত তোলাব না।”
“কিন্ত ডাক্তার তৃলবে।”
“জোর ক'রে ?”
“জোর করে নয়, তোকে সম্মোহিত ক'রে। তুই নিজেই বলবি তুলে
দিন। কিন্তু রসিকত৷ থাক, আমার কথা হচ্ছে, তুই ডাক্তারের কাছে গিষ্কে
স্থল করছিল।”
“কিন্তু ব্যথা সত্যিই অসহা হয়ে উঠেছে যেনা গিয়ে উপায় কি?”
“হাদি যেতেই হয়, তা ত'লে মনটা বেদে নে আগে । তার চেয়ে চল আমিই
যাই তোর সঙ্গে, দীত তোলা এখন চলতে পারে না।”
“তুই সঙ্গে যাবি এ তো! ভাল কথা, আমার দাতের রুক্ষীর কাঙ্জ করবি ।
যদি ডাক্তার জোর করে, তৃই প্রতিরোধ করবি।”
ন্
ডাক্তার দাত পরীক্ষা করলেন নানা ভাবে । তাব্ুপর আমার দিকে চেয়ে
রইলেন।
আমি বললাম “একটা প্রেনক্রিপশন-_”
ডাক্তার যন্ত্রের সাহায্যে মুখ হা করিয়ে ভিতরে আলো ফেললেন এবং
একখান৷ ছোট্র আয়না মুখেব ভিতর ধরে বললেন “নিজেই দেখুন ।,
দেখলাম নিজেই, অর্থাৎ কিছুই দেখলাম না। কারণ উক্ত দাতের পিছন
দিক কেমন তা আগে কখনো দেখিনি, তাই বুঝতে পারলাম ন। কিছু ।
ডাক্তার বললেন, “রুট এক্সপো হ্রভ হয়ে গেছে, পন্িণাম অতি ভম্নানক ।”
“কি রকম ভয়ানক ?”
"দাতের গোড়া সেপটিক হয়ে মারা যেতে পারেন ।”
"সে ভয় তো জীবনের প্রতি মুহূর্তেই আছে। মারা তো যে-কোনো
উপলক্ষে যেতে পারি ।”
সমস সেন্স ১৮দ
তারক আমার কথা শুনে অসীম তৃত্তিভরা চোখে আমার ছকে চেয়ে
রইল। ভাক্তার বললেন, “বুঝলাম আপনি দার্শনিক, কিস্ত আমরা তো
ভাক্তাব্রির বাইরে আর কিছু ভাবি না।-_যদি কথাটার গুরুত্ব না বুঝতে চান
তা হলে কোনো দার্শনিক পণ্ডিতের কাছে যান ।”
তারক বলল “ডাক্তারের ব্যবস্থা নিতেই তো এসেছি ।”
ডাক্তার বললেন “আমাদের একমাত্র ব্যবস্থাই আছে-_ধীত তুলব ।”
“এ ভিন্ন আর কোনো! উপায় নেই ?”
“আছে । নে হচ্ছে দাত লা তোল এবং আপনাকে মরতে দেওয়া ।”
তারক শঙ্কিত দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইল, পাছে আমি ভাক্তাবের
কথায় ভদ্ে রাজি হয়ে যাই।
কথাটা শুনে ভয় পাইনি বললে মিথ্যা বলা হয়, তাপক না থাকলে এতক্ষণ
দাত *তোলাও হয় তো আমার হয়ে যেত, কারণ ডাক্তারের খোচাখুচিতে
ইতিমধ্যে ব্যথা! সকল সীম! ছাড়িয়েছে, প্রাতের গোডা দপ দপ করছে, মনে
হচ্ছে এখুনি আপদ বিদায় করা ভাপ। কিন্তু তারকের ভয়ে বললাম, "বেশ,
ুটে। দিন বাদে আদব মাপনার কাছে, আঙ্গ প্রস্তত হয়ে আসিনি, আঙ্কের
মতো একট] ওষুধের ব্যবস্তাই কারে দিন, দাত তে।লাব আমি ঠিকই |”
৩
পথে বেরিয়ে তারক আমাকে বলতে লাগল, “দাতের গোডা যখন শক্ত
আছে, তখন দাত তোলা ভয়ানক অন্যায় । ব্যথা হয়েছে, ছু চার দিন সঙ
কাৰে থাকলেই কমে যাবে। তার পর দাঁতের গোডাও আপনা থেকেই শক্ত
হয়ে ষাবে, মাভি এসে ঢেকে দেবে, জুডে যাবে ক্ষতস্থান। ধীতেত ডাক্তারের
কাছে সে জ্রন্ত সহজে আপতে নেই, গর] দাত দেখলেই তুলে ফেলে ।” ৮
কথাটা হদয়ঙ্গম করলাম, এবং মনে মনে শক্তি সঞ্চয় করতে লাগলাষ,
বেদনার মেয়াদটা কোনো! রুকমে সহ্য করতেই হবে।
তারক উৎদাহের সঙ্গে বলল, “কমন সেন্স একটুখানি প্রয়োগ করলেই
বুঝতে পারবি লব ভোগেরই একটা ভোগান্ত আছে। দীতের ন্যথা তোর
কতদিন থাকতে পারে? বড় জোর পাত দিন? নাহয় তো দশ দিল, বিশ
দিন, এক মাস, এক বছর? নাহয় দশ বছর?”
প্দশ বছর ?”--আমি ভম্ম পেয়ে গেলাম ।
১৮৬ পরিমল গোম্বামীর শ্রেষ্ঠ বাঙ্গ-গল্প
তারক বলল, “এই বুঝি কমন সেন্স ?-_মাক্সিমাম্ সাত দিন, তার বেশি
থাকে তো আমরা দুজনেই গলাগলি করে গিদ্নে ধাত ভুলিয়ে আসব”
বিকেলে রবি এলো দেখ করতে) এসে সব শুনে প্রায় ক্ষেপে গেল।
বলল, "তুই অত্যন্ত অন্যায় করছিদ দাত না তৃলিয়ে। তোদের মতো লোকের
একটু কমন সেন্স থাকা উচিত |”
কমন সেন্স! তারকও বলেছিল আমার এ জিনিসটির অভাব আছে ।
দীতের ব্যথা হ'লে মান্ষের কমন সেন্স থাকে না।
ববি বলে চলল, “দাতের গোড়ার এ একটি ফোকাসের ভিতর দিয়ে সমস্ত
জীবনীশক্তি বেরিয়ে যাচ্ছে, বাইরের কতকগুলো! মারাত্মক জীবাণু ওখানে আশ্রয়
নিয়েছে, তাঁরা চব্বিশ ঘণ্টা! বিষ তৈরি করে তোর সবাঙ্গে ছড়াচ্ছে, আর তুই
ভীরু, একটি দাতের মাপ্লায় এত গুলো! শত্র পুষছিস মুখের মধ্যে |”
রবি দীর্ঘ বন্তুতা দিয়ে আমাকে লজ্জিত করল। দাতের ব্যথা বেড়েই
চলছিল, তার উপর রবি অন্তরে বথ| দ্িল। আমাব এই বন্ধুর মধ্যে এমন
একটি দন্তেতপাটনের সমর্থক পেয়ে আমি মনে মনে বডই তৃপ্তি পেলাম।
বললাম, “কাল সকালেই দাত তৃণিয়ে ফেলব, তুই ভাই, আমাকে লিয়ে যাস
ডাক্তারের কাছে ।”
"কাল? কাল কেন, আজই তোলা উচিত, এই মুহূর্তে তোলা উচিত ।”
আমি মিনতি কবে বললাম, “না, আজ থাক, মাজই সকালে বেরিয়েছিলা,
এখন আর উঠতে পারছি না, জরও রয়েছে বেশ ।”
রবি একটু ভেবে বলল-_“বেশ, আজ থাক, কাল সকালে এসে আমি তোকে
নিবে যাব।”
রূবি চলে গেল শিস দিতে দিতে ।
সকল ব্যথার অব্পান হবে সাড়াশির একটিমাত্র মোচড়ে, ভেবে বড়ই
আরাম বোধ হল।
তারক এলে ঘন্টাথানেক পরে । জিজ্ঞাস1 করল “কেমন আছিস ?”
বললাম, “আর ঘে সহা করাযাচ্ছে না ভাই । দীত না তোলালে বোধ হয়
মারা যাব ।”
তারক, আহত হল এ কথায়। সে রীতিমতো ক্ষুব্ধ সুরে বলল,
"তোদের মতো লৌকের কাছে একটু কমন সেন্স আশা করেছিলাম-_
ভেবেছিলাম সহজ কথ! সহজ ভাবেই বুঝতে পারবি, তাই উপদেশ দিয়েছিলাম ।”
তারকের মনে ঘে আঘাত লেগেছে সেটা স্পষ্ট বুঝলাম, কিন্তু দাতের ব্যথা
কমল সেম ১৮৭
থে মলের ব্যথার চেয়ে অনেক বড, তা এখন ওকে কি ক'রে বোঝাই | বললাম,
“ভাই, যন্ত্রণায় হয় তো! মাথার ঠিক নেই, তাই সম্ভব অসম্ভব ঘত সব কল্পনা
আসছে মনে ।”
“কিন্ত তাই বলে আম্মহত্যা করতে চাস 7”
আমি কাতর কণে বললাম, “চোখে সব অন্ধকার ঠেকছে, পথ দেখতে পাচ্ছি
না, তুই আমাকে পথ দেখা ।”
তারক শাস্ত হল আমীর আবেদনে । বলল, “দীত হজে তুলতে নেই।
পায়ে ফোড1 হলে আমরা পা কেটে ফেলি না, মাথা ধরলে শিরশ্ছেদ করি না,
চোখে অস্থথ করলে চোখ উত্পাটন করি না, সর্দি হলে নাক ক।টি না, কেবল
দ্ীতে ব্যথা হ'লে দাত তৃলি। এট] কি যুক্তি হল? আর কেন যেন দাত
তোলার দ্রিকে লোকের ঝৌক দিন দিন বেডেই চলেছে। চীনা মিদ্দীগা পধস্ত
সেজন্য এদেশে বসে বেশ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।”
আমি বললাম, 'বেশ, আমি আপ ওর মধ্যে নেই |”
তারক এবারে খুশি হয়ে খলল, “উত্তম। আমি বাল সকালে ডাক্তাও
সঙ্গে নিয়ে আসব, শাশ ডাক্তার |”
কথাটা শুনে শিউতপ উঠপলাম। কারণ কাল সকালে ববি আমাকে দাত
তোলাতে শিয়ে যাবে কথা আছে।
বললাম, “ন॥ আবার ডাক্তার কেন, এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে সব।”
“সে তোকে ভাবতে হবে না, আমি যখন ভার নিলাম তখন বাথা সারানোর
দ্বায়িত্বও আমাপ ৮
5
শুয়ে শুঘে পনিত্রাণের উপায় চিন্তা করছি। তারক যেমন একগুয়ে,
ডাক্তার আনবেই। ওদিকে ববি আমাকে ভালবানে, মে আমার জন্য কিছু
করতে পারলে ছাডে না। সুতরাং সেও ঠিক আমবে। তার সঙ্গে যেতে
রাজি না হলে সে ক্ষেপে ধাবে। আবার তারক ডাক্তার নিয়ে এসে যদি
আমাকে দেখতে না পায়, সেও হবে এক দারুণ ব্যাপারু।
দাতের ভয়াবহ যন্ত্রণার উপর এই ভয়াবহ সমশ্যা। কিন্তু আপাতত
দুশ্চিন্তার হাত থেকে বাচিয়ে দিল প্োতিষ, শশাঙ্ক আর ঘতীন।
জ্যোতি বলল, “তোমার অস্থথের কথা শুনণাম |”
শশান্ক বলল, “দাতে আবার কি হল ?
১৮৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যত-গল্প
যতীন বলল, “শুনছি তৃমি না কি দাত তোলাবে ?”
বুঝলাম আমার অস্থখের থবরটা পাখা মেলেছে। বিস্ত তাতে কেন ষেন
একট] অজানা ভয় মনকে ব্যাকুল ক'রে তুলল । আমার এই যন্ত্রণা নিয়ে বন্ধুদের
সঙ্গে আলাপ করা আমার পক্ষে কষ্টকর, তদুপরি অতি দ্রুত আমাকে এক গুরু
পরিস্থিতির সম্মুধীন হতে হচ্ছে-সেটি ঝড়ের মেঘের মতো আমার কল্পনা
উত্তর পশ্চিম কোণে প্রতাক্ষ হয়ে উঠেছে । কিন্তু আমি তখন নিরুপান্ব।
ষতীন বলল, “দাত ঘদ্দি তোল, তা হ'লে ভয়ানক অন্যায় করবে।”
শশাঙ্ক বলল, “একটা! দাত তুললে তার পাশের গুলোকেও আর ঠেকাতে
পারবে না।”
জ্যোতি বলল, “এক একটা পাটিতে ষোলটি দাঁতের সম্পর্ক এত ঘনিষ্ঠ ষে
একটা তোলাও যা, ষোলটি তোলাও তাই । আর, একপাটি দাত অবশিষ্ট থাকা
মানে গোরু হওয়া |”
যতীন জোরের সঙ্গে বলল, “দাত না নডলে কখনে দ্াতকে লাভা দিতে
নেই ।”
এইভাবে আক্রমণ চলল নানা দিক থেকে ।
আমি বন্ত কষ্টে বললাম, প্দাত তোলাব মধ্যে আমি নেই ।”
কথাটা শুনে তার! নিশ্চিন্ত হচ্ছিল, এমন সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে এসে
পড়ল রবি, এবং এমেই খুব উত্তেজিত ভাবে আমাকে বলল, “শুনলাম ঈাত নাকি
তোলাবি না ?”
আমি ইপারায় যন্ত্রণার দিকে দেখিয়ে তাদের সবাইকে বলতে চেষ্টা করলাম
ঘষে এখন আর কথা বলতে ভাল লাগছে না।
রবির প্রশ্নের উত্তর দিল শশাঙ্ক । বলল, “তুলতে দিচ্ছে কে?”
ববির চোখে ষবেন আগুন জ্বল এ কথায়, সে এমন দৃষ্টিতে আমার দিকে
চাইল ঘাতে আমি ভস্ম হয়ে যেতে পারি ।
আমি বললাম, “একটুখানি বস ভাই, পরে সব বলছি ।”
ধতীন, শশাঙ্ক এবং জ্যোতি বিদায় নিয়ে উঠে গেল, বলল, "আমরা উঠি
ভাই, তোমরা পরামর্শ কর।”
ওদের ভাঘায় একটু বিদ্রেপের স্বর ছিল, এবং সেটি আমার ভাল লাগল না।
ওরা চলে গেলে রবি বলল, "ওদের মতলবটা ভাল মনে হচ্ছে না। তোর
সর্বনাশ হবে যদি ওদের পাল্লাম পড়িস। দেখছি তোর হুর্বলতার স্থযোগ ওরা
পুরোপুরিই নিচ্ছে । জানি আমি সবই ।”
কমন লেন্স ১৮৪
চমকে উঠলাম কথাটা শুনে । সবই জানি মানে কি ?- কিন্তু রবিই অনেকটা
আশ্বস্ত করল, সে আমাকে বুঝিয়ে দিল--ওরা তারকের চর হিসেবে এসেছে,
পাছে ব্যথা বেড়ে গিয়ে আমি দাত তুলতে চাই, তাই ওরা নাকি পাহারা
দ্বিচ্ছে। কিন্তু রবিও সতর্ক আছে, সে ভারকের মতলব হাসিল করতে
দেবে না।
রবি প্রায় ঘণ্টাথানেক আমার কাছে বসে দাত তোলার ব্যবস্থা পাকা ক'রে
ফেলল। বলল, “কাল সকালে আমার প্রথম কাঙ্গ হবে তোকে ডাক্তারের
কাছে নিয়ে ঘাওয়া, তুই প্রস্তত হয়ে থাকবি, আমি এসেই নিয়ে যাব।”
কোনো! রকমে বললাম, "আচ্ছা, তাই হবে ।*
আমার সমন্ত মন্প্রাণ এ দাতটির সযূল বিনাশ কামনা করছিল, ভালয়
ভালয় কাজটি হয়ে গেলে এখন বাচি।
“রুবি বলল, “কিন্ত ওরা ঘি এসে বাঁগডা দেয় ?”
“আনব না ওদের কথা ।”
“যদি জোর করে 7?”
“না না, জোর করবে কেন?”
“তুই জানিস না ওদের, তোর সর্বনাশ শা কারে কি ওরা ছাড়বে ?”
“না, তুই অকারণ ভয় পাচ্ছিল।”
“ভয় কি আর ইচ্ছে ক'রে পাচ্ছি ?_দাত না তুললে কি পন্রিণাম ভবে
বুঝতে পাবছি কি না।”
“আরে না না, আমি ঠিক আছি।”
“তবে কথা রইল, আমি সকালে আমব এবং তোকে নিম্নে যাব।”
রবি চলে গেল। কিন্তু তার ওঠবার আগেই আমি হঠাৎ লক্ষা করলাম
একটি ছায়ামতি জানল।ব পাশ থেকে যেন পরে গেল ।
কে এঁ ছাত্নামৃতি? তাঁরকের /_না ওর দলের কারো? কিছু বুঝতে
না পেরে একটি আযাম্পিব্রিনের বডি খেয়ে শান্ত হবার চেষ্টা করলাম ।
৫
রাত্রে ঘুম হয়েছিল ভালই, কারণ শোবার আগে আরও একটি বড়ি
খেয়েছিলাম ।
হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দে স্বেগে উঠে স্তভিত হয়ে গেলাম । এখনও রাতের
১৯০ পরিমল গোস্বামীর শ্রেঠ ব্যঙ্গ-গয়
অন্ধকার দূর হয় নি, কে কডা নাঁনডে এই শেষ রাত্রে? প্রশ্ন করতে চাপা কঙে
উত্তর এলো, “মামি তারক ।”
“এখন ? এই অসময়ে ?”
দরজা খুলে দিলাম । দেখি ওরা তিন জন এসেছে ।
তারক বলল, “আর সমন্ন নেই, ওরা রওন! হচ্ছে, তোকে এখনি এখান
থেকে আমন! নিয়ে যেতে চাই, ওরা এসে পড়লে তোর যাওয়া অসম্ভব হবে ।*
বিরক্ত বোধ করলাম এই প্রস্তাবে, কারণ জর আছে, দেহ অত্যন্ত দুর্বল,
এ অবস্থায় এখন ঘাওয়া অসম্ভব, আর যাবই বা কোথাদু এই অন্ধকাবে, এবং
কেন যাব ?”
“কিছু চিন্তা নেই, তুই মরে গেলেও তোকে আমরা এখান থেকে নিয়ে যাব,
ডাকাতদের হাতে তোকে পডতে দেব না, আব আজই যদি দাত তোলা হন,
তা হ'লে তোকে আর বাচাতে পারব না।”
এর পন্ ওর! আমাৰ কোনো কথা! বা! মতামতের অপেক্ষা! না ক'রে আমাকে
চাতদেোল| ক'রে ঘব থেকে বের করে নিয়ে গেল। আমার প্রতি বিব্চনাবশত,
এবং আমাকে হাটতে দেবে ন। বলেই ওরা! এক সঙ্গে তিনজন এসেছে, বলল ।
এর পর আর আমার প্াগ করা শোভ। পায় ন।, শিঙ্গের অবস্থা স্মরণ ক'রে বরঞ্চ
কৌতুক মগ্থৃভব করতে লাগলাম । মনে মনে সান্ত্বনা পেলাম এই ভেবে যে,
খাটিম়ায় শুয়ে লোকের ঘাডে উঠে যাওয়ার চেয়ে এটি অত্যান্ত ম্বাস্থ্যকরু।
স্র্ধোদয়েৰ অনেক দেরি শুথনও, ঘাডে উঠে হিমেল বতামে চলতে বেশ
আরাম বোধ হচ্ছিল। কিপ্ঠ সে আরাম মিনিট তিনেকের বেশি স্থায়ী হল না।
এক বিপধয় কাণ্ড ঘটে গেল পথের মাঝখানে । নির্জন পথেব ক্ষীণ আলোম্
কর্কশ কণ্ঠে কে হাকল-_
“কে যায়?”
রাজপথে এ প্রশ্ব কববার অধিকার একমাত্র পুলিসের। কিছ্ত চেয়ে
দেখলাম পুলিস নয়, একদল গুণ্ডা ।
তারক, যতীন ও শশান্ক কেউ কোনো কথা বলল না।
গুগারা এগিয়ে এসে বলল, “তারুক। জানি সব, কিন্তু এখনো বলছি
ক্ষান্ত হও ।”
কন্বর রবির ।
ধর্য আসন্ন বুঝে তিন্জনে আমাকে তাদের থাড থেকে নামিয়ে পথের
পাশে দাড় করিয়ে দিল |
কযন সেন্স ১৯১
রবি আদেশ দিল “ওকে নিয়ে যেতে পাবে না ।”
তারক বলল, “হুকুম নাকি ?”
“ছা, ছকুম।স
শশাঙ্ক বলল, “বটে 1”
ইতিমধ্যে তারক, শশাঙ্ক, ফতীন-__-তিনজলেই আন্তিন গুটিয়ে ফেলল।
রবিও আস্তিন গোটাল, এবং ওরা পরম্পর হিংস্র ভাষায় পরম্পরকে গাল
দিয়ে নিজেদের উত্তেজিত করতে লাগল ।
তারক বলল, “দাত তোলে কোন্ শালা ।”
রবি বলল, "দত তোলা ঠেকায় কোন্ শাণা।”
তাঁর বলল “বটে ।
রধি বলল “মরদ কি বাৎ।”
রবির সঙ্গে ছিল আরও চারজন, তারা বাই আমার পরিচিত। ওদের
হাতাহাতি আরম্ভ হযে গেল তডিংগতিতে |
আমি তখন দাত সম্পূর্ণ ভুলেছি। মনে হল ষেন আমার কোনো অস্থথই
হবনি। ছুটে চলে এনাম বাড়িতে এবং এসেই শুয়ে পঙ্লাম।
এভ্শগেন রুদ্ধ ব্যথ। এইবাণ মাডিন গুহা থেকে প্রবণ নোন্র মতো বেরিয়ে
এসে আমাকে পাগল করে তুপলন- আমি শুয়ে, বসে, পাইচারি কারে ঘণ্টা
তিন চার কাটিয়ে কাছ্বাকাি এক দাত তোঁপা চীনা মিস্বীর ঘরে ঢুকে পড়লাম।
তারপর যুখামান বঙ্গুদের কিছুদিশ আর খোগ নেই। হঠাৎ একদিন
শুনতে পেলাম ওর। প্রায় মধাই হামপাতালে গিয়েছিপ, এবং তাঁরককে
কবেকিন হাসপাতালেই থাকনে হযেছিনা| ঢ"খের বিদয় থানা পযন্ত কাউকে
যেতে হয়শি।
দিশ ধশেক পরে তারক এলে! আমার কাছে । সে ছুটি দাত হাপিয়েছে
রবির হাতে । তবু তার গবধ এই যে শাজর ছুটি ম্বস্থ ধীভের বিনিমেও সে
আমার একটি দ্াতকে অপমৃত্যুর হাত থেকে পক্ষা কবেছ।
এখনও মে সেকথা স্রাঘাগ পেলেই সবাইকে খুব গর্বের সঙ্গে বলে বেডায়ু।
কিন্বথআমি তার সম্মুখ আর মুখ খুপতে প।খি না, যণি দেখে ফেলে ।
প্ ১৯৪৬)
অমরত্ের পঁয়তালিশ বৎসর
ব্রষ্বা তীর স্বর্গীয় আপনে ধ্যানম্গ্র। পাশে নারদ মধুর স্থবে বীণা বাজিয়ে
চলেছেন। এমন সময় তাৰ শুত্র শ্শ্রু হঠাৎ আলোকিত ছুয়ে উঠল ।
নারদের চোখ ও মন বীণায় আবদ্ধ ছিল, তিনি চমকিত হয়ে বুঝতে
পারলেন ব্রহ্মা তীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। আজ বুঝতে পারলেন,
কিন্ত তার দাড়ি পাকার পর প্রথম যেদিন ব্রহ্মা সে দিকে তাকান মেদিন
বুঝতে পারেন নি। সেদিন তার অবস্থা বডইঈ শোচনীয় হয়েছিল। তিনি
হঠাৎ দাড়িতে আগুন ধরে গেছে মনে করে চিৎকার ক'রে উঠেছিলেন, আর
তা দেখে ব্রহ্মার গাম্ভীঘ নষ্ট হয়েছিল। সেই থেকে নারদকে মাঝে মাঝে
বর্ণ ছেডে বাংলাদেশে এসে থাকতে হয়, এটি তাঁর পক্ষে এক প্রকার শাস্তি ।
নারদ ব্রদ্ধার দৃষ্টিপাতের অর্থ বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, পিতঃ,
আমি এখনই চললাম বাংলাদেশে । সেখানে চিত্রগুপ্ত কিছুদিন আগেই
গিয়েছেন, স্বতরাং এ বারের বাংলা বান আমার পক্ষে খুব কষ্টকর না হতে পারে ।
এ ঘটনাটি পঁ্তাল্লিশ বৎসর পূর্বেকার | ( অবশ্ট এটি পাথিব পয়তালিশ
বলব )। তার আগে তিনি যখন বাংলাদেশে আদেন লে প্রায় দু শ' বছর
হয়ে গেল, স্থুতরাং এ বারে বাংলাদেশের বূপ তীর কাছে একেবারে নতুন, বিশেষ
কারে কলকাতা! শহরের | এ শহরই তখন ছিল না।
চিত্রগুপ্তই তাকে শহরের ইতিহাসটি মোটামুটি শুনিয়ে দিলেন, এমন কি
কিপলি"-এর কবিতার কয়েকটি ছত্রও আবৃত্তি করলেন নাদের কাছে__
0087005 01160080. 0108008 8780680৪ 1810. 8100. 10110
00. 605 ৪1].
[381809, 1১91৩) 11991, [00917 9100 [)0108
9108 107 5106...
চিত্রগুপ্ত আবও বললেন, আঙজ্গ এই দেশে আর এক ইতিহান রচিত হতে
চলেছে। বাঙালী জাতির মধ্যে তিনি এমন একটি প্রাণের সাডা দেখতে
পেয়েছেন বাতে তার আশা হয়েছে বাঙালী ইংরেজের অধীন হয়ে বেশি দিন
আর থাককে না।
নারদ বললেন, কি রকম সাড়া দ্বেখলে? আমি তো কিছু বুঝতে
পারছি না।
অমরত্বের পয়তালিশ বৎসর ১৯৩
চিপ্তগুপ্ত বললেন, আপনাকে সব দেখাব ।
নারদকে তিনি নিয়ে এলেন শহরের এক অংশে । তখন গভীর রান্রি।
ছুক্ননে চুপে চুপে একটি বাড়িতে গিয়ে দেখেন কিসের এক গোপন সভা বসেছে ।
কিছুক্ষণ দীড়িয়ে থেকেই নারদ বুঝতে পারলেন এটি একটি বিশেষ ষড়যন্ত্র সভা।
অনেক যুবক এসে এক সঙ্গে মিলেছে । তাদের মুখে দৃঢ়তার ছাপ, চোখে
ব্যাকুলতা। তারা চারদিকে মতর্ক দৃ্িতে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে আর চুপে
চুপে আলাপ করছে। পরামর্শের বিষয়টি শুনে নারদ বিস্মিত হলেন। আপাত-
দৃরিতে যারা ক্ষীণীঙ্ক তরুণ যুবক মাত্র, তার! নাকি দুর্ধর্ষ ইংবেজকে এদেশ থেকে
তাড়াবে। সেই উদ্দেশ্তেই কাকে কি করতে হবে তা ঠিক করছে। দেশময়
একটা ত্রাসের স্য্টি করছে তারা, ইংরেজকে তারা এদেশে থাকতে দেবে না,
যদি এর জন্য প্রাণ দিতে হয় দেবে, কিন্তু ছাডবে না।
শিত্রগুপ্ধ নাব্দকে আর এক পাশে নিয়ে গেলেন। দেখলেন সেখানে
কয়েকঙ্গন মুবক নিবিষ্টমনে বোমা তৈরি করছে।
নারদ বললেন, এই কয়েকজন ছোকবাব এত সাহল ?
চিত্রপ্তপ্ত বললেন, শুধু এরা ক'জন নয, সমস্ত বাংলাদেশ আছে এদের
পিছনে । তকণ, যুবক, বৃদ্ধ, সবাই । তবে তরুণ ও যুবকদের মধ্যেই উত্সাহ
অতি প্রব্ল। তারাই প্রধান কমী, তাদের মনে ন্বপ্প।
স্বপ্ন? কিসেব স্বপ্র?
দেশের ছুঃখ ঘোচাবে, দেশকে স্বাধীন করবে এই স্বপ্র।
নারদ চিত্রগুপ্ণের দিকে সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। বাঙালীর
প্রতি চিত্রগ্ুপ্তের এই অহেতুক প্রীতি কেন? মনটা উর বডই হূর্বল মলে
হচ্ছে যেন। কিন্ত সন্দেহকে আমল না দিয়ে বললেন, আশ্চয ব্যাপার ।__-তিনি
শুপু এই কথাটি সংক্ষেপে উচ্চারণ করলেন। তিনি শিঙ্গের অনুমানের তুল
বুঝতে পারলেন ধীরে ধীরে ।
ক্রমে দিন যায, ক্রমে ভীরা দেখতে পান, বাইরে তাদের ঘষে একট। শান্তভাব
ছিল তা ভ্রুত দূর হয়ে যাচ্ছে। তারা ক্রমেই চঞ্চল হয়ে উঠছে।
এক দ্দিন সবিম্মদ্নে দেখতে পেলেন দিকে দিকে বহ্ৃ'ুৎসব আরম্ভ হয়ে
গেছে । যত বিদেশী কাপড় সংগ্রহ ক'রে ছেলেরা তাতে আগুন ধন্িয়ে দিচ্ছে।
বিদেশী কাপড় আরু তার! পরবে লা । সবাই দেশী কাপড়ের মাহাস্ম্যে গান
ধরেছে__"মায়ের দেওয়া! মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই ।”
তারপর দেখলেন, কবি এসেছে আগুনের বাণী নিয়ে, সাংবাদিকের কলম
১৩
১৪৪ পরিমল গোস্বাদীর শে ব্যন-গল্প
চলছে নিভ্শক ভাবে, কর্মীরা অক্লাস্তভাবে স্বদেশী প্রচার রু'বে বেড়াচ্ছে,
সম্বাসবাধদীর! গোপন অস্ত্রে পাপ দিচ্ছে, ইংরেজ মারা পড়ছে এখানে দেখানে।
বালকেক্া হালিমুখে ফাসিতে ঝুলছে দ্বেশ-মাম্বের কলাণে।
নারদ মুগ্ধ হন, কিন্তু চিত্রগুধ্ের উপর তার সন্দেহ বাড়তে থাকে । ভবু
মনের ভাব গোপন ক'রে বলেন, কিন্তু ইংরেজের সঙ্গে পারবে এই সৰ ছেলেরা ?
চিত্রগুপ্ত তাকে শুধু বললেন, দেখে ধান সব। এর মধ্যেকার আসল কথাটা
হচ্ছে, এরা জেগেছে । অপমানের আঘাতে জেগেছে । এরা দেহের শত্তিতে
হম্ন তো দুবল, কিন্তু মনের শক্তিতে এর! অজেয়। আরও বড় কথা হচ্ছে, এর!
একটা মহৎ আদর্শের জন্ত প্রাণ দিতে প্রস্তত হয়েছে । এই যে লক্ষা ধরে
চলেছে এরা, এই চলাটাই আজ বড় কথ! । এর মধ্যে অনেক ছেলেমি আছে,
অনেক ভুলই এরা করছে, কিন্তু তা হোক, ভুলের ভিতর দিয়ে না গেলে সত্য
শিক্ষা হয় না।
নার্দ বললেন, অর্থাৎ আগুনে পুডে পুডে ওর! খাঁটি সোনা হচ্ছে।
চিত্রগুপু বললেন, ঠিক তাই । এরা অনেকেই মার। পডবে, আর কি দু:খ
যে এরা সহ করবে, কিন্তু তবু খুব আনন্দ হচ্ছে এদের দেখে ।
নারদ বললেন, মৃতার হিপাব নিয়ে ব্যস্ত তুমি, মৃত্যুর কথায় খুশি হওমাই
তোমার পক্ষে স্বাভাবিক।
চিত্রগুপ্ত বললেন, ঠিক তার উন্টো!। মানে, মৃত্যু নিয়ে কারবার বলেই
এই জীবনের দৃশ্য আমাকে মুদ্ধ করেছে ।
নারদের সহান্্ভূতি জাগে চিত্রগুপ্চের প্রতি। এতক্ষণে বুঝতে পারেন
তীর অন্ত কোনও মতলব নেই, জীবনের দৃ্হে সত্যই তিনি মুগ্ধ হয়েছেন । নীরদ
নিন্ছেও মুগ্ধ হওয়ার জন্য প্রত্তত হতে লাগলেন।
এমন সময় একদল ছেলে হৈ হৈ করতে করতে এক বোঝা বিলিতি কাপডে
আগুন ধরিয়ে দিল ঠিক তাদের পাশেই । নারদ চমকে কয়েক পা পিছিয়ে
গেলেন।
চিত্রগুপ্ণ বললেন, অদৃশ্য হয়ে না থাকলে আপনর কি বিপদই না হত
এ সমস্ব।
কেন?"
আপনার স্থস্ দাড়িকে বিলিতি স্থতো! মলে ক'রে হয় তো তাতে আগুন
ধরিয়ে দিত। ওরা যে কম মবীয়া হয়ে উঠেছে তাতে ওদের এখন আর
কাণডজান নেই।
অমর়্থের পয়তাজিশ বতলব্ব ১৯৫
নারদ এ কথার উত্তর দিলেন মা, তিনি কেমন ধেন উদাসীন হয়ে
পড়তে লাগলেশ।
চিত্রপ্ুপ্ত বললেন, বাংল! দেশের এই নবজীবনের দৃষ্ট আমি কখনও ভুলতে
পারব না। জীবন ষেখানে সত্যিই জেগেছে মেখানে তো! মৃত্যু দেই, বাডীলী
জাতি মরবে না, কেনন! এদের জীবন জেগেছে । এরা গুলির মুখে প্রাণ দিয়ে
নতুন প্রাণ পাবে, ফাসিতে ঝুলে অমর প্রাণ ছড়িয়ে যাবে সকল দেশে ।
নারদের মনের উপর চিত্রগুণ্চের ভাষার প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠল, ছু'জনেই
আত্মবিশ্বৃত হয়ে চেয়ে রইলেন জনতার দ্দিকে | দেখতে লাগলেন স্বদেশী মন্ত্রে
দীক্ষিত বিচারালয়ের ব্যবহারাক্ীব রাজদ্রোহীকে মুক্ত করতে ছুটে চলেছে,
বাগীরা হাজার হাজাব উৎসাহী শ্রোতার কানে ন্বদেশপ্রেমের স্থধাবর্ষণ করছে»
বাবসায়ীর! দোকানে দোকানে স্বদেশী পণ্যের পসর! সাজ্াচ্ছে। দিকে দিকে
কি চাঞ্চলা, কি উত্তেজনা ।
চিত্রগুপ্ হঠাৎ লক্ষ্য করলেন নারদ কখন সেখান থেকে সরে গিয়ে বীণা
পাশে নিয়ে বসেছেন। তার অঙ্গুলি চঞ্চল হয়ে উঠল। সহসা তার হাতে
ঝঙ্গত হয়ে উঠল এক অপুব সঙ্গীত ।
ঝঙ্কার ধাপে ধাপে চডতে লাপল। বিশ্বলঙ্গীতের মর্ম যেন ধীরে ধীরে
উদ্যাটিত হতে লাগল তর্জনীর আঘাতে আঘাতে । যেন কোন্ অনার্দিকালের
স্থপ্ির ব্যাকুলতা বেজে উঠল সেই স্থরে। সে স্থর হাওয়ায় হাওয়ায় ডলে
চলল, সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে পঙল |
চিত্রপুপ্ত যুগ্ধ হয়ে শ্রনছিলেন, তারপর কখন চমকিত হয়ে উপলন্ধি করলেন
হুর নেমে এসেছে প্রথিবীর সীমানায় । লয় আরও দ্রুত হয়েছে। তাতে
ধ্বনিত হচ্ছে নবজ্জীবনের গান । ঘে জীবনধারা তৃণে তৃণে, পল্লবে পল্পবে,
ফুলে ফুলে, অযুত নিষৃত কীটপতঙ্গ পশুপক্ষী মানুষের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে
চলেছে, এই স্থুর সেই জীবনের স্থরের সঙ্গে একতান ধ্বশিত ক'রে তুলছে।
বনুক্ষণ পরে চিত্রগ্তপ্তের খেয়াল হল, তিনি কর্তব্য ভূলে একট] রোমাটিক
ভাবাবেশে বিগপিত হ্যেছেন। বড়ই অন্যায় । সবাই যেন ষভযন্ত্র করেছে
ভার বিরুদ্ধে। সবাই তাকে শুথু জীবনের সঙ্গেই মুখোমুহী পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ।
এই ভাবালুতা ভাল নয় । এর জন্য কৈফিয়ৎ দিতে তবে স্বর্গে, এ বিষ সন্দেহ
নেই। নারদের পক্ষে যা অপঙ্গত নয়, তাঁর পক্ষে তা অবশ্যই অসঙ্গত। না”
এ রকম চলবে না। নারদ শ্বর্গের ম্বাদহীন ছেশে জীবনের এমন জয়যাত্রা
কখনো দেখেন নি, নারদ জীবলের গান লিয়ে থাকুন, তিনি কেন থাকবেন ?
১৯৬ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যহ-গল্
অর্থাৎ উপ্টে চিত্রগুপ্ত এবারে নারদকে ষন্দেহ করতে লাগলেন । নারদ
বৃদ্ধ কিনা তাই নট] বড়ই দুর্বল । কি ক'রে তাঁকে বাচনো যায় এই দুর্বলতা
থেকে? তিনি নারদকে ডেকে বললেন, ছাড়ুন এমব। আমি যেমন কর্তব্য
কুলে একটা মৃভমেণ্টের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলাম, আপনিও এখন তাই করছেন।
আমরা ছু'জনেই অপরাধী হচ্ছি এতে। বাস্তব কর্তব্য থেকে পালিয়ে মুক্তি
খুঁজছি একটা তরল ভাবের মধ্যে। একেবারে রোমাটিক হয়ে পড়ছি যে!
উঠন, চলুন, পাপিয়ে যাই এই মোহের সীমানা থেকে । এই পাধিব গজদব্ত
মিনারে বসে এভাবে স্বর্গকে ভূলে থাকলে তো চলবে না। আমরা এস্কেপিস্ট
হব না, উঠুন ।-__কিন্ত কে কার কথা শোনে? নারদ বধির হয়ে পড়েছেন__
বধির বেটোফেনের মতে। শুধু বাজিয়ে চলেছেন ।
চিত্রপগ্ুপ্ত তাকে আর কিছু না বলে অগত্যা সেখান থেকে লরে গেলেন ।
সরে গিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে নিজের অবহেলিত কর্তব্য শেষ করলেন, এবং
ক'দিন পরে মন থেকে সব ভাবাবেশ ঝেড়ে ফেলে ফিরে এলেন নারদের কাছে।
কিন্ত কি আশ্চর্ধ! নারদ ঠিক একই ভাবে বীণা বাজিয়ে চলেছেন, কোনও
দিকে কোনো চেতন। নেই, তার যন্ত্ে শ্ত€ ধ্বনিত হচ্ছে আনন্দমূ। বিশ্বচরাঁচবে
আর কিছু নেই-_শুধু আনন্দম্।
না না, এ মোহে তিনি আর পডবেন না। তিনি এ দৃশ্টে আর বিগলিত
হবেন না। জগতে মৃত্যুই সত্য- আর কিছু সত্য নয়।
তিনি নারদকে তদগত অবস্থায় ফেলে স্বর্গে ফিরে গেলেন, এবং পিতা
ত্রদ্ধাকে সব নিবেদন করলেন | নারদের ভীবাস্তরের কথা শুনে ব্রন্মা নিজ্ঞাসা
করুলেন, তোমার কি মনে হয় 7
চিন্রগুপ্ত বললেন, মনে হয় বাঙালী জাতি তার জাতীয় জীবনে যে বিরাট
নাটকের অভিনয় করতে চলেছে নারদ তার আব্হ সঙ্গীত রচনায় নিযুক্ত
হয়েছেন।
ব্রহ্মা গম্ভীর কে বললেন, নীরদকে আর বাংলাদেশে পাঠাব না।
এর মধ্যে পয়তালিশ বংসর কেটে গেছে বাংলাদেশে । স্বর্গের সেটি একটি
নশ্বীলমাত্র । চিত্রগুপ্ধ আবার ফিবে এসেছেন কলকাতা শহবে। নারদকে
খুঁজে বের করতে তার দেবি হয় নি, কারণ তিনি এখনও ঠিক একই জায়গায়
পড়ে আছেন । পড়েই আহেন প্রককতপক্ষে। তার বীণার তার ছিড়ে গেছে,
তিনি সেই ছিন্ন-তার বীপীর উপর মৃছিত হয়ে শুয়ে আছেন ।
অমব্ত্বের পয়তাল্লিশ বৎসর ১৯৭
কি হল নারদের ? কি ছূর্ঘটন! ঘটল হঠাৎ? নারদ্দের বীণার তার তো সহজে
ছিন্ন হবার নয়। চিত্রগ্প্ত চার দিকে চেয়ে দ্েখলেন। ইতিপূর্বে তিনি বাঙালীর
মধ্যে যে বিরাট জাগরণের আভাস, যে কর্মচাঞ্ধব্য, যে ছুর্জেয় শক্তি, যে একতাবন্ধ
কমপ্রেরণা, ষে ভাবোম্মাদন। দেখে গিয়েছিলেন তা যেন এত দিনে একটা বিপুল
শক্তিলীভ ক'রে সমৃপ্রের উত্তাল তরঙ্গের মতো আকাশে মাথা তুলে মহৎ উল্লাসে
ভেঙে পড়ছে । যে বিপুল শক্তির প্রথম স্পন্দন তিনি দেখে গিয়েছিলেন তা আজ
ষেন পূর্ণ বিকশিত হয়ে উঠেছে। যে চাঞ্চল্য ইতিপূর্বে তিনি তরুণদের মধ্যেই
সব চেরে বেশি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তা আজ যূবক বুদ্ধ সবার মধ্যে সঞ্চারিত
হয়েছে, এমন কি বয়ঙ্কবাই যেন বেশি চঞ্চল হযে উঠেছে । গতি ছন্দপূর্ণ হয়েছে,
তাতে দ্বিধা নেই, জড়তা নেই। চিত্রগুপ্ত খুশি হয়ে উঠলেন। তীর মণে হল
এমনি হওয়াই তো স্বাভাবিক। বাম্পচালিত শকটশ্রেণীকে ষখন ইঞ্জিন প্রথম
টানক্তে যায়, তথন কত ফোঁস ফোসপ গজন, কত হাসফাস, কত ঘর্দর, ঝন্ ঝন্,
এলোমেলো শব্দ, চাকায় টান পড়ে, কিন্ত সম্পূর্ণ ঘুরতে চায় না) প্রথমে চলার
আভাস ফোটে, স্পন্দন জাগে, গতি জাগে না, তার পর চাক] যখন একবার ঘুরে
যায় তখন সেই চাকা ক্রমে গতিলাড করতে থাকে, ইগ্রিনেব গঞ্জন থেমে ঘায়,
চাকার শব্দে স্থর লাগে,লকল দ্বিধা দূর হয়ে যায়, শকট চলতে থাকে সহজ ছন্দে।
চিত্রপ্ুপ্ত পূব প্রতিজ্ঞা ভপে গিয়ে স্বত্তির আনন্দে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন ।
নারদের মুহিত অবস্থা দেখে প্রথমেই তার যেও্য় হয়েছিল সে ভয় দূর হল, এবং
তার স্পষ্টই বোধ হল স্বর্গের মধুর সঙ্গীতে অভ্যস্ত নারদ সমুদ্রের জলোচ্ছাসের
স্থুরের সঙ্গে স্থুর মেলাতে পারেন শি, শক্তির সঙ্গে মাধুয সমান্তরাণ চলতে পারে
নি, তারে বিঘম টান পড়েছে, তাই তার ছিড়ে গেছে, তাই দুঃখে বেদনায় নার্দ
ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন । অতএব আশঙ্কার বিশেষ কোনো কারণ নেই । এখন গুকে
জাগিয়ে দাত্বন! দিলেই গুর মনটা ভাল হয়ে যানে, আর কিছুই করতে হবে না।
চিত্রগুপু নারদের কাছে এগিয়ে গেলেন, এবং নারদও ঠিক সেই মুহূর্তে
চোখ মেলে উঠে বদলেন। প্রথম জেগে হঠাৎ সব ধাধার মতো লাগল তীর।
ক্রমে পূর্ণ চেতনা ফিরে এলো, চোখ ছুটি উজ্জ্বল হল এবং সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত-
ভাবে চিত্রগুপ্তকে পেয়ে আনন্দে তাকে একেবারে জড়িয়ে ধরলেন | অবস্থাটা
চিত্রগুপ্তের পক্ষে খুব স্থখের হল না, কারণ নারদের মুখে শ্বাস্রুর অরণা, তার
মধ্যে চিত্রগুপ্তের মাথাটি হারিয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে
তিনি বেশ কিছুক্ষণ ঠাচতে লাগলেন ।
নারদ হো হে। ক'রে হেসে উঠলেন- চিত্রগুপ্তের দুর্দশ। দেখেই হয়তো ।
১৯৮ পরিষল গোস্বাষীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
চিত্রগুপ্ত বললেন, আপনি বন্গোছ্োষ্ঠ, বেয়াদপি মাফ করবেন, কিন্তু বীণার
ব্র্থত| আপনার নিজের যে ব্যর্থতার সাক্ষ্য দিচ্ছে, ত1 সত্বেও আপনি হাসছেন
কিক'রে?
নারদ বললেন, একট! দু'স্বপ্ন দেখার পর হঠাৎ যদি জেগে দেখি ওটা নিতান্তই
স্বপ্ন, তা হ'লে কি আনন্দ হয় না? প্রথমে যখন তার ছি'ড়ে বীণা স্তব্ধ হয়ে গেল,
তথন মনে হয়েছিল ওট] আমার হৃদয়ের তার, কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, তার
ছেঁড়ায় আমার কোনো অপরাধ নেই, হৃদয়ের সঙ্গেও ও-তারের কোনো যোগ নেই।
চিত্রপ্ুপ্ত বললেন, আমি অন্থমান করি জীবনের স্থুরের সঙ্গে সবর মেলাতে
আপনার কষ্ট হয়েছে |
নারদ হেসে বললেন, জীবনের স্তর কাকে বলছ?
চিত্রগুপ্ত বিস্মিত হয়ে জনতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন, বললেন এঁ যে
একদল লোক চলেছে প্রো বয়সের, গায়ে মোটা কাপড জামা, ঠিক ঘে মোটা
কাপড়ের গান এক দিন ওর! গেয়েছিল, মেই গানের কথা! আজ রূপ ধরেছে
ওদের দেহে । দেশে আজ নিশ্চ্র ওদের সম্মানীয় আলন। এখানে তকণদের
মধ্যে সেবারে যে উত্সাহ দেখেছিলাম, ঘমেই উৎসাহ দেখছি ওদের মধ্যে ।
ওরাই হমূতো আগেকার মেই তকণের দল । আজ ওদেব স্বপ্র সফল হয়েছে,
ওর দেশকে গড়ে তোলার জন্য হয় তো আরও বড রকমের আত্মত্যাগ করতে
চলেছে । বাঙালীকে পৃথিবীর খ্মধো শ্রেঠ আনে বসাতে চলেছে । দেশের
ছুঃখ-টদন্ত ঘুচিয়ে জনসাধারণকে টেনে তুলতে চলেছে উপরের ধাপে__
নারদ বাধা দিয়ে বললেন, এর আগে তুমি আমাকে এদের সঙ্গে পরিচয়
করিয়ে দিয়েছিলে, আজ আমি তোমাকে এদের সঙ্গে পরিচয় কবিয়ে পিই |
ওরা দেশকে বড করতে যাচ্ছে না, এ লোকগুলো! পারমিট সংগ্রহ করতে যাচ্ছে,
কেউ বা ইম্পাতেখ, কেউ ব! সিমেণ্টের__
কেনে?
ওর সাহাষ্যে ব্যবলা কবে বড় হবে। দেশের জন্য ওদেন্ব বিশেষ ভাবনা
নেই। দেশের জন্ত এককালে ওর! কেউ বা জেল থেটেছে, কেউ বা শোভা-
যাআয় যোগ দিয়েছে, তার দাম আজ ওর! কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে চলেছে।
চিত্রগুধ্তর মনটা বড়ই খারাপ হয়ে গেল। তবে কি এই দেখে তিনি মুগ্ধ
হয়েছিলেন? এই দেখে নিজে প্রান্ন বাঙালী হয়ে পড়েছিলেন ?
নিজের নিবু্ধিতা স্মরণ ক'রে তার আরও বেশি লজ্জা হতে জাগল। কিন্ত
নারদের কথাই যে অত্রান্ত তার প্রমাথ কি? নাও তো হতে পারে। তিনি
অমরত্বের পন্নভাল্গিশ বৎসর ১৯৯
যেন একটু উত্তেজিত ভাবেই বললেন, না না, আপনি ভূল করছেন-_-এ দেখুন
দলে দলে মেয়েরাও বেরিয়ে এসেছে পথে । আগে তো এ রকম কখনও দেখি
নি, খুব মহৎ কোনো লক্ষ্য না হলে এ রকম হতেই পাবে নাঁ
নারদ বললেন, ওরা দিনেম৷ দেখতে চলেছে ।
চিত্রগুপ্ত বলে পড়লেন একথা৷ শুনে ।
নারদ বললেন, বীণাব তার কেন ছিডেছে এবারে আশা কবি বুঝতে
পেরেছ ।
চিত্রণ্ডেপ্রের কানে সে কথ! গেল না। কারণ তার মনে হল এবারে তিনি
আব ভুল দেখছেন না। তুল দেখলে যে নিজের নিরুদ্ধিত। দ্বিতীয় বার প্রমাণিত
হয়ে ঘাবে। তিনি সতা দৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন__এবারে দলে দলে তঞ্ষণেবা
বেরিযে এদেছে পথে, তাদের মুখে বন্দেমাতরম্ ধ্বনি । তাদের এই উত্বা
এবং উৎপাহ পূর্বেকাব তক্চদ্দেব উলাপ ও উতসাহকে স্মরণ কবিয়ে দিল।
চিত্রগুপ্টেব গোথ মুখ আবার উজ্জল হযে উঠতে লাগশ ওদের দিকে চেয়ে চেয়ে।
নারদ ততক্ষণে তার বীণা তুলে শিষেছেন। তিনি শী বীণার সাহায্যেই
চিত্রগু-পর স্বপন ৫5৮ পিলেন পাঙ্গরে এক তো মেরে । বললেন, কি দেখছ ?
দেখছি এব। অন্ভত কোে| বড লক্ষ্য ববে চলেছে । তাই নম্বকি। এদের
এই সশ্মিটিত শর্চি এই জাতির সম্মুখে কি কোনে মাশার বাণী শোনাবে না?
নন্দ মুদ্ু হেপে বললেন, ন|, চিনগুপ, ন|। ওরা শোনাবে বোমার
মাওয়াজ-__
সাতিব সম্মথে কোনে আদর্শ?
জাতির সন্স্থে মেযে সেঙ্গে টাকে নাচ দেখাবে--ভাবী মজার সব নাচ।
এব জন্য এরা অক্রান্ত পরিশ্রধ কৰে অর্থহারী লোকদের কাছ থেকে বনু টাকা
চাঁদা আদা কনেছে। ওদের ঘে আঙ্গ বিদ্যাবেবী সরস্বতী বিদর্জনের দিন।
চিন্রপ্তপু উত্পাহের লঙ্গে বলে উঠলেন, যাক, বাচা গেল।
কিন্ধ পরক্ষণেই চিস্তিত হলেন_-কাব্ণ এপ পর একটা জাতির লর্বজনীন
মৃত্যুব হিনাব লিখতে এই ছুমু লোর বাজাবে আবার নতুন ক'রে খাতা বীধাতে
হবে ঘষে!
ইতিমধ্যে নারদ বীণব ছেঁডা তারটি দ্রুত মেরামত ক'রে লিয়ে চিত্রগুধের
কানের কাছে শ্বশান-সঙ্গীত বাজাতে লাগলেন। চিত্রগুপ্ পুনরায় ভগ্রমোহ
অবস্থার লাফিয়ে উঠে চিৎকার ক'রে বলতে লাগলেন_-মরণমেব জয়তে ।
(১৯৪৫)
সর্বানন্দ পরিবারের কথ।
সম্ভব অসম্ভব নানা রকম সংবাদ আমদানি ক'রে পাচকড়ি আড্ডা জমাতে খুব
ওল্তাদ, তার কথা! আমরা সব সময়েই উপভোগ করি।
এই খবরটাও পাচকড়ির কাছ থেকেই শুনলাম। বাংলা দেশের উত্তর-পৃবে
হিমালয়ের কোনে! একটি খাড়া পাহাডের মাথায় নাকি এমন একটি বাঙালী
পরিবার বাস করছেন, ধাদের মধ্যে গত পাঁচ পুরুষ ধরে ত লোক জন্মেছেন
তারা সবাই বেচে মাছেন, ভাদের প্রত্যেক্যের স্বাস্থ্য ভাল, তীরা সবাই কোটি-
পতি, অথচ বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে । আরও
আশ্চর্ধ এই যে, পরিবারের প্রত্যেকটি তরী এবং পুরুষ দেখতে প্রায় এক বয়সী
এবং তারা সবাই অটুট-যৌবন।
এই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ধিনি তার নাম সর্বানন্দ, ব্যণ চয়ান্তব বছর।
তার পিতা ঈশ্বরানন্ন এবং পিতামহ বরাদ।নন্দ, তারাও এই পরিবারভুত্ত।
সর্বানন্দের পুব্র এবং পৌত্র অগণিত, পুত্রী এবং পৌত্রীও অনেক ।
বিরাট পরিবার, এদের কারও কথনও নাকি অন্থখ করে না, এদের মৃত্রা
নেই, এদের কোনে দিকেই কোনো! অভাব নেই, দুঃখ নেই। এদের অর্থের,
স্বাস্থ্যের এবং মানদিক শাস্তির প্রাচুষ অভূতপূর্ব, অশ্রুতপূর্ব, এবং অনৃষ্টপূর্ব।
তারা কৌতৃহলী দর্শকের হাত থেকে বীচার জন্য এক খাড়া পাহাভের মাথায়
আশ্রম শিয়েছেন, সাধারণ লোকের পক্ষে সর্বদা সেখানে যাওয়া সুপাধ্য নয়ূ।
পাঁচকডির অন্যান্য কথার যতো এ কথাটাও হেসে উডিয়ে দিতে উদ্যত
হয়েছিলাম, কিন্ত পারলশম ন]।
পঁচকডি উত্তেকজ্িতভাবে বলল, তোমরা অপদীর্থ, অভাগ। এবং নাস্তিক ।
যে ঘটন! পৃথিবীর লোকে জানে, বয়টার যা প্রচার করেছে, তা জান না বলে
তোমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু লজ্জা পাওয়া দূরের কথা, বিশ্বাসই
করছ না! তোমাদের মরা উচিত।
বীরু আমাদের মুখপাত্র, সে বলল, বনু জ্রিনিসই আমার্দের উচিত অথচ তার
একটাও না ক'রে দিন তো! এক রকম ্থথেই কেটে যাচ্ছে, অতএব তোমার এ
পাচপুরুষী পরিবারটার অস্তিত্ব দি অন্বীকারই করি তা হলেও স্থখেই থাকব)
ওটা ছেড়ে আর কি বলবার আছে বল।
পাঁচকড়ি ক্ষেপে গরিক্বে ঘা-তা বলে আমাদের গাল দিতে আরম্ত করল।
সর্ধানন্দ পরিবারের কথা ২০১
শেষে একখান! কাগজ বের ক'রে বীরুর লামনে ছুড়ে দিয়ে বলল, পড়ে
দেখ।
পড়ে দেখলাম, সছ্য প্রকাশিত বিশেষ সংস্করণ খবরের কাগজ, এবং পীচকড়ি
যে খবরের বাহক হয়ে এমেছে দেই খবর তাতে ছাপা আছে । স্তভিত হলাম,
কেননা এই খবরটার জন্যই বিকেলে বিশেষ সংস্করণটি বেরিয়েছে ।
উচ্চ পাহাড়ের উপর অভাবনীম্ম আবিষ্কার । ঘটনাক্রমে এক ব্রিটিশ বিমান
সেখানে নামতে বাধ্য হয়, ফলে এই অদ্ভুত বাঙালী পরিবারের কথ পৃথিবীর
লোকে জানতে পেরেছে এবং এমনও শোনা যাচ্ছে এই যুদ্ধের নানা অস্থবিধ!
উপেক্ষা ক'রেও আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সাংবাদিক এবং বৈজ্ঞানিক দল
বিমানঘোগে সেখানে আসতে উদ্যত হয়েছেন ।
পাচকডির কাছে ধৃ্টতার জন্য ক্ষমা চাইলাম ।
পণচকড়ি বলল, নাও নাও, আর ইয়।কি করতে হবে না, এখন আসল ঘা
করবার তাই কর। চল, আর কাপবিলম্ব না ক'রে আজই সেখানে রওনা হয়ে
যাই। এ কথায় সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম । সবাই মানে বীরু, তারক,
ছান্ু, পান আর আনি।
রওনা হয়ে সেখানে পৌছতে কি কি অন্রবিধ! তা বিশেষভাবে আলোচনা
ক'রে এবং তার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তত হয়ে আমণা পাচটি পুরুম অজ্ঞাত-পরিচয়
পাঁচপুরুমের ইতিভাস সংগ্রহ করতে রওনা হয়ে গেলাম ।
কি ক'রে সেই পাহাড়ের নিচে গিয়ে উপস্থিত হলাম তা এ কাহিনীর পক্ষে
অবান্তর। শুধু এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে বাঘ ভালুকের সঙ্গে পড়াই
করতে করতে শুবু পাহাডটতে চডতেই আমাদের সাত দিন লেগেছিল।
গিয়ে দেখলাম ঘটনাট। সত্য | পাভাডের মাখ| সবানন্ন পবিরারেখ কৃপায়
একটি স্বগীয় উদ্(ণে পরিণত । সেখানকার সবাই প্রায় এক বয়পী, সবাই
সমান স্বাস্থ্যবান, কেবল কয়েকজন মেয়েকে দেখ। গেল, তাদের মুখে ঘড়ে এবং
হাতে ল্বা লম্বা চুল। বাঙালী পবিবাব পশ্দেহ দুইল সন, তীবা বাংলাতেই কথা
বললেন ।
আমাদের দেখে তীর যে খুব খুশি হলেন তা নয়, তবে তাড়া করেও এলেন
না। সবারই মুখে কেমন ষেন একটা উদ ীলীনতার ভাব।
একজন যুবক প্রশ্ন করলেন, এই দুর্গম পাহাডে তোমরা কেন এসেছ,
তোমাদের উদ্দেশ্য কি?
আমাদের মুখপাত্র বীরু বলল, খবরের কাগজে আপনাদের খবর ছাপা
২২ পরিমল গোস্বামীর শেঠ বাজ-গল্প
হযেছে, তাই পড়ে কৌতৃলহ্বশত এমে পড়েছি। দেখতে এলাম সব
সত্য কি না।
তিনি জিজ্ঞানা করলেন, কি সত্য কিনা?
বীরু বলল, পাঁচ পুরুষ ধরে আপনার! বেঁচে আছেন, আপনাদের জরা-মরণ
নেই, রোগশেকক অভাব-অভিযোগ নেই--এ রকম যে হতে পারে, তাই আমরা
জানি না।
তোমরা বোধ হয় নাত্তিক কিংবা মূর্খ, তাই জান না; এ রকম বেঁচে থাকা
আর এ রকম স্থথে থাক! সবার পক্ষেই সম্তব।
কি ক'রে সম্ভব তাজানতে পারলে আমরাও চেষ্টা ক'রে দেখতে পারি।
দয়া কে যদি এবিষয়ে কিছু বলেন! আপনারা এমন স্ষ্টিছাডা জীবন কি
কবে পেলেন, তাই জানবার জন্যই এত কষ্ট ক'রে পাহাডে উঠেছি ।
ভদ্রলোক বললেন, আমাকে কিছু জিজ্ঞাস! ক'রে! না, আমার বঘদ মাব্র তিন
বছর, কিছু বুঝিয়ে বলতে পারব না, চল আমার ঠাকুরদার কাছে তোমাদের
নিয়ে যাই।
এক যুবক একটু দূরে একট! কলাগাছ থেকে পাকা কল! পোডে পেডে
খাচ্ছিলেন, আমর! ভযে ভয়ে তার কাছে গেলাম। ঠানুবদদা কলা খেতে খেতে
জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপাব কি?
তিন বছরের পৌত্রটি-ধিনি লম্বায় পাচ ফুট-_বললেন, এবা এসেছেন
আমাদের লব খবর জানতে । শুনে ঠাকুবদা সর্বানন্দ একটু হাসলেন । এই
ঠাকুবদাও যুবক ।
বীর বলল, দয়া ক'রে ঘদি__
ঠাকুরদা! বললেন, বাবার অন্্রমতি ভিন্ন আমি কিছুই বলতে পারব না, চল
তীর কাছে নিঘ্বে যাই। ঠাকুরদার বাবা বসে বমে তামাক টানছিলেন, তিনি
নলট পুত্রের হাতে দমে সব গুনলেন এবং বললেন, বাবার অনুমতি নেওয়া
দ্রকার। সৌভাগাক্রমে বাবার বাবা দেইখানেই আসছিলেন, তিনিও যুবক,
তাঁর কছে অনুমতি চাওয়া হল। তিনি সব শ্রনে তার পৌত্র সর্বানন্দকে সব
বলতে অনুমতি দিলেন।
সর্বানন্দ মূখে বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বললেন, তোমরা এখানে এসে বিরক্ত
করবে ভয়েই এত উঁচুতে বাদ! বেধেছি, তোমাদের হাত থেকে দেখছি কিছুতেই
নিষ্কৃতি নেই।
বীরু তার ভাবাস্তর লক্ষ্য ক'রে ফস্ ক'রে তার পা জড়িয়ে ধরল, এবং
সবানন্ব পরিবারের কথ! ২৩৩
এমন অভিনয় করল যাতে তার হৃদয় ভ্রব হয়। কিন্তু হৃদয় বলে তীর কিছুই
নেই, ঘেটুকু ছিল তাও যেন আরও কঠিন হয়ে উঠল। তিনি বললেন
ইংরেজরা ও চেষ্টা করেছিল কথা বের ক'রে নিতে, কিন্তু পারেনি ।
আমর বললাম, ইংরেজেদেন্র কাছে না বলে ভালই করেছেন। আমবা
আপনাদেরই ন্বজাতি, বাঙালী, আমাদের কাছে বলুন।
মনে হল আবেদনে কাজ হয়েছে । একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সর্বানন্দ
বলতে লাগলেন, আজ পঞ্চাশ বছর রয়েছি এইখানে, পরম সুখে, জীবনের উপর
আর আকর্ষণ নেই, কেননা আমরা! আর মরব লা বলে বোধ হচ্ছে।
ভাগ্য যেন অনুকূল হল। বললাম, এ রকম হল কেন?
নবানন্দ বললেন, আরম্ভ যখন করেছি, সবই বলি । ১৮৭৩ সনে আমার
জন্ম, বাংলা দেশেই এক গ্রাষে। বড় গবিব ছিলাম, স্বাস্থ্যও ভাল ছিল না,
কিন্তু মনে উৎসাহ ছিপ খুব বেশি । দারিত্র্য সহ কবা আমার পক্ষে
অসম্ভব হল।
ভাগ্যান্বেষণে বেপিয়ে পড়লাম গ্রাম ছেডে শহরে, কিন্ধ শহরে ৭ কিছু সুবিধা
হল ন|। লেখাপড়। ভাল জানতাম না, দেখলাম অগ্ন বিদ্যায় কিছুই কণা যায়
না। তাপূপর নানারকম ঘা খেম্ে মনে ব্বগোর উদয় হল, এবং কয়েক
দিনে মধ্যেই এক সন্গামীর সঙ্গে জুটে গেলাম । তাঁর পর বহু দুঃখের ভিতর
দিম্বে এপে পড়লাম হিমালয়ে | সন্র্যাসীর জীবন আদে ভাল লাগছিল না,
কেননা মন্নাসীর মন আমার ছিল না। কি ক'রে কিছু পরসা উপার্জন করা
যায় সেই কথাটিই মাথার মধ্যে ঘুরছিল অনেক দিন, সেই পথই বেছে নিলাম।
এখানে এসে পাহাড়ীদের সাহাধ্যে চা বাগান তৈরির মতলব এলে। মাথায়।
দেখলাম বিদেশীরা এই কাজে বেশ সাফলা লাভ করেছে, কিন্তু ইচ্ছা হলে কি
হয়, স্বাস্থাও নেই শিক্ষীও শেই; কেবল কৌশল আর চাতৃরির লাহায্যে চা
বাগান তৈরি করা যায় না। সেজন্য অনেক টাকাও দরকার, টীকাই বা
আমার কোথায়?
তবু সাহস ক'রে কাক আরম্ভ করলাম, পাহাড়ীদের বুঝিয়ে দিলাম তারাও
বড়লোক হবে। সাহেবদের বাগান থেকে দুচারজন কুলিকে ভাগিয়ে আনা
গেল, কিন্তু স্পষ্টই বোঝা গেল দুচার বছরের মধ্যে লাভজনক কিছুই হতে
পান্সে না। কিছুদিনের মধ্যেই ভগ্োৎ্সাহ হয়ে পড়তে হল, পাহাড়ীরা
আমার উপর বিশ্বাস হারাল । ক্রমে দেখলাম তারা আমাকে মানতে চায় না।
তারাই আমাকে এতদিন খাওয়াচ্ছিশ্ল, মে দিকেও তাদের যনোষেগ আর
২০৪ পরিমল গোস্বাধীর শ্রেঠ ব্যহ্ব-গল্প
রইল না। তার! ক্রমেই আমার কথা অমান্ত করতে লাগল, এবং আমাক
খাওয়া বন্ধ ক'রে দিল।
আমার স্বাস্থ্য তখন একেবারে ভেঙে পড়েছে, বন তখন ত্রিশের
কাছাকাছি, কিন্ত দেখতে একেবারে বুড়ো হয়ে পড়েছি। এ রকম অবস্থায়
পাহাড়ীদের উপর প্রতৃত্ব করা চলে লা। তখন নিরুপায় হয়ে তাদের কাছে
নিজেকে ছোট করলাম, বললাম তোমরাই প্রভূ, আমি তোমাদের গোলাম।
এই কৌশলে আমার খাওয়াটা কোনো রকমে চলতে লাগল, কিন্তু স্বাস্থ্যের আর
উন্নতি হল না। ক্রমে মৃত্যুর দ্বারে এসে পৌছলাম, কাদির সঙ্গে তখন রক্ত
পড়তে আরম্ভ করেছে । কি আর করি, হতাশ ভাবে শুয়ে শুনে শেষের দিনের
অপেক্ষা করতে লাগলাম; কিন্তু শুয়ে শুয়ে সময় আর কাটে না, এক একটা
দিনকে এক একটা বছর মনে হয়__সমন্ত রাত ঘুম হয় না।
পাহাড়ীর| পাহাড় থেকে নেমে শিচে যায় সপ্টাহে একবার, সেখানে
একবার ক'রে হাট বসে। পেইখান থেকে আটা ছাতু হুষ্রা ইত্যাদি কিনে
আনে। একদিন দৈধক্রমে তাদের আনা কোনো একটা মোডকের এক টুকরো!
কাগজ আমার হাতে এসে পড়ল। তাতে একটা বিজ্ঞাপন ছিল, সেইটে পড়ে
সময় কাটাতে লাগলাম । বড়ই ভাল লাগল । একট। কবচের বিজ্ঞাপন,
বশীকরণ কবচের। লেখা আছে, ধারণ করলে যে কোনে। লোক বশ হয়৷
পাহাড়ীদের হাতেপায়ে ধরে একখানা পোস্ট কা সংগ্রহ কবলাম। একটা
ভাঙা পেন্সিল ছিল আমার, তারই সাহায্যে কবচের অর্ডার পাঠিয়ে দিলাম
জলদ্ধরে | সামান্য দাম, ভি-পি এলে এবং আমিও কবচ ধারণ করলাম ।
হঠীৎ বীরুর মুখ থেকে বেরোল £ ফল হল তাতে ?
সর্বানন্দ বললেন, ফল !। ধারণের সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ দেখি আমাদের পাহাড়ে
যত পাহাড়ী ছিল তার! সবাই বুকে হেটে আসছে আমার দিকে_ সবারই মুখে
এক কথা £ প্রত, আমরা আপনার দাস, আদেশ করুন কি করতে হবে। ক্রমে
দেখি অন্যান্ত পাহাড় থেকেও দলে দলে লোক আসছে, মায় চা বাগানের
লাহেব মেমবা। পর্যন্ত । আধ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধের যাবতীয় লোক
আমার ক্রীতদাস হয়ে গেল। আমি যা বলি তারা তাই শোনে । কিন্ত
আমার জন্য তারা! আর কি করবে, মারাত্মক ব্যাধিতে আমি শধ্যাশায়ী ।
জীবনের প্রতি মমতা ছিল আমার খুবই, কিন্তু ভবিষ্যতের প্রতি কোনো!
মায়াই যেন আর নেই, ষে কটা প্রিন বাঁচি সেই কটা দিন আরামে কাটাতে
পারলেই আমার পক্ষে ঘথে্। সবাই মিলে আমার জন্ত চিকিৎসক নিয়ে এলো,
মধানন্দ পরিবারের কথা ২৫
কিন্ধ চিকিৎসক তখন আর কি করবে, কেননা এ ব্যাধির কোনো! চিকিৎসাই
সে যুগে ছিল না। আমি বললাম, আমার জন্য আর কিছুই করতে হবে
না, কেবল খানকত বাংলা বই আর কাগজ কিনে আন কলকাতা! থেকে, ভাই
পডব শুয়ে শুয়ে।
বই এলে! কলকাতা থেকে, কিন্ত সবই পুরনো সংবাদপত্র আর পঞ্জিকা।
ভালই হল, কেননা আমার বিদ্ভাতে ওর চেঘে শক্ত কিছু বোঝার উপায়
ছিল না। যারা এনেছে তারাও কিছু না বুঝেই কিনে এনেছে, বোধহয় কোনো
জোচ্চেরের পান্নায় পড়েছিল ।
যাই শ্লোক, আমার কিন্ত ভাগা কিবল ওতেই। পাঁজির বিজ্ঞাপন পডতে
গিয়ে হঠাৎ চোঁথে পডল ধনদা করচের বিজ্ঞাপন । তংক্ষণাৎ আনিয়ে
ধারণ করলাম।
* জিজ্ঞাসা করলাম, ফণ পেলেন ?
ফল। সাতদিনে লক্ষপতি-_-পনেবো দিনে কোটিপতি হলাম । শুয়ে
আছি, এমন সময় শোৌন। গেল চারদিকে ঠং ঠাৎ টু" টাং ঝন ঝন শব্দ-_-চেয়ে
দেখি চারদিক থেকে টীকা গড়িয়ে গডিয়ে আসছে । পাহাড ঠেলে টাকার
ল্রোত বমে আনছে উপরে-_টক মাছের মাতা লাফাতে লাফাতে আদছে।
মাথার উপন “দয়ে মেঘ উডে যাঁচ্ছে__এক এক পশপা ট।কা ফেলে দিয়ে গেল
পাহাড়ের উপর। বিছানার শ্িচে ছাঁরপোকার মতো টাকা নড়ে নড়ে
বেডাক্ছে। আর পে বাঙ্গে টাকা নয়, ঠার্দি টাকা, ভিক্টোবিষা স্লাণীর ছাপ
মাবা, ঝকঝকে চকচকে সব টাকা । পাহাভীল! প্রথমে আনন্দে টাকার মতোই
লাঞাতে লাগল, কিন্তু ছু তিন দিশের মধ্যে তাদেরও টাকায় বিতৃষ্ণ এলো।
সে টাকা ঝট দিষে ঝে'টিগে বিদায় করা গেল ন।, পাহাডের চারদিকে গাছের
গুঁড়ি একটার প্র একটা সাঙ্গিয়ে তাঁদের রে'ধ কর! গেল না, সমস্ত বাঁধ!
অতিকম করে টাকার পাল এসে লুটিস্ম পড়তে লাগল আমার পায়ের কাছে,
পোষ! বিডাল ছানার মতে। পায়ে এপে তাদের গা ঘষতে লাগল, টাকার
পাহাড় জমে গেল পাভাডের গায়ে ।
আমার সেকি আনন্দ আর ট্ত্তেজনা। সেই উত্তেজনায় শরীর আবার
ভেঙে পডল। কত চিকিৎসা করানে! গেল, বড বড ভাক্তৰর যে যেখানে
ছিল দব শেষ হয়ে গেল ।
তখন আবার পাঁজির শরণাপন্ন হয়ে উম্মাদের মতো পাতা ওণ্টাতে
লাগলাম। পেলাম একট। যনের মতে] বিজ্ঞাপন | মনে হল এইতে যদি ফল
২৯% পরিমল গোশ্বাষীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
পাই তে। পাব, নইলে আর কোনো আশা নেই। বিজ্ঞাপনে লেখা আছে তিন
ঘণ্টায় ঘৌবন লাভ |
এক সাহেবকে ধরে টেলিগ্রাম লিখিয়ে নিলাম এবং তাকেই পাঠালাম
টেলিগ্রাম করতে । ওষুধ এলো। লে কি লাংঘাতিক ওধৃধ ! খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
আমার দেহটা ফুটবলের মতো! এক ধাক খেঘে পনেরো হাত শৃন্তে উঠে গেল।
বীক্ু প্রশ্ন করল, আবার ফুটবলের মতোই নিচে পড়লেন ?
সর্বানন্দ গম্ভীবভাবে বললেন, না, হাক্কা, ব্যাধিমুক্ত, সর্ব উদ্বেগশূন্য, যৌবনের
উন্মাদনায় উচ্ছল এক পরম বিস্ময়কর টেনিন বলেরু মতো এসে নিচে পড়ে
লাফাতে লাগলাম । যৌবন্লাভ করতে তিন ঘণ্টা লাগল না, লাগল শ্াত্র
তিন মিনিট। হিমালয্সের ধূলিকণাঁবিরূল আবহাওয়ার জন্যই বোধহ্য দ্রুত
কাজ হল।
আমরা সবিম্ময়ে শুনতে লাগলাম এবং মাঝে মাঝে প্রশ্ব ক'রে তাকে উতঙ্গাত
দিতে লাগলাম ।
সানন্দ বলতে লাগলেন, এত টাকা, এমন স্বাস্থা, আর সবার উপর এমন
প্রতৃত্ব নিয়ে মন বড় অশান্ত হয়ে উঠল, তখনই ইচ্ছে হল বিয়ে করি। ইচ্ছা
হওয়া! মাত্র বাংলা দেশের শ্রেষ্ঠ স্থন্দপী কন্তার পিতাকে বশীকন্ণ কবচের
সাহায্যে স্মরণ করলাম । অবশ্য সে জন্য মহাবশীকরণ কবচ আনাতে হয়েছিল,
কেননা কন্যার পিতার দূরত্ব ছিল তিন শ মাইল, আর আমার কবচেব ক্কিন্বা
হচ্ছিল মাত্র পাচ মাইল ব্যাপার্ধ জুডে। ইতিমধ্যে আমার পিতা এবং
পিতামৃহকে আনিয়ে তাদেরও তিন ঘণ্টায় যৌবন বটিক1 একটি ক'রে খাইয়ে
দিলাম। তারা তত্ক্ষণাৎ যৌবন লাভ ক'রে পাহাডে সর্বত্র ল।ফালাফি ক'রে
বেড়াতে লাগলেন। অতংপর তারা দুজনেই এখানকার দুই পাহাডী কন্যাকে
বিষ্বে ক'রে বলেছেন, কারণ আমার মা এবং ঠাকুমা দুজনে পূর্বেই মাবা!
গিয়েছিলেন ।
বীক্ষ বলল, অদ্ভুত আপনার কাহিনী ।
সবানন্দ বললেন, এখনও শেষ হয়নি । এবপর সকল কবচের সেরা কব্চ-_-
সকল মাছুলীর শিরোমণি সর্বসিদ্ধি মাছুলী আলিয়ে ধারণ করলাম। এক গুণ
পরীক্ষার জহ্ ধারণ কবেই ইচ্ছা করলাম এই পাহাড়ে চিরবসম্ত বিরাজ করুক।
সঙ্গে সঙ্গে পাহীডের ধত কাক এবং অন্যান পাখী ছিল তারা সবাই সমস্বরে
কুছ কুছ করে ডেকে উঠল -_শাল গাছে, কলাগাছে, ধুতুবা গাছে । আমের
মুকুল ধরল । সামনে ভাকিয়ে দেখ । দেখ, নাম না৷ জান! ফুলও ফুটেছে কত।
সবানন্ম পৰিবাষেছ কথা ২০৭
দেখলাম সত্যিই তাই, এই অসম্ভব জিনিসটা এতক্ষণ জক্ষা করিনি ।
সর্বানন্দ বললেন, সর্বসিদ্ধি মাছুলীতে আমার এমন বিশ্বাস জন্মেছে যে এন
একটা ধারণ করলে ঘা ইচ্ছে করা যায়। ধরন কেন, মেয়েছের মাথায় চুল উঠে
যাচ্ছিল, মনে করেছিলাম এই মাছ্লী ওদের দেব। কিন্তু ওরা ভূল ক'রে
কেশোদগম তেল এনে কাল মাথায় মাখতে গিয়ে বিপদে পড়েছে, যেখানে
তেল ছেগেছে সেই সব জাদগায চার পাঁচ হাত ক'রে চুল গজিয়ে গেছে।
আমি মজাটা দ্বেখছি, ছুর্দিন অস্থৃবিধা ভোগ করুক, তারপর সর্সিদ্ধি মাছুলী
দেব একটা ক'বে।
বীরু জিজ্ঞাসা করল, আপনার পৌত্রের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ হয়েছে,
শুনলাম তীর বয়স তিন ব্ছর। এটা কি ক'রে সম্ভব হল?
সর্বানন্দ বললেন, বোঝা উচিত ছিপ। “তিন ঘণ্টায় যৌবন, বটিকা
খাইফ্রেছি সব শিশুদেব__একপাল শিশুর উপদ্রবে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল,
কিন্তু এখন মহা শান্তিতে আছি । শিশুরা যৌবন লাভ ক'বে অকালপরু হয়েছে
বটে, কিন্তু এ ছাড়া আর উপায় ছিল না।
আমি লক্ষ্য করলাম সর্বানন্দ কবচের এত প্রশংসা করছেন, কিন্ত তার
নিক্ষেব হাতে বা গলায় কোনে। কবচই নেই । এর কারণ জিজ্ঞাসা ক'রে জানতে
পারলাম, কবচেব এমন গুণ যে একদিন মাত্র ধারণ করলেই তার ফল বরাবর
স্বাধী হয়, কব্চ শেষে ফলে দিলেও তাত কাজ চলতে থাকে । এ যেন
দেশলাইযের কাঠি দিষে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, আগুন জ্বলতে শুরু করলে
কঠিটি আর রাখার দরকার হম ন| |
এই চিরবসস্তময় গগনম্পশ বাঙালী উপশিবেশণের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নতুন
জ্ঞান, নতুন অভিজ্ঞতা এবং নতুন দৃষ্টি লাভ কবে দুগ্ধ হলাম, পীচকড়িকেও
অজন্ন ধন্যবাদ দ্িলাম। আমাদেব বিদায় নেবার সময় উপস্থিত হল।
সর্বানন্দ আমাদের রাজকীয় তোজে পরিতপ্ত কবালেন। তারপর তান্র
পরিবারের সবাই আমাদের চেহারা, স্বাস্থ্য এবং দুঃখ সহা করবার উৎসাহ
দেখে সবিদ্রপ ছুঃখ প্রকাশ করলেন । আমর] যে অতি নিবোধ মে রকম
মন্তব্যও প্রকাশ করলেন কেউ কেউ ।
বীর পকেট থেকে অটোগ্রাফের খাতা বের ক'রে সর্বানন্দের সম্মুখে ধরে
বলল, আপনার একটি অটোগ্রাক দিন, ছা ক্যাষেরা নিয়ে বলল একটি
ফোটোগ্রাফও নিচ্ছি। সর্বানন্দ ফোটোগ্রফে আপত্তি করলেন না, কিস্ত
অটোগ্রীফে করলেন। ব্ললেন, লেখাপড়ার মধ্যে আর আমাকে টেনো না,
২০৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ট ব্যঙ্গ-গল্প
ওসব প্রায় ভূলেই গিয়েছি । বীরু হতাশ হয়ে বলল, তা! হ'লে আশীর্বাদ
দিন।
সর্ধানন্দ বললেন, তা! অবশ্য দেব। আঁশীর্বাদ করি, তোমরা দেশে ফিরে
গিয়ে তোমাদ্দের আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যার উচ্ছেদদে এবং চিকিৎসকদের
মুণ্ডপাতে সাফল্যলাভ কর। আধুনিক বিজ্ঞানকেও ধংস কর, আর মাছুলীর
মহিষ! প্রচার করতে থাক। ওষুধ যদি কিছু খেতেই হয়, একমাত্র দৈব্প্রার্
বাম্বপ্লাদেশপ্রাঞ্ধ ওষুধ খাবে।
বীরু প্রশ্ন করল, এতে কি আমরা অমর হব?
সর্বানন্দ বললেন, ও ছাড়! অমর হবার আর কোনো পথ নেই । আমাদের
দেখেও যদ্দি এ শিক্ষা না পেয়ে থাক তা হলে আর কি বলি! যাও আর
বিরক্ত ক'রে! না, আমার অনেক সময় তোমর1 নষ্ট করেছ__বলে তিনি উঠে
পড়লেন, আমরাও তার পায়ের ধূলো নিয়ে তৎক্ষণাৎ পাহাড থেকে লামতে
আরস্ত করলাম।
এর পর কতর্দিন কেটে গেল, জলন্ধরে টাক৷ পাঠিঘ়ে পাঠিয়ে সর্বস্বাস্ত হয়েছি,
কিন্ত কোনো ফল পাইনি। মনে হচ্ছে নিচু জমিতে কোনো ফলই হয় লা।
আমাদের প্রত্যেকেরই হাতে, গলার এবং কোমরে মোট প্রায্ম পঞ্চাশটি কারে
মাছুলী আছে, আজই সব ফেলে দ্বেব ভাবছি |
(১৯৪৫)
প্রথম দৃশ্
বিচারক সভা বসেছে__ আমাদের তিনজনের বিচার হবে। খুব বেশি দ্বেরি
হযে না মনে হয়, কারণ আজ আমাদের কৃতকর্মের সামান্ত একটুখানি অংশ
বিচার ক'রেই আমাদের সম্পর্কে শেষ সিদ্ধাস্ত করা হবে এই রকম কথা
পেয়েছি ।
ব্যাপারটা খুব গুরুতর হয় তো মনে হবে না, এবং খুব যে লঘু তাও নয়,
কেননা এর উপরে অস্তৃত আমার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
আমরা তিনজন কর্মপ্রার্থী_পিনেমা মহলে । তিন জনেই লেখক এবং শুধু
তাই নয়, উচ্চাকাজ্ষা এবং উচ্চ আদর্শ সম্পন্ন লেখক। সেটা অবন্ প্রমাণের
অপেক্ষ। রাখে না, কারণ সাধারণ লেখক হলে গল্প লিখেই জীবন কাটত, মিলেম!
নাট্য অথবা সিনারিও লেখার দুর।শা ঘটত না। এই ছুরাশ! প্রায় গযাম্লিংএর
পর্যায়ে পড়ে । লেগে গেল তো সাতদিনে বাড়ি এবং গাড়ি।
আমি তিনজনের কথ] বলছি বটে কিন্ত আমরা পরম্প্র অপবিচিত।
আমরা সম্পূর্ণ পূথক ভাবে এগিয়ে দৈববশত একসঙ্গে জুটেছি এবং একসজে
অপরাধী শ্রেণীভুক্ত হয়েছি ।
ঘটনাটা খুলেই বলি। একটি অপরাধমূলক গল্প সিনেমাকার হাতে পেয়েছেন,
সেটিকে চিত্রনাট্যে ব্ূপান্তর্বিত করতে হবে এই রকম আয়োজন চলছিল, এমন
সময় ব্হ আবেদনকারী । নিজ নিজ গল্প চালাবার আবেদন ) থেকে আমাদের
তিন জনকে বেছে নেওয়া হল। পিনেমাকান ষে আমাদের ক্ষমতা সম্পকে
নিঃসন্দেহ হয়েছিলেন মে কথা বল! বাহুল্য ।
তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে গল্পটি মোটামোটি আমাদের কাছে দিন লাতেক
আগে বলেছেন ।
তিনি চান, আমর! তিনজন পৃথক ভাবে, এর আবস্তের দৃশ্াটি কি রকম
হওয়া উচিত তার একটা সিনেমানঙ্গত খসড়া তৈরি কনে আনি। ঘারটি তার
মতে ভাল হবে তাকেই তিনি সমস্ত গল্পটির সিনারিও লেখার ভার দেবেন।
তিনি আরও বলে দিয়েছেন যে তিনি গল্পের নায়ককে ছুরি হাতে গ্রথম দৃে
দেখাতে চান।
আমরা সেই অনুলারে সাতদিন পরে পিনেমাকারের কাছে এসেছি । এনে
দেখি তিনি একা! নন, আরও চার পাচ জন কর্তৃপক্ষীয় অথবা বিচাবপটু ব্যক্তি
৯৪
২১০ পরিষল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
তান্ব পাশে উপবিষ্ট । কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা গেল ওদের একজন পরিচালক,
একজন সন্বকারী পরিচালক, একজন কামেরাম্যান, একজন তশ্য সহকারী, আর
একছ্রন শবাঘন্ত্রী। আরও জানা গেল__এদের মধ্যেকার দু*তিন্জনের রীতিমতো
বস্থের অভিজ্ঞতা আছে। আগে কখনও এতগুলো গুণী লোককে একসঙ্গে
দেখিনি । দেখে শ্রদ্ধা, বিস্ময় এবং কিছু ভয়ও হল। নিজের ক্ষুত্রত্ব বড় হয়ে
দেখা দিল--পরীক্ষাটা দেখা দিল বিভীধিকারূপে। জীবনে এত বড পরীক্ষাই
দিইনি কখনো । বিশ্ববিদ্যালয়ের গোটাতিনেক পরীক্ষা তো জলীয় ব্যাপার।
জীবনের একটা! বড় পনীক্ষা বিবাহ, সেটিতেও ভয় পেয়েছি । তা ভিন্ন সিনেমাই
আমার ধ্যান এবং লিনেমাতেই জীবনটা কাটাব ভেবে বিয়ে ব্যাপারটা আরও
ভয়ঙ্কর মনে হয়েছিল । কিন্ত সে সব কথা থাক। আপাতত বিষম পরীক্ষা
সামনে, এতদূর এগিয়ে এ পরীক্ষা আর এডাবার উপায় নেই।
পিনেমাকার বললেন, তোমার স্ক্রিপটটা পড় |
আমি বললাম, না, থাক। কিছুই বিশেষ লিখিনি।
তা হোক, যা লিখেছ তা থেকেই ধারণা হবে ।
আমি খাতাখান! খুলে আমার লেখাট] সদস্কোচে শোনাতে লাগলাম।
সেটি এই £ "অস্প আলোয় প্রথম দেখা ধাবে একথান| ছোরার ছায়া
ক্রমশঃ ছোরাধারীর হাতের ছাঘ্রা, তারপন্ ছোরাঙ্গদ্ধ হাত এবং হাতের মালিক।
দ্বিধাজ্জডিত অথচ দৃঢ় পায়ে, মুখে দৃঢ সঙ্কল্পের ছাপ নিষ্বে নায়ক এক পাশ থেকে
আর একপাশে অরৃশ্য হয়ে যাবে । তার চল! দেখে মনে হবে যেন সে অবিলঙ্ষে
ভয়ঙ্কর কিছু করতে যাচ্ছে। তার অদৃশ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্লতর
আলোয় দৃশ্ত, হৈ-হৈ.নৃত্যগীত এবং উত্সব”
বলা বাহুল্য দৃশ্টি আমি একটি বিদ্রেশী ছবি থেকে চুরি করেছিলীম, কিন্ছু
এমন নিপুণভাবে-_যে ধর্বার উপায় ছিল ন]|।
পরিচালক খুব সংক্ষেপে ব্ললেন, চারণ” ফুট হয়ে গেল_-অথচ একটি গান
লেই, কথা নেই, দর্শক নেবে ন|।
অতঃপর দ্বিতীয় প্রার্থী তার লেখাটি শোনালেন : "প্রথমে অন্ধকার ।
অন্ধকারে অদৃশ্য কণ্ঠে গান : 'ভেবেছিস তুই ভবের হাটে ফাকি দিয়ে যাবি
বেঁচে গান চলতে চলতে ক্রমশ: আলো ফুটবে । দেখা যাবে নায়ক ছোরা
হাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে চমকে উঠছে । ধাঁরে
ধীরে বুঝতে পারষে, এ গানের সাহায্যে তাকে সতর্ক কর! হচ্ছে না, তার অদৃশ্য
শত্রকে সতর্ক করা হচ্ছে। €ন কথা নেস্বগত বলবে, যাতে দর্শক বুঝতে
প্রথম ছৃত ২১১
পারে। তারপর গানের তালে তালে পা ফেলে সে আবার অন্ধকানে মিলিয়ে
যাবে।”
পরিচালক সহকারীর দিকে চাইলেন, লহ্কারী পরিচালকের দিকে,
চাইলেন । হঠাৎ পরিচালক বলে উঠলেন-_আল্ছা তৃতীম্ন ফ্রিপটখানা শোনা
যাক ।
হতীয় প্রার্থী পড়তে লাগলেন : “দৃশ্য আরস্ত হতেই দেখা যাবে নায়ক ছোণা
হাতে দাড়িয়ে আছে । তার মুখ বড়ই ৰিষগ্র। কি যেন সে বলতে চান্ব অথচ
ৰলতে পারে না। ভ্র কুচকে যাচ্ছে__মুখের পেশী কেপে কেপে উঠছে । ঠোট
নডছে--অবশেষে কথ! ফুটল-_
বহুদিন মনে ছিল আশা
ধরণীর এক কোণে রৃহিব আপন মনে
ধন নম মান নয়, শুধু ভালবান।
করেছিন্ন আশ] ।
আবৃত্তির লঙ্গে লঙ্গে নায়কের জডতা কেটে গেল, সে ছোরা ঘোরাতে
ঘোরাতে ইতস্তত: চঞ্চল এাবে পায়চারী করতে লাগল এবং থেকে থেকে চিৎকার
করে বলতে লাগল-_00 09 07 1006 90 0০--1179৮৪ 005 00858610101?
এমন সময় হঠাৎ অদৃশ্য সঙ্গীত-_“মাধবী দ্বিধা কেন ?
গান চলেছে- নায়ক আবার চিৎকার ক'রে বলছে__
17189101801 ঘ6700681)09, 17017)
605 100110% 261] ।
স্610 01) 0 10৩, 61) 010 আও 8180
1168680. 61)10109
[10 (591019003 108691.,০,০
'মীধব দ্বিধা কেন? গান শেষ হয়েছে । হঠাৎ বজ্র বিছ্যৎ এবং ঝড় উঠে
এলো, নায়ক আবৃত্তি করছে “দ্রিই লাফ? দেব লাফ? বলতে বলতে ফেড-
আউট ।*
শুনতে শুনতে ক্যামের।-ম্যানের হাত নিশপিশ করছিল, পরিচালকের মুখ
উজ্জল হয়ে উঠেছিল, অন্ঠান্য সহকারীরা! বিন্মঘ়ে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন ।
পাঠ শেষ হতে না হতে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন, ওয়াপ্ডারফুল !
পরিচালক বললেন, ছু'নগ্বর ক্করিপটাও মন্দ নয়, কিন্তু এক্সাক্টলি এমনি একটি,
২১২ পরিষল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্াজ-গর
ঘৃষ্ঠের অপেক্ষা করছিলাম এতদিন। আমার দিকে চেয়ে বললেন, বর্তমান
কালটা এমন কম্প্েক্স হয়ে পড়েছে যে তোমার এঁ সরল দৃশ্ঠ একেবারে অচল।
পাখী সব করে রব- এখন চলে না। এখন দৃশ্ট যত জটিল কর, মনে হবে যেন
যথেষ্ট জটিল হচ্ছে না। তাই এই তিন নম্বর স্ক্িপটের লেখককেই আমরা
নিচ্ছি। ওপেনিং শীনে য! উনি ঘটিয়েছেন তা চমৎকার-_ আমরা ওর সঙ্গে
দূরে একটি শ্শান দৃশ্ঠ বা এরকম আর কিছু যোগ করে দেব, দেখবেন
সাকৃসেসটা ।
আমার আর বলবার কিছু ছিল না। শুধু সংক্ষেপে বললাম, একখানা ফ্রী
পাস দেবেশ সে সময়।
(১৯৪১)
বাস্তহারা
একটি শহর এই কাহিনীর রব্রস্থল, কিন্তু কোন্ শহর তার পরিচয় নেই, চেনাও
যাবে শা গল্প পড়ে। তছপরি এর নায়ক-নায়িকা কোন্ মমাজের তাও
লেখককে বার বার বলে দিতে হয়েছে, চেনা ঘাৰে না ভয়ে । সেজন্য পাঠকের
মনে হতে পারে কাহিনীটি আমি সিনেমার জন্ত রচনা করেছি, কিন্তু আমার
নিজের তা উদ্দেশ্ত নয়। তবে আমার সন্দেহ নেই যে অনেক সিনেমাকার এটি
পড়ে প্রলুন্ধ হতে পারেন। এ গল্পের এইটুকুই মাত্র ভূমিকা। আঙল
গল্পটি এই :
মস্ত বড় বাড়ি। সে এক বিরাট ব্যাপার। ধারণা করা শক্ত । আগাগোড়া
মার্বেলের কাক্জ। কিন্তু এ বাড়ির সব' চেয়ে আবর্ষণীয় এর সিঁড়ি । অতি
প্রশন্ত, চারখানা ফোর-সীটার পাশাপাশি চলতে পারে অবশ যদি সে রকম
ব্যবস্থা করাধাম্ব। মিঁড়ি মূল্যবান কার্পেটে মোড়া । দোতলায় উঠতে সিঁড়ির
মাঝখানে বিশ্রামের জায়গা । সেখান থেকে ডান ধারে ৰেকে আটটি মাত্র ধাপ
পার হলেই দোতলা । নিচে, সিভি ঘেখানে শুরু হল, সেখানটা হচ্ছে
অভ্যাগতদের অপেক্ষা করবার ভ্রামগা । বছ আসন চক্রকারে সাজানো, মাঝখানে
বড় গোল টেবিল। দূরে দূরে আরও সব বিচিত্র আসবাবপত্রঃঠ এক কোণে
প্রকাণ্ড এক পিয়ানো গ্র্যাণ্ড আপরাইট।
এত বড় বাড়ি, এত পরিপাটি, কিন্তু মাগ্নষ মাত্র একটি_-ত্িশ বছনের একটি
মাত্র যুবক, নাম রাছেন্্কুমার । গায়ে সর্বদা ড্রেমিং গাউন ।
রাজেন্দ্র স্বভাবতই বেকার । কাক্জ পায়নি বলে নয়, কাঙ্গ তার দরকার
নেই। কিষেলেচায় তাসেজানে না, অথচ কিছু ষেচায় এ বিষয়ে সন্দেহ
নেই। কখনে। একখানা বই খুলে বসে (দশটি আলমারি বইতে বোঝাই ),
কখনো! আয়নার সামনে (মাহুয-সমান কত যে আয়না ফেখানে-সেখানে ) চুল
ব্রাশ করে, কখনো ছবি আকতে বসে, কিন্ত কোনোটাতেই তার মন বসে না।
চেক-বই পকেটে নিঘ্ে ঘোরে, ঘখন-তখন চেক লেখে, সই করে, কিন্ত তখনই
সেটা ছিড়ে ফেলে। কাকে দেবে চেক? বই লামনে নিয়ে গান গান্ব, আয়নার
সামনে দাড়ি কামাতে-কামাতে নাচে পিয়ানো বাঞ্জাতে-বাজাতে সিগারেট খায় ।
কখনে! ডাকে ভঙজাকে। ভঙ্গা পরিচারুক। বুড়ো মানুষ, ফতুয়া গায়ে, খাটো
ধুতি পরা, কীধে গামছা, সর্বদা একটা গাঞ্জরিয়ান গার্ধিঘ়ান ভাব।
২১৪ পরিমল গোত্বামীর শ্রেঠ ব্যঙ্গ-গল্প
আর একটি দৃষ্ঠ 2 রাজ্েন্দ্র-ভবন থেকে কিছু দূরে একটি দোকানে নতুন
সাইনবোর্ড টাঙানো হচ্ছে__তাতে ইংরেক্ীতে লেখা “ওয়াইনস আযাগু ফুড ।*
পথচানী কেউ কেউ সেদিকে চেয়ে দেখছে, কিন্তু এ জন্য কারো কোনো ভাবনা
নেই মনে হচ্ছে। কিন্ত দোকানের ভিতরে এক কক্ষে দোকানের ইছদি মালিক
জুডা| সম্পূর্ণ ভাবনাশৃন্ত নয়। এ পাড়ায় মদ খাবার লোক আছে কিনা সে
জানে না, মাত্র সহজাত সংস্কার ও সাম্প্রতিক কিছু অভিজ্ঞতা তার ভরপা।
বাঁপ-মা-হারা এলজা জুডীর সহকারিণী। জুডার বড ভাইয়ের মেয়ে। সে
বলছে, "এখানে দোকান খেলা এক বিরাট গ্যাম্লিং হস, হয় তো দু'দিনেই বন্ধ
ক'রে পালাতে হবে।”
জুডা বলছে, “এ বুডোর মন কিন্তু তা বলে না। আমার গণৎকারি যদি ঠিক
হয় তা হলে দেখবি দোকান ভাল ভাঁবেই চলবে |”
মুখে বলছে বটে কিন্তু তবু জুডার মনে কিছু সন্দেহ আছে, পে খুব নিশ্চিত
নয় । তবে পরীক্ষা করতে বাধা কি, এটাই তার মনের ভাব। এখন এলিজা
যদি একটু উৎসাহ দেয় তবেই বৃদ্ধ জুডাঁর মনে ভরসা জাগে । এলিজ! উৎসাহ
দেবেকি না পে কথা এখন থাক। এখন আমরা আবার ফিরে যাই
রাজেন্দ্রভবনে ।
দুদিন পাব হয়ে গেছে এর মধ্যে । যথারীতি ড্রেসিং গাউন সঙ্জিত রাজেঞ
দোতলার ঘর থেকে বেবিয়ে পিঁডি বেয়ে নেয়ে এলো! মীঝপথে, সেখান থেকে
পি'ডির দ্বিতীয় পর্যায় । মনে ঘখন একটু স্ফৃতি উদয় হয় তখন দে আর এই
দ্বিতীষ্ম পর্যাঘ়ে সিডির ধাপে পা দেয় না, ঝকঝকে পালিশ রেলিং-এর উপর
ঘোড়ার মতে! চেপে সড়াৎ করে নিচে নেমে আসে । আন অকারণ একটা
আনন্দে নেমে আসছিপ্প সেইভাবে-_কিন্ত নিচে পৌছেই এমন এক জর্টিল
পরিস্থিতির সম্মুখীন হল যে লজ্জায়, সন্কোচে, বিন্ময়ে এবং সম্ভবত কিছু পরিমাণ
ভয়ে, একেবানে কেঁচোর মত হয়ে গেল। একটি ভদ্র যুবক সিডির বেলিংএ ন্লিপ
ক'রে একটি ছোট বালকের মতো! নিচে নেমে আসছে এ দৃশ্ঠ আর যাকেই হোক
একজন অপরিচিত যুবতীকে দেখাতে হবে তা দে কল্পনাই করতে পারে নি।
তার মুখখানা হঠাৎ লজ্জায় বোকার মতো! দেখাতে লাগল। কিন্ত এ কোন্
বাজকন্তার আবির্ভীব ঘটল তার সম্মুখে? সবুজ রঙের পিক্ষেব শাড়ীর পর্ণগুটে
শিশিরভেক্গা লাবণা নিয়ে এ কোন্ বসরার গোলাপ ফুটে উঠল তার আঙিনায়?
বাততহায়া ২১৫.
রাজকন্যার মুখে মুছ হালি। মধুর ভঙ্গীতে মাথা! হেলিয়ে নমস্কার জানিয়ে
বলল, “আমি বাস্তহারা, আমার নাম হানা, হাসন হানা |”
রাজেন্দ্র ঢোক গিলে বলল, “আপনি বা-বা-স্ত-_”
হানা হেসে বলল, “বিশ্বাস হয় না বুঝি? অবশ্ঠ আপনার দোষ নেই, সবাই
বাস্বহারার মাত্র একটি চেহারাই জানে, অর্থাৎ বাইরের দিক দিয়ে ষে সর্বহারা ।
কিন্ত সে কথা যাক, কেননা হঠাৎ এখন সব বুঝিয়ে বল! শক্ত, হয়তে! আপনি
এখন কাজে বেরিয়ে যাচ্ছেন ।”
রাজেন্দ্র এতক্ষণে কিছু প্রকৃতিস্থ হয়েছে, সে সে-কথানর ঘোর প্রতিবাদ
জানিয়ে বলল, “না আপনি বস্থন | বাত্বহারা কথাটার যে ছু'মুখো! অর্থ থাকতে
পাবে তা আমি আগে ভাবিনি |”
রাজেন্দ্র এই অভিজ্ঞতার পথে হানা সহজেই তার অন্তরে প্রবেশ কারে
গেল"। তার মনের অন্ধকার কক্ষে কক্ষে হানা বেন আলো! জালাতে লাগল তার
মাজিত বুদ্ধিদীপ্ত কথার ঝলকে ৷ রাজেন্দ্র ঘত বিশ্মিত হতে লাগল, তত তার
চেহারা ক্রমে বোকার মতো! দেখীতে লাগল । আলাপ শেষে বাজেন্র বুধতে
পারল মনের ভিতরেও একটা বাস্ব 'আছে এবং সেই বাপ্ত থেকে চাত হলেও
বাস্তহারা হওয়া যায়। এই সংজ্ঞ! অ্সাহেই ভানা বাস্তৃহারা, এবং মনের দিক
দিয়ে কোখায়ও কোন্দো আশ্রয় না থাকাতে সেও বান্তহারা। বাজেন্দ খুব খুশি
হয়ে পকেট থেকে চেক-ব্ট নিয়ে লিখতে শুরু করল-_-বলল, "আপাতত কত
পেলে আপনি খুশি হবেন ?”
হানা বলল, *টাকা চাই কে বলেছে? টাকা চাই না, মান্সষ চাই। টাকা
দেওয়ার লৌক যথে& আছে । আমি এসেছি মাজ্ষ খুজতে । সংসারে সাধারণ
মানুষের মধ্যে বাস্তহারা নামক এক বিরাট সম্প্রদায় আছে, তাদের তো! টাকা
দিয়ে কিছু করা যায় না। ধরুন আপনার তো ঘগেষ্ট টীকা আছে, কিন্তু তবু
আপনি বাপ্তহারা। তাই বলছিলাম আনন আমর] এমন একটা প্র্যান করি
ষাতে সত্যই এদের জন্য কিছু করা যায়। লম্ষ্রীটি, আমার কথাটা ভাবতে
থাকুন, আমি আবার কাল আসব। কেমন?”
হানা বিদায় নিয়ে গেছে কখন রাজেন্দ্রের খেয়াল নেই। সমস্ত আবহাওক্া
ঘেন একটা মধুর মান্কতায় ভরে উঠেছে। রাজেন্দ্র স্বপ্ন দেখছে : তার মন
দেহ থেকে মুক্ত হয়ে গেছে, সে তার দিকেই চেয়ে আছে। মনের মাথায় বোঝা,
পিঠে বোঝা, ঘরছাড়া আশ্রয় প্রার্থীর মতো! লে প্রাস্তর-পথ পার হয়ে চলেছে।
আশ্রয় চাই, কিন্ত কে দেবে?
২১৬ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙগ-গল্প
ভজ্গা দূর থেকে এতক্ষণ সব লক্ষ্য করছিল, এবারে ধীরে-ধীরে কাছে এগিয়ে
এসে জিজ্ঞানা করল, "বাস্তহারা কে খোকাঁবাবু? কথাটা কানে এলে!”
রাজেন্জ চমকিত হল ভজার গলা শুনে । বলল, “আম রে, আমি ।”
“তিন-পুরুষের বাস্ত থাকতে বাস্বহারা? ও মেয়ে তোমার ভিটেয় ঘুঘু
চরাবে বলে দিচ্ছি। সাবধান থেকো । আর কখনে! ওকে এখানে ঢুকতে
দেব না।”
রাজেন্দ্র বলল, “না রে, নাঁ_ভয় নেই । আম বাস্বহাবা, হান! বান্তহাবা।
তুই বাস্বহারা__ছুনিয়াপ্স ঘে ঘেখানে আছে সবাই বাস্তহারা! আঙ্গ কি আনন্দ,
কি যে ঘটে গেল রে ভা, তুই নিতান্তই ভা, তাই বুঝতে পারছিস না,
বুঝতে চেষ্টাও করিল না।”__বলতে বলতে রাজেন্দ্র ছুটে মিঁড়ি বেঘ্ে উপরে
উঠে গেল এবং রেলিং-এর উপর দিয়ে সড়াৎ করে নিচে নেমে এসে পাগলের
মতো পিম্ানো৷ বাজাতে লাগল ।
পরদিন আবার ওদের দেখা হল। এখন ওরা কথা বলার চেক্ে গান
গাওয়াই বেশি পছন্দ করে। যখন-তখন গায় । ফুলগাছের ভাল ধরে ধরে গান
গায়। সিঁড়ি ও আসবাবপত্রের আভালে-আড়ালে লুকোচুরি খেলার ভঙ্গিতে
গান গায়। তার পর যখন হান বিদায় নেয় তখন সিঁড়ির রেলিং বেছে
ঘথারীতি নিচে নামতে থাকে ।
দিন সাতেকের মধ্যে বাজেন্দের জীবনে এবং মনোজ্রগতে কি ষে বিপর্ধয়
ঘটে গেল! হানা টীকা চায় না (যদিও এখন মাঝেমাঝে নেয়), চেক
লিখতে গেলেই থামিয়ে দেয় (অর্বদা ক্যাশ নেয় )_ হালা মাহুষ চায় । রাজেজ্রই
কি মেই মান্য? আগে ছিল না, এখন অবশ্যই হয়েছে । তার বাস্তহার!
সত্তাটি আবিষ্কার হবার সঙ্গে সঙ্গেই মে মান্য হয়েছে।
রাজেন্দ্র ঘথাসম্ভব শক্তি সংগ্রহ করতে লাগল, আত্মলমর্পণের প্রস্তাব সে
আজই করবে। একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেল, কিন্তু উপায় কি? তা ভিন্ন
সময়ের কৃত্িম বিস্তার একটা সংস্কার মাত্র, অন্তরের রাজো এক মুহূর্তে এক
ব্ছর পার হওয়া যায়, সে কথা কি মিথ্যা? কোনে অপরিচিত ছেলে ও
মেয়ের দেখা হল । ছেলে বলল, 'তোমাকে আমার ভাল লাগছে” মেয়ে বলল,
'আমরও লাগছে'__ছেলে ততক্ষণাৎ বলল, 'তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই”,
মেয়ে বলল, চল ।” এতে অন্তায় কিছু নেই। তবু এক জনের পছন্দ হলে অন্য
জন বদি রাজি না হম, সংসারে মারাত্মক বিষ, দরড়ি-কলসী অথবা চলত্ত গাড়ি
চাকা যথেষ্ট আছে। অতএব আজই সন্ধ্যায়।
বাস্তছার। ২১৭
সন্ধ্যায় যথারীতি ড্রেসিং গাউনে সঙ্জিত রাজেন্দ্র হানার অপেক্ষান্ন রেলিং
বেয়ে নিচে নেমে এলো।। প্রতিদিন সে ঘড়ি ধরে ছটায় আমে । বাজেন্্র
ঠিক ছটার সময় নিচে নেমেছে, কিন্তু হানা কোথায়?
ভঙজা একখানা চিঠি এনে দিল তার হাতে । সেখাম ছি'ড়ে ঘা পড়ল
তাতে তৎক্ষণাৎ তার হৃদ্যস্ত্র বন্ধ হয়ে যাওম্া উচিত ছিল, কিন্তু হল না, কারণ
কাহিনী এখানে শেষ হতে পারে না। চিঠিতে লেখা ছিল, "ক্ষমা চাই;
কারণ, অসস্ভব। আমি চিরবিদায় নিচ্ছি । প্রিয়তম, আবার ক্ষমা চাই ।*
রাজেন্দ্রকে উন্মাদ করার পক্ষে ঠিক এতখানি নিষ্বতার কোনো দরকার
ছিল না। তবে মাত্রা কম হলেও প্রতিক্রিয়াটা একই হত সে কথা বল।
বান্ল্য। মাত্রীধিক্টা আমাদের চোখেই বেশি লাগছে।
রাজেন্দ্র চিঠি পড়ে ক্ষণকাল শ্রম্তিতবৎ প্লাড়িয়ে রইল, তার হাত-প।
কাঁথতে লাগল, তার পর টনতে-টলতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পেল। হ্ৃৎপিগুট!
ঘেন ছিড়ে গেছে। এমনি অবস্থায় পথে পথে পাগলের মতো ঘুরল কিছুক্ষণ।
তার পর হঠাৎ তার চোখে পড়ল মদে দোকানের সাইনবোর্ড । মে এর
মধ্যে যেন একটা উক্ষিত পেয়ে গেল, যেন তার জন্যই এ দৌকান এখানে
অপেক্ষা করছে।
রাজেন্্রকে যখন কয়েক জন লোক ধরাধরি ক'রে এনে বাড়িতে পৌছে
দিল তখন রাত বারোটা । ভজা ভয় পেয়ে গেল। রাজেজ্র জ্ঞানহারা
মাতাল! এইবার ভঙ্জার জ্ঞান হানাবার পাল1।
পরদিন সন্ধ্যার তার জ্ঞান হল বনু চেষ্টার পর। সে বুঝতে পারল তার
নিজের ঘরেই শুয়ে আছে সে। সব ঘেন স্বপ্র, সৰ মক্ীচিকা। মদের তো
আশ্চয শক্তি । সব ভুলিয়ে দেয়! তবে এসো! স্থরা দেবী, তুমিই আমাকে
আশ্রয় দাও ।
মদের দোকানে এই ইঙ্গিত পাঠক গোড়াতেই পেয়েছেন, রাজেন্দ পেল
একটু দেরিতে । এক মরীচিকা-মকু পার হয়ে সে মার এক মরীচিকা-মরূতে
প্রবেশ করল। এখন সে সর্বদা মদ খাম, নাচে, গায়, পিয়ানো বাঙ্গাম্ব_
যেমন সে আগে করত, কিন্ত তবু কত তফাৎ! এখন সে মৃত্যুপথঘাত্রী ।
ডজন-ডজন বোতল আসে তার বাড়িতে । বন্ধুরা যার! খাব-খব করছিল,
এখন নিয়মিত এসে খায়, যারা গোপনে খেত, কেউ জানত না, তার! সবাই
এনে জোটে রাজেন্দ্র কাছে। তবু তারা কত্ত তফাৎ! তারা কেউ ব্যর্থ
প্রেমিক নয়। রাজেন্দ্র কখনো দোকানে ঢোকে, বন্ধুরাও যায় তার সঙ্গে, কিন্ধ
২১৮ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্ল-গল্প
বন্ধুরা অকম্পিত পায়ে যথাসময়ে সবে পড়ে, ব্বাজেজ্জকে চ্যাদ্দোলা় ঘরে ফিরতে
হয় । বন্ধুত্থের অকৃত্রিম দলিল স্বাক্ষরিত হয় ম্থরাদেবীর সঙ্গে । দোকানের
চেহারা ফিরে যায় ক'দিনের মধ্যে ।
সেদিন সন্ধায় দোকানেই বসেছে ঝাজেন্দ্র বন্ধুদের সঙ্গে । বন্ধুরা একে
একে উঠে গেছে, এখন সে একা । তার এখনও অনেক বাকী । সম্পূর্ণ পড়ে
না যাওয়া পর্যস্ত সে মদ খাবে। মাঝে মাঝে জড়িত স্বরে 'হানা হানা? বলে
দীর্ঘশ্বাস ফেলছে । হঠাৎ তার কানে এলো তার পাশের কেবিনে তারই
দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনি । কে যেন পেখানেও “হানা_হানা কবে কাদছে।
শেষে চার দিকের সকল কেবিন থেকে এ একই কান্না শোনা যেতে লাগল ।
নিজ নিক্গ কক্ষ থেকে সবাই বেরিম্বে এলে! টলতে টলতে | সমবেদনায্স বিগলিত
হয়ে সবাই পরস্পর গলাগলি ক'বে বসে পড়ল মেঝের উপর, এবং হাঁনাকে ওরা
প্রত্যেকেই কেন চায়, কেউ কাউকে জিজ্ঞাসা ন! ক'রে (করবার ক্ষমতা ছিল শা)
সবাই সমস্বারে কাদতে লাগল। তার পর সবাই একই দুঃখে ছুঃহী, এটা অন্তর
থেকে বুঝতে পেরে সবাই একসঙ্গে মদ খেতে লাগল।
প্রতিদিনের পৌনঃপুনিক এই ইতিহান রাজেন্দের একই, এর আর বর্ণনা
ক'রে লাভ নেই, কিন্তু এর পর আর একটি দৃশ্য এখানে উন্মোচন করা আবশ্টাক।
মদের দৌকানেব মালিক হুডার কক্ষ। রাত একটা । জুডা ও এলিঙ্জার
মধ্যে আলাপ চলছে ।
জুভা। “কেমন, বলেছিলাম না আমার মন্ত্র খাটবে? তুই আমাকে বোকা
ভেবেছিপি, বলেছিলি এখানে দোকান চলবে না। তবে এতে তোর বাহাছুরিও
কম নয়। যে দশ জনকে এনেছিস, তারা ও তাদের বন্ধু-বান্ধব মিলিয়ে দিন
প্রায় হ্ু'হাজর টাক। বিক্রি হচ্ছে । তোর বাংলা শেখ! সার্থক, অভিনয় সার্থক |”
এলিঙ্ব।। “কিন্ত কি ক'রে বুঝেছিলে যে এই সব বাঁডীলী যুবক প্রেমে
ব্যর্থ হলেই মদ খাবে ?”
জুডা। “আমি অনেক বাংলা সিনেমা! দেখেছি কি না, ভাল ভাল সব
শিক্ষিত ছেলেদের যর্দি একবার প্রেমে ব্যর্য করানো যায় তা হলে মদ তারা
খাবেই ।”
এলিজা। “তা এক রকম সত্যিই । তৃমি আরও খুশি হবে দেখে__
আমি তোমার দোকানের মূলধন অনেকখানি সংগ্রহ ক'রে ফেলেছি এর
মখ্যে।”
বাস্তহার। ২১৯
এলিজা দশ হাজার টাকার নোট জুভার হাতে তুলে দিল। জুডা আনন্দে
প্রায় লাফিয়ে উঠল। ব্লল, “তোর হানা নামটিও বেশ সার্থক হন্বেছে বলতে
হবে।”
এলিজা বলল, “কেন? বহু জায়গায় হানা দিয়েছি বলে ?”
জুডা হাসতে হানতে বলল, “তা এক রকম বটে। এইবার তুই সিনেমায়
নামতে পারিস, আর আমার আপত্তি নেই। তোর বোম্বাই যাত্রা আজই
ভোরের প্রেনে--টিকিট কেনা হয়ে গেছে ।"
এব পর আরও একট দৃশ্ বাকী আছে। এ দৃশ্টি রাজেন্দ্রভবনে।
রাঁঞেন্দের মৃতদেহের পাশে ডক্টর ভার্টিরেট এক্স-রে সরঞ্জাম নিয়ে বলে আছেন।
তিনি কিজিও-মাইোনছ্দি এবং সাইকে।-ফিঞ্জি ওলজি বিষয়ে গবেষণা! চালাচ্ছেন
বহু াল। বর্তমানে তিনি বাঙালী যুবকদের অকালমৃত্যুর কথা শুনলেই গেখানে
এপে সার পরীক্ষা চালান । সঙ্গে বহনযোগ্য এক্স-রে লেট থাকে । এক্স-রে ফোটে!
তোলা হয়ে গেছে, এবারে তিনি অদৃশ্ঠট আলোর ছবি স্কীনে প্রতিফলিত ক'রে
উপস্থিত ডাক্তারদের সামনে রাজনের মেরুদণ্ডের ছবি দেখাচ্ছেন। বলছুন,
“এই দেখুন এন মেরুদণ্ড নেই, সম্পূর্ণ গলে গেছে । অপন্তব মনে হতে পারে, কিন্তু
সতা। কারণ জন্ম থেকেই এর মেরণদগড শক্ত ছিল না, হাড়ের উপাদানগুলো
জেপির মতো নরম হিল, তার উপন্েে লামান্ত শক্ত একটি 'আবরণ ছিপ মাত্র।
কিছুদিন ধরে এক ক্গাতী্ম বাঙালী ছেলেকে লক্ষ্য করছি, তাদের মেকদণ্ড
্ন্মাবধি ঠিক এমনি নরম ॥ বাংলা সিনেমার নায়ক হবার ঝোঁক তাদের অত্যপ্ত
বেশি। পিনেমার নায়করূপে ঘদি লে প্রেমে ব্যর্থ হয় এবং মদ খাম (সবাই
বলে উচলেন “যদি” নেই, খাবেই ) তা হলে আর তাকে বীচানো যাবে শা,
কেননা বেশি মাত্রার আলকহলে এই জাতীয় মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে গলে যেতে
থাকে, ঠিক যেমন উগ্র আযালিডে শক্ত ধাতু গলতে থাকে । অবশ্ট এ ছেলেটি
সিনেমায় যায় নি, তবে বাবার সম্ভাবনা ছিল ঘোল আনা, দেখবেন অন্তত এর
জীবনকাহিনীটি পিনেষার হাত থেকে বীচানো শক হবে)
কথাটি হিথ্যা বলেননি তিনি । কারণ ডক্টর ভার্টিত্রেট ডাক্তারদের সঙ্গে
বে্ধিয়ে আঁতেই দেখেন সিঁড়ির গৌড়ায় ভঙ্গন খানেক লিনেসা ডাইরেক্টর
রজেশ্রের শীবন-কাহিনীর কপিরাইট কিনবেন বলে এসে জড়ো হয়েছেন
( উ১৪ছ%ও )
মাকফিন লিনেমা-সার
নিচের গল্পটি পড়িয়াই পাঠকের মনে হইবে কোনো ইংরেজি বই হইতে চুরি ।
কিন্ত কোন্ বই হইতে, তাহা বলিতে পারিবেন না॥। কারণ, কোনো পাঠকই
ইংরেজি সকল বই পড়েন নাই। আবার যাহারা ইংরেজি বই মোটেই পড়েন
না, কেবল সিনেমা দেখেন তাহারা মনে করিবেন, গল্পটি কোনো সিনেমাঁছকি
হইতে চুরি , কিন্তু কোন্ সিনেমা-ছবি তাহা বলিতে পারিবেন না।
আমি নিজে কিছুই বলিতে চাহি না, অথচ পাঠকদ্িগকে ঠকাইবার
প্রবৃতিও নাই। চুরি করিয়াছি বটে, কিন্তু কোনো একখানা! বই বা ছবি
হইতে নহে। বই হইতে বলিলে মিথ্যা কথা বল! হইবে, আমি সিনেমা-ছবি
হইতেই গল্পটি সংগ্রহ করিয়াছি। কিন্ত কোন্ কোন্ ছবি হইতে তাহা আমার
স্মরণ নাই।
পাঠকেরা অনেকেই অস্কশাস্থ্ে এইচ সী. এফ. করিয়াছেন, এবং আশা করি
কেহ কেহ তাহা অগ্যাবধি মনেও রাখিয়াছেন। আমার এই গল্পটিও যাবতীয়
সিনেমা-গল্পের এইচ, শী, এফ. | ইহাতে প্রায় সবই আছে। সকল সিনেমা-
ছবিতেই যে একটি কমন ফ্যাক্টর থাকে তাহা ইহাতে আছে, কেবল
গল্পটি নাই। কিন্তু গল্প দেখিতে তে! আমরা সিনেমায় যাই না। দেখিতে
ঘাই ঘাত এবং প্রতিথাত। সিনেমায় য্দি বিবাহ আগে হয় তাহা হইলে
দে বিবাহ্ স্থথের হয় না। আবার যদি বিবাহ পরে হয় তাহা হইলে ছবিখানি
মিলনাস্ত হইয়া পড়ে, লমঝদার খুশি হম না। বিবাহ মোটেই হয় না অথচ
চিরদিনের জন্য বিচ্ছেদ হইয়া গেল, এই ধরণের গল্পে দর্শকের চোখে জল
আসে। দেড় ঘণ্টার ছবির মধ্যে আধ ঘণ্টা যদি নায়ক-লাগ্নিকার চম্বনেই
কাটে তাহা হইলে তো কথাই নাই। কেননা চুম্বন কোনো অবস্থাতেই মিলনের
ইঙ্গিত নহে, উহ! একটি রহহ্যময় ঘটনা । উহা! যে কিসের ইঙ্গিত তাহা বুঝা
ধায় না। নায়কের আকর্ষণে নায়িক। কাছে আমে, উভয়ে উভয়ের জন্ত
উন্মাদ হয়, নায়িকা ঘথারীতি ঘাড় উচু করিয়া মুখ বাড়াইয়৷ দেয়, কিন্তু নায়ক
ষে মুহূর্তে নায়িকাকে চুম্বন করে সেই মুহূর্তে নায়িকার যাবতীয় শ্বতিমূলক
দুঃখ বু.কর ভিতর উৎলিয়া উঠে; তখন হয় গে ফুপাইয়া কাঁদিতে থাকে, ন|
হয় বলে, “নুণছ 0975 ০৪, মাদক তখন নিবোধের মত ফ্যাল ফ্যাল
করিয়া তাহার দিকে তাকায়, সাধ্াসাধন। করে, কিন্তু নায়িকা ততক্ষণে পাখর
মাফিন সিনেমা-সার ২২১
হইয়া গিদাছে, কোনো সাড়া দেয় না। নায়ক হতাশ হুইঘ! চলিয়া যায় ।
কিন্ত চলিয়া যাইবামাত্র নাগ্িকার স্বপ্নভঙ্গ হয়। নায়ককে পাইবার জন্ত
তখন সে অস্থির হইয়া ওঠে, এবং তাহার পশ্চাঙ্ধাবন করে। কিন্ত চুশ্ধনের
পূর্বেই যদি দৈবক্রষে নায়ক-নায়িকার বিচ্ছেদ হইয়া যায় তাহা হইলে নাদ্বককে
আমরা গভর্ণমেণ্টের নিকট অপরাধী হিসাবে কিংবা শত্রহান্তে বন্দী অবস্থায়
দেখি। গভর্ণমেন্ট যখন ভূল বুঝিতে পারে তখনই গল্প শেষ হইয়া যায়।
শেষ দৃশ্টের চুম্বন গভর্ণমেণ্টের উপর নির্ভর কৰে।
হু্ট লোকের শক্রতাও গল্পকে বিশেষ পুষ্ট করে। নায়ক শত্রুর হস্তে
পড়িয়া! প্রাণ দিতে প্রস্তুত হইয়াছে, ঠিক মেই মূহূর্তে কতকগুলি লোক ঘোড়া
ছটাইয়। আসিয়া নায়ককে উদ্ধার করিয়া লইয়া যায় । কিন্তু এগুলি শুধু বৈচিত্র্য
হসাবেই দেখি, গল্পের মূলে পৌছিতে হইলে এসব অগ্রাহ্য করিতে হইবে ।
নায়ক-নায়িকা উভয়ে যতক্ষণ উভয়কে পাইবার জন্য ব্যাকুল, অর্থৎ৭ আকধণ
যতক্ষণ প্রবল ততক্ষণ প্রকৃতির কোন্ অলজ্ঘ্য শিয়মে উভগ্মের মধ্যে বিকর্ধণ
চলিতে থাকে তাহা বুঝা যায় না। এবং বুঝা যায় না বলিয়াই সিনেমার আকর্ষণ
ক্রমশ বাড়িতেছে। আকর্ষণের একটি বিশেষ কারণ এই যে পিনেমায় দেড়
ঘণ্টার মধ্যে ঘে ঘটনা-পারম্পর্ধ থাকে তাহাকে এবপ অবশ্যভাবী বা 11708510019
করিয়া তোল! হয় যে মানুষের জীবনে পিনেমান্থলভ ঘটনাকেই একমান্র
সত্য বলিয়া বোধ হম্ব। টাইপিন্ট বা পরিচারিকা এই পিনেমীর অনিবাধ
বীতিতে পড়িয়া লক্ষপতির গৃহিণী হইতেছে, পথের ভিখারী বাজ। হইতেছে,
অপরিচিত নায়ক-নামিকা পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবামাত্র গভীর প্রেমে
পড়িয়া পাচ মিনিটের মধ্যে পরস্পরকে আলিঙ্গন করিতেছে, অথবা হতাশ হইয়া
তৎক্ষণাৎ আত্মহত্যা করিতেছে । উহাই তো সতাকার জীবন।
জীবনে ঘে ঘটনা আজ আরম্ভ হইল তাহার পরিণতি কত দিনে দেখা যাইবে
তাহা কেহ জানে না। আবার ষে পরিণতি দেখা যাইতেছে তাহার আরস্ভ :
কবে হইয়াছিল তাহা স্মরণ করিনা রাখা দায়। সত্যকার জীবনে জীবনকে
জানিবার এই অন্থবিধা সিনেমা দূর করিয়াছে । জন্ধ্যা ছয়টায় যাহা আর্স্ত
হইল রাত্রি আটটায় তাহার পন্রিণতি অবশ্ঠই দেখা! ধাইবে ; এতটা নির্ভরতা
আমরা প্রিয়তমের নিকট হইতেও আশা করি ন|।
প্রথম জীবনে সিনেমার স্থে সুখী হইয়াছি এবং সিনেমার ছুঃখে বহু অশ্রপাত
করিয়াছি। এখনও অভ্যাপব্শত সিলেমায় ঘাই বটে, কিন্তু তাহা হৃখ বা দুখ
অনুভব কদ্িবার জন্য নহে, সন্ধ্যাটা কাটাইবার জন্য | জীবন-সন্ধ্যা যেমন
২২২ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ-গল্প
মানুষের মনে একট। নৈরাশ্ট আনিয়া দেয়, দিন-শেষের সগ্ধ্যাও তেয়নি মনের
উপব নিরাশার ছায়াপাত করে। ইহাই ত ছাস্বাচিত্র দেখিবার উপযুক্ত সমন্ব
সমস্ত দিনের হিসাব মিলিয় গেলে সময্বের উপর আর কোনো মায়! থাকে না ।
বুদ্ধের! পশ্চাৎ দিকে চাহিলেই সমন্ত জীবনটা একসঙ্গে দেখিতে পায়। কিন্তু
ভ্বীবনে যদি কিছু অদৃশ্য অংশ না থাকে তাহা হইলে আশা করিবার, বিশ্বাস
করিবার কিছুই থাকে না, অর্থাৎ জীবনের রহশ্তটাই চলিয়া ঘায়। থাকে শুধু
হরিনাম । সিনেমা দিন-শেষের হৰিনাম ।
অর্থাৎ ইহাতে স্থথও নাই ছুখেও নাই, যদি কিছু থাকে তবে তাহা বিরক্তি ।
কিন্তু বিরক্তি হইতেই বিজ্ঞানের উৎপত্তি । মনের রহমত যাহাদের আর ভাল
লাগে না, তাহার! সাইকো-আ্যানালিসিস করে, বিশ্ব-পৃথিবীকে যাহারা
ভালবাদিতে পারিতেছে না তাহারাই ইহাকে ধাধা আখ্যা দিয়া ধাধার উত্তর
দিবার কাজে লাগিয়াছে। ইহারাই বৈজ্ঞানিক। আমিও এখন সিনেমার
টেকনিক বিশ্লেষণ করিতেছি । এবং ইহার উপর নির্ভর করিম্বাই নিম্নলিখিত
গল্পটি প্রস্তত করিয়াছ। গ্ল্লটি 71908 10) [77018%, কিন্ত ইহার অংশগুলি
হলিউড হইতে সংগৃহীত। আমি %৪৪৪2019 করিযাছি। একই গল্প বিভিন্ন
পোষাকে আঙ্ মাত বংসর ধরিয়! দেখিতেছি । আমার গল্পে এই সাত বৎসবের
দেখা গল্পসমূহের সার প্রত্তত করিয়াছি মাত্ব। ব্ল| বাহুল্য, গল্প সম্পর্কে ইহা
নিতাস্তই অদার |
গল্প
বেপিংহাম গ্রামের লে'কদের মধ্যে অস্বাভাবিক চঞ্চলতা! দেখ যাইতেছে ।
গ্রামের ঘে কয়েকটি যুবক যুদ্ধে গিয়াছিল, তাহার্দের অধিকাংশেরই মৃত্যু
হইয়াছে, মাত্র একজন কি দুইজন এখনও জীবিত আছে।
বেলিংহাম ইংলগ্ডের উত্তরে নর্দাম্বারল্যাণ্ড জেলায় অবস্থিত একটি গ্রাম ॥
ত্রয়োদশ শতাবীতে প্রস্তত একটি গির্জা আজিও এই গ্রামে বিরাজ করিতেছে।
এই গির্জাঘরে গ্রামের বৃদ্ধের জুটিয়! যাহাতে জীবিতেরা জীবিত থাকে,
মৃতের! লদগতিলাভ করে এবং শক্রপক্ষ হারিয়! যায় সেই মর্নে প্রত্যহ প্রার্থনা
করে।
এই গ্রাম হইতে হ্যারি নামক তেইশ বংসরের একটি দিপু যুবক
১৯১৪ সালে যুদ্ধে গিয়াছে, আঙ্গ তাহার বয়স প্রায় সাতাশ বৎসর হইয়াছে,
মাফিন সিনেদা-লার ২২৩
আজিও লে ফেরে নাই, এখনও তাহাকে জার্মালির বিরুদ্ধে বৃদ্ধ করিতে
হইতেছে।
বেলিংহামের নামকরা কয়লার ব্যবসায়ী উইলিয়াম কেম্প তাহার ছুই
পুত্রকে মহাযৃদ্ধে হারাইয়] তাহার একমাত্ কন্তা লুসিকে লইয়া! শোক গ্রক্ষাশ
রুরিতেছেন। এই লুষির সঙ্গে হারির কিঞ্চিৎ বন্ধুত্ব জমিয়া উঠ্ঠিতেছিল ,
কিন্ত লুসির পিতা দরিভ্্র হারিকে আমল দেন লাই, এবং কন্তাকে তাহার
সহিত মিশিতে নিষেধ করিয়! দিয়াছিলেন। কিন্তু নদীর বেগ কেহ বাধ দিম্বা
ঠেকাইতে পারে না। বাধ! পাইলে নদী সেথানে প্রথমত ঘোর আবর্ত স্থতি
করে, পরে হয় সে বাধা ভাডিম়া ফেলে, না হয় অন্ত পথ কাটিয়া চলে। লুসিও
পিতার দিক হইতে বাধা পাইয়া থামিয়া থাকে নাই। সে তাহার তরুণী
হৃদয়ের সমস্ত আবেগ লইয়! নৃতন পথে প্রতিবেশী রবিন্সনের দিকে ছুটিয্াছিল।
কিন্তু রবিন্সনও যুদ্ধে চলিয়া গেল । মহাযুদ্ধের আহ্বান, মহাকালের আহ্বান,
মান্ষের ক্ষমতা তাহার কাছে হার মানিতে বাধ্য ।
এই সময় দেশের মধো একটা নৃতন ভাবের স্রোত বহিতেছিল। জীবন
ও মৃত্যুর মধ্যেকার ব্যবধানবোধ নকলের মন হইতেই ঘুচিতে আরম্ভ করিয়াছে ।
জগৎ অনিত্য, কিছুই স্থির নহে, সমন্ত মায়া, এই সত্যটি শিক্ষিত অশিক্ষিত
সকলের মনকেই আলোডিত করিয়া তৃলিয়াছে। যখন তখন আত্মীয়ন্থজনের
মৃত্যুংবাদ পৌছিতেছে, দলে দলে নৃতন্ লোক যুদ্ধে যাইবা জন্য নাম
লিখাইতেছে, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়া জীবনটাকে ফান্লের মত আকাশে উড়াইয়!
দিতেছে । জীবন ইয়। খেলা ; লক্ষ লক্ষ প্রাণ হাওয়ায় ছড়াইয়! দেওয়ার খেলা।
রবিন্সনের মৃত্যুসংবাদ আসিল। মৃত্যুসংবাদে নৃতনত্ব নাই । একটি
সন্তানের মৃত্যুর জন্য একটি পিতা বা একটি মাতার পৃথক ভাবে কাদিবার
দরকার হম নাই। মুরোপের সকল সন্তানের জন্য সকল পিতামাতা সম গ্রভাবে
কাদিতেছে ।
রবিন্সন মরিল। লুসি৪ তৎক্ষণাৎ হ্যারির স্মৃতিটি নৃতন করিয়া মনের
মধ্যে ঝালাইয়! লইল। হ্যারির পরিত্যক্ত ফোটোথানা লকেটের ভিতর আশ্রয়
পাইয়া আবার তাহার বুকে ছুলিল। যুদ্ধের কঠিন ধাক্কায় ধনীদরিদ্র-বোধ
সকলের মন হইতেই ঘুচিয়া গিয়াছিল। স্থতরাং যুদ্ধশেষে যদি হারি প্রাণ
লইয়া ফিরিয়া আমিতে পাবে তবে লুসির সঙ্গে তাহার মিলন ঘটিতে"্অস্তত
লুসির পিতার দিক হইতে আর কোলো! বাধা থাকিবে না। হারি নিরাপদে
ফিরিয়া আহক, তাহার মন দিবাবাত্র এই প্রার্থনাই করিতেছিল। না আলিলে
২২৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ বাজ-গল্প
কি উপায় হইবে? বহু বর্গষাইলের মধ্যে লুসিকে বিবাহ করিতে পারে একপ
যুবক বেহ জীবিত ছিল না! ।
ইতিমধ্যে আমরা মহাযুদ্ধের শেষ অধ্যায় দেখিতেছি। ফ্লাপ্ডার্স হইতে
জার্মীনগণ হুটিয়া যাইতেছে । হ্যারি প্রকৃত বীরের মত যুদ্ধ করিতেছে।
চারিদিকে সৈম্তগণ কেহ মরিতেছে, কেহ আহত হইতেছে, কেহ আর্তনাদ
করিতেছে, কিন্তু হ্ারি অক্ষতদেহে দৃঢ়চিত্তে দাতে দাত চাপিয়া! মেশীন গান
ছুঁড়িতেছে। চারিদিকে অন্ধকার, বজ্র ন্যায় কামানের গোল। শুনতে ফাটিয়া
মাঝে মাঝে সেই অন্ধকারের বুক আলোকিত করিতেছে । সেই আলোর
্বীপ্তিতে আমর! হারির অমাম্ষিক বীরত্ব উপভোগ করিতেছি । জাম্শানগণ
বিরামহীন মেশীন গানের সম্মুখে টিকিতে পারিল না, এবং এই পন্বাজয়ের ফলে
তাহারা 96. 25670617. ফরাসীদিগকে ফিরাইয়! দিতে বাধ্য হইল।
আমর! গল্পের প্রারভ্ে দেখিয়াছিলাম, লুসি হারির ফোটো আবার লক্ষেটে
স্থাপন করিয়াছে । কিন্তু ইহারই মধ্যে কত কি পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে তাহা
আমরা দেখিবার অবসর পাই নাই। যুরোপ এমন একটি অবস্থায় পৌছিয়াছে
ধন প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে এক একটি যুগাস্তর ঘটিয়৷ যাইতেছে । লুসিকে
আমরা বেলজিয়ামের একটি গ্রামে নার্ম অবস্থায় দেখিতে পাইতেছি। একা
উদ্েগপূণ মনে চতুর্দিকের একটা অস্থিবৃতার মধ্যে প্রতিনিয়ত বাস করার চেয়ে
যুদ্ধক্ষেত্রে আপিয়া নার্পের কাজ কর! ঢের সহঙজজ। লুসি, মনের সহিত এবং
পিতামাতার সহিত অনেক দ্বন্ব করিয়া রিক্রুটিং অফিপারের সহায়তায় শেষ
পর্ধস্ত সেবাধর্মই গ্রহণ করিল। রবিন্সন নাই। দেশে আর কেহই নাই।
লুসি কাহার আশায় থাকিবে? হানি এখনও জীব্ত। হারি দরিত্র কিন্ত
মে শুধু লুসি পিতার কাছে। তবে হারির যুদ্ধধ্যাতি লুনির পিতার কাছেও
পৌছিয়াছিল, এবং তিনিও শেষে হ্ারির প্রশংসা আরম্ভ করিয়াছিলেন। এই
প্রশংসাই লুলির মনে সহন! নৃতন করিয়া আগুন জালাইয়া দিম়্াছে। বিশেষত
যুদ্ধক্ষেত্রে ধনীদবিত্র ভেদ নাই, সকলেরই এক পোশাক, এক কর্তব্য ।
লুসি দত্যিই সিষ্টার হইল। দেখিতে দেখিতে তাহার চেহারার মধ্যে
একটা স্বর্গীয় দীপ্তি ফুটিয়া উঠিল। একান্ত নিষ্ঠার সহিত সে আহত টসনিক-
গণকে সেবা করিতেছে ; সে ষেশ বহুকালের অভ্যস্ত নিগ্নম-শৃঙ্খলে বীধা, কে
বলিবে সে মাত্র পনেবে! দিন হইল নৃতন জীবন গ্রহণ করিয়াছে । বহিরাবরণ
শুভ্র হইলেও লুলির অন্তরে উদ্দীপনার রাক্তমা। এই উদ্দীপনা না থাকিলে
কেহ কোনো প্রেরণা জাভ কনে না। নার্সের কাজ সহজ বৃহ। নিধিকার
মাকিন সিনেমা-সার ২২৫
চিতে আহতের আর্তনাদ সহ করিতে হয়। চারিদিকে বিকৃত এবং বিকলাঙ্গ
মানুষের মধ্যে সর্বদা বান করিতে হম, মনকে কঠিন করিয়া না বাখিলে চলে নাঁ।
লুণি অবসর পাইলেই হ্বারির ফোটোর লকেটখান] খুলিয়া দেখে, আপনার
মনে কি ভাবে, ছবিটাকে চুম্বন করে, একবার লকেট বন্ধ করে কিন্তু আবার
খোলে, আবার চোখের জলে লকেট ভিজিয়া যায়, আবার তখনই চোখ মুছিয়]
রোগীকে ওুষধধ খাওয়াইতে ঘায়।
হারিদের দলের একটি যুদ্ধ শেষ হইয়া তাহারা একটি শহবে বিশ্রাম লাভ
করিতেছে । ফরাসী হোটেল। মর্দ আর স্্ীলোকের মধ্যে সৈম্তগণ বেপরোয়!
ক্ষতি চালাইতেছে। নাচিতেছে, গাহিতেছে, মারামারি করিতেছে। হ্বারি
ঘে মেয়েটির সঙ্গে বসিযা মদ খাইতেছে, মে মেয়েটি অল্প ইংবেজি জানে।
তাহান্ব মুখে একটা লাবণ্য এবং একটা বুদ্ধির গঁজ্জল্য ফুটিযা উঠিয়াছে।
তাহার নাম লী। অদূরে বাজনা বাজজিতেছে। কি একটা স্তুপ বাজিতেই লী
হারির হাত ধরিয়| টানিয়া তুলিল। স্তরের সঙ্গে তাহার নাচিবার ইচ্ছা প্রবল
হইয়া উঠিয়াছে । লী হ্যারিকে লইয়া নাচঠিতে লাগিল।
হারি লীর মুখের দিকে চাহিয়া নাচিতেছে এমন সময় হা তাহাগ
নাচ থামিয়া গেল। সে লীর চোখের দিকে এক দৃষ্টে চাহিয়া গহিল।
লী মে দৃষ্টির প্রভাব সহ করিতে পারিল না। দুইজনে একটা মাদকতায় আচ্ছন্ন
হইযা গেল। দুইজনেই দুইজনের মধ্য যেন একটা! জন্ম ন্তরের সন্দধ। আখ্ঙ্ষার
করিল। যেন উভয়ে বহু দন্ম ধরিয়া উভয়কে চেনে। এই উপলঞ্চির মুহৃতে
বাহিরের ভ্রগণ্চ তাভাদের কাছে লুপ হইয়া গেল। ুইঙ্জনে দৃট আলিঙ্গনপাশে
বদ্ধ হয়! চুম্বনের মধ্যে সমন্ত অতীত ভবিষ্যৎ ডুবাইয়া দিল। সমন চঞ্চল
পারিপা্িকের মধ্যে দুইটি স্তপ্ধ প্রাণী দাড়ায়! রহিয়াছে__পে কি মহিমময় দৃশ্য!
কিন্ত স্বীলোকের মন রহস্যময় । এই মুহূর্তে তাহার কি এক শ্ৃতি জাগিয়া
উঠিল। এত দিন নাচ গান ও আত্মবিক্রয়ের সহস্ব মুহ্গুলি অবলীলাক্রমে
পার হইয়! যাইবার লময় তো এই স্বৃতি তাহার মনে জাগে নাই! এখন কেন
জাগিল? তাহার উত্তর লী দ্রিতে পারে না, কিন্তু তাহার চোখে জল আমিল।
হারি টেবিল হইতে মদের গ্লাসটি আনিয়। তাহার হাতে দিয়া ঝুলিল, লী,
আমাকে ক্ষমা কর, আমি কি অজ্ঞাতদারে তোমাকে আঘাত দিয়াছি? কোনো
অতীত দুঃখ কি তোমার মনে জাগিয়াছে 7 বল; লী, বল--আমি যে আগ
সহ করিতে পারিতেছি না।
১৫
২২৬ পরিমল গোম্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
কিন্ত লী কোনো কথাই বলিল না। টপ টপ করিয়া তাহার অশ্রু মদের
প্লাসে পড়িতে লাগিল। তারপর ভঠাৎ গ্লাসাটি টেবিলের উপর রাখিয়া লী
বাহির হইয়। গেল। হারি কিংকর্তব্যবিমুচ হইমা ক্ষণকাল মেখানে অপেক্ষা!
করিম পরক্ষণেই লীর পশ্চাৎ পশ্চাৎ বাহির হইয়া গেল। বাহিরে আলিয়।
হাঁরি লীকে ধরিয়া! ফেজিল, এবং আবেগভরে বলিল, লী, আমাকে কঠিন শাস্তি
দাঁও, কিন্ধ এরূপ ভাবে কথা না বলিয়া! চলিয়া যাইও না।
পী তথাপি নিরুন্র | হ্যারির সহ্ের পীমা ভাঙিল। সে উত্তেজিত হইয়া
উঠ্ঠিল। এমন সময় দূরে সৈন্যদের স্থানত্যাগেব বাছ্য বাজিঘা উঠিল। হ্যারির
বুক সেই বাছ্যের ভালে ভালে ফুলিতে লাগিল । আর মাত্র এক মিনিট সময়।
হাঁরি ঘড়ি দেখিল। ঘর হইতে টসম্তগণ বাহির হইতেছে । তাহাদের
হাত ধরিয়া স্বীলোকেরা ও বাহিরে আপিয়াছে, সকলেই বিদায় চুগ্বনে মঞ্
হইয়াছে, কিন্তু হারির জীবন মক্ভূমি। লী এখনও তাহাব নীববত্তা ভঙ্গ
করে নাই । পাশেই একটা ছোট গাছ ছিল, অগত্যা হ্যারি তাহার পাতা গুলি
টানিয়! টানিয়া ছি'ডভিয়া ফেলিল, কিন্ধ তথাপি লীর মৌনত্রত ভঙ্গ হইল না।
হ্বারি গাছের শেষ পাতাটি ছ্রিভিয়া চিৎকার করিয়া বলিল, নিষ্টর তার
পরই ছুটিয়। চলিয়া গেল ।
লীর যেন ভঠাৎ স্বপ্নভঙ্গ হইল | চারিদিকে উন্মতের মতো চাহিপ, দেখিল
হারি নাই । সেখান হইতে সৈম্ধদের লাইন ধরিয়া ছুটিতে লাগিল, প্রত্যেক
সৈনিকের মুখের দিকে ফিরিয়া দেখিতে দেখিতে ছুটিতে লাগিপ, কিন্ত
কোথায় হারি
মার্চ সঙ্গীত বাজিতেছে। লীর যেন মনে হইতেছে তাহারই অন্তর ভেদ
করিয়া বিদায়-বাচ্য বাজিতেছে। পীলোক হইয়া সে কত সহ করিবে। লী
আর দৌডাইতে পাবিল না, পথের ধারে বমিম্বা পডিল। তাহার বুকের মধ্যে
তখন মহাসমুদ্রের ঢেউ ভাঙিতেছে। কতক্ষণ লী সেখানে বসিয়া ছিল তাহা
তাহার খেযাল নাই । যখন উঠিল তখন চারিধারে কেহ নাই, লী একা মেই
জন-বিরল মাঠে রাত্রির অন্ধকারের মতোই অন্ধকার দৃষ্টি লইয়া পথ চলিতে
লাগিল।
লী এফ পা এক পা করিয়া হোটেলে ফিরিয়া আমিল। বেদনাভারে মাথ।
নিচু হইয্সা গিয়াছে, চোখ হইতে অশ্রর শোত বহিতেছে। ভিতরে প্রবেশ
করিয়া যে টেবিলটিতে তাহারা কিছুক্ষণ পূর্বে বপিয়াছিল মেইখানে আসিঙ্া
লী কিছুকাল স্তব্ধ হইয়া ঈীড়াইল, তারপর ঘরে ধীরে মদদে গ্লাসটি তুলিত!
মাকিন সিন্মো-সার ২২৭
লইয়া বুফ্ধে জড়াইয়৷ ধরিল, তারপর সেটাকে চুম্বন করিল, তারপর সেটাকে
লইয়া ধীরে ধীরে ঘরে গেল। লা হোটেলেই থাঁকে, হোটেলের ক্রেতাকে
সে গান গাহিয়া খুশি করে, মাহিনা পায় একশত ফা।
ইহারই মধ্যে আমরা এক মাপ পার হইয়া আমিলাম। পাব হইতে
মুহূর্তকাল লাগিল। কিন্ত এই মুহর্তকালের মধ্যে কি আমবা অন্য কিছুতে
দৃষ্টিপাত করি নাই? করিঘাছি। আমবা ইত্যব্সরে মহাযুদ্ধের বীভতসতা!
দেখিগ়াছি | অনিশ্রাপ্ত কামানের গর্জন, ঝড বৃষ্টি উপেক্ষা কবিয়া, জল, পাক,
কাটা তার, মেশীন গানের গুলি, এযারোপ্রেন হইতে বোমা নিক্ষেপ উপেক্ষা
করিয়া সৈশ্বদের যুদ্ধ কৌশল দেখিবাণ স্থঘোগ পাইয়াছি | সমস্ত মিলিয়া মিশিয়া
একাকার হইয়! আমাদের দৃষ্টিপথে বিদাতেব ঝলকেণ মতো! ক্ষণে ক্ষণে উদ্চামিত
হয়া" উদ্িঘ্াছে ; দলে দলে লোকের প্রাণ বিনর্জন দেখিয়াছি, মৃত্যুযন্রণা'র
মর্মভেদী হাহাকার শুশিম্াছি , তারপর হঠাৎ যুদ্ধেব সমস্ত কোলাহল এবং দৃশ্য
চোখের সক্মুখ হইতে সবিষ! গিয়া দিনের আলে! ফুটিয়া উঠিয়াছে।
দেখা গেল, প্রকাণ্ড একটা বাড়িকে পামমিক ভাবে হীলপাতালে পরিণত
করা হইয়াছে । রোগীর শখ্যাগ্তলি পর পণ চারিশ্রেণীতে বিভক্ত। যুদ্ধের
আহত সৈনিকগণ, কাহারো হাতে কাহাবো পায়ে কাহারো মাথায় কাহারো
বুকে বাণ্ডেজ বাধা । পণ পর শ্তইয়। আছে। নাপগণ অতি তংপরতার সহিত
রোগ্দিগের শুশঘায় নিযুক্ত পহিয়াছে। ইহার মধ্যে একটি রোগী আমাদের
বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছে । তাহার প্রবল জণ ও বিকার, খুব সম্ভব
ক্ষতস্বীন সেপটিক হইয়াছে । পাশে নাস তাহার কপালে হাত বুলাইস্জ!
দিতেছে, ইহার মধ নান একবার তাহার উত্তপ্ কপালে নিঙ্গের মুখখানি
রাখিল, কিন্তু অগহ্থ উত্ভীপে বেশিক্ষণ রাখিতে পারিল না। বলা বাহুল্য
বোগীটি হারি এবং না্সটি লুপি। লুসির চোখে শ্ণে ক্ষণে জল দেখা যাইতে
লাগিল। শত শত আত রোগীর সাস্থন| শুসি, সেই লুসি আজ সান্বনা নাই।
লুসি মনে মনে প্রার্থনা করিতে লাগিল। মনে মনেই বলিল, হারি, হারি,
তোমারই জন্য আমি আজ পিতামাতাকে, দেশকে, ত্যাগ করিয়া অপরিচিত
দেশে অপরিচিত লোকছ্রনের মধ্যে বাম করিতে আলিয়াছি--তুমি ফিরিয়া
চাও। তোমারই জন্য আঙ্জ আমি সর্বত্যাগী সন্গযাসিণী _
হঠাৎ লুপির মনে শ্বর্গীয় আলো জলিয়া উঠিল। দেনর্নামিনী এই কথাটি
স্মরণ করিতেই তাহার বিবেক তাহাকে কশাঘাত করিল। সন্্যালিশী ?__ তাহা!
২২৮ পরিমল গোন্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
হইলে এই মোহ কেন? মায়া কেন? নাঁ ইহাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলিবে না।
সর্যাসিনী, লুসি সন্গাপিনী। ইহাই ভগবানের ইচ্ছা। লুসি সন্ত্যাসিনীই
হইবে, মায়া, মোহ, আলক্তি মন হইতে দূর করিয়া দিবে। লুসির মনে জোর
আপিল, তাহার নয়নকোণে স্বগীয় হাপির আভাস ফুটিয়! উঠিল। লুলির চোখে
হারিতে আর অন্ত রোগীতে কোনে। ভেদ রহিল না। নে প্রাণপণে সেবাকার্ষে
আত্মনিয়োগ করিল ।
আহত দেনিকদের মধ্যে কেহ মরিল, কেহ আরোগ্য লাভ করিল? হ্যারিও
যথাসময়ে আরোগা লাভ করিল। 'প্রথম জ্ঞান হইতেই সে সেবা-রতা লুপ্সিকে
দেখিল কিন্ত চিনিতে পারিল না । তাহার পাচ বৎসরের স্মৃতি ঘেন অস্পষ্ট
হইয়া আনিয়াছে। আর, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের হানপাতালে তাহারই বাল্যসন্ী
লুসি আসিতে পারে ইহা তাহার কল্পনার অতীত। হ্যারি বিহ্বলনেত্রে লুসির
দিকে চাহিয়া থাকে। লুসি তাহার দৃষ্টিপথ হইতে নিজেকে সরাইয়! অন্যত্র
চলিয়া যায়। কিন্তু কতক্ষণ? কর্তব্য তাহাকে করিতেই হয়-_তাহাঁকে
সকলের নিকটে ই যাইতে হয়।
হ্যারি লুসিকে দিজ্ঞানা করিয়া বলিল, তুমি কে? লুপি গন্ভীরভাবে উত্তর
দিল, বেশি কথা বলিও না, উদধটি থাও। 1কন্ত হঠাহ্ হ্থারি তাহাকে চিনিতে
পারিল। বলিল, তুমি লুসি_ তোমাকে চিনিয়াছি। লুপি বলিল, আমি
সন্নযাপিনী ।
হ্থারি নাছোড়; সে তথাপি বলিল, ন।-না, তুমি লুসি, আমার লুসি ।
এখন আর নই, এখন আমি সন্নাপিনী |
হরি আনন্দে প্রীন্ম বিছানাঘ উঠিয্লা বপিল। তারপর লুপির হাত ধরিয়া
বলিল, লুসি, যুদ্ধ শেষ হইয়া গেলে তুমি আমার ।
লুলি হাত ছাড়াইয়া লইল। আবার দ্বন্ব! মনের সঙ্গে হৃদয়ের, বিবেকের
সঙ্গে প্রবৃত্বির। লুসি নিরপেক্ষ দর্শক । যে জয়লাভ করে, লুসি তাহাকেই
আত্মসমর্পণ করিবে। লুপি হারিকে জোর করিয়া ওধধ খাওঘাইয়। সেখান
হইতে চলিপ্রা গেল। তিন দিন দ্বন্থ চলিল, চতুর্থ দিনে দেখা গেল বিবেকই
জয়লাভ করিয়াছে । লুসি স্থির করিল, ভগবানের আদেশে। তাহাকে সন্ভ্যাসিনী
থাকিতে হইবে, অন্য পথ নাই।
এই চারদিনের মধো হ্ারিও স্ন্থ ছইয়া উঠিয়াছে। শুধু পায়ে ব্যাণ্ডেজ বাধা
আছে। সন্ধ্যাবেল। হাসপাতালের বাহিরে লুনি ও হারির সাক্ষাৎ হইয়াছে ।
হারি বলিতেছে, লুমি,-লুলি, তুমি আমাকে মৃত্যুর হাত হইতে ফিরাইয়া
মাকিন সিন্যোদার ২২৯
আনিয়াছ, আবার কি আমাকে মৃত্যুর পথে ফেলিয়া যাইবে? চল আমরা দেশে
ফিরিয়া যাই; আমরা নৃতন সংসার পাতিয়া নবঙজীবনের উদ্বোধন করি ।
লুপি নিকুত্তর। তাহার মুখ এতক্ষণ নিচের দিকে ছিল, এখন তাহা আল্তে
আস্তে উপরের দিকে উঠিতে লাগিল। হ্যারি শঙ্কিত হইয়! উঠিল ।
হাারি মাটিতে বসিয়া পড়িয়া ছুই হাতে মাটি খুড়িতে লাগিল। তাহার
উত্তেজনা! চরমে উঠিয়াছে । উত্তেজনায় ভাল কবিয়া! কথা বলিতে পাবিতেছে
না। তবু ছুই হাতের মুঠায় খানিকটা করিঘ্বা মাটি প্রাণপণে চাপিয়া। ধরিয়া
বলিল, বল, লুসি, একটা কথা বল।
লুসির মুখ সম্পূর্ণ আকাশের দিকে ফিরিল। অন্ধকার আকাশ হইতে একটা।
জ্যোতি লুসির মুখে আসিয়৷ পড়িয়াছে, তাহাকে স্বর্গের দেবী বলিঘ্বা ভ্রম
হইতেছে । কিন্তু হারি এত সহজে পৃথিবীর ধর্থ ছাড়িতে পারে না। সে
তাহার ব্যাণ্ডেজ বীধ1 পা লইয়] ছুঃখে এবং ক্ষোভে উঠিয়া! দাড়াউল, তারপর
হাতের মৃঠা হইতে মাটি ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়া উত্তেজিত ভাবে হাসপাতালের,
বিছানায় গিয়া শুইয়া পিল ।
লুসি একই ভাবে সেইপানে দাডাইয়া বহিল। তাহার চোখ দিয়! অশ্রু
ঝরিঘ্রা পড়িতে লাগিল | তাহাব সমস্ত দেহ মন ঝিম ঝিম করিতেছে -নড়িবার
শক্তিও যেন নাই । হঠাৎ তাহার যাথা নুরিয়া উঠিল এবং সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত
বশ্বপৃথিবী তাহার চারিদিকে খুরিতে লাগিল। মে আর দীভাইয়। থাকিতে
পাবিল না, সেইখানেই মৃছিত হইয়! পভিল।
পরদিনই লুসি অস্থস্থতার জন্য ছুটির আবেদন করিয়াছে । তাহার দেহ
মন ভাউিম্বা পড়িয়াছে_-কোনো কাঙ্গই পে আর করিতে পারে লা, কেখল
ভগবানের আদেশে বাচিয়া আছে মাত্র । এই শ্রাপপাতালে থাকিলে যে তাহার
আর উদ্ধার নাই ইহাও লে বুঝিয়াছে__স্থৃতরাং তাহাকে স্থান ত্যাগ করিতেই
হইবে । ঘথাসময়ে ছুটি মন্ুর হইল। তাহার স্থানে নৃতন নার্স আসিল। লুমি
তাহাকে কাভার অর্পণ কবিয়া তাহার নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ করিল ।
কিন্ধ তাহার এখনও সকল কাজ শেষ হয় নাই। তাহার ইচ্ছা হইল যাইবার,
সময একবার সে হারিকে দেখিবে এবং তাহার নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ
করিষে। মনকে দৃঢ় করিয়া, ভগবানকে বার বার স্মরণ করিষ্কা সন্ধ্যায় সে
হারির নিকট যাইবার জন্য প্রস্তুত হইল। প্রথমে ভাবিয়াছিল, তাহাকে না
দেখিয়া যাইবে, কিন্ত বিবেক কিছুতেই তাহা করিতে দিল না।
লুসি বুঝিতে পারিয্বাছিল লে ঘাহা করিতে যাইতেছে তাহ! সহজ নহে ।
২৩৯ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্প
হারির পরিচয় সে জানে । যে তাহাকে নাধ্যসাধনা করিয়া পায় নাই তাহারই
নিকট সে বিদায় লইতে যাইতেছে! ইহা হারির পক্ষেও যেমন অসহ্য, লুপির
পক্ষেও তেমনি ! কিন্তু তবু লুসি হ্ারির কথা তুলিয়া নিজের কর্তব্যবৌধটাকেই
বড় করিয়! দেখিতে চায়। নিজের ক্ষমতার প্রতি তাহার যে একটা অলী
বিশ্বাস ছিল তাহা! তে। সেদিন ভাঙিয়া গিয়াছে । হ্যারিকে অগ্রাহ্া করিয়া
তাড়াইয়! দয়! সে তো স্থির থাকিতে পারে নাই, মাথ। ঘুরিয়াছিল, পা
কীপিস্াছিল, মৃছ? হইয়াছিল । কিন্তু তবু লু্ি নিজেকে বার বার কঠিন পৰীক্ষা
করিতে চায়। ইহ! তাহার একটি দ্বান্তিকতা।
ভগবানকে স্মরণ করিতে করিতে লুসি হ্বারির নিকট রওনা হইল। কিন্তু
সেখানে পৌছিবামাত্র তাহার এ কি হইল? মনের জগতে যে একটা! প্রচণ্ড
প্রলয় ঘটিয়া গেল! ইহার জন্য তো! লুমি আদৌ প্রস্তত ছিল না। লুসি
দেখিল, নৃতন নার্স হারিকে চুম্বন করিতেছে, আর বলিতেছে, প্রিয়তম, তোমারই
জন্য এতকাল আমি সন্ত্যাসিনীর মত পথে পথে ঘুরিয়াছি ।
হারি লুসিকে দেখিতে পাইল । দেখিয়া! চমকিয়। উঠিল । কিন্তু ততক্ষণাৎ
নিজেকে সামলাইয়া লইয়া! বলিয়া! উঠিল, লুসি, এখনও ব্ল-_কিন্ধ লুমি কিছুই
বলিল না, তাহার বিবেক তাহাকে বলিতে দিল না। বলিতে দিল না বটে
কিন্ত তাহার হাতের উপর বিবেকের কোনো! প্রভাব ছিল না--লুসি বিছ্যুৎবেগে
টেবিল হইতে মালিসের উধধের শিশিটি লইয়া ঢক ক করিয়া খানিকটা বিষ
গিলিয়। ফেলিল। হ্যারি বিছানা হইতে লাফাইগ্া উঠিয়া লুপি লুসি করিয়।
চিৎকার করিতে করিতে তাহার হাত হইতে বিষের শিশিটি কাঁড়িয়া লইয়া
নিজের মুখে খানিকটা ঢালিয়া-দিল ।
সমঘ্ত হাপসপাতালময় কোলাহল পড়ি গেল। সকলেই ব্যস্ত হইব
তাহাদের দিকে ছুটিয়া আসিতে লাগিল । কিন্ধু তৎপূর্বেই নৃতন নার্স, হ্যারি
হরি, বলিয়! কাদিতে কীদিতে তাহার হাত হইতে শিশিটি ছিনাইয়া লইয়া
বাকী বিষটুকু মুখের মধ্যে ঢালিয়া দিল ।
মুহূর্তের মধ্যে কি একটা প্রলয় ঘটিয়্া গেল। যুদ্ধক্ষেত্রে এরূপ শোচনীয়
মৃত্যু কেহ দেখে না, সে জন্য সকলেই ইহা দেখিয়া ভীত হইল। কিন্তু যথারীতি
চেষ্টা সত্বেও উহাদের কেহ বাচিল না।
ক্ষণকাল পরেই দেখা গেল, তিনটি প্রেতাত্মা শূন্তপথে চলিতেছে । প্রথম
চলিতেছে লুদি। তাহার ছুইখানা হাত এবং দৃষ্টি স্বর্গের দিকে, মুখ হইতে
উচ্চারিত হইতেছে ঈশ্বর-_ঈশ্থর। লুসির পশ্চাতে চলিতেছে হারি।
মাকিন সিনেমাসার ২৩১
তাহার ছুইখানা হাত ও দৃষ্টি লুদির দিকে__মুখ হইতে ক্রমাগত লুদি লুপি
ধ্বনি বাহির হইতেছে। হারির পশ্চাতে চলিতেছে নৃতন নার্স । সে অবিরাম
হাঁরি হারি করিতেছে । বহুদূরে আব একটি অস্পষ্ট ছায়ামৃতি দেখা যাইতেছে,
সেটা রবিনসনের ।
বলা বাহুলা ববিনসনের মুখ হইতে কোনো শব্দই বাহির হইতেছে না,
এবং বাহুল্য হইলেও বলা প্রযোঙ্জন যে নৃতন নারদ আর কেহই নহে, হোটেলের
সেই লী।
(১৯৩৪)
সেকাল ও একাল
বারো বছর বয় হয়ে গেল রুনুর, কিন্তু পড়াশোনায় এখনও মন বলল না।
আর বদবেই বাঁ কি ক'রে, বই ধূলতে না খুলতেই দূরে ফটকের বাইরে একে
একে দেখা যায় বন্ধুদের মাথা, রৃন্থ তখনই হঠাৎ বই ফেলে পালিয়ে ঘাম তাদের
লঙ্গে। বুড়ো দাছু তার সঙ্গে কিছুতেই পেরে গুঠেন না।
তাই একদিন তিনি ঠিক করলেন রম্থুকে ভাল ক'রে বোঝাবেন, বলবেন,
যে দিনকাল পড়েছে তাতে মর্খ হয়ে থাকলে আর চলবে ন|। না খেয়ে মরতে
হবে যে। তাই পড়াশোন৷ করা অত্যন্ত দরকার।
কিন্তু এ রকম সামান্য ছুকথার উপদেশ দিলে কিছুই হবে না, তা তিনি
জানতেন। তাই তিনি ভাবলেন, ওকে আজ সেকালের সঙ্গে একালের তফাৎট।
কোথায় তা ভাল ক'রে বুঝিয়ে দিতে হবে |
অবশ্য একদিনে বোঝানো শেষ হবে না, রোজ একটু একটু ক'রে
বোঝাবেশ।
আগের দিনের লোকের অবস্থা কত ভাল ছিল, লোকে কম পরিশ্রম ক'রে
আরামে থাকত, মেই দিনের সঙ্গে আজকের দিনের তুলনাটা যখন ওর মনে
গেঁথে যাবে, ও তখন হম্তো নিজে থেকেই বুঝতে পারবে পড়াশোনাটা কত
দর্কার।
মকালেই সেদিন দ্বাছ রন্ুকে ডাকলেন, বললেন, আয় তো ভাই, একট
কথা শোন।
রস তখন সামনে বই খুলে বাইবের দিকে কান পেতে আছে কখন বন্ধুদের
পায়ের শব শোনা যাবে। দাছুর ডাক শুনে বই ছেড়ে আসতে তার ভালই
লাগল।
দাদু কি ভাবে ষে কথাটা আরস্ত করবেন ভেবে পেলেন না। বড় শক্ত
কাজ। বহু কৌশলে একটু একটু ক'রে বলতে হবে। তিনি কিছুক্ষণ চুপ
ক'রে থেকে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলেন, আমরা ঘখন ছোট
ছিলাম, তখন কি স্থখের দিনই না ছিল আমাদের-_
রঙ কিছু বুঝতে না পেরে চেয়ে রইল তার দাছুর মুখের দিকে ।
দা বলতে লাগলেন, কি দিন ছিল রে এদেশে ! চাল ছিল এক টাকা!
সেকাল ও একাল ২৩৩
মণ_-এক টাকায় কি নাচল্লিশ সের! আর দে কি চাল! ব্াহ্াঘরে ভাত
রাধা হচ্ছে, সমস্ত বাড়ি স্থগন্ধে ভরে উঠেছে ।
মাসে মাত্র তিন টাকার চাল, ভাইতেই আমাদের বাঁড়িন্দ্ধ লোকের
চলে ঘেত, আমর] তো! পেট ভরে খেতামই, কত ষে অতিথি আর 'আত্ীয্-
কুটুম খেত তার সংখ্যা নেই।
--আর শুধুই কি চাল? সব জিনিসেরই ছিল মাটির দর। একটা
পরিবাবের জন্য মাসে পাচটি টাকার বেশি খরচ করতে পারতাম না।
বলতে বলতে দাছর আবেগ বেড়ে গেল, যেন তিনি তার চোখের লামলে
তীর ছেলেবেলার সমন্ত ছবিখানি দেখতে লাগলেন। তিনি বলতে লাগলেন,
পদ্মানদীর ধারে ছিল বাড়ি, ভাবতে পারিস্ ষে আটটি ইলিশ মাছও কিনেছি
এক পয্মসায়? সেকি ছড়াছড়ি মাছের । আমরা তো বর্ষাকালে মাছের শুধু
ডিম খেতাম মাছ ফেলে দিয়ে। আর তরকারী? বাজারে গিয়ে আধ
পয়সার বেগুন পটল লঙ্কা কিনলে বয়ে নেবার জ্রন্ত লোক ডাকতে হত।
পয়মায় পাঁচটি লাউ, ছুটে! কৃমড়ো, তিন সের বেগুন, পাচ সের লঙ্কা! খরচ
করব কিসে? দুধ এক পয়সায় ছু'দের, রলগোল্লাব সের তিন আনা । কান্না
পায় ভাই সেদিনের বথা যনে হলে ।--বলতে বলতে ধাছুর গলাট। ধরে এলো,
তীর চোখ ছুটি ছলছল ক'রে উঠল। বন্থও একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল ।
দাদু খুব খুশি হয়ে জিজ্ঞানা করলেন, আমার ছুংখট! তা হ'লে তুই বুঝতে
পেরেছিস্ রে ভাই?
তোমার কথা ভাবছি ন| দাদু! বলে রন্তু আরও একবার দীর্ঘনিশ্বান
ফেলল ।
দাছু বেদনার স্থরে ব্ললেন, তবে ?
রন্থ বলল, ভাবছি আমাদের সেকালের কথা ।
_মেকিরে? তোদের আবার সেকাল?
-_ হা দাদু, যুদ্ধের আগে। ধে কি কালটাই ছিল আমাদের । চাল ছিল
চার টাকা মণ, মাছ ছিল ছ'আনা সের, মাংস দশ আনা, ছুধ চার আনা!
তরিতরকারী কত সম্তা ছিল, দাদু! আর কাপড়? ছু'টাকা এক জোড়া
ধুতি, আড়াই টাকা শাড়ী। ওঃ, নে কি সখের কালটাই না ছিল!
বলতে বলতে রম্থর গলাটা ধরে এলো, তার চোখে জল দেখা দিল।
ফুঁপিয়ে ফ'পিয়ে বলতে লাগল, আর আজ মাছ পাঁচ টাকা মের, মাংস তিন
টাকা, চাল পচিশ টাকা মণ!
২৩৪ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙগ-গল্প
ছুই হাতে চোখ ঢেকে রন কীদতে লাগল । আঙুলের ধাক দিয়ে চোখ
ছুটি তার ফটকের দিকে ফেরানো । ইতিমধ্যে সেদিকে ছু-একজন বন্ধুর মাথা
দেখা দিতে আরম্ভ করেছে একে একে ।
বজাহতের মতো স্তস্ভতিত দাদু রন্ুর দিকে কিছুম্ষণ চেঘ্ে থেকে বললেন, যা
খেলতে যা, তোকে বোধ হয় ওর| ডাকছে ।
রম্ন চোখ মুছে ক্রুত অদৃশ্য হয়ে গেল ফটকের পথে ।
(১৯৪৯)
নতুন দাওয়াই
সেলুন গাঁড়ি।
ক্ষণবিলাসের রাজকীয় আয়োজন ।
দিনে আরাম ক'রে বসে এবং রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাক, হৈ হন্রা নেই,
দমবন্ধ করা ভিড় নেই, অভিজাত সলভ চাপা শ্তররে সংক্ষিত্ব কথা ভিন্ন অন্য
কোন শব্দ নেই ।
দিনে কোমল আপনে বসে যাও ঘণ্টার পর ঘণ্ট1। চপ ক'বে বসে থাক
বাইরের বিপরীতগামী ছুটস্ক দৃশ্টের প্রতি । চোখ খোলা বইবে, কিন্ত মন
পড়বে ঘুমিয়ে। মনে স্বপ্ন জেগে উঠবে একের পর এক, দৃষ্টি রইবে উদাস।
বাত্রে প্রশস্ত কোমল বিছ্বানায় ঘুমিয়ে পড়বে স্বপ্রহীন গভীর ঘুম ।--"
সেলুন গাড়ি ছুটে চলেছে ঘণ্টায় ষাট মাইল বেগে।
সেই গাড়ির মধো অগ্তান্ত যাত্রীর সঙ্গে দেখ! যাচ্ছে এক অভিজাত দম্পতি,
পাশাপাশি বসে। ন্বামীটি খুবই শ্বাস্থাবান, বয়স পয়তাল্লিশ হবে। প্রক্কাতি
বড়ই গম্ভীর, ক্্রীটি আশ্চধ সুন্দরী ।
অভিজাত ইংরেজ মহিলা ও তার স্বামী । মল কাহিনীটিও ইংরেজী |
স্বামী শ্রীর বিপরীত দিকের আপনে বষে এক যুবক। দেখলে মনে হম
যেন কোনো লর্ড বংশের বিলাসী পুত্র । চেহারায় যেমন আভিজাতা, পোষাকে
তেমনি জাক---বয়স ত্রিশের বোশ হবে না।
কিন্ধ মহিলাটির সৌন্ধয তাকে 9 বেন মান ক'বে দিয়েছে ।
গাড়ি ছুটে চলেছে ঘণ্টায় ষাট মাইল বেগে । কারো মুখে কথা নেই ।
মহিলার স্বামী যুবককে একখানি লক্ষা করলেন, তারপত্র ত্বার হাতের
কাগলথান। তাকে দিয়ে বললেন “পড়ুন না এইখানা, উত্তেজক সব খবর
আছে এতে ।”
যুবকটি একটু চমকিত হয়ে ধন্যবাদ সহ কাগজখান] নিয়ে পড়তে লাগল ।
আধ ঘণ্ট1] কেটে গেল। পাঠান্ডে যুবক কাগজখানা ফিরিয়ে দিতেই
শ্বাধীভদ্রলোক পুনরায় তাকে একখানা জনপ্রিয় মাসিকপত্র দিয়ে বললেন
“ওটা শেষ হয়েছে তো এইবার এইখানা। পড়ুন ।”
যুবক মাস্সিকপত্রথানা মনোযোগের লঙ্গে উপ্টে পাণ্টে দেখল ঘণ্টাখানেক
ধরে। ভদ্রলোক লক্ষ্য করলেন বই দেখা তার শেষ হয়েছে । তখন তিনি
২৩৬ পরিমল গোস্বামীর শ্রেষ্ট ব্যঙ্গ-গল্প
একটি মূল্যবান চুরুট দিলেন তাকে, দিয়ে বললেন, “অতি ছূর্লভ হাভানা, আপনাৰ
ভাগ লাগবে ।”
ধন্যবাদ দিয়ে যুবকটি সিগার গ্রহণ করল এবং ধৃষ্পানের কামবাঘ উঠে
গেল ।
প্রায় একঘণ্ট1 পরে ফিরে এল যুবক । কিন্ত আসামাত্র ভদ্রলোক একখানা
ছোট্র উপন্তাস তার হাতে দিয়ে বললেন, "এবারে এইখান। পড়ুন, অস্ভুত ভাল
বই। নতুন বেরিয়েছে, লেখক জনপ্রিয়, পড়তে শুরু করলে শেষ না ক'রে
পারবেন লা।”
ঘুবক পড়তে আরস্ত করল সেই উপন্াস। সত্যিই খুব ভাল, একঘণ্টার
মধ্যে বই শেষ হয়ে গেল।
শেষ হতেই ভদ্রলোক বললেন “আরও একটি হাভান৷ নিননা, ভাল জিনিস
সব সময়েই ভাল লাগে ।”
যুবকটি ব্লল, “না, ধন্যবাদ, আর আমার সময় নেই, এইবার নামতে হবে
আমাকে--এই পরবর্তা স্টেশনেই । আপনাকে আরও একবার ধন্যবাদ জানাই ।”
“না না ধন্যবাদ দেবার দরুকার নেই, 0078 10091061070 1৮.”
যুবক এতক্ষণে মনখুলে কথা বলার স্থষোগ পেল । এতক্ষণ সে ভদ্রলোকের
ব্যবহারে অভিভূত হয়ে পড়েছিল, তার কেবলই সন্দেহ হচ্ছিল ভদ্রলোক
তাকে নিশ্চয়ই চেনেন, নইলে এত খাতির করবেন কেন। তাই সে সঙ্কোচের
সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি কি আমাকে চেনেন ?-_কিছু মনে করবেন না
আমার এই কৌতুহলের জন্য- হয়তো আগে আমাকে দেখে থাকবেন
কোথায়ও ?”
ভদ্রল্পোক বললেন “না, আপনাকে কখনো! দেখিনি, চিনিও না1।”
“আমার নাম জানেন ??
“না”
"তাহলে দম্বা ক'রে বলবেন আমার প্রতি আপনার এই প্রেহ এবং সৌজন্
কেন, আমাকে না! জেনে আমাকে এত খাতির করলেন কেন, আমি তো এমন
কোথায়ও দেখিনি । আপনাকে কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাব জানি না, আমার
মনে হয় আপনি একজন শ্রেষ্ট মাধ, সহৃদয় এবং জেহপ্রবণ। আভিজাত্য
আপনার মনের ধর্ম, আপনার কথা আমি আজীবন মনে রাখব, আপনাকে আমি
আদর্শ মানুষ বলে উল্লেখ করব সবার কাছে, যদি দম্না ক'রে আপনার পব্রিচন্টা
আমাকে দেন।”
নতৃন ছাওয়াই ২৩৭
ভদ্রলোক এই প্রশংসা বর্ষণে কিছুমাত্র বিচলিত না হয়ে বললেন_
“যুবক, আমার এ ব্যবহারের কারণ আমি খুলে বলছি। ইতিপূর্বে ষে সব
'লোফার'কে আমার স্ত্রীর মুখের দিকে হা! ক'রে চেয়ে থাকতে দেখেছি তাদের
সন্ধ করেছি বড়জোর একঘণ্টা, তারপর উঠে তাদের ঘাড় মটকেছি। ফলে
অনেক হাঙ্গামা হয়েছে, খরচও হয়েছে অনেক । তাই আমি ভোল এবং ডঙ্গি
ব্দলেছি। এখন আমি সেই সব লোফার'কে ঘুষ দেবার জন্য ভাল ভাল
বই আর সিগার সঙ্গে রাখি। তুমিধদি আরও শখ" খানেক মাইল আমাদের
লক্ষে যেতে, আমি তোমাকে ব্র্যাশ্ডি দিতাম, নতুন ক্রদওয়ার্ড ধাধা দিতাম,
আরও ছুখানা নতুন কাগজ দিতাম, আমার শ্বীও নিশ্চিত্তভাবে বনে থাকতে
পারত।”
“কিস্ত_কিন্তব_আমি-_-”
"ঠিক আছে, ঠিক আছে, তোমাকে ঘড ধরে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার
চেয়ে এ অনেক শন্তা, হাঙ্গামা। কম। আশা করি শিবিপ্লে বাডি পৌছে যাবে,
তোমার সঙ্গে দেখা হওযাতে আমি বঙই খুশি হয়েছি, আচ্ছা গাড়ি এবারে
থেমেছে, বিধায় 1”
(১৯৫৪০)
আগন্তকের ভায়ারি
আজ ২৫শে ডিপেঙ্গর ১৯৪৯, রবিবার | স্বর্গের একখান দৈশিকের রিপোর্টার
আমি। দুদিনের জন্য কলকাত| এসেছি । এখানে এসে প্রথমেই চোখে পড়ল
পিকি মাইল দীর্ঘ বিভিন্ন বয়দলর এক মাভবেব সারি । এ বিষয়ে আমার পূর্ব
অভিজ্ঞতা ছিল না, শুধু স্বর্গের এক সংবাদপত্রে পড়েছিলাম কলকাতা শহরে চিনি
দুষ্পাপ্য, সে জন্য ক্রেতারা তাদের নির্দিষ্ট চিনির বরাদ্দ এইভাবে দাভিয়ে কিনতে
বাধ্য হচ্ছে । চিনি দম্পর্কে আমার নিজের বিভৃষ্ণা, আমি স্বর্গ থেকে এসেছি__
সেখানে সবই মধুর, সবই চিনির স্বদ। তাই আমি এখানে চিনি সম্পর্কে সাক্ষাৎ
কোনো অভিজ্ঞতা লাভ কবতে সঙ্কৌোচ বোধ করেছি । কিম্ু এত বড দীর্ঘ
লার্রর পাশ দিয়ে ঘাব অথচ পাশ কাটিয়ে যাব, কথাট| ভাবতে শিঙ্গেবই কাছে
খারাপ লাগল, তাই একট্র এগিয়ে গেলাম । উক্ত সারির একট! জাম্বগায়
একটা পনেরো ষোল বছরের ছেলে দাড়িয়ে ছিল, দেখি বাইব্সের এক প্রো
ভদ্রলোক তার নঙ্গে কি নিয়ে তর্ক করছেন । সমস্ত নীরব সারিটাব মধো এ
একটিমাত্র স্থানেই কিছু কথ। চলছে দেখে ঈখানেই এগিয়ে গেলাম, কিন্ক ওদের
তকের কথাশুলো শুচুন কেমন যেন সন্দেহ হল ঘে ওটা তাহ'লে চিনির লাইন
নয়। কথা যেটুকু শুনলাম তা এই £
প্রোঁত ব্যক্তি £ তোকে এত ক'রে ব্ললাম চিনি নেই, চিনির লাইশে
দাডাগে যা, আর তুই এসে দাডিয়েছিল সিনেমার লাইনে 7? হতভাগা ছেলে
বেবো ওখান থেকে।
বালক চিনির লাইনে অতক্ষণ আহি দাডাতে পারৰ না।
প্রৌচ বাক্তি £ আমার নবাব পুত্ত,র, এখানে তিন ঘণ্টা দাড়াতে পারেন_
কাজের বেলা পা ব্যথা করে।
বিষয়ট! নিতাস্তই ব্যক্তিগত মনে হওয়াতে সেখানে দাড়িয়ে থাকা আমার
অন্যায় মনে হল, আমি দ্রুতবেগে সেখান থেকে সরে গিয়ে দূর থেকে তর্কের
ফলাফল লক্ষ্য করতে লাগলাম । ওদের কোনে। কথা আমার কানে গেল না,
কিন্ধ পরিণামটা চোখে দেখা গেল। দেখলাম, ছেলে যেমন দ্ীডিয়ে ছিল
তেমনই রইল, প্রৌট ভত্রলোক উত্তেজিতভাবে সেখান থেকে চলে গেলেন।
লাইনের অপর প্রান্তের দিকে চেয়ে দেখলাম পসিনেমাই বটে। লিনেমার
আকর্ষণ তা! হ'লে চিনির আকর্ষণের চেয়ে বেশি । ছেলেটির সঙ্গে এ বিষয়ে
আগন্তকের ডায়ারি ২৩১
কিছু আলাপ করার বাসন! প্রবল হয়ে উঠল। আবার এগিয়ে গেলাম
তাবু কাছে।
ছেলেটি দেখতে রোগা এবং কাঁলো। মুহূর্ত আগে লে গাল খেয়েছে,
কিন্তু চোখে-মুখে কিছুমাত্র উত্তেজনার ভাব নেই। দৃষ্টি ইতিমধোই প্রশাস্ত
হয়েছে |
আমি ছেলেটির কাছে গিলে জিজ্ঞাসা করলাম, “ষে পিনেম! ছবিটি দেখতে
যাচ্ছ সেটি নিশ্চয় খুব ভাল ?”
ছেলেটি এ প্রশ্নে অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ চেপে বলল, “জানি না,
আগে দেখিনি ।” উদ্ধত সংক্ষিপ্ত বাব ।
আমিও সবিম্মঘবে বললাম “ভাল কি না, না জেনেই যাচ্ছ 1"
আমার কথায় হঠাৎ যেন ছেলের চোখ ছুটি উন্মাদ্দের মতে। লাল হয়ে
উচ্চল, ফস ক'পে নে ডানহাততের আগ্ডিন গুটিযে আমার পিকে ফিবে দাডিম্বে
বলে উঠল, “কি বললেন? ভাল মন্দ না লেনে যাই কেন ””
গমি ওর উত্তেজিত ভাব লক্ষা ক'রে ছ-প। পিছিষে নিরাপদ ধৃধতে গিয়ে
দীঢালাম। ছেলেটি বেশ ৮ডা গলায় বলতে লাগল “যাই, করণ আমরা তরুণ,
আমরা দিনক্ষণ মানি না, আমরা উদ্দাম, আমরা দুর্বার, দুঃসাহসী, ছুর্মদ, দুর্ধধ।
আমপা হাউইযের মতে! আগুন ছডাঁতে ছভাতে আকাশে উড়ে যাই, আমরা
ধুমকেতু, আমরা _
আমি তাকে বাধ! দিয়ে বললাম, “থাক ।” এবং দ্রুত পা চালিয়ে সেখান
থেকে সরে একজন বয্্ক লোকের কাছে গেলাম । বস্ত সিনেমা সম্পকে
আমার কৌতুহল এমেই অদম্য হয়ে উঠেছিল । ধাপ কাছে গেলাম তাকে
বেশ সন্ত এবং পরিণত বুদ্ধি বলে মনে হল। ক্থতরা* অনেকটা পির্ভয়ে
তাকে ৪ সেই পুরনো প্রশ্রতিই দিজ্ঞাপ। কললান, “বিট! শিশ্চয় ভাল ?”
5দ্রলোক এতক্ষণ উদ্দাস দৃষ্টিতে পথের দিকে চেয়ে ছিলেন, আমার প্রশ্নে
চমকে উঠে আমানু দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন, আমিও যথারীতি
দ-প| পিছিয়ে যাবার উপঞ্্ম করতেই ভত্রলোকেগ কণম্বরে ভয় কেটে গেল,
কারণ কণম্বরে উন্মাদের লক্ষণ ছিল ন|। মামাকে সহান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা
করলেন “শহরে নতুন বুঝি ?”
আমি বিনীতভাবে বললাম, “সম্পূর্ণ নতুন ।”
“তাই বলুন! শহরের বাদিন্দা হলে এ কথা ঙ্গিজ্ঞাসা করতেন না। কারখ
সিনেমা! ভাল কি মন্দ এ প্রশ্ন আমাদের কাছে অবান্তর |”
২৪৩ পরিমল গো্বামীর শ্রেঠ ব্য-গল্প
আমি বললাম “কিছু আগে একটা বালকও অনেকটা মনেই রকমই ব্লছিল।”
ভন্রলৌক সে কথায় কান না দিয়ে বললেন, "আগে আমাদের এই কিউ-এর
দের্ঘ্যটা দেখুন ”
“কিউ' অর্থাৎ সেই দীর্ঘ মানব সারির দৈর্ঘাটা আর একবার ভাল ক'রে
দেখলাম। এতক্ষণ সোট আকারে আরও বেড়ে গেছে, পিছন দিকটা ঘুরে
একটা গলির মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করেছে তাই মোট কভট] দীর্ঘ হয়েছে আর
বোঝা গেল ন]।
ভদ্রলোক বললেন, "আধ মাইল হবে। এই মানব সাগ্সিকে সিনেমা ঘর
পধস্ত পৌছতে অস্তত তিন ঘণ্ট] লাগবে ।”
“ভাল লাগে এ রকম দাড়ানো ?”
“বলেন কি! এই হচ্ছে আমাদের সব চেয়ে বড় আকর্ষণ-_-এইখানে ঘণ্টার
পর ঘণ্ট] দাড়ানো |”
আমি এর মধ্যে আকর্ষণ ঠিক কোথায় তা বুঝতে পারলাম না
ভদ্রলোক সেটি হদয়ঙ্গম ক'রে বলতে লাগলেন, “সিনেমা হচ্ছে দিনে সকল
কাজের শেষে, স্কল কর্তব্যের বোঝামুক্ত অবসরের মুক্তি । এই মুক্তি
আমাদের শুরু হয় এইখানে কোনরকমে একটি স্থান পাবার পর থেকেই ।
মুক্তি যে সময় থেকে ঠিক শুরু হয়, সেই সময় থেকেই কি ত। উপভোগ্য হয়ে
ওঠে না ?”
«কথাটা ঠিক, কিন্তু তবু কোথায় ঘেন একটু ধাঁধা থেকে যাচ্ছে, আরও
একটু বুঝিয়ে বলুন ।”
ভদ্রলোক বেশ খুশিভাবেই বলতে লাগলেন “কথাটা অত্যন্ত সহজ । সিনেমা
হচ্ছে লক্ষ্য, আর এই কিউ হচ্ছে সেই লক্ষ যাবার পথ। শান্ত্রে আছে যত
মত তত পথ, কিন্ত এই নীতি পিনেমায় সম্পূর্ণ খাটে না, বিশেষ ক'রে মধ্যবিত্তের
বেলায়। এখানে যত মতই থাক, পথ এই একটিই_-এই দশ আনার পথ।
দেখুন না কেন, আমি এপিডেমিক ড্ুপসির রুগী, কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে
আমার পা ফুলে যায়, কিন্তু তবু এই পথ আমার ছাঁড়বার উপায় নেই। শুধু
থে আমি ছাড়তে পারি না তাই নয়, এই মাইল-দীর্ঘ কিউতে হত লোক আছে
সবাই নাছোড়।”
“আপনি অন্য সবাইকে অস্থথের কথ! বলে কিছু আগে গিয়ে ধাড়ালে হয়তো
আপনার স্থবিধা হতে পারে ।”
ভত্রলোৌক গম্ীবভাবে বললেন, “দাঙ্গা বেধে যাবে প্রস্তাব শুনলে । আমার
আগন্ধকের ভায়াত্সি ২৪১
প৷ ফুলেছে, শুধু এই কৈফিয়তে পথ সংক্ষেপ করা চলবে না। এখানে ছোট-বড়
সবল-ছূরবল সবাই এক, এখানে কেউ কারো! চেয়ে ছোটিও নয়, বড়ও নয় । প্র
দেখু, মাঝে মাঝে ছু একটি স্থান খালি পড়ে আছে, কিন্তু আসলে খালি নয়।
এ নব শূন্য স্থানে শুধু এক ক্কোড়া ক'রে জুতো? কিন্তু এ পথের এমনই নিম্মম যে
এ জুতো সরিম্বেও সেখানে অন্য কেউ দাড়াতে পারে না।”
জুতোর মালিক “কাথায় ভাবছি এমন সময় ভদ্রলোক বললেন “কেউ হয়তো
বাডিতে থেতে গেছে, ছেলেদের কারো হযতে। প্রাইভেট টিউটর বাড়িতে এসে
গেছে, তাই জুতো দিয়ে জায়গার দখল চিহ্ন একে বেরিয়ে গেছে লাইন থেকে ।
ওদের কাজ শেষ হলে ফিরে এসে আবার এ সব জায়গায় দাড়িয়ে যাবে।
ওদের অন্থপস্থিতকালে জুতোই হচ্ছে ওদের প্রতিনিধি 1”
আমি বললাম, “কিন্ধ আপনাদের মুক্তি এইখান থেকে শুরু হলেও এর মধ্যে
আনন্দ তো৷ কিছু দেখছি না।”
ভদ্রলোক হেসে বললেন, “না দেখাই স্বাভাবিক, কারণ কিউতে দাড়ানোর
অভিজ্ঞত| আপনার নেই। কিন্ত আমরা এইখানে দ্রাডিয়ে চলমান সংসারের
বপ ভাল কনে দেখতে পাই । এইখানে দাড়িয়ে আমরা নিজেদের ছবি দেখি।
ামব! যখন শিজেবা চলি, তখন অন্যদের চল। আমাদের চোখে পড়ে না, কিন্ত
একবার এই কিউতে এসে দাড়ালে লব দৃশ্য বদলে যায়। এখানে চলমান মানুষের
বপ দেখি। হাজার ভাজার লোক ছুটে চলেছে বিচিত্র লক্ষা পথে। এক
একপান। দ্বাম ও বাল বোঝাই হয়ে চলেছে শত শত মাম্তষের শ্রথ-দুঃখ, হাসি-
কান্রা, সাধু নৃদ্ধি ছু্ু বুদ্ধি। কেউ থেমে নেই, সবাই চলেছে । বিচিত্র ঘাত-
প্রতিঘাত এই পখে । কেউ উপাশীন ভাবে চলেছে, তার হতো এ সংসারে আশা
করবা কিছু নেই, কেউ চলেছে গহিত পায়ে নচ্ছলতার ছাপ সর্বাঙ্গে ফুটিয়ে, এই
পথে এই মধাবিন্ত পাডার পথে মে বড, হয়তো! চলতে চলতে অভিজাত পল্লীতে
গিয়ে মে নিজেকে হীন মনে কন্ততে থাকবে । কিন্ধথাক এ সব কথা, এ সব
মামাপ্দের মলের চাখে দেখ] ছবি, আপনি হয়তো এর রুস গ্রহণ করতে পারবেন ন1।
আমি বললাম, "হয় তো হাই, কিন্ত আপনি আপনার নিজের দেখাকে
সবার দেখা বলছেন কেন? সব সময়েই আপনি “আমরা” বহু বচনটি ব্যবহার
করছেন, কিন্ত সতাই কি এই কিউতে ঘত লোক দাড়িয়েছে "তারা স্বাই
আপনার মতো দেখতে পাঁয় 7?”
ভদ্রলোক উদামীন্ভাবে জবাব দিলেন, “কি জানি, নবাই'হয় তো এক রকম
দেখে না, কিন্ধ আমার বিশ্বান কিছু একটা আনন্দ তারাও এখানে পাস্ব।”
১৬
২৪২ পরিষল গোস্বামীর শ্রেষ্ঠ ব্যঙ-গলপ
আমি বললাম, “আপনাকে আর বিরুক্ত করতে চাই না, শুধু একটি মাত্র
কথা জিজ্ঞাসা করব । আপনি বহু অস্থবিধা ভোগ করছেন দৈহিক, স্থৃতরাং
দৈহিক ক্লান্তিও আপনার হচ্ছে । আবার মনের দৃষ্টি সব সময় জাগ্রত থাকায়
মনও কিছু র্লাস্ত হচ্ছে। সুতরাং দেছিক এবং মানসিক এতটা ক্লান্তি ভোগ করার
পরে পিনেম! ঘরে গিয়ে যদি দেখেন ছবিটি খারাপ, তা হ'লে কি সব পরিশ্রমটাই
বার্থ মনে হয় না?”
ভন্রলোক একটু হেসে বললেন, “কথাটা অন্যায় বলেন নি, কিন্ত আমার এবং
আমার মতে! আর সবার সম্পর্কে এ প্রশ্ব অবান্তর |”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞীনা করলাম “কেন ?”
ভদ্রলোক বললেন, "লক্ষ্যে পৌছে আমরা তো সিনেমা দেখি না_আমরা
আপনে বসেই ঘুমিয়ে পড়ি”
আমি বিদায় নিয়ে কিউ বরানর চলতে লাগলাম, কৌতূহল ছিল, শেষ
প্রাস্তটি গলির মধ্যে কতদূর বিস্তাবলাভ করেছে তাই দেখব । কিন্তু কিছুদূর
গিয়েই থেমে যেতে হল | কিউতে দণ্ডায়মান এক ভদ্রলোক তার সম্মুখে
দগডায়মান এক তরুণ যুবককে গড় গড় ক'রে কি যেন বলে যাচ্ছেন। যুবকটি
তাঁর দিকে পিছন ফিরে দীডিয়ে আছে (কিউতে যেমন থাকে ) তার হাতে
একখানা নোট বই ও পেন্সিল, আর ভদ্রলোকের একখান! মোট! বই ।
ভদ্রলোক যুবকটিকে বলে যাচ্ছেন আর দে পেন্সিল দিয়ে খাতায় কিছু কিছু
লিখে নিচ্ছে । আমি সেখানে ফীড়িয়ে ছিলাম, আমার কৌতৃহল অদম্য হয়ে
উঠল, আরও একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম, “আমাকে মাফ করবেন, আমি বিদেশী,
আমি আপনার এই আলোচনা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম, কিন্ত সিনেমার কিউতে
বাষ্ট-নীতির এমন স্বন্দর আলোচনাটা একটু ব্যর্থ হচ্ছে লা কি?”
ভদ্রলোক আমার দিকে সহান্ভৃতিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “আপনাকে
বুঝিয়ে দিচ্ছি । আমার সম্মুখে যে ছেলেটি দাড়িয়ে আছে মে কলেজের ফান্টঁ
ইয়ারে পড়ে, আর আমি সেই কলেজের প্রোফেসর, নিভিক্স পড়াই । কিন্ধ
পেটাই সব কথা নয়, আমি ওর প্রাইভেট টিউটরও বটে। অথচ আমাদের
দুজনেরই সিনেম! দেখার বেক খুব বেশি। তাই আমরা পরস্পর এই ব্যবস্থা!
করেছি ঘে, ঘে দিন আমরা সিলেমায় যাৰ সেই দিনের পড়াটা কিউতে দাড়িয়েই
শেষ করব। এখানে স্থবিধাও বেশি, কারণ বনু সময় এখানে নষ্ট হয অকারণ,
সেই সময়টা আমরা এই ভাবে কাজে লাগাই । কিন্তু সবাই যদি এভাবে
সময়ের সন্ধযবহার করত, বিনা কাজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা! দীড়িয়ে না থাকত, তা
আশস্তকের ভায়ারি ২৪৩
হলে শত শত লোকের তিন-চার ঘণ্টার কাজ ঘোগ হয়ে সেটা জাতীয় লাভে
পরিণত হত সহজেই । এ বিষষে মেয়ের! অনেক উন্ত। ধরুন সিনেমার জন্য
যদি মেয়েদের কিউ হত, তা হ'লে দেখতেন নেখানে তাব। প্রত্যেকেই হয় উল
বুনছে, কিংবা রুমাল তৈরি করছে, কিংবা জামা সেলাই করছে । আমি মশায়
অর্থনীতির ছাত্র, তাই এভাবে ম্যান-পাওয়ার এবং ম্াান-আওয়ার নষ্ট হতে
দেখলে আমার গা জালা করে ।”
আমি বললাম, “কিন্ত সিনেমায় ছু তিন ঘণ্টা বসে থাকাও কি সময়
নষ্ট নয়?"
ভদ্রলোক বললেন, “না । কারণ লমণ্ড দিনের পরিশ্রমের পর এখানে গিয়ে
কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিই |”
"আপনিও ঘুমোন £
বয়স্ক লোক মাত্রই ঘুমোয় । পরিণত বুদ্ধি যাদেত্র, তাদের জাগিয়ে
রাখবার মতো সিনেম। ছবি তরি হতে এখনো অনেক দেরি আছে ।”
প্রেছেলরের কথা গুনে" খুবই যুক্তিসঙ্গত মনে হল। তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে
ওখান থেকে বিদাধ নিলাম এবং কিউ অন্তসনণ ক'ঙ্গে অপ্রক্ষণেন মাধ্যই গলিতে
গিয়ে প্রবেশ করলাম। কিন্ধ এখানে দেখলাম একটি অতি বেদনাময় দৃশ্ত।
আমি ইতিমধ্যেই শগবের হালচাল সম্পর্কে এতটা বিক্ঞতা লাভ কবেছি যে,
দশ্যরট দেখেই এবারে হান সমস্ত অর্য আমার কাছে পরিক্ষা হয়ে গেল।
দেখলাম একটি উজ্জ্বল পোষাক পরা বারো-তেরো বছব্র ছেলে 1কউতে
দাডিয়ে আছে আর তার পাশে কিউ-এর বাইরে এক চশম। পরা বৃদ্ধ দাড়িয়ে
তাঁকে পড়াচ্ছেন। ধনীর ছেল পযস। চুপি ক'রে সিনেমা দেখতে এসেছে, কিন্ধ
দরিদ্র শিক্ষক, পাছে চাকরিটি যায় মেই ভয়ে, সমস্ত সঙ্কৌোচ ত]াগ ক'রে কিউতে
দ্গায়মান ছেলেকে ঘথা সময়ে পড়াতে এসেছেন | সিনেমা গিয়ে ঘুমনোর
মতে। তার পয়সা! নেই, চেহার! দেখে মশে হপ অল্পদিনের মধ্যেই তিনি থুমোবেন,
এব* সিনেমার বাইরেই ।
(১৭৯৪৭)
(লখকের অন্যান্য বই
ট্রীমের সেই লোকটি
ব্র্যাক মার্কেট
ঘুঘু
ডিটেকটিভ শিবনাথ
মারকে লেে
ভু্মস্তের বিচার
আধুনিক আলো কচিত্রণ